1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অ্যাভিয়েশন খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

সুভাষ হিকমত : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২২

সদ্য বিদায়ী বছরের বেশিরভাগ সময় করোনার বিধিনিষেধের জন্য অ্যাভিয়েশন সেক্টরের কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ ছিল। গত ৫ আগস্ট সরকার করোনার বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় স্বাভাবিক হতে শুরু করে খাতটি। এখন ব্যস্ত সময় পার করছে খাতসংশ্লিষ্টরা।

করোনাসহ নানা সংকট-সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অ্যাভিয়েশন সেক্টরে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরে, যা খুবই ইতিবাচক। এগুলোর মধ্যে শাহজালালে আন্তর্জাতিক মানের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ, অত্যাধুনিক রাডার কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি, ১২৪ যাত্রীর জীবন বাঁচিয়ে মধ্য আকাশে বিমানের পাইলটের মৃত্যু, কক্সবাজারে সাগরের ভেতরে রানওয়ে নির্মাণ, শাহজালালে আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন, নতুন দুটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের অনুমোদন, নতুন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা, ওমরাহ চালু হওয়ার ঘটনা উল্লেখ্যযোগ্য।

পাশাপাশি শাহজালালে সংস্কার কাজের জন্য ৬ মাস রাতে ৮ ঘণ্টা রানওয়ে বন্ধ থাকা, বিমানবন্দরে হয়রানি-বিশৃঙ্খলা, মশার অত্যাচার, বিমানে পাইলট সঙ্কট, স্বর্ণ চোরাচালান, মধ্যপ্রাচ্যে টিকেটের মূল্যবৃদ্ধির মতো নেতিবাচক ঘটনাও রয়েছে।

থার্ড টার্মিনাল

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধনের টার্গেট ধরা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করার জন্য দিনরাত কাজ করছেন ৫ হাজারের বেশি শ্রমিক। এটি নির্মিত হচ্ছে ৩৫০ একর জমির ওপর। বিশ্বখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন এর নকশা করেছেন। তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্য রীতিতে আনা হবে অনন্য নান্দনিকতা। বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে বর্তমানে যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ। থার্ড টার্মিনাল হলে বছরে ২ কোটি মানুষ এখান থেকে ভ্রমণসেবা পাবেন। পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের অ্যাপ্রোনে ৩৭টি উড়োজাহাজ একসঙ্গে রাখা যাবে। ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি-রফতানি কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এ টার্মিনালের কাজের সঙ্গে আশকোনার হজক্যাম্প থেকে একটি টানেল করা হবে। এটা দিয়ে হাজিরা হজক্যাম্প থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে আসতে পারবেন। এই টার্মিনালের সঙ্গে মেট্রোরেল সংযুক্ত থাকবে।

শাহজালালে করোনা টেস্ট

করোনার কারণে দেশে ফিরে আসেন লাখ লাখ প্রবাসী কর্মী। করোনার প্রকোপ কমে গেলেও নানা বিধিনিষেধের ফলে কর্মস্থলে ফিরতে পারছিলেন না তারা। শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশটিতে প্রবেশের জন্য যাত্রীদের ছয় ঘণ্টা আগে আরটিপিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করে দেশটির স্বাস্থ্য ও ইমিগ্রেশন বিভাগ। এতে আটকা পড়েন লাখো কর্মী। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু হয় আরটিপিসিআর ল্যাব। শাহজালালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, এখন প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার যাত্রীর টেস্ট করা হচ্ছে।

সমুদ্রের ভেতরে রানওয়ে

কক্সবাজারে সাগরের ভেতরে রানওয়ে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। গত ২৯ আগস্ট সাগরের অংশ ভরাট করে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ১০ হাজার ৭০০ ফুট দীর্ঘ এই রানওয়ের এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের ভেতরে। তখন সেটাই হবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম রানওয়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অত্যাধুনিক রাডার চুক্তি

শাহজালালে এখন যে রাডার ব্যবহৃত হচ্ছে তা অনেক পুরনো। এটি দিয়ে বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহারকারী সব উড়োজাহাজ শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। গত ২১ অক্টোবর শাহজালালে সিএনএস-এটিএম সিস্টেমসহ অত্যাধুনিক রাডার স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং ফ্রান্সের রাডার প্রস্তুতকারী কোম্পানি থ্যালাস এলএএসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই রাডার স্থাপন করা হলে দেশে এয়ার নেভিগেশনে বর্তমানে যে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা দূর হবে এবং আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থার বাধ্যবাধকতাও পূরণ করা সম্ভব হবে। সব বিদেশি উড়োজাহাজের কাছ থেকে ফ্লাইং ওভার চার্জ আদায় করা যাবে। দেশের সমগ্র আকাশসীমা নজরদারির আওতায় আসবে।

১২৪ যাত্রীর জীবন বাঁচিয়ে পাইলটের মৃত্যু

বিমান চালানো অবস্থায় মধ্য আকাশে পাইলটের হার্ট অ্যাটাক সত্ত্বেও কোনো দুর্ঘটনা না ঘটা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে আলোচিত। গত ২৭ আগস্ট ওমানের মাস্কাট থেকে ঢাকা ফেরার পথে ভারতের আকাশে হার্ট অ্যাটাক করেন বিমান বাংলাদেশের দক্ষ ও অভিজ্ঞ পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। সঙ্গে সঙ্গেই কো-পাইলট অত্যন্ত দক্ষতায় নাগপুর বিমানবন্দরে বিমানটিকে জরুরি অবতরণ করান। এতে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় উড়োজাহাজটি। প্রাণে বেঁচে যান ১২৪ যাত্রী। কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৩০ আগস্ট নওশাদ চলে যান না ফেরার দেশে। এসব সাফল্যের পাশাপাশি চলতি বছরে কিছু নেতিবাচিক ঘটনা ঘটেছে দেশের অ্যাভিয়েশন খাতে।

ছয় মাস রাতে ৮ ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ

শাহজালালে শুরু হয়েছে তৃতীয় টার্মিনালের হাইস্পিড কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণকাজ। এজন্য চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালে ১০ জুন পর্যন্ত বিমানবন্দরে রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ রয়েছে। এ সময় জরুরি অবতরণের প্রয়োজন হলে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করা যাবে। এজন্য ফ্লাইট সময়সূচি (শিডিউল) পুনর্বিন্যাস করা হয়। এতে বিমানবন্দরে যাত্রী ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রাতে ৮ ঘণ্টা বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় ফ্লাইটসূচি দিনে নিয়ে আসা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১১০টি ফ্লাইটের যাত্রীদের সেবা দিতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এতে চরম বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। মালামাল নেওয়ার ট্রলিরও সঙ্কট দেখা গেছে।

এদিকে কোনো কারণ বা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নভেম্বেরের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যের বিমানের টিকেটের দাম লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় চলতি বছরে অ্যাভিয়েশন সেক্টরে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত ঘটনা। টিকেটের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে এয়ারলাইন্স এবং ট্রাভেল এজেন্সি সিন্ডিকেটের যোগসাজশ। এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি বাংলাদেশ (আটাব) ও হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (হাব) বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এয়ারলাইন্সগুলো সিন্ডিকেটের কাছে কোটি কোটি টাকার টিকেটের স্লট একবারে বিক্রি করে টাকা ক্যাশ করে নিচ্ছে। টাকার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশে। এতে টিকেট সঙ্কট আরও বাড়ছে। এই সুযোগে সিন্ডিকেট অস্বাভাবিক দামে টিকেট বিক্রি করে মুনাফা করে নিচ্ছে। পাশাপাশি মশার উপদ্রব নজর কেড়েছে সবার। এ ছাড়া স্বর্ণের একাধিক চালান শাহজালাল থেকে আটক করার ঘটনাও ছিল এ বছরে।

নতুন বছরে সম্ভাবনা

চলতি বছরে অ্যাভিয়েশন ব্যবসায় নাম লেখানোর জন্য এনওসি পেয়েছে নতুন দুটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাই ঢাকা ও এয়ার অ্যাসট্রা। নতুন বছরে দেশের আকাশে পাখা মেলার টার্গেট তাদের। এর ফলে অ্যাভিয়েশন খাতে অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে এবং যাত্রীসেবাও বৃদ্ধি পাবে।

ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর সারা বিশ্বের অ্যাভিয়েশন খাত ছিল বিপর্যস্ত। অনেক এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের রিজেন্ট এয়ার বন্ধ হয়ে গেছে। আশার কথা হচ্ছে, এই খাতে গতি ফিরেছে, আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। নতুন দুটি এয়ারলাইন্স আসছে। ইউএস বাংলার বহরে দুটি বোয়িং, একটি এটিআর উড়োজাহাজ যুক্ত হয়েছে। দুবাই, মালদ্বীপ ও অভ্যন্তরীণ কয়েকটি রুটে প্রথমবারের মতো ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এর ফলে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লোকবল নিয়োগ হয়েছে যা খুবই ইতিবাচক এই সেক্টরে।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, করোনার পর অ্যাভিয়েশন খাতে অগ্রগতি সন্তোষজনক। আমাদের কার্গো সেক্টরে নজর দিতে হবে। স্ক্যানিং মেশিন বাড়াতে হবে। আমদানি-রফতানি টার্মিনালে বিশেষ নজর দিতে হবে। সক্ষমতাও আরও বাড়াতে হবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, এ বছর জুন পর্যন্ত করোনার কারণে এই সেক্টরটি বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে গেছে। সরকার করোনা ভালোভাবে মোকাবিলা করায় আমাদের বিধিনিষেধ কম ছিল। ফলে অক্টোবর থেকে অ্যাভিয়েশন সেক্টর ভালো বিজনেস করেছে, যাত্রীও অনেক বেড়েছে। আগামীতেও এটা অব্যাহত থাকবে। শাহজালালে যে চাপ সেটার কারণ হচ্ছে যাত্রী বৃদ্ধি পাওয়া। থার্ড টার্মিনাল হলে যাত্রী সুবিধা বাড়বে, এয়ারলাইন্স বাড়বে এবং তাদের ব্যবসাও হবে। কক্সবাজারে সমুদ্রে রানওয়ে হলে উন্মুক্ত হবে পর্যটন খাত।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ