1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টিতে শেখ মুজিব ছিলেন অপরিহার্য

হাসান মোর্শেদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২২

কমিউনিস্টরা তাঁদের রাজনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী ব্যক্তিকে গুরুত্ব দেননা। তাঁরা মনে করেন রাজনৈতিক ইতিহাসের কেন্দ্রে ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করলে সেটা প্রচ্ছন্নভাবে হলেও ফ্যাসিবাদকে উস্কে দেয়। তাঁরা গুরুত্ব দেন সমগ্রকে, তত্ত্বকে, পার্টিকে। কমিউনিজমের রমরমা সময়ে বহু পার্টিজান কবি সাহিত্যিককেও বুর্জোয়া বলে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাঁদের সাহিত্যে ব্যক্তির আবেগ, উপস্থিতি প্রাধান্য পেয়েছে বলে।
যদিও শেষ পর্যন্ত বলশেভিক বিপ্লব আর কমরেড লেনিন, সোভিয়েত সংহতি আর কমরেড স্ট্যালিন, চীনের বিপ্লব আর মাও সেতুং একাত্ম হয়ে যান। এঁদের ব্যক্তি মহিমা উচ্চারনে কমিউনিস্টরা শ্লাঘা বোধ করেন।

“একজন ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমান না থাকলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি হতোনা, একজন ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ এর দশ জানুয়ারী ফিরে না আসলে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সুসংহত হতোনা”- এই সিদ্ধান্তকে কমিউনিষ্টরা ব্যক্তিবন্দনা, এমনকি ফ্যাসিবাদের প্রচ্ছন্ন উস্কানীও বলে বসবেন।
যদিও ইতিহাসের সত্য হলো এই- যে প্রজন্ম বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির সংগ্রাম ও সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাঁদের প্রায় সকলেই এই সিদ্ধান্তকে সত্য বলে মেনে নেন, এমনকি যারা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দলের সমর্থক নন তাঁরাও।

সমগ্র বাংলাদেশ সম্ভব হয়নি কিন্তু আমি বাংলাদেশের একটা উল্লেখযোগ্য প্রান্তের প্রায় পুরোটা ঘুরেছি। ভৈরব থেকে উত্তর দিকে যাত্রা শুরু করে একপাড়ে কিশোরগঞ্জ, আরেক পাড়ে ব্রাম্মনবাড়িয়া- আরো সামনে গিয়ে এক পাড়ে হবিগঞ্জ, আরেক পাড়ে সুনামগঞ্জ, সব শেষে নেত্রকোণা এই বিশাল ভাটি অঞ্চলে আমি ঘুরেছি মুলতঃ জেনোসাইডের তথ্য সংগ্রহে। এই কাজের পাশাপাশি এই অঞ্চলে শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতির প্রভাব বুঝতে চেষ্টা করেছি।
এই অঞ্চলে একদিকে নুরুল আমিন, মোনায়েম খাঁ, মাহমুদ আলীর মতো জোরালো পাকিস্তানপন্থী নেতা অপরদিকে কমরেড মণি সিং, কমরেড বরুন রায়, কমরেড আইউব রেজা চৌধুরীর মতো বাঘা সব কমিউনিস্ট নেতারা তাঁদের চারনভূমি হিসেবে তৈরী করেছেন। ১৯৭০ এর আগে আওয়ামী লীগের তেমন কোন সংগঠনই ছিলোনা। অথচ ‘৭০ এর নির্বাচনে আগে শেখ মুজিব এলেন, ভাষন দিলেন আর জয় করে নিলেন সব। এর মধ্যে কী পুরোটাই ম্যাজিক রিয়েলিটি? কোন নিরেট বাস্তবতা নেই?

সুনামগঞ্জের শাল্লার একজন মানুষ যিনি কমিউনিষ্ট পার্টি করতেন তিনি বলেছিলেন- “শেখ সাব আসার পরে কিয়ের কমিউনিস্ট, কিয়ের ন্যাপ? আমরা সবাই তাঁর মানুষ হয়ে গেছি”
ব্রাম্মনবাড়িয়ার চাতলাপাড়ে একজন বয়োবৃদ্ধ স্বতস্ফুর্তভাবে জানিয়েছিলেন- “শেখের মিটিংয়ের পর থাইক্কা তো খালি হেরঐ নাম। আর কাউর কথা আমরা কানে নেই নাই”

একজন ব্যক্তি মানুষের এই অসামান্যতাকে কেবল ইর্ষা, কেবল হীনমন্যতা দিয়ে মোকাবেলা করা যাবেনা। তাঁকে বাতিল করতে হলে আগে তাঁর পথ ধরে হেঁটে তার ম্যাজিকটা জানতে হবে তিনি কী করে বাকি সবাইকে বাতিল করে দিয়েছিলেন।

দুর্গম শাল্লা কিংবা চাতলাপাড়ের সাধারন মানুষ শেখ মুজিবের গুরুত্ব যেভাবে অনুধাবন করেছিলেন, ঠিক একই ভাবে সদ্য স্বাধীন দেশের সংহতির জন্য ব্যক্তি শেখ মুজিবের ফিরে আসা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো সেই তথ্য প্রমান পাওয়া যায় তৎকালীন নানা আন্তর্জাতিক দলিল ও সংবাদে।
৩ জানুয়ারী ১৯৭২, সিআইএ’র সিক্রেট রিপোর্টঃ
“The return of Mujib-the middle-of-the roader- who is regarded as Bangladesh’s legitimate leader by the vast majority of the people as well as most political and guerrilla factions-would give a strong boost to the new governments’ effort to solidify its control over the country.
Mujib’s presence would also overshadow the current competition for power among the political factions”
[ 3rd January 1972, CIA Secret Report]

ব্যক্তি মানুষ অবশ্যই পার্থক্য তৈরী করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি এবং নতুন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সংহত করায় ব্যক্তি শেখ মুজিবের অপরিহার্যতার ধারে কাছেও আর কেউ নেই। এই সিদ্ধান্ত ইতিহাসের সত্য সম্মত।

– লেখক ও গবেষক হাসান মোর্শেদের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগ্রহীত…


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ