1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় গ্রিন ফ্যাক্টরির ৭টি বাংলাদেশের

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৮
টেকসই উন্নয়ন

 গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণাটি আমাদের দেশে নতুন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণা আমাদের গার্মেন্টস শিল্পে ব্যাপকভাবে চালু হওয়ায় গোটা অর্থনীতিতে এর চমৎকার অনুকূল প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউ এস জিবিসি) সনদপ্রাপ্ত ৬৭টি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে বাংলাদেশে যার ৭টি বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। এছাড়া আরও প্রায় ২৮০টি কারখানা ইউএস জিবিসিতে নিবন্ধিত হয়েছে এবং আরও অনেক কারাখানা পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরিতে রূপান্তর হওয়ায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আমাদের গার্মেন্টস খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে রূপকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়নে গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার দ্রুত বিকাশ সবাইকে আস্থাশীল করে তুলেছে। সাভারে রানা প্লাজা ধস কিংবা তাজরীন গার্মেন্টস এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিল, এর ফলে ভাটা পড়েছিল এ খাতে। বিদেশি ক্রেতারাও আস্থার সংকটে পড়েছিল। বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প। পরিবেশবান্ধব টেকসই কারখানা বা ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠায় রীতিমতো তুমুল প্রতিযোগিতা শুরু হয় উদ্যোক্তাদের মধ্যে। এর মাধ্যমে সারাদেশে একে একে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি। এগুলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণাটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দিনে দিনে আরও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি। আগামীতে আরও অনেকগুলো গার্মেন্টস কারখানাকে সবুজায়নের আওতায় আনার প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে।
তাজরীন গার্মেন্টসের অগ্নিকান্ড এবং রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতারা একের পর এক ক্রয় আদেশ বাতিল করতে থাকে। এমনকি দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো নন কমপ্লায়েন্স-এমন অভিযোগ এনে সেগুলো বন্ধেরও চাপ দেয়। ইউরোপ ও আমেরিকান ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বিভিন্ন সময় এখানকার গার্মেন্টস কারখানাগুলো পরিদর্শন করে রীতিমত আতংক সৃষ্টি করে উদ্যোক্তাদের মধ্যে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দেয়। এই মহাসংকট থেকে উত্তরণের জন্য উদ্যোক্তাদের মধ্যে চরম অস্বস্তি বিরাজ করছিল। পরবর্তী সময়ে শিল্প মালিকদের গঠনমূলক নানা উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ক্রমেই সেই অনিশ্চিত অবস্থা কেটে গিয়ে দারুন চমৎকার এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকবান্ধব গার্মেন্টস কারখানা প্রতিষ্ঠায় মালিকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা সুফল বয়ে এনেছে, অর্থনীতিতে নতুন প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছে বলা চলে। গার্মেন্টস শিল্পে গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণা নিঃসন্দেহে নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।
গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণা দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে সন্দেহ নেই। এতে বিদেশি ক্রেতারা অবশ্যই আকৃষ্ট হবেন জোর দিয়ে বলা যায়। রফতানির পরিমাণ বেড়ে যাবে বহুগুণ। বর্তমানে যারা নতুন কারখানা চালু করছেন, তারা গত কয়েক বছরে লদ্ধ অভিজ্ঞতার আলোকেই কারখানা স্থাপন করছেন, তা বলাই বাহুল্য। কারণ তারা উপলব্ধি করেছেন আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন কারখানা না হলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার দেবেন না। তাই উদ্যোক্তারা ব্যবসার আইনকানুনের পাশাপাশি দেশের প্রচলিত বিভিন্ন আইন মেনে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আবার সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্ট না হলে নতুন কোন কারখানাকে বিজিএমইএ থেকে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। এ পর্যন্ত দেশে গড়ে ওঠা ৬৭টি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরির মর্যাদা লাভ করেছে, যারা বর্তমানে পুরোপুরি উৎপাদনে রয়েছে। এর বাইরে আরও ২৮০টি নতুন কারখানা গ্রিন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। পরিবেশবান্ধব কারাখানার বিচারে বিশ্বের শীর্ষ ১০টির মধ্যে সেরা ৭টি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে।
ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের সেরা ১০টি গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে বাংলাদেশের সাতটি কারখানা স্থান পেয়েছে। সেরা দশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাংলাদেশের ৭টি কারখানা হচ্ছে এনভয় ট্রেক্সটাইল, রেমি হোল্ডিংস, প্লামি ফ্যাশনস, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, এস কিউ সেসিয়াম, জেনেসিস ফ্যাশনস অ্যান্ড জেনেসিস ওয়াশিং, এস কিউ কোলবেন্স ও এস কিউ বিরিকিনা। দেশের বিভিন্ন জেলায় যেমন-ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, যশোর, পাবনা ও মানিকগঞ্জে এ ধরনের গ্রিন ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের দুর্নাম ঘোচাতে বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল’ থেকে ধারণা লাভ করে এখানে গ্রিন ফ্যাক্টরি চালু করছেন উদ্যোক্তারা। এখন ওই কাউন্সিলের সনদ লাভ করে নতুন যাত্রা শুরু করেছে আমাদের গার্মেন্টস খাত।
একটি বিষয় এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হলো, গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। একটি ফ্যাক্টরি করতে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এর পাশাপাশি জমিও লাগে ৩ থেকে ১০ বিঘা। দেশে এ পর্যন্ত যে সব কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরির খেতাব জিতে নিয়েছে তাদের বেশিরভাগ উদ্যোক্তার বিনিয়োগই ছিল ৫০০ কোটি থেকে ১১০০ কোটি টাকার মধ্যে। গ্রিন ফ্যাক্টরির স্বীকৃতি লাভ করতে হলে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্ববধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ ধরনের গ্রিন ফ্যাক্টরি প্রকল্পের জন্য উদ্যোক্তাকে উৎপাদনের শুরু থেকে কারখানা গুটিয়ে নেয়া বা ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রাখতে হয়।
গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, পরিবেশের সুরক্ষা। পরিবেশবান্ধব, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সাশ্রয়ী, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখা কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হলেও গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে আমাদের গার্মেন্টস খাতকে। অনেক বাধা, বিপত্তি, প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে আমাদের গার্মেন্টস খাতকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এখন পরিবেশ সুরক্ষার দিকে সবাইকে আলাদা মনোযোগ দিতে হচ্ছে। গার্মেন্টস সামগ্রী ক্রেতা দেশ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, গোষ্ঠী এখন গার্মেন্টস উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবেশবান্ধব, শ্রমিকবান্ধব নানা শর্ত আরোপ করছেন। যে সব শর্ত পূরণের মাধ্যমেই শুধু তাদের সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। আর এ জন্য এখন গার্মেন্টস শিল্পে কমপ্লায়েন্সকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। অতীতে এ বিষয়টিকে এক ধরনের অগ্রাহ্য করা হয়েছে। গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার পেছনেও বিদেশি ক্রেতাগোষ্ঠীর চাপ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে প্রতি বছর সুতা ও কাপড় ডাইং ও ওয়াশিংয়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি লিটার পানি খরচ হয়। বিষ্ময়কর হলেও সত্যি যে, এত বিপুল পরিমাণ পানি দিয়ে ৬ লাখ অলিম্পিক সুইমিংপুল পূর্ণ করা সম্ভব। সমপরিমাণ পানি এক বছরে ৮ হাজার লোকের চাহিদা পূরণ করতে পারে। প্রতিটি জিন্স প্যান্ট যার ওজন প্রায় ১ কিলোগ্রাম, এমন একটি প্যান্ট ওয়াশিংয়ে আড়াইশ লিটার পানি ব্যবহৃত হয়। এই পানি কোন ক্যামিকেল নয়, স্রেফ সাধারণ পানি, যা ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে উত্তোলন করে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভয়াবহ মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার এভাবেই বাড়ছে দিনে দিনে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করছে। সাধারণত ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে যখন এত বিশাল পরিমাণের পানি তোলা হয়, তখন সেখানে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এভাবে যত শূন্যতার সৃষ্টি হবে তত ভূমি নিচের দিকে দেবে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। এ কারণেই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বেশিরভাগ এলাকার পানির স্তর সুবিধাজনক এবং নিরাপদ অবস্থানে নেই। ফলে যে কোন ধরনের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবেশের উপর গার্মেন্ট শিল্পের আরেকটি ক্ষতিকর প্রভাব হলো, কারখানার ব্যবহৃত পানি নদ নদী, খাল বিল, হাওর-বাঁওড়ে প্রাবাহিত হয়ে যায়। পোশাক কারখানার এই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ও রঙ মিশ্রিত পানি নদ নদী, খাল বিলের পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। যার ফলে নদ নদী খাল বিলের মাছ মারা যাচ্ছে, চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে। এতে কৃষি উৎপাদনে প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ কারখানা ডাইং ও ফিনিশিং কাজে ৪ হাজার গার্মেন্টস কারখানাকে সহায়তা করে। আইএফসির তথ্যমতে, এসব ডাইং ও ফিনিশিং কারখানার প্রায় সবগুলোই ভূগর্ভস্থ উৎসের পানি ব্যবহার করে। এসব কারখানা যদি আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে পানির ব্যবহার চার ভাগের এক ভাগও সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়, তবে তাতে করে ক্যামিকেলের ব্যবহারের মাত্রা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ফিনিশিং ও ডাইংয়ের জন্য ফেব্রিকে (কাপড়) তাপ দিতে গ্যাস ব্যবহৃত হয়। এ ক্ষেত্রে যতবেশি পানি থাকে, তা ফুটাতে তাপ প্রয়োগের জন্য বেশি পরিমান গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। তাই পানির ব্যবহার কমাতে পারলে মহামূল্যবান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাসের ও সাশ্রয় হবে।
এমনিতে এক কেজি ওজনের একটি জিন্স প্যান্ট ডাইং ও ফিনিশিংয়ে ২৫০ লিটার পানি লাগে। অথচ গ্রিন ফ্যাক্টরি ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে এক কেজি ওজনের জিন্স প্যান্টের জন্য ব্যবহৃত হবে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ লিটার পানি। অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রতি কেজি জিন্স এ চারগুণ বেশি পানি ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রিন ফ্যাক্টরি ব্যবস্থায় এক কেজি জিন্স এ পানির ব্যবহার মাত্র সাড়ে ১৩ লিটারে নামিয়ে আনা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আইএফসির পার্টনারশিপ অব ক্লিনার টেক্সটাইল (পিএসিটি) কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর বিশ্বের ২০০টি গার্মেন্টস কারখানায় ২১৬ লাখ ঘনমিটার পানি সাশ্রয় করা হচ্ছে। পিএসিটি কর্মসূচির আওতায় থাকা দেশের ২০০ গার্মেন্টস কারখানা পানি সাশ্রয় করে প্রতি বছর ১৬০ লাখ ডলার সাশ্রয় করতে পাড়ছি আমরা। বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানার মালিকরা এখন এসব বিষয়ে খুব সচেতন হচ্ছেন। গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগ্রহী হয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। এরই মধ্যে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান পানি ও গ্যাস সাশ্রয়ে ইতিবাচক ব্যবস্থা নিয়েছেন। বাংলাদেশের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান ১২০০ টন ফেব্রিক ডাইং এবং ওয়াশিং এর জন্য প্রতি মাসে প্রায় ২৫ কোটি লিটার পানি ব্যবহার করতো। কিন্তু গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার অনুসারী হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তাদের এখন প্রতি মাসে মাত্র ৭ কোটি লিটার পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ঐ কোম্পানিটি এই পানি সাশ্রয়ের মাধ্যমে ৬ মাসে আড়াই লাখ ডলার সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছে। এ রকম আরেকটি গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্রিন ফ্যাক্টরির আওতাভুক্ত হয়ে ২৭ শতাংশ পানি সাশ্রয়ে সক্ষম হয়েছে। এতদিন তাদের প্রতি কেজি ফেব্রিক প্রক্রিয়াজাত করতে ১২০ লিটার পানি লাগতো। আর এখন লাগছে ৮০ লিটার। ঐ কোম্পানিটি আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও পানি সাশ্রয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে।
গ্রিন ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে প্রয়োজন সুপরিসর জায়গা। ঘিঞ্জি পরিবেশে সীমিত পরিসরে গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে যে পরিমাণ জমির ওপর কারখানা হবে তার অর্ধেকটাই ছেড়ে দিতে হবে সবুজায়নের জন্য। যেখানে সবুজ বাগান থাকবে। কারখানার চারপাশে খোলা সুপরিসর জায়গা থাকবে। আর কারখানার ভেতরেও থাকবে খোলা জায়গা। শ্রমিকদের কাজের পরিবেশও হবে সুন্দর। একজন শ্রমিক থেকে আরেকজনের দূরত্ব হবে বেশ। এছাড়া সব কিছুই অটোমেশনে সম্পন্ন হবে। সব যন্ত্রপাতি হবে অত্যাধুনিক। ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। থাকবে সোলার প্যানেল, এলইডি বাতি এছাড়া পানি রি সাইক্লিনিং হবে। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কারখানার ভেতরে আলাদাভাবে তাদের বাসস্থানের সুযোগ থাকবে। শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য থাকবে বিশেষ সুবিধা। চিকিৎসাভাতাসহ রেশনিংয়েরও ব্যবস্থা থাকবে। এ ধরনের কারখানায় শ্রমিকদের জন্য লাইফস্টাইল সেন্টার, শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার ও খাবারের জন্য ডাইনিং কক্ষ, মসজিদ অথবা নামাজ ঘর এবং প্রশিক্ষণ ক্লাসের বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে। পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠার ফলে শতকরা ২৪ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হয়। অন্যদিকে ৫০ শতাংশ পানির অপচয়ও কমে।
রানা প্লাজা এবং তাজরীন গার্মেন্টসের দুঃখজনক ঘটনাগুলোর পর আমাদের গার্মেন্টস শিল্পে উদ্যোক্তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। এরপর থেকে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প নানা সংস্কার, পরিবর্তন এবং রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মায়ানমার প্রভৃতি দেশ তাদের গার্মেন্টস পণ্য রফতানি বাড়াতে নানা ধরনের ইনসেনটিভ বা প্রণোদনা দিচ্ছে। তেমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার বিকাশ শুভ সূচনা করেছে।
আর্থিক ক্ষেত্রে গ্রিন ব্যাংকিং ধারণার বিকাশ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে যা দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টেকসই অর্থনীতির জন্য গ্রিন ব্যাংকিং ধারণার অনুসারী হয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। যার চমৎকার ফলাফল ক্রমেই অর্থনীতিতে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একইভাবে গার্মেন্টস শিল্পে গ্রিন ফ্যাক্টরি ধারণার পরিপূর্ণ বিকাশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেবে- আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। গ্রিন ফ্যাক্টরি কার্যক্রমকে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের ব্যাপারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ ক্ষেত্রে চমৎকার গতির সঞ্চার হবে আশা করা যায়।
[লেখক : ব্যাংকার]


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ