1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

চলতি বছরের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিস্থিতি

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩

২০২২ পেরিয়ে এসেছে আরেকটি নতুন বছর। কেমন যাবে ২০২৩। সব কিছুর জন্য শুভ প্রত্যাশা ভালো। একই সঙ্গে কঠিন বাস্তবতাকে স্মরণে রাখা বাঞ্ছনীয়। বিশ্বের বড় চিন্তাবিদরা ২০২৩ সালে মানবকুলের জন্য এখনো কোনো সুখবর দিতে পারছেন না। আর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কেমন যাবে তার কিছুটা এরই মধ্যে আমরা আঁচ করতে পারছি। এতে রাজনীতি, অর্থনীতি কোথাও ভালো খবর দেখছি না। প্রধানমন্ত্রী কয়েকবারই বলেছেন, ২০২৩ সাল সবার জন্যই কঠিন সময় হবে। প্রথমে বাংলাদেশের কথা বলি।রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য, জ্বালানি, সারসংকটসহ মূল্যস্ফীতি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশকেও বড় ভোগান্তিতে ফেলতে পারে। নির্বাচনী বছর হওয়ায় সরকারি দলের জন্য এ এক কঠিন পরীক্ষা। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পর্কজনিত নীতির ক্ষেত্রে সরকারের দূরদর্শিতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন, তার অর্থ ২০২৩ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশের মানুষের মনোজগৎ এমনই যে সব কিছু মিলে ভূরিভোজের শেষান্তে একটু মিষ্টি কম হলেই আপ্যায়নকারীর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ে। আমরা পেছনের কথা মনে রাখি না, আর কৃতজ্ঞতাবোধের অভাব তো রয়েছেই, তার সঙ্গে তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণে কেউ যেতে চায় না। সুতরাং নির্বাচনের প্রাক্কালে খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। পত্রিকায় দেখলাম, আগামী জুন মাসে সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট হবে। ভালো কথা। এতে মেগাপ্রকল্পসহ বড় বড় প্রকল্পের ওপর জোর দিয়ে বাকি শত শত খুচরা প্রকল্প বাদ দিতে পারলে সেখান থেকে সাশ্রয়ী অর্থের দ্বারা প্রান্তিক মানুষের জন্য খাদ্য, কৃষকের জন্য সার আর বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে অনেক কিছু সামাল দেওয়া কিছুটা হলেও সহজ হতে পারে।

দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে পড়লে মানুষ বাকি সব কিছু ভুলে যায়। পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। ‘অ্যান্ড জাস্টিফাই দ্য মিনস’, নির্বাচনী বছরের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে হাজার বছরের পুরনো এই বেদবাক্যটি মনে রাখা প্রয়োজন। দেশকে নৈরাজ্য ও অস্থিরতার মধ্যে ফেলার একটি সুপরিকল্পিত চেষ্টা হচ্ছে, তা বোধ করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। বিএনপির ২৭ দফার মধ্য দিয়ে তাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে গেছে, প্রতিহিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বেশি নয়, শুধু প্রথম ও ১৩ নম্বর দফা দুটি মনোযোগসহকারে পড়লে বোঝা যায়, বিএনপি ধরেই নিয়েছে যখন তারা ২৭ দফা বাস্তবায়ন করবে, তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অটল কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকবে না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী বুদ্ধিজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাই সংগত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে ২৭ দফা কি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার পূর্বাভাস? জানি না। শুধু এতটুকুই বুঝি, শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ ছেড়ে তারা বোধ হয় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্য কিছু চিন্তা করছে।

এবার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন থাকতে পারে সেদিকে একটু নজর দেওয়া যাক। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ভারতের জাতীয় নির্বাচন আর ২০২৩ সালের শেষার্ধে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন। নেপালে জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল সম্প্রতি। ভারতঘেঁষা বলে পরিচিত শের বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেস এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও সরকার গঠন করতে পারেনি। মাওপন্থী ও চীনঘেঁষা বলে পরিচিত দুই কমিউনিস্ট পার্টি মিলে সরকার গঠন করেছে, যার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ড। নেপালি রাজনীতির এই সমীকরণ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় অনেক ঝোড়ো হওয়া বয়ে যাচ্ছে। এতে ভারত-চীন সীমান্তে আবার অশান্তি ঘটবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। কিছুদিন আগে অরুণাচল সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে এক দফা হাতাহাতি হয়েছে। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে পুরো উপমহাদেশে।

২০২৩ সালের শেষের দিকে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে কী হবে, তা বোঝা না গেলেও এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় সেখানকার রাষ্ট্র ও রাজনীতির নিয়ন্ত্রক সেনাবাহিনী যে দলকে ক্ষমতায় আনতে চায়, তারাই ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, নির্বাচন এলে পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দল সেনাবাহিনীকে খুশি করার জন্য কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে ভারতের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ ও বিষোদগারে লিপ্ত হয়। এর মাত্রা ও পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা কঠিন। এরই মধ্যে এই বিষোদগার শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক সভায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো বক্তব্য প্রদানের সময় অকূটনেতিক, অশালীন ও শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। নরেন্দ্র মোদিকে ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তুলনাসহ সন্ত্রাসী ও গণহত্যাকারী বলতে পর্যন্ত ছাড়েননি।

আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির কথা বলতে গেলে এখন প্রথমেই চীনের কথা আসে। ২৯ ডিসেম্বর একটি অনলাইন পত্রিকার খবরে দেখলাম ওয়াশিংটন ও তাইওয়ানের মধ্যে বড় অস্ত্রচুক্তি উন্মোচন। চীন এটিকে বড় ধরনের উসকানি মনে করছে। চীন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে তাইওয়ানকে তারা মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্র করবেই, সেটি শান্তিপূর্ণভাবে না হলে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা হবে। চীন কবে, কখন, কিভাবে সামরিক অভিযান চালাবে এবং সেটি হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে কি না, সেটি এখন বৈশ্বিক শান্তিবাদীদের বড় চিন্তার বিষয়। এ প্রসঙ্গে আগুনে ঘি ঢালার মতো ডিসেম্বর মাসে জাপান নতুন নিরাপত্তা, সামরিক ও প্রতিরক্ষা নীতি ঘোষণা করেছে। এতে দেখা যায়, সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের কাজে আগামী পাঁচ বছরে জাপান ৩৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করবে। চলতি বছরে ব্যয় করবে ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্য দিয়ে ভারত, যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে আমেরিকা ও চীনের পর তৃতীয় সামরিক বাজেটের দেশ হবে জাপান। এশিয়া ছেড়ে ইউরোপে গেলে সংগত কারণে প্রথমেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা আসবে।

কিছুদিন আগে এই কলামে লিখেছিলাম রাশিয়া ও ইউক্রেন বা পরোক্ষভাবে ন্যাটো জোট নিজ নিজ অবস্থানে পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে চলে যাচ্ছে। এতে দুই পক্ষেরই একতরফা বিজয়ী হওয়ার আকাঙ্ক্ষার কারণে পারমাণবিক বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের অবস্থানকে পশ্চিমা বিশ্ব একটু বাঁকা চোখে দেখছে, যদিও তাদের সঙ্গে ভারত এখন নানা বিষয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

অসামরিক জোট ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না, সাউথ আফ্রিকা) আগামী দিনে সম্প্রসারিত হয়ে তাতে সৌদি আরব, আর্জেন্টিনা ও ইরানের যোগ দেওয়ার যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেটি বাস্তবে রূপ নিলে ভূ-রাজনীতির হিসাব পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ব্রিকসের মাধ্যমে ইরান ও সৌদি আরব এবং চীন ও ভারতের যে দ্বন্দ্ব, সেখানে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি হলে সেটি অন্য রকম বার্তা দেবে।

তবে বিপরীত দিক হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে ইউরোপ আরো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে এবং সমগ্র ইউরোপের সামরিক বাজেট বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ইউরোপের রপ্তানি বাজার সংকুচিত হলে এশিয়া-আফ্রিকার দেশগুলোর অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাবে।

কিন্তু বিশ্বের মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স (এমআইসি) অর্থাৎ অস্ত্র বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন বছর যে সেরা পৌষ মাস হিসেবে আসছে তা বলা যায়, যদিও বৃহত্তর মানবতা ও মানব সভ্যতার জন্য সেটি হবে সর্বনাশের বিষয়। সম্পূর্ণ বিপরীত আরেকটি দিক হলো, ইসলামিস্ট উগ্রবাদী জঙ্গিরা উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোকে এখনো নাস্তানাবুদ অবস্থায় রেখেছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব ছেড়ে দক্ষিণ আমেরিকার দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানেও বড় কিছু পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ব্রাজিলে বামপন্থী লুলা ডি সিলভা ক্ষমতায় ফিরে আসায় এবং আর্জেন্টিনা ও ভেনিজুয়েলার অবস্থানের কারণে দক্ষিণ আমেরিকা নতুন কোনো বার্তা দিচ্ছে কি না সেটিও এখন বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির হিসাবে আসছে।

এশিয়ায় ফিরে এলে দেখা যায়, গেল বছরের শেষের দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের জাঁকজমকপূর্ণ সৌদি আরব সফর মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক ভূ-রাজনীতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে বলে মনে হয়। ইসরায়েলে আবার কট্টরপন্থী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ফিলিস্তিনের জনগণের ভাগ্যে আবার দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট আরো জটিল হবে।

আফগানিস্তানের কথা দিয়েই লেখাটি শেষ করতে চাই। সেখানে তালেবান শাসকদের বর্বরতা ক্রমেই উন্মোচিত হচ্ছে। এরই মধ্যে তাঁরা মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আফগানিস্তান আবার বৈশ্বিক জঙ্গি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হতে চলেছে। আফগানিস্তানের লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে, সেদিকে তালেবানের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, তারা নারীদের নিয়ে ফতোয়া তৈরিতে ব্যস্ত। তালেবানি আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কটি ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব ঘুরে বাংলাদেশে এসে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাঙালি সংস্কৃতি যদি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হয়ে থাকে, তাহলে সেটিকে রক্ষা করার জন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করা ছাড়া উপায় নেই।

লেখক : মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) – রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ