1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

একুশের বিএনপি: খেই হারিয়ে প্রায়শ্চিত্তের খোলস আর মিথ্যাচারের বছর

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২২

নানা ঘটনাপ্রবহের মধ্য দিয়ে আরেকটি বছর পার করল দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি বিদায়ী বছরেও রাজপথে আন্দোলন জমাতে পারেনি। বরং কিছু কিছু জায়গায় তাদেরকে ইউটার্ন নিতে দেখা গেছে। দুয়েকটি জায়গায় তারা ফিরেছে ‘মূল’র দিকে। আর বছরের শেষে এসে ৫৪ বছর বয়সী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’ এবং চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ দাবির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে এক নতুন তত্ত্বের উদ্ভাবন করেছে অস্তিত্ব সংকটে থাকা বিএনপি।

বছরের বেশিরভাগ সময়জুড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন এবং শেষের দিকে এসে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে মাঠে ফেরার চেষ্টা করেছে বিএনপি। আর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দলীয় পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দলটি।

ভ্যাকসিনে ইউটার্ন

বিদায়ী বছরের ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এর পর ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সব শ্রেণিপেশার মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম।

অন্য আর দশটি ইস্যুর মতো সরকারের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম নিয়েও তুমুল বিরোধিতা এবং নেতিবাচক ভাষণ-বক্তৃতা অব্যাহত রাখে বিএনপি। ভ্যাকসিনেশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা নেতিবাচক খবর ও গুজবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ঘোষণা দেন— কোনো অবস্থাতেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রাজেনকার ভ্যাকসিন শরীরে প্রবেশ করাবেন না।

বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরুর এক দিন আগে ২৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভারত নিজে তাদের দেশের লোককে এই ভ্যাকসিন দিচ্ছে না। মার্চ মাসে ট্রায়াল করবে। আমরা কি তেলাপোকা, আমরা কি ব্যাঙ, আমরা কি গিনিপিগ? এখন ভারতের ভ্যাকসিন বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োগ করে ওরা দেখবে যে এরা বাঁচে না মরে, এরা অসুস্থ হচ্ছে না সুস্থ হচ্ছে? সেটা দেখে তারপর নিশ্চিত হবে। কত বড় নিষ্ঠুর তামাশা, কত বড় রসিকতা! যে দেশ নিজের দেশের ওপর এটা প্রয়োগ করেনি, মার্চ মাসে ট্রায়াল করবে; অথচ আমাদের দিচ্ছে ট্রায়াল করার জন্য।’

৩০ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার পর মানুষ বাঁচে, না মরে- তা দেখার জন্য ভারতের এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশ পাঠানো হয়েছে।’

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের এমন নেতিবাচক বক্তব্যের মধ্যেই ২ মার্চ সপরিবারে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রাজেনকার ভ্যাকসিন নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা এই ভ্যাকসিন শরীরে প্রবেশ করান।

এরপর ১৯ জুন রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মার্ডানার ভ্যাকসিন নেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই সময় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রাজেনকার ভ্যাকসিন এখন পৃথিবীর সব চেয়ে কাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন। সেটি না থাকায় ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মর্ডানার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।’

এরপর ২৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে গিয়ে নিজেই মর্ডানার ভ্যাকসিন নেন রুহুল কবির রিজভী। অর্থাৎ প্রথমে তুমুল বিরোধিতা করলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রাজেনকার ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাকসিন বিএনপি নেতারা গ্রহণ করেন এবং আগের দেওয়া বক্তব্য থেকে তারা সরে আসেন।

৭ মার্চ পালন

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃসংশভাবে হত্যার পর তৈরি হওয়া প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগিয়ে জন্ম নেওয়া বিএনপি কোনোদিনই বঙ্গবন্ধুর মহাকাব্যিক ‘৭ মার্চের ভাষণে’র দিনটিকে পালন করেনি। বরং ১৫ আগস্ট ঘটা করে দলীয় চেয়াপারসনের ‘বিতর্কিত’ জন্মদিন পালন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাট এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দলটি। এ ক্ষেত্রে বিদায়ী বছরটি ছিল বিএনপির জন্য এক অনন্য নজির স্থাপনের বছর। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি ৭ মার্চ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা আয়োজন করে। সেখানে দলটির শীর্ষ নেতারা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ভাষণ গোটা জাতিকে উদ্ভুদ্ধ করেছিল।’

দলের মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দলের অনেকে কেউ নাম দিয়ে, কেউ নাম না দিয়ে স্যোসাল মিডিয়াতে এই সুবর্ণজয়ন্তী পালনের যৌক্তিকতা, বিশেষ করে ৭ মার্চ পালন করা উচিত কি উচিত না, সে ব্যাপারে অনেক কথা লিখেছেন। কেউ কেউ নেগেটিভ কথাও লিখেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই— ৫০ বছর আগে যা ঘটেছিল, তার প্রকৃত ইতিহাস জানার অধিকার আজকের প্রজন্মের রয়েছে। আজকের যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে সত্যকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়ে একটা দলীয় ধারণা এই জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সেইখানে একটা অবস্থান নিতে চেয়েছি।

শুধু ৭ মার্চ পালন নয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বাংলাদেশের ‘আত্মা’ বা ‘মূল’-এ ফেরার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে বিএনপির অনেক নেতার মধ্যে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সভা-সেমিনারে প্রকাশ্যেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে ‘বাংলাদেশের স্থপতি’, ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দগুলো উচ্চারণ করেছেন তারা, যা আগে কখনো দেখা যায় নি।

গত ১৮ ডিসেম্বর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আজ এই মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর সময় আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি।’

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির লোগোর নিচে বিএনপি লিখেছিল ‘২৬ মার্চ, ১৯৭১ যেখান থেকে শুরু’। অর্থাৎ তারা জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মেনে নিয়েছে, কারন ছাব্বিশ মার্চের প্রথম প্রহরের ঘোষণাটি ছিলো বঙ্গবন্ধুর এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তৎকালীন মেজর জিয়ার ঘোষণাটি ছিলো সাতাশ মার্চে!

যদিও বিএনপি কখনো তৎকালীন রাষ্ট্রনায়ক ও জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহত্ত্বের কারনে মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদে জিয়াউর রহমানের পদন্নোতি ও পরবর্তীতে খুনিদের সাথে আঁতাত করে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের রহস্যজনক ভূমিকার কথা কখনো স্বীকার করে না।

শিশু মুক্তিযোদ্ধা তত্ত্বের উদ্ভাবন

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১৭ জুন খালেদা জিয়াকে যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা আটক করে, তখন তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বয়স ছিল ৩ বছর ৬ মাস ২৭ দিন। বিজয়ের ৫০ বছর পর এসে সেদিনের সেই সাড়ে তিন বছরের শিশু তারেক রহমানকে ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে দাবি করেছে বিএনপি। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরজুড়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও আলোচনা সভায় দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জোরের সঙ্গে শিশু মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে দলটি। সাড়ে তিন বছরের শিশু কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয় সেই ব্যাখায় না গিয়ে দলটি বলার চেষ্টা করে যেহেতু খালেদা জিয়া তার দুই শিশু সন্তানসহ আটক হয়েছিলেন, সেহেতু তারাও মুক্তিযোদ্ধা এবং শিশু মুক্তিযোদ্ধা।

গত ১১ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমবারের মতো বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনি শিশু মুক্তিযোদ্ধা। তিনিও তখন মায়ের সঙ্গে কারাগারে ছিলেন।’

বিদায়ী বছরে শুধু শিশু মুক্তিযোদ্ধা তত্ত্বের উদ্ভাবন নয়, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি করে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক আমদানি করে বিএনপি। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর মাস ডিসেম্বরজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মক্তিযোদ্ধা দাবি করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি ‘দুই শিশু পুত্রের হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন খালেদ জিয়া।’

১৯ ডিসেম্বর আয়োজিত বিজয় র‍্যালিতেও বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আজ আমাদের এই শপথ নিতে হবে— গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ খালেদা জিয়াকে আমরা মুক্ত করব এবং লন্ডনে নির্বাসিত আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আমাদের পরিচালনার ভার তার ওপর ন্যাস্ত করব।”

খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের মানবিকতা

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজা’য় ছিলেন। বর্তমানে তিনি সরকারের তত্ত্বাবধানে অত্যাধুনিক এভার কেয়ার হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ