সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে সব জেলার নারীরা। সমাজের নেতিবাচক কথা ও প্রতিকূল পরিবেশকে হার মানিয়ে যশোরের সড়কেও রঙ-বেরঙের স্কুটি ও বাইক নিয়ে ছুটে চলছেন নারীরা। বাইক চালাচ্ছেন কেউ শখের বসে কেউবা আবার প্রয়োজনে।
এসব স্কুটি ও বাইকার নারীদের মধ্যে অধিকাংশই কর্মজীবী। অর্থ ও সময় সাশ্রয়ী এবং ভোগান্তিহীন যাতায়াত মাধ্যম হওয়ায় নারীদের মাঝে বাইক বা স্কুটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
যশোরের ষষ্ঠীতলা এলাকার বর্ণালী সরকারও একজন বাইকার। তিনি পেশায় চাকরিজীবী। অফিসে যাতায়াত করতে স্কুটি চালাচ্ছেন তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে। স্কুটি থাকায় অফিসে যাতায়াতের কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে তার জন্য। বর্ণালী বলেন, পরিবার থেকে সাপোর্ট পেয়েছি। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসছে। নারীদের সময়ের সঙ্গে তাল দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
শহরের উপশহর এলাকার তিন্নি খাতুন পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করেন। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে স্কুটি চালাচ্ছি। প্রথম দিকে অনেকেই বাজে মন্তব্য করতো। লোকেদের মন্তব্যগুলো আমলে না নিয়ে এগিয়ে গেছি। জয়তী সোসাইটির মত একটা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক উৎসাহ ও সাপোর্ট পেয়েছি।
জেলার শংকরপুরের ফিরোজা খাতুন বলেন, অনেক দিন ধরে স্কুটি চালাচ্ছি। চাকরির সূত্রে স্কুটি চালানো। প্রথমদিকে চুরি করে স্কুটি চালাতাম। কেননা শ্বশুরবাড়ি থেকে সাপোর্ট পায়নি। তবে স্বামী অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। বিপদে পাশে থেকেছেন।
নারী বাইকার জেসমিন রোজ একজন চাকরিজীবী ও উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, আমি এখন পাঁচ জন মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ছোট থেকে বাইক চালাই। মূলত পড়াশোনার জন্য স্কুটিটা কেনা। তবে স্কুটি চালাতে গিয়ে রাস্তায় প্রথম দিকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ ছেলেরা উত্যক্ত করতো, অনেকে আবার বাজে মন্তব্য ছুড়ে দিত। এখনো পথ চলতে কটু কথা শুনতে হয়। রাস্তায় যেতে দেখলে কিছু ছেলে ইচ্ছা করে জোরে হর্ন দেয়। একজন নারী পুরুষকে ওভারটেক করে বাইক নিয়ে এগিয়ে যাবে এটা তারা মানতে চাই না। তারপরও এগিয়ে চলেছি কারণ পরিবার অনেক সাপোর্ট করে।
শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা পলি দত্ত পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা। প্রথমদিকে তার একটু ভয় ছিল, সংশয় ছিল পাছে লোকে কিছু বলে এই নিয়ে। কিন্তু কয়েকদিন পরে সেই ভয়টা কেটে যায়। এখন স্কুটি চালাতে সাচ্ছ্যন্দবোধ করেন। তিনি বলেন, সময়ের আগেই কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারি। গণপরিবহনে ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় না। স্কুটি থাকায় জীবনটা অনেক সহজ হয়েছে।
একই এলাকার সুরমা ইয়াসমিন সুমনা বলেন, অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম নারীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে ছুটি প্রশিক্ষণ দেব। এখন ১০০ মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
পুলিশলাইন টালিখোলার জুলেখা আক্তার জুলি তিন বছর ধরে স্কুটি চালান। তিনি বলেন, মেয়েকে স্কুল থেকে আনা নেওয়ার জন্য এবং সময় বাঁচাতে স্কুটি চালাই। অনেক সময় রাস্তায় বের হলে রিকশা পেতে দেরি হয়, ভাড়াও বাড়তি। সব মিলিয়ে স্কুটিটা যুতসই। তবে স্কুটি নিয়ে বের হলে ইজিবাইক ও রিকশাচালক নারী বাইকার দেখলে পথ দিতে চায় না।
জয়তী সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা অৰ্চনা বিশ্বাস বলেন, আমাদের কাজ হলো মেয়েদের আগ্রহ সৃষ্টি করা। স্বাবলম্বী করে তোলা। দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে নারীদেরও উচিত এগিয়ে যাওয়া।