1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শীর্ষ জঙ্গিদের জামিনের নেপথ্যে দুই বিচারপতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৮

বিশেষ প্রতিবেদন: অনেকদিন থেকেই নাশকতার সাথে সরাসরি জড়িত জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আটক করা জঙ্গিদের জামিন পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে জামিন পাওয়া জঙ্গিদের পালিয়ে যাওয়ার তথ্য জানা গেছে। জঙ্গিদের জামিন দিতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা।
জঙ্গিদের জামিনকে কেন্দ্র করে অনুসন্ধানে ঘুরে ফিরে আসছে দুই বিচারপতির নাম।
বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী পূর্ণাঙ্গ বিচারপতি হন ২০০৫ সালে। ২০১২ সালে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার এক মাসের মাথায় পুরান ঢাকার আলোচিত শামসুল হক ও তার ছেলে শেখ মো. রাসেল হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া নয় আসামিকে খালাস দিয়ে আলোচিত হন তিনি। বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ডাকা আদালত বর্জনের সময়ে যাদের হাইকোর্টে দেখা যায় না তাদের একজন বিচারপতি মিফতাহ।
২০১৪ সালে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সানজিদাসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করার সংবাদ প্রায় সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সনজিদা তিন লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র ক্রয়ের কথা জানান। কিন্তু থানায় নেয়ার পর অদৃশ্য কারণে থানা থেকে সানজিদাকে আটকের সংবাদ অস্বীকার করা হয়। কারণ সানজিদার পিতা হাইকোর্টের বিচাপতি আনম বশির উল্লাহ, যিনি ২০০৯ সালে জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জামিন দেয়াকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট সম্পর্কে অযাচিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছিলেন।
এ দুই বিচারপতির নামই আসছে বিতর্কিত সকল মামলায়।
বিচারপতি মিফতাহ ও বশির উদ্দিনের বেঞ্চ একটি গোষ্ঠীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছিল। চট্টগ্রামের আলোচিত তরল কোকেন মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা ছাড়াও এ বেঞ্চ থেকে অনেকগুলো স্পর্শকাতর মামলার জামিন হয়। নিম্নে উল্লেখিত মামলাগুলো বিচারপতি মিফতাহ বা বিচারপতি বশির কিংবা উভয়ের ভূমিকার কারণে ঘটেছিল।
১. গোলাম আজমের ছেলে বিগ্রেডিয়ার আমান আজমীকে বরখাস্ত করায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবসহ ৬ জনের কাছে জবাব চাওয়া হয়।
২. জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের আগাম জামিন।
৩. বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে দায়ের করা নাশকতার পাঁচ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা।
৪. নাশকতার  সাত মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুকে ৬ মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন।
৫. আসিফ নজরুলের জামিন।
৬. মওদুদের নাশকতার ৭ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করণ।
৭. আদালতের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র ফিরে পান কাদের সিদ্দিকী
৮. বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানার নাশকতার মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা।
৯. নাশকতার অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য ডেমরার বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে করা চার মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা।
১০. নাশকতার অভিযোগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা আরও তিন মামলার কার্যক্রম স্থগিত।
১১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া সহ মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দশ মামলায় আগাম জামিন।
১২. পল্টন থানায় ফখরুলের মামলার কার্যক্রম স্থগিত।
১৩. নাশকতার সাত মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর জামিন মঞ্জুর
এভাবে তালিকায় আরও অনেক ঘটনা আনা যায়। এছাড়া এ মামলাগুলো সরাসরি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। কিন্তু যখন প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সন্ত্রাসী, বোমাবাজ ও তালিকাভুক্ত শীর্ষ জঙ্গিদের জামিনের সাথে ঘুরেফিরে দুজন বিচারকের নামই আসছে, তখন বিষয়টি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সম্প্রতি ৭২ শতাংশ জঙ্গি জামিনে বের হয়েছে এই মর্মে সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জনাব মিফতাহ ও বশির উল্লাহ কর্তৃক জামিনাদেশ দেয়া যে মামলাগুলো রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা যায়, তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
১. ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাই ঘটনার হোতা রাহাতের জামিন।
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জেএমবির তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন এক পুলিশ কনস্টেবল এবং আহত হন এক উপ-পরিদর্শকসহ (এসআই) দুই পুলিশ সদস্য। এ ঘটনার অন্যকম হোতা জেএমবি সদস্য গোলাম সরোয়ার রাহাতকে জামিন দেন বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বশিরউল্লাহ’র ডিভিশন বেঞ্চ।
২. জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে আলোচিত একটি নাম iBacs Limited নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি আইএস-এর ইন্টারনেট কেন্দ্রিক জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে Hacking ISIS নামে একটি বই প্রকাশিত হয় যেখানে iBacs Limited এর কার্যক্রমও উল্লেখ করা হয়।
৩. iBacs এর পলাতক জঙ্গিদের মধ্যে মো: মামুনুর রশীদ ওরফে শায়েখ মামুন স্বঘোষিত আইএস এর দাওয়াতি শাখার নেতৃস্থানীয় সদস্য বলে র‍্যাবের তদন্তে জানা যায়। মামুন বাংলাদেশে মাদ্রাসায় অধ্যয়নের পর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ালেখা করেন। ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত শায়েখ মামুন থানাধীন ইসলামীয়া বাইতুন নূর কওমী মাদ্রাসায় মুফতি ও মোহাদ্দিস পদে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিল। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি হুজি (বাংলাদেশ) সংশ্লিষ্ট প্রাক্তন এক ছাত্রের মাধ্যমে শায়েখ মামুন আইএস এর সাথে সম্পৃক্ত হয়। প্রাথমিকভাবে মামুন শরীয়া বোর্ড ও আইএস এর মতবাদ প্রচার ও জঙ্গি বই অনুবাদে নিয়োজিত হয়। বায়তুন মাদ্রাসাকে জঙ্গি রিক্রুটের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে।
 
৪. iBacs এর অপর সদস্য ইমরান আহমেদ জেসটেক্স লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লি:, গাজীপুর এর সত্ত্বাধীকারী। সে ২০১২ সালে ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয় এবং ২০১৪ সালে  iBacs এর প্রচারিত আইএস-এর মতবাদে অনুপ্রাণিত হয়। আইএস এর প্রভাবশালী সদস্য জুনুন শিকদারের মাধ্যমে তার সাথে অন্যান্য আইএস সদস্যদের পরিচয় ঘটে। জুনুনের সিরিয়া গমনের পর ইন্টারনেটের মাধ্যমে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ার প্রচেষ্টা চালায় মামুন। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মাঝে কয়েক লক্ষ টাকা বিতরণ ছাড়াও আবু বকর নামে গ্রেফতার হওয়া এক জঙ্গির জামিনের জন্য তিন লক্ষ টাকা দেয় ইমরান। অনুসন্ধানে এই চক্রের সাথে অন্তত ১৬ জন সক্রিয় জঙ্গি সম্পর্কে জানা গেছে।
বর্তমানে স্বঘোষিত আইএস ও জেএমবির তালিকাভুক্ত শীর্ষ জঙ্গিদের মধ্যে যারা জামিন পেয়ে পলাতক রয়েছে তাদের অন্যতম হচ্ছে:
১. সোনারগাঁও থানার ২০/০২/২০১৭ ইং তারিখে দায়েরকৃত ২৪ নং মামলা ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) মামলার আসামী মোঃ মোস্তাক ওরফে মোস্ত ওরফে শামীম (২৫) এবং মোঃ শরিফুল ইসলাম ওরফে শাহীন (২১), আবু রায়হান ওরফে রবিন ওরফে হিমেল।
২. সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ০৭/০৪/২০১৭ ইং তারিখে দায়েরকৃত ১৪ নং মামলা ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) মামলার আসামী  মোঃ আক্তারুজ্জামান ওরফে মারুফ (৩২), হাফেজ মাওলানা ওমর ফারুক (৩২), মোঃ সেলিম হাওলাদার, মোঃ কাইয়ুম হাওলাদার মিঠু ওরফে সাইফুল (২৪), মোঃ মামুনুর রশিদ ওরফে শায়েখ মামুন (৩৪), মোঃ জামাল উদ্দিন ওরফে রাসেল জিহাদী (৩৫),  মোঃ আবুল কাশেম মুন্সী ওরফে কাশেম, মোঃ তুষার হাবিব ওরফে আইয়ুব (২৬), ফয়সাল আহম্মেদ (৪৮), মোঃ জাবির হাওলাদার ওরফে জাবির এবং খন্দকার আবু নাইম ওরফে নাইম জিহাদী।
৩. নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানায় ১১/০৬/২০১৭ ইং তারিখে দায়েরকৃত ২৭ নং মামলা ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) মামলার এর আসামী আবু বকর সিদ্দিক
বাকিদের মধ্যে রয়েছেন , মোঃ ফারুক হোসেন ওরফে ওমর ফারুক ও মোঃ নবীন হোসেন রাব্বী।
উল্লেখিত জঙ্গিদের সকল মামলায় সরকার পক্ষের কৌশলী ছিলেন শেখ একে এম মনিরুজ্জামান।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের আটক ও জামিনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে তাদের জামিন মঞ্জুর হয়েছে। এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায় জামিন প্রাপ্ত জঙ্গিদের প্রায় সকলেই মিফতাহ-বশির বেঞ্চ থেকে জামিন পেয়েছে। দুটি মামলায় বিচারপতির মিফতাহের বেঞ্চের অপর বিচারপতি ছিলেন জাফর আহমেদ ও আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমান। উল্লেখ্য বিচারপতি মিফতাহ ড. কামাল হোসেনের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায় জঙ্গিদের আইনজীবি ও আদালতের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে নাশকতার সকল মামলাগুলো মিফতাহ বা বশির উদ্দিনের বেঞ্চে নেয়ার জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। বড় অংকের টাকার বিনিময়ে মামলার বেঞ্চ বদলসহ শুনানীর তারিখ এগিয়ে আনা হয়। জামিন পাওয়া প্রায় সকল জঙ্গি বর্তমানে পলাতক রয়েছে। ফলে উল্লেখিত দুজন বিচারপতির কর্মকাণ্ডে সন্দেহ ওঠা খুবই স্বাভাবিক। সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ আইনসহ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রশাসন ও বিচারবিভাগ থেকে যদি প্রশ্রয় দেয়া হয় তা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে জামিনে বেরিয়ে আসার ধারা অব্যহত থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিদের গ্রেফতারে অসহায় হয়ে পড়বে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রয়োজনে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা, আইনজীবী ও জঙ্গিবাদ বিশ্লেষকদের সমন্বয়ে বিশেষায়িত কমিটি করা যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ