1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

উন্নয়নের স্বীকৃতি ও সহায়তার বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

সরকার অনেক পরে ডলারের দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছে। ডলারের তেজ অবশ্য কমে আসছে বিশ্বব্যাপীই। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন নতুন মুদ্রার ব্যবহার বাড়ার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনাও এ সময় বেড়ে উঠতে দেখা গেছে।

মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন প্রভাবশালী কর্মকর্তা ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরের সময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্টোয়নেট এম সায়েহর সফরটিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রাজনৈতিক কারণে মিস্টার লুর সফর বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল মিডিয়ায়। আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থাটির কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়ে যাদের দৃষ্টি রয়েছে, তারা কিন্তু ওই সফরসংক্রান্ত খবর মনোযোগ দিয়েই পড়েছেন। আমরা জানি, এর আগে আইএমএফের একটি মিশন ওই ঋণ প্রদানের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বাংলাদেশে আসে এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ করে আশ্বস্ত হয়ে ঋণ প্রদানের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে যায়। এর কিছুদিন পর আবার তাদের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফরে এলে কিছু লোক এমন কথা প্রচারের চেষ্টা করে যে, আইএমএফ সম্ভবত এ বিষয়ে নেতিবাচক। কিন্তু তাঁর সফরে ইতিবাচক বার্তাই মিলেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও যেসব কথাবার্তা তাঁদের মধ্যে হয়েছে, সেটা ইতিবাচক। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য রেখে বলেছেন, ‘আমরা আইএমএফের কাছ থেকে “বেইল-আউট” চাইছি না। সংকট যাতে ঘনীভূত হয়ে না ওঠে, সে জন্যই যে ৪৫০
কোটি ডলার ঋণসহায়তা চাওয়া হয়েছে।’

সে কথা তিনি সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে জাতিকে জানিয়েছেন।

অস্বীকার করা যাবে না যে, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের দিক দিয়ে আমরা কিছুটা চাপের মুখে আছি। দেশে ডলারের একধরনের সংকট চলছে এবং টাকার বিপরীতে এর দাম অনেকখানি বেড়ে গেছে। আমি অর্থনীতিবিদ নই। তবে একজন সিনিয়র রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বুঝি, সংকটময় বিশ্ব পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। ডলারের সংকট তার একটা। তবে বছর শেষে আবার দেখা গেল, বাংলাদেশের রপ্তানির অবস্থা মোটেও খারাপ নয়। বিশেষ করে আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্টস মন্দার বিশ্ববাজারেও ভালো করেছে। আমাদের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সও ভালো। তবে বিভিন্ন কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকাপয়সা কম আসছে বলে ডলারের সংকট আছে। আমাদের আমদানি করতে হয় খাদ্যসহ অনেক পণ্য। সে জন্য না চাইলেও ডলার ব্যয় করতে হয় বেশি। সংকটে পড়ে সরকার অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও তাতে যথেষ্ট সফল হওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় রিজার্ভ যাতে বেশি চাপে না পড়ে, সে জন্য বিদেশি ঋণ বিশেষভাবে দরকারি হয়ে পড়েছে। এটা না পেলে বাংলাদেশ যে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে পড়বে, তা মোটেও সত্য নয়।

এ-সংক্রান্ত অপপ্রচারও এরই মধ্যে থেমে এসেছে। ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের বোর্ডসভায় প্রতিশ্রুত ঋণটি পাস হলে এক-দেড় মাসের মধ্যেই এর প্রথম কিস্তি আমরা পেয়ে যাব। সংস্থাটির ঋণ বেশ কয়েক কিস্তিতে আসবে এবং ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ঋণ আমরা পেতে থাকব। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএমএফের সদস্য হয় এবং সদস্যদেশ হিসেবেই এই ঋণ পেতে যাচ্ছে। এর জন্য কিছু সুপারিশ বা শর্ত অবশ্য পালন করতে হচ্ছে, যার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। সংস্থাটির ঋণ পেতে সব দেশকেই এমন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আইএমএফের ঋণ পাওয়াটাও একটি বড় বিষয়। উল্লেখ্য, এর আগে সংস্থাটি থেকে ঋণ নিলেও বাংলাদেশ কখনো ১০০ কোটি ডলারের সীমা অতিক্রম করেনি। এবার পেতে যাচ্ছে ৪৫০ কোটি ডলার। বড় অঙ্কের ঋণ বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে এ কারণেও যে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও অর্জন করেছি আমরা। এটাও বলতে হয়, ডোনাল্ড লুর সফরে যেমন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতিবাচক বার্তা পাওয়া গেছে, তেমনি একই সময়ে আইএমএফ থেকেও ইতিবাচক খবর পেল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যারা নেতিবাচক খবর প্রচার করতে বিশেষভাবে আগ্রহী, তাঁরা বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গের সদ্যসমাপ্ত সফরও খতিয়ে দেখতে পারেন। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের সম্পর্ক উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে এই সফরে এসে তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতির কথাই বেশ করে বলে গেছেন। এগুলোকে নিছক শুভেচ্ছাসূচক বক্তব্য বলে বিবেচনা করা যাবে না। তিনি যে আমাদের চ্যালেঞ্জের কথা বলেননি, তা নয়। আবার এটাও বলেছেন, দুনিয়ার প্রায় সব দেশই কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে বড় কিছু চ্যালেঞ্জে পড়েছে। এগুলো আমরা অস্বীকার করি না, বরং বাইরে থেকে আসা এসব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করে আরও এগিয়ে যাওয়ার পথেই রয়েছে বাংলাদেশ। এই নিবন্ধ তৈরির সময় ডিসিদের সম্মেলনে রাখা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রয়েছে সংবাদপত্রে। এতে তিনি বলেছেন, কেবল অর্থ ব্যয় করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ তিনি পছন্দ করেন না। এরই মধ্যে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে টাকাপয়সা ব্যয় বন্ধ করেছে সরকার। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বরাবরই কমানো হয়ে থাকে। এবারও আশা করা যায়, সেটা আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

সরকার তার নিজের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে কৃচ্ছ্রসাধন করে চলেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এর সদ্ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে এর দাম দফায় দফায় বাড়ানোর ক্ষেত্রে জনস্বার্থ রক্ষার কাজটি যেন কোনোভাবে অবহেলিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের হাতে যেমন রাজস্ব বা টাকাপয়সার ঘাটতি আছে, তেমনি সাধারণ মানুষও আছে সংকটে। গ্যাস, বিদ্যুতের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দামও বেড়ে চলেছে। এতে বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষ বিরাট সংকটে আছে। এ অবস্থায় এমন ধারণা যেন ছড়িয়ে না পড়ে যে, আইএমএফের শর্ত পূরণের জন্যই সরকার এসব অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মতো খাতে দুর্নীতি ও অপচয় রয়েছে এবং সেটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও সরকারকে এভাবে দাম বাড়াতে হয় না বলে মত রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। এ জন্য সময়ের প্রয়োজনে বিদ্যুৎ খাতে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করা হয়। তাতে সত্যতা থাকলে সংশোধনের সুযোগও নিশ্চয়ই রয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে বেশি দেরি করা যাবে না।

সরকার জ্বালানি তেলের দাম একযোগে অনেক বাড়িয়েছিল এবং তাতেও জীবনযাত্রার ব্যয় হঠাৎ অনেকখানি বেড়ে যায়। এখন আবার বিশ্ববাজারে এর দাম কমে আসতে দেখা যাচ্ছে। সরকারকে এই সুযোগে জ্বালানির দাম কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার কথা ভাবতে হবে। আইএমএফের মতো সংস্থারও তাতে আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না।

তারা এসব পণ্য ও সেবার দাম স্থির করার বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথাই বলে আসছে। বাংলাদেশ অবশ্য তাদের সব কথায় কখনো সায় দিয়ে নীতিনির্ধারণ করেনি এবং জনস্বার্থসচেতন কোনো সরকারই তা করতে চায় না। যেমন—সরকার অনেক পরে ডলারের দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছে।

ডলারের তেজ অবশ্য কমে আসছে বিশ্বব্যাপীই। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন নতুন মুদ্রার ব্যবহার বাড়ার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনাও এ সময় বেড়ে উঠতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ কেন শ্রীলঙ্কার পরিণতি বরণ করবে না—এ বিষয়ে এরই মধ্যে কিছু আলোচনা হয়েছে। আমিও সীমিত জ্ঞানে এ বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করেছি এর আগে প্রকাশিত নিবন্ধে। অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থার তিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাম্প্রতিক সফর থেকে পাওয়া বার্তাও একই কথা বলছে। বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একটি বক্তব্য এখানে উদ্ধৃত করতে চাই। তিনি বলে গেছেন, ‘২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ এই সেই বিশ্বব্যাংক, যারা দুর্নীতির আয়োজন হচ্ছে অভিযোগ করে আমাদের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল। এদের দেখাদেখি এডিবিসহ অন্যান্য সংস্থা এই প্রকল্প থেকে সরে গেলেও তাদের অভিযোগ পরে ভুল বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

এ অবস্থায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নও করেছে। ইতিমধ্যে চালু হয়ে গেছে সেতুটি এবং অর্থনীতিতে এর নানামুখী ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বক্তব্যে তেমন কিছু প্রকাশ না করলেও বিশ্বব্যাংক নিশ্চয়ই এর জন্য অনুতপ্ত। উটকো অভিযোগ গ্রাহ্য না করে তাদের বরং উচিত ছিল এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পাশে থাকা। তবে সেটি না হলেও সংস্থাটির সঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। শুনে অবাক লাগতে পারে, ওই সময় থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে সংস্থাটির সহায়তা না কমে বরং আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে বলেই প্রভাবশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থার সহায়তা অব্যাহত আছে এবং তাদের মনোভাব এখন আরও ইতিবাচক। বিভিন্ন প্রকল্পে চীন, রাশিয়া থেকেও কম অর্থসহায়তা গ্রহণ করছে না সরকার। তাতে সুদের হারসহ শর্ত নিয়ে কথা আছে। তবে এ কথাও ঠিক, সময়মতো কাজ শেষ করে এবং অপচয় রোধ করতে পারলে সব সহায়তাকে ইতিবাচক ধারায় নিয়ে এসে জাতীয়ভাবে লাভবান হওয়া কঠিন কিছু নয়। সে বিষয়ে বর্তমান সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অঙ্গীকারের বাস্তবায়নই জনগণ দেখতে চাইবে।

লেখক:  মোনায়েম সরকার – রাজনীতিক, লেখক ও মহাপরিচালক, বিএফডিআর।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ