1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সিনেমাকে হার মানায় ফ্রিডম খালেদের বর্বরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ যুবলীগের দুর্দিনের নেতাকর্মীরা

দুই দশক ধরে চেষ্টা চালিয়ে ২০০৮ সালের দিকে এলাকার ত্রাস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ত্রাসের রাজত্ব ধরে রাখতে শুরু করেন ভয়ঙ্কর নির্যাতন, গড়ে তোলেন টর্চার সেল। তার মূলমন্ত্রই ছিল- ‘হয় দলে আসো, নয় টর্চার সেলে’।
খালেদের দলে না ভেড়ায় টর্চার সেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে অসংখ্য ছাত্রনেতা এবং স্থানীয় বাসিন্দার। তার বিপক্ষে যাওয়ার মাশুল হিসেবে রাজনীতি আর পড়াশোনা তো বটেই, দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন অনেকে। ছাত্রলীগের বহু কর্মীও বয়ে বেড়াচ্ছেন নির্মম নির্যাতনের ক্ষত। কেউ আবার পঙ্গু হয়ে গেছেন। একাধিক খুনের ঘটনায়ও তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে নির্যাতনের শিকার অন্তত ১৬ জনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মতিঝিল, ফকিরাপুল, কমলাপুর, খিলগাঁও, রামপুরা ও শান্তিনগরে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মরিয়া ছিলেন খালেদ মাহমুদ। তার বেশিরভাগ শিকার ছিলেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী। তার কারণে লণ্ডভণ্ড হয়েছে অনেক নেতাকর্মীর স্বপ্ন। ভুক্তভোগীদের বর্ণনামতে, খালেদের এই যুগ ভোলার মতো নয়।
যেভাবে জানতে পারলেন প্রধানমন্ত্রী: খালেদের নির্যাতনে কাতর অনেকেই সাহস করে বিচার চাইতে যেতেন স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে। তাদের কেউ গিয়েছিলেন রাশেদ খান মেনন ও সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছে; কেউ গিয়েছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের বাড়িতে। যদিও প্রতিকার না পেয়ে সবাই চুপ হয়ে যান। অনেকে হতাশ হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান আত্মগোপনে। গত বুধবার খালেদকে গ্রেফতারের পর তার নির্যাতনের বহু ঘটনা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
খালেদের নির্যাতনে দেশান্তরী কানাডায় অবস্থানরত ছাত্রনেতা সোহেল শাহরিয়ার জানান, ২০১১ সালে দেশত্যাগের পর একবার তিনি ফিরে এসেছিলেন। পরিস্থিতি একদমই ভালো ছিল না। নিরুপায় হয়ে তিনি এলাকার অন্যান্য নির্যাতিতকে নিয়ে যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের কাছে গিয়েছিলেন। খালেদ ও হারুনুর রশিদের বাসা একদম কাছাকাছি। তিনি তখন সাফ জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে কিছুই করতে পারবেন না। এতে হতাশ হয়ে পড়েন তারা।
সোহেল জানান, একে একে স্থানীয় সব শীর্ষ নেতাকে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় বাকি ছিলেন কেবল আওয়ামী লীগ সভাপতি। একপর্যায়ে সে সুযোগ আসে সোহেলের। প্রধানমন্ত্রী কানাডা সফরে গেলে মিনিট দশেক কথা বলার সুযোগ পান সোহেল। খালেদের ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নেত্রীকে খুলে বলেন তিনি। তখন খালেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
ছিলেন আসামি, হয়ে গেলেন সাক্ষী: ২০০৮ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাওসার। খিলগাঁওয়ের আমতলা মসজিদ থেকে বের হতেই কাওসারকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ মামলায় অন্যতম আসামি ছিলেন খালেদ মাহমুদ। কিন্তু পরে প্রভাব খাটিয়ে নিজেকে মামলার সাক্ষী করে তার জায়গায় হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল শাহরিয়ারকে আসামি বানিয়ে দেন তিনি।
ওয়ান-ইলেভেনের সময় মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁও থেকে শুরু করে বৃহত্তর একটি এলাকাজুড়ে বড় ভূমিকা রাখেন ছাত্রনেতা সোহেল শাহরিয়ার। তাকে ঘিরে ছাত্রলীগের একটি প্রজন্ম তৈরি হচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে সোহেলকে বড় বাধা মনে করতে থাকেন খালেদ। তাই তিনি মামলায় ফাঁসানোর পাশাপাশি সোহেলের নিজের এবং শ্বশুরের বাসায় নিয়মিত হামলা-ভাংচুর চালাতেন। একপর্যায়ে তার নির্যাতনের কাছে হার মেনে দেশত্যাগ করেন সোহেল। তিনি বর্তমানে কানাডা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সোহেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছিলাম। নতুন প্রজন্মকে আদর্শবান করে তোলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু খালেদের নির্যাতনের কারণে এ কাজ বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারিনি। উল্টো দেশের মায়াই ত্যাগ করতে হয়েছে।’
নির্মম খুনের শিকার কাওসারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ খাজা মহসিন বলেন, ‘এলাকার সবাই জানে, কাওসার হত্যায় খালেদ সরাসরি জড়িত। মামলায় তাকে আসামিও করা হয়েছিল। বিস্ময়করভাবে তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেলকে আসামি বানিয়ে নিজেকে মামলার সাক্ষী করে মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেন।’
১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী মহসিন বলেন, ‘অন্তত ২০ বছর আগে থেকে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন খালেদ। তখন থেকেই তিনি আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।’
ক্ষুব্ধ মহসিন বলেন, তার দাদা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ সহচর। ১৯৫৪ সালে যখন বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্টের সংস্কৃতিমন্ত্রী, তখন তার দাদা এ কে রফিকুল হোসেইন ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। এমন ঐতিহ্যবাহী পরিবারের উত্তরাধিকার হয়েও তাদের আত্মগোপনে থাকতে হয় এই খালেদের কারণে। এর চেয়ে বিস্ময়কর আর কী হতে পারে! খালেদের কারণে দলে কাঙ্ক্ষিত পদও পাননি বলে জানান তিনি।
২০০৬ সালে এজাজ হত্যার সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল খালেদের। শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল, রনি, শিবলুসহ রইস বাহিনীর সদস্যরাও জড়িত ছিল এতে।
হুমকির মুখে জন্মস্থান ছেড়ে গ্রামে: হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে তখন অনার্সে পড়েন তাবাসসুম তাসনিম মৌসুমী। তার বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার চাঁন মিয়া মারা গেছেন ২০০৬ সালে। বড় ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার প্রবাসী। খিলগাঁওয়ে মা-মেয়ের সংসার। এক রাতে খালেদের লোকজন অস্ত্র নিয়ে হানা দেয় তাদের বাসায়।
খালেদের লোকজন এসে মৌসুমী ও সোহেলের মাকে শাসিয়ে যায়। তারা বলে, ‘এই বুড়ি, তোর ছেলে কিন্তু অনেক বাড়াবাড়ি করছে। পরিণাম ভালো হবে না। শহর ছাইড়া চইলা যাবি।’
তাসনিম বলেন, ‘জানতে চেয়েছিলাম, শহর ছেড়ে চলে যাব কেন। সঙ্গে সঙ্গে একজন আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বেশি কথা বললে গুলি চালানোর হুমকি দিল। সেই রাতেই বাসা ছেড়ে চলে যাই গাজীপুরে এক আত্মীয়ের বাসায়।’
খিলগাঁওয়ে জন্ম, সেখানেই বেড়ে উঠেছেন মৌসুমী। কিন্তু সে রাতে পালিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরতে পারেননি জন্মস্থানে। ২০১১ সালে তার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। খালেদ তখন উপর্যুপরি হুমকি দিতে থাকেন কানাডাপ্রবাসী সোহেলকে। দেশে এলেই খুনের হুমকি দেন। দুই বছর আগে অসুস্থ মা চলে যান না ফেরার দেশে। মাকে শেষ দেখাও দেখতে পারেননি সোহেল।
এসব বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মৌসুমী। তিনি জানান, তার মায়ের চিকিৎসা, মৃত্যুর পর কবর দেওয়ার ব্যবস্থা, চার দিনের আয়োজন থেকে শুরু করে সব তাকেই করতে হয়েছে। গত দুই বছর ধরে তিনি একেবারে একা। কেউই নেই তার। কখনও গাজীপুরে থাকেন, কখনও গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে। পড়ালেখাও করতে হয়েছে অনেক কষ্টে ও কৌশলে। অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে কলেজে গিয়েছিলেন লুকিয়ে বোরকা পরে। বান্ধবীরা অনেক সাহায্য করেছিলেন তাকে।
ছেলেকে না পেয়ে মাকেই গুলি: প্রায় আড়াই বছর আগে রাজধানীর শান্তিনগরে ৩৩ চামেলীবাগে এক বৃদ্ধাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রেজা খান রানাকে খুন করতে গিয়ে তার মা শারমিন ইয়াসমিন আলোকে (৫৫) গুলির এ ঘটনাটি খালেদ মাহমুদই ঘটিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে ‘প্রতিপক্ষ’ নেতাকে না পেয়ে তার মাকে গুলি করার এই বর্বরতায় স্তম্ভিত হয়ে যান অনেকে। গুরুতর আহত শারমিন ইয়াসমিন এখনও সুস্থ হতে পারেননি।
কথা না শুনলেই টর্চার সেলে: রোববার সরেজমিনে খিলগাঁওয়ে অনুসন্ধানের সময় এলাকাবাসী জানান, খালেদের ভয়ে এই এলাকার কোনো বাড়িওয়ালা শান্তিতে থাকতে পারেননি। প্রত্যেককেই প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হতো। একবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান। সেই রাতেই খালেদের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায় টর্চার সেলে। রাতভর চলে ভয়ঙ্কর নির্যাতন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তটস্থ হয়ে পড়েন সবাই।
খালেদের টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়েছেন এমন একজন আনারুল হক সেন্টু। তিনি রাজধানীর ইস্টার্ন প্লাসে ব্যবসা করতেন। সেন্টু বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি সোহেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এ জন্য খালেদের চক্ষুশূল হয়ে পড়ি। ২০১৩ সালে আমাকে টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায় সে। তারপর বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছি।’
খিলগাঁও বাগিচা এলাকার আরেক ব্যবসায়ী সাবউদ্দিন কিরণও টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘যে এলাকায় ছোট থেকে বড় হয়েছি, সেখানে থাকতে পারিনি। খালেদের এই টর্চার সেলের বিষয়ে তখনই শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছিল। কেউ কর্ণপাত করেননি।’
খিলগাঁওয়ের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শামসুল হক ভূঁইয়ার পরিবারকেও রেহাই দেননি খালেদ। খিলগাঁও বাগিচার ১৬/৮ নম্বরের চারতলা বাড়ি তার। আওয়ামী লীগ নেতা হলেও খালেদকে চাঁদা দিতে হতো তাকে। এক সময়ের ছাত্রনেতা সোহেল শাহরিয়ারের শ্বশুরও শামসুল হক। এ কারণেও এ পরিবারের ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন। গত বছর এক রাতে ক্যাডার পাঠিয়ে টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হয় শামসুল হকের ছেলে আনোয়ারুল হক ভূঁইয়া বিপ্লবকে। সারা রাত আটকে নির্মম নির্যাতন করা হয় তাকে।
বিপ্লব জানান, তিনি রাজনীতি করেন না। কারও পক্ষেও না, বিপক্ষেও না। তবু জীবনে এমন একটি ভয়ঙ্কর রাত তার নিয়তিতে ছিল! সারা রাত কারেন্টের শক দেওয়া হয় তাকে। হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয় সারা শরীরে।
এই টর্চার সেলে নির্মমতার শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা জয়, রিফাতসহ আরও অনেকে। রিফাতকে মেরে তার প্যারালাইজড বাবাসহ পুরো পরিবারকে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন খালেদ। রিফাত মোবাইল ফোনে বলেন, ‘অনেক আশা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে বাবার চিকিৎসা শুরু করব। খালেদের কারণে হলো না। সে পুরো জীবনটাই লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে।’
নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে: আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে খালেদ তার অন্যতম প্রতিপক্ষ মনে করতেন হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরুন্নবী অপুকে। এ জন্য অপুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন খালেদ। এ ক্ষেত্রে তিনি দাবার ঘুঁটি বানাতে চেয়েছিলেন হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক উদয় শংকর জিতুকে। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ফোন করে অপুকে বাসা থেকে বের করে আনার। তবে হত্যা পরিকল্পনা ফাঁস করে দেন জিতু। ফলে তার ওপর নেমে আসে ভয়ঙ্কর নির্যাতন।
রোববার দুপুরে এ ঘটনা জানান জিতু। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে রামপুরা থানা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি তপুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন খালেদ। মোয়াজ্জেম হোসেন তপুকে না পেয়ে তার বড়ভাই চিকিৎসক অপুর ওপর হামলা চালান তিনি। কাকতালীয়ভাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন জিতু। অপুকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে গেলে জিতু তা ঠেকাতে যান। ফলে তিনিও আক্রান্ত হন। সেদিন দুই হাতের নানা জায়গায় যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তা তিনি দেখান এই প্রতিবেদককে।
ঢাকা দক্ষিণ মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জিতু বলেন, চক্ষুশূল হয়ে পড়ার কারণে তাকেও খুন করার চেষ্টা চালান খালেদ। ২০১৫ সালে জাতীয় শোক দিবসের শোভাযাত্রা থেকে সদলবলে জিতুকে তুলে নিয়ে যান খালেদ। খিলগাঁও এলাকা থেকে তাকে নেওয়া হয় শাজাহানপুর রেললাইনের দিকে। চলন্ত ট্রেনের নিচে ফেলে হত্যা করার পরিকল্পনা ভেস্তে গেলে জিতুকে নেওয়া হয় মইজ্জার মাঠে। সেখান থেকে আবার নেওয়া হয় খালেদের টর্চার সেলে। গুলি করতে উদ্যত খালেদকে তখন থামিয়ে দেয় তার অনুসারীরা।
জিতু বলেন, ‘মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলাম সেদিন। ভেবেছিলাম তখনই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন বোধহয় আজকের দিন দেখব বলে।’
খালেদের হাতে অসংখ্যবার নির্যাতনের শিকার জিতু আইনি কোনো সহযোগিতাও পাননি। প্রতিবার হামলার পর তার বাবা শিব শংকর দে শিপন সংশ্নিষ্ট থানায় গিয়েছেন। থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও মামলা হিসেবে তা কখনও গ্রহণ করা হয়নি। কোনো আইনি সহায়তাও দেওয়া হয়নি। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্থানীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর সুপারিশের পরও থানা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন জিতু।
খালেদের হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা শ্রাবণ, দীপ, আক্তার হোসেন, সোহাগসহ আরও অনেকে। ছাত্রলীগকর্মী শফিকুল ইসলাম অনিকও খালেদের নির্মম নির্যাতনের শিকার। তাদের বেশিরভাগই শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি খালেদের হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়ে।
আক্তার হোসেন জানান, ২০১৩ সালে তাকে টর্চার সেলে ধরে নিয়ে শাবল ঢুকিয়ে তার পা ফুটো করে ফেলা হয়। আক্তার এখন পঙ্গুজীবন কাটাচ্ছেন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ