1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আমাদের সুন্দরবন বনাম আমাদের হিপোক্রেসি

আকতার বানু আল্পনা : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

এ দেশের যেসব মানুষ দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান, তাদের অনেকেই সুন্দরবন দেখেননি। আমি নিজেও কিছুদিন আগেই গেছিলাম। এত অসাধারণ একটি বন এবং অমূল্য একটি সম্পদ যে আমাদের আছে, সেটির গুরুত্ব এতদিন শুধু অনুমানই করতাম। কিন্তু স্বচক্ষে দেখার পর মনে হলো, এটিকে শুধু ‘অসাধারণ’ বললে অনেক কম বলা হয়। এটি আসলে ‘অকল্পনীয় এবং অভূতপূর্ব’। এই বনকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা আসলে ভাষায় বর্ণনাতীত। তাই সে চেষ্টায় আমি যাচ্ছি না। আমি আসছি অন্য একটি দিক নিয়ে। আমি মনে খুব খায়েশ নিয়ে গেছিলাম যে, দূর থেকে হলেও যেন একবার বাঘমামার দেখা পাই। তবে ওখানে গিয়ে বাঘমামা সম্পর্কে যেসব গল্প শুনে এলাম, তাতে মনে হলো, দেখা না হয়েই ভালো হয়েছে।

সুন্দরবনের বাঘ যখন গর্জন করে, তখন বনের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা কাঁপতে থাকে, যা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। সেই বাঘ হঠাৎ করে সামনে এলে অনেক পুরুষুত্তমেরই ভয়ে হাঁটু কাঁপতে থাকে। বাকিটা আর না বলি।

বাঘের শিকার করার কৌশলটা একটু অন্যরকম। বাঘ কাকে শিকার করবে, তা দূর থেকে দেখে আগে স্থির করে নেয়। তারপর শুধু পছন্দকৃত সেই হরিণ বা প্রাণীকেই ধরে। বাকিদের ধরার চেষ্টা করে না। শুনে আমার মেয়ে বললো, ‘আম্মু, তোমার খবর আছে। তোমার শরীরের যা অবস্থা, তাতে বাঘের আর কাউকে পছন্দ হবার কোনোই সম্ভাবনা নাই’।

বাঘ আড়াল থেকে নিঃশব্দে এগিয়ে এসে হঠাৎ করে আক্রমণ করে। ফলে প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। সঙ্গে বন্দুকধারী সিকিউরিটি গার্ড থাকা সত্ত্বেও। আমরা বিকেলবেলা বনের ভেতর দিয়ে হাঁটছিলাম। তখন হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। ফলে আমরা একটা পুকুরের মাঝখানের ছাউনিতে বৃষ্টি ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। কিন্তু বৃষ্টি ছাড়লো না। তখন সিকিউরিটি গার্ড বললো, ‘বৃষ্টিতে ভিজেই যেতে হবে। কোনও উপায় নাই। এখানে আর থাকা যাবে না। কারণ অন্ধকারে কোথায় বাঘ লুকিয়ে আছে, বোঝা যাবে না। তাছাড়া এই পুকুরেই বাঘ পানি খেতে আসে’। শুনে আমরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে দ্রুতপায়ে প্রস্থান করলাম।

বনের ভেতর দিয়ে নৌকায় করে যাবার সময় ফরেস্টের সিকিউরিটি গার্ড জানালো, বাঘ এসব ছোট নদী বা খালে নামে না। লাফ দিয়ে এপাড় থেকে ওপাড়ে চলে যায়। কী সাংঘাতিক কথা। কল্পনা করুন তো, আপনি নৌকায় বসে আছেন। আর বাঘ মামা উড়াল দিয়ে আপনার মাথার উপর দিয়ে খালের অন্যপাড়ে চলে যাচ্ছে, হাউ রোমাঞ্চকর। অজ্ঞান হওয়ার এর চেয়ে ভালো উপায় আর কী হতে পারে। তখন বাঘ মামার সুবিধা হয়ে গেলো। জ্ঞান ফিরে আপনি দেখলেন, আপনি জাগতিক সব কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে হুর বা গেলমানদের সঙ্গে দুধের নহরের পাশে বসে তীন ফল খাচ্ছেন এবং সেখানে কোনো বাঘ নেই। হাউ রোমান্টিক।

বাঘ মামার একটা ভালো দিকও আছে। সেটা হলো, ক্ষুধা না লাগলে তিনি শিকার করেন না। কিন্তু মুশকিল হলো, তিনি ক্ষুধার্ত কিনা, তাঁর চেহারা দেখে সেটা বোঝার কোনো উপায় নাই।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্য পশু-পাখিরা যান্ত্রিক কোলাহল পছন্দ করে না। ফলে তারা গভীর বনে বা ভারতে চলে যাচ্ছে। অনেক প্রজাতি বিলুপ্তও হয়ে যাচ্ছে।

মরাল অফ দ্য স্টোরি : আমরা আসলে হিপোক্রেট। কারণ আমরা মুখে দেশকে ভালোবাসার কথা বলি। কিন্তু বেড়াতে যাবার সময় বিদেশে যাই। দেশপ্রেমের ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা তুলে ফেলি। অথচ দেশের টাকা লুট করে বিদেশে নিয়ে যাই। দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল চিন্তায় রাতে আমরা ঘুমাইনা পর্যন্ত। অথচ সুন্দরবনের মতো এমন একটা অমূল্য সম্পদ অনায়াসে ধ্বংস করে ফেলি। ওয়াও বাঙালি। ইউ আর গ্রেট!

(আকতার বানু আল্পনা এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে…)


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ