1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

তিন্নি হত্যা ধামাচাপা দিতে চাচাকে ৫শ’ টাকা সেধেছিলেন অভি

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২২

চাঞ্চল্যকর মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় বাবা সৈয়দ মাহবুব করীম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম আদালত জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করীম বলেন, ২০০২ সালের ৫ নভেম্বর রাত নয়টার দিকে তিন্নি তাকে টেলিফোনে ধানমন্ডি যেতে বলে। সেখানে বাবু নামের এক জনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার আরেক নাম অভি (গোলাম ফারুক অভি) বলে জানায়। অভি তাকে অনেক সম্মান করে। জুস খাওয়ার জন্য জোরাজোরি করে। পরে তিন্নিকে নিয়ে বাসায় ফিরে যান তিনি। ফেরার পথে তিন্নিকে জিজ্ঞাসা করেন, অভির সাথে এই ঘুরাঘুরি কেন? তিন্নি বলে অভির সঙ্গে তার অ্যাফেয়ার। অভি তাকে বিয়ে করবে। তখন তিন্নিকে তার স্বামী পিয়ালের কথা তুলে বলেন, কীভাবে অভিকে বিয়ে করবে? এমন বিয়ে তিনি মানেন না। তিন্নি জানায় সে পিয়ালের সঙ্গে থাকতে চেয়েছে কিন্তু পিয়াল তাকে রাখতে পারেনি।

৬ নভেম্বর রাত ১০ টায় অভি তাকে তিন্নি-পিয়ালের বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে পিয়াল, তার ভাই রিয়াল এবং কাজের দুই মেয়েও ছিল। অভি বলে, পিয়ালের কাছ থেকে তালাক নিয়ে নেবে। তারপর পিয়ালকে ধমকের সুরে বলে, সে ২টা ডিভোর্স লেটার ব্যাকডেটে পাঠাবে। পিয়াল যেন সেগুলো ব্যাকডেট দিয়ে সিগনেচার করে রাখে।

অভি বলে, রোজার ঈদের পরেই সে তিন্নিকে বিয়ে করবে। তখন রোজা চলছিল। মেয়ে আনুষ্কা পিয়ালের কাছে থাকবে জানিয়ে অভি অদ্ভূত চেহারা করে তিন্নিকে চার্জ করে বলে, সে কত জনের সঙ্গে রাত যাপন করেছে, খুলে বলতে। তিন্নি তার সামনে সব স্বীকার করে। অভি তিন্নিকে বলে তার ব্যাংকে কত টাকা আছে? তিন্নি বলে, ৭০ হাজার টাকা আছে। মাঝে পিয়াল বলে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিল। তখন অভি তিন্নিকে বলে সে কেন মিথ্যা বলল?

এক পর্যায়ে পিয়াল অভিকে বলে, অভি ভাই আপনাকে নাকি তিন্নির বাবা দেখে নিবে। আসলে, তিনি তিন্নিকে সাপোর্ট করে অভির বিষয়টা দেখতে বলেছিলেন।

অভি সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে পিস্তল বের করে তার মাথার ডান পাশে তাক করে বলে- ওই শালার বেটা, তোর সাহস আছে আমাকে দেখে নেওয়ার। তিনি তখন ভয়ে বলেন, অভি ভাই আমি তো আপনারে চিনি নাই। তখন অভি বলে, এখন বুঝছোস তো আমি কে? এরপর অভি পিস্তল নামায়। তারপর তাকে বলে, এই বাসায় আর আসবি না। আরও বলে, সে তিন্নিকে নিয়ে হজে যাবে। আমি তখন বলি, তুমি কোন আইনে বিয়ে ছাড়া তিন্নিকে নিয়ে ওমরাহ করতে যাবে? পরে তাকে চলে যেতে বললে রাত ১২টার দিকে তিনি বাসায় চলে যান।

মাহবুব করীম বলেন, ৭/৮ নভেম্বর তার সঙ্গে তিন্নির দেখা হয়নি। দুই জনই লজ্জা পাচ্ছিলেন। ১০ তারিখ সন্ধ্যা ৭টা-সাড়ে ৭টার সময় তার বাসায় যায় তিন্নি। সেখানে তার বাবা-মাও থাকতেন। তিন্নিকে খাওয়ার কথা বললে সে জানায় রোজা রাখে। তিন্নি ৫-৭ মিনিট, বেশি হলে ১০ মিনিট ওই বাসায় ছিল। দাদাকে সে পা ধরে সালাম করে। বুকে জড়িয়ে আদর করে। তাকে সরি বলে জানায়, ওই দিনের জন্য দুঃখিত। তাকে মাফ করে দিতে বলে। তিন্নি দাদা-দাদির কাছেই বড় হয়েছিল। এরপর তিন্নিকে থাকতে বলেন। তিন্নি বলে, তাকে যেতে হবে। অভি এসে ফাংশনে নিয়ে যাবে। তখন রাত আটটা বাজে। পরে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ৯টার সময় তিন্নির বাসার কাজের মেয়ে বীনা তার বাসায় এসে জিজ্ঞাসা করে তিন্নি আপু কোথায়? তিনি বলেন, ও তো চলে গেছে আরও আগে। বীনা বলে, অভি এসে তিন্নিকে না পেয়ে রাগারাগি করছে। রাত ১০টা পর্যন্ত বীনা ২/৩ বার আসে তিন্নিকে খুঁজতে। তারাও অস্থির হয়ে খুঁজতে শুরু করেন।

রাত ১১টার দিকে তার বাবা তার বড় ভাইকে বলেন, তোরা রাতে বাসায় থাকিস না, অভি এসে শাসিয়ে গেছে। তিনি তাদের অন্য কোথাও চলে যেতে বলেন। তার ভাইয়া তখন তাকে রামপুরার এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যায়। পরের দিন তাকে সেখানে রেখে তার ভাই কলাবাগানের বাসায় চলে যান। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। ১৫ তারিখ সকাল ৯-১০টার দিকে তার মামাতো ভাই পেপারে তিন্নির লাশের ছবি তাকে দেখায়। তারা লাশ দেখে চিনতে পারেন। পরে কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে তিনি লাশ দেখতে চান। তার পরদিন পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ জুরাইন কবরস্থান থেকে তোলা হয়। সেখানে তিনি থেকে লাশ শনাক্ত করেন।

পরে পত্রিকায় দেখে এবং লোকমুখে শুনে জানতে পারেন যে, অভিই তিন্নিকে হত্যা করেছে। তিন্নির লাশের ছবি যেদিন পত্রিকায় ছাপা হয় সেদিন সকালে কলাবাগানে অভির সঙ্গে তার ভাইয়ের দেখা হয়। অভি বলেছে, তিন্নিকে খুঁজতে হবে না। অভি তার ভাইকে ৫০০ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু, তার ভাই নেননি।

এরপর তিন্নির বড় চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু তা শেষ হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। ওই দিন তিন্নির বাবা-চাচা আদালতে হাজির হলে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি রায় তালিকা থেকে সরিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করে। আদালত তা মঞ্জুর করে তারিখ ধার্য করেন। ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। পরদিন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সফি উদ্দিন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ