মাসিক বা ঋতুস্রাব প্রত্যেক নারীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন নারী প্রথম ঋতুমতী হওয়ার অর্থ হচ্ছে, সে মা হওয়ার জন্য উপযুক্ত। পৃথিবীতে প্রজন্মের ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে তার মাধ্যমে। ঋতুচক্রকে মেয়েলি বিষয় হিসেবে গণ্য করে এর ওপর আরোপ করা হয় অযাচিত লজ্জা। একে গোপনীয়তার মোড়কে আবৃত করে রাখা হয়। বহুসংখ্যক নারী এখনো মাসিক ব্যবস্থাপনার বাইরে। পিরিয়ডকালীন তারা প্যাডের পরিবর্তে কাপড় ব্যবহার করতে বাধ্য হন, যা অস্বাস্থ্যকর। আর এর ফলে লাখ লাখ নারী বন্ধ্যত্বসহ বিভিন্ন প্রসূতিজনিত রোগে ভোগেন। এতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে নারীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড। ২০১৪ সালের বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেজলাইন সার্ভে থেকে জানা যায়—দামের কারণে এখনো মাত্র ১৪ শতাংশ নারী প্যাড ব্যবহার করেন। আর ৮৪ শতাংশ নারী পুরোনো কাপড়, ন্যাকড়া বা তুলা ব্যবহার করেন। ন্যাপকিনের পরিবর্তে নারীরা যে পুরোনো কাপড় ব্যবহার করেন, দুর্ভাগ্যবশত সেই কাপড় যে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করবেন, বিভিন্ন সংস্কারের কারণে সেই সুযোগটাও আসে না। লুকোচুরি করে শুকোতে হয় সেটি। ভালো করে না শুকানোর ফলে এতে বাসা বাঁধে ছত্রাক, যার ফলে সারা জীবনের জন্য তার শরীরে ইনফেকশন ঢুকে যায়। ইনফেকশনের কারণে অনেকে সারা জীবন তলপেটের ব্যথা নিয়ে থাকেন, জন্মদান ক্ষমতা হ্রাস পায়, অনেকের বন্ধ্যত্বসহ নানা রকম সমস্যা হয়। ঋতুমতী নারীদের মধ্যে প্যাডের ব্যবহার শহরাঞ্চলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ, যেখানে সমগ্র দেশে এটি মাত্র ১২ থেকে ১৫ শতাংশ।
স্যানিটারি ন্যাপকিন স্বাস্থ্যকর হলেও এর মূল্য আকাশচুম্বী। বাংলাদেশে স্যানিটারি প্যাডের প্যাকেটের গড়মূল্য ১০০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত, যা বেশির ভাগ নারীর সাধ্যের বাইরে। একজন নারীর তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। প্রতি দিন চার থেকে ছয় ঘণ্টা পর পর প্যাড পরিবর্তন করতে হয়। এতে প্রতি মাসে খরচ হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। যার ব্যয় বহন করা নিম্ন আয়ের নারীর ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে নারীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড। স্যানিটারি ন্যাপকিনকে ‘বিলাসবহুল দ্রব্য’ না ভেবে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের’ একটি অংশ ভাবতে হবে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম সবার নাগালের মধ্যে আনতে হবে। ন্যাপকিন সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এলেই কেবল এর ব্যবহার বাড়বে। সরকারের উচিত স্যানিটারি ন্যাপকিনকে আবশ্যকীয় হিসেবে ঘোষণা করে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া। তাতে সব শ্রেণির নারীর পক্ষে স্যানিটারি ন্যাপকিন ক্রয় করা ও ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
লেখক : আফরোজা আক্তার – শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়