1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শেখ হাসিনা সরকার ও মানুষের আস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮

মিল্টন বিশ্বাস
 
একটানা ক্ষমতায় আসীন শেখ হাসিনা সরকার ১২ জানুয়ারি (২০১৮) দশম বর্ষে পদার্পণ করল। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনের চার বছর পূর্ণ হলো। ক্ষমতার এই চার বছরে আগের মেয়াদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে সরকার। আছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে গৌরবময় অনেক অর্জন। ২০১৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন- অনন্য এক উচ্চতার শিখরে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশকে।
 
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক, যা তাদের আগের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। (বিডিনিউজ২৪, ১১/১/২০১৮) তবে ১০ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও দুর্নীতি কমেনি। (কালের কণ্ঠ, ১১/১/২০১৮) ভোরের কাগজ লিখেছে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকলেও সুশাসন নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। (১১/১/২০১৮) গত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স বজায় রেখে সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ এবার আরো জোরালো হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালকে নির্বাচনের বছর হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে বলেই শেখ হাসিনা সরকারকে নিয়ে মূল্যায়নের সময় এসেছে। বিশেষত, নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই সরকার জনগণের জন্য কতটুকু কাজ করতে পেরেছে, তার সামগ্রিক পর্যালোচনা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর শতভাগ কাজ সম্পন্ন করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। শেষ হয়েছে ৪৩ শতাংশ কাজ। সফলতা এসেছে তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতেও। দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের তালিকায় দশম স্থানে ঠাঁই পেয়েছেন শেখ হাসিনা। কঠোর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মানবিক কারণে পার্শ্ববর্তী দেশের ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন ‘বিশ্ব মানবতার জননী’। শেখ হাসিনা সরকার আস্থার প্রতীক কেন—এই বিশ্লেষণ চলছে সর্বত্রই।
 
১.
শেখ হাসিনা রচনাসমগ্রের প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় লেখা রয়েছে, ‘রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম আমার। পিতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। একদিন যে আমাকেও তাঁর মতো রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে ভাবিনি। সময়ের দাবি আমাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি এই আদর্শ নিয়ে বিগত ২৮ বছর ধরে জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতি করে যাচ্ছি।’ ৬ জানুয়ারি (২০১৮) শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের জীবন থেকে ২৮ বছর হারিয়ে গেছে। আর যেন একটা দিনও হারাতে না পারে।’ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি এ কথা বলেছেন। এ ছাড়া যারা আলবদর ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে চলে তারা ক্ষমতায় এলে দেশের জনগণের কল্যাণ হবে না বলে তিনি মনে করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তির পরদিন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি আরো বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনোভাবেই ভোটারবিহীন হয়নি। ৪০ পার্সেন্টের ওপর ভোট পড়েছিল। … ওই নির্বাচনে তারা (জনগণ) ভোট দিয়ছে বলেই আমরা চার বছর পূর্ণ করতে পারলাম।’
 
২.
বর্তমান মেয়াদের চার বছর এবং গত মহাজোট সরকারের পাঁচ বছর মোট নয় বছর একটানা শাসন ক্ষমতায় আসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটানা ক্ষমতায় টিকে থাকার কারণ কী? তিনি কেন জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণে দু-একটি প্রসঙ্গের অবতারণা করা যায়। শেখ হাসিনা ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি-সম্পৃক্ত। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁর সহপাঠীরা স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ‘হাসিনার ছিল একটা আকর্ষণীয় ক্ষমতা, সবার সঙ্গে খুব সহজেই মিশতে পারত। একেবারে সহজ-সরল আন্তরিকতায় ভরা মন। সবার মন জয় করার একটা মুগ্ধময় ক্ষমতা ছিল তার। তার সঙ্গে আমার মনের মিল ছিল যথেষ্ট। বিশেষ করে বই পড়া, গান শোনা, আড্ডা, সভায় মিছিলে যাওয়া এবং ছাত্র রাজনীতির কাজকর্ম করা। যদিও দুজনে দুই সংগঠনে, তারপরও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। তার কথাবার্তা, চিন্তাভাবনার সঙ্গেও তখন থেকে আমি সহমর্মী হই। তার জনদরদি মন আছে যা আমাকে স্পর্শ করে থাকে। তার প্রথম পছন্দ বই পড়া। বই উপহার পেলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ে থাকেন। নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক নেতা এবং অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’ (বেবী মওদুদ, ২৭/৯/২০১০)
পিতার রাজনৈতিক আদর্শ, আন্দোলন-সংগ্রাম-কারাবন্দি জীবন সবই তিনি শৈশব-কৈশোর থেকেই দেখেছেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে পিতার আদর্শ উত্তরাধিকারী হিসেবে গড়ে তোলে। তিনি যখন আজিমপুর গার্লস স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী, তখন তিনি নেতৃত্ব দিয়ে ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছিল। এরপর ঢাকার উচ্চ মাধ্যমিক মহিলা কলেজের ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে সহসভাপতি নির্বাচিত হয়ে কলেজের ছাত্রীদের সমস্যা সমাধান ও সংস্কৃতির কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন। কলেজে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের কথা লেখা আছে শেখ হাসিনার নিজের রচনায়। ‘আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য ছিল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আন্দোলন করার জন্য। ছাত্র রাজনীতির এই ঐতিহ্য নষ্ট করার জন্য এবং আইয়ুব খানের আমলেই ছাত্র রাজনীতিতে অস্ত্রধারীদের মহড়া শুরু হয়। মেধাবী গরিব ছাত্রদের অর্থ দিয়ে ছাত্র রাজনীতি ধ্বংসের এই চক্রান্ত আজও বিদ্যমান।’(স্কুলজীবনের কিছু স্মৃতিকথা, সাদা কালো)
 
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতার রাজনৈতিক জীবনকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ হয়েছিল বলেই তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো বাংলার মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে বলেছেন, ‘আমার একমাত্র দায়িত্ব পিতার অধরা স্বপ্ন সফল করা।’ শেখ হাসিনা বলে থাকেন, ‘জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই আমার রাজনীতি।’ শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যৎ দেখতে ভালোবাসেন, ‘শিশুরা আমাদের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করে তাদের ভবিষ্যৎকে আনন্দ, উজ্জ্বল, স্বস্তি ও শান্তিময় করে তুলতে হবে।’ শেখ হাসিনা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন ও সংগ্রাম, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাহসী যোদ্ধা, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার প্রবক্তা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে তাঁকে বিশেষভাবে শান্তি পুরস্কার ও সম্মানীয় ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। যেকোনো সংকট মুহূর্তে কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
 
১৯৮২ থেকে আজ পর্যন্ত অনেকগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তিনি প্রচণ্ড দৃঢ়তার সঙ্গে নিয়েছেন। প্রতিকূল পরিবেশ, সহকর্মীদের শত বাধা এবং সুশীল সমাজ কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণরূপে তাঁর বিপক্ষে থাকার পরও তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে এবং পরে আবার সংসদ থেকে বের হয়ে আসা একটি বিশাল ব্যাপার ছিল। ১৯৯১ সালের পর বিএনপিবিরোধী আন্দোলনে সফলতা, ১৯৯৬ সালের সরকার প্রধান হিসেবে সাফল্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তেমনি ১/১১-এর প্রেক্ষাপটে অতিদ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনন্য সাধারণ। সব শেষে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি তিনি করেছিলেন দূরদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে—বিরোধী পক্ষসহ তাবৎ দুনিয়ার ক্ষমতাবান রাষ্ট্রশক্তির হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে কেবল নিজের দলের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে। এ জন্য তাঁর উপলব্ধি তাৎপর্যবহ, ‘বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের ভালোবাসার প্রতিদান আমাকে দিতেই হবে। জনগণের জন্য একটা সুন্দর, উন্নত জীবন উপহার দেবো, এই আমার প্রতিজ্ঞা।’(সবুজ মাঠ পেরিয়ে, সবুজ মাঠ পেরিয়ে)
 
৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা থেমে গেছে। এমনকি হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা-অত্যাচার নির্মূল করা হয়েছে। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও আচরণ এখনো আছে। তবে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিদেশি রাষ্ট্রের ক্রমাগত অভিনন্দনে মুখরিত এখন বাংলাদেশের প্রতিটি আঙিনা; অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিস্ময়করভাবে আমরা লক্ষ করছি, যেসব ব্যক্তি নির্বাচনের বিপক্ষে ছিলেন তাঁরা এখন সরকারের গুণগানে আলোড়িত; টিভির টক শোতে তাঁরা বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৃতিত্বে আনন্দিত। তবু অপপ্রচার থেমে নেই। এখনো ভারত বিরোধী সুড়সুড়ি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে; অপপ্রচারের অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছে বিরোধীদের হাতে। দৈনিক নয়া দিগন্ত, দিনকাল ও ইনকিলাব পত্রিকার মিথ্যা সংবাদ নিয়ে বক্তব্য রাখছেন সাবেক প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। ওয়াশিংটন টাইমসের মতামত পাতায় নিবন্ধ লিখে চালানো হচ্ছে সরকারবিরোধী অপপ্রপচার। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করার মধ্যে যে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ হয়, সেটা কি তারা বোঝেন না?
 
দেশ-বিদেশে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিচিত্র অপপ্রচার বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেললেও আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা পুনর্বহাল হতে দেখা গেছে বারবার। কারণ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব ছিল না। জনগণের কাছে তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার এখন। আস্থাশীল সরকারের প্রতি দেশের বিশিষ্টজনদের দৃষ্টি পূর্ব থেকেই ইতিবাচক ছিল। যেমন, ২০ দলীয় জোটের শরিকরা প্রত্যাখ্যান করলেও নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে গঠনমূলক ও ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমরা সকল দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। বিরোধী দলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন, যাদের আমরা অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি এবং নির্বাচনে যাতে কারও কোনো সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে। আমি বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দেবেন। তাই আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করি। যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পায়। একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলতে পারি। সকল ভেদাভেদ ভুলে ২০২১ সালের মধ্যে গড়ে তুলি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা।’
 
উল্লেখ্য, বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ২ হাজার মার্কিন ডলারে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। লক্ষ্য ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত হওয়া।
 
৩.
সম্প্রতি জার্মানিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের (আইপিআরসি) এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫৪ ভাগ মানুষ মনে করেন, সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নকে প্রধান সাফল্য মনে করেন ১৯ ভাগ, ১৮ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন জঙ্গি দমন ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন হলো বড় সাফল্য। আমাদের নিশ্চয় মনে আছে, ১৮ অক্টোবর (২০১৩) সম্প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণই ৫ জানুয়ারি (২০১৪) দশম সংসদ নির্বাচন পূর্বে জনগণের কাছে শুভ উদ্যোগ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। তখন থেকে তিনি আরো বেশি নির্ভরতার উৎস হয়ে ওঠেন।
 
দেশ ও জাতির কল্যাণে সাংবিধানিক উপায়কে অবলম্বন করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় প্রকৃতঅর্থে বাস্তব হয়ে উঠেছে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর। কেবল নতুন সরকার নয় অতীতে মাসজুড়ে অবরোধ-হরতালের নামে দেশের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব ও হত্যালিপ্সা বন্ধ করার পুরো কৃতিত্ব বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা অভিনন্দিত হয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে। এমনকি বর্তমান সরকারের আগে গত মহাজোট আমলে অর্জিত সকল সফল কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে। আর এ জন্যই ৬ জানুয়ারি (২০১৮) ক্ষমতার ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা অবশ্য ২০১৯ সালে দেখতে চাই, সহিংসতামুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন; যেখানে সাম্প্রদায়িকতা ও অপশক্তির পরাজয় ঘটবে, জয়ী হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি।
 
লেখক : অধ্যাপক এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ