1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

এমন সমাজ কাম্য ছিলো না

মঞ্জুরে খোদা টরিক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

এই বিতর্ক নতুন নয়। তখন আমি স্কুলে পড়তাম, আজ থেকে বহু বছর আগে, এরশাদের জমানায়, বাংলা একাডেমি থেকে একটা বই প্রকাশিত হয়েছিল। বইয়ের নাম ছিল ‘জ্ঞানের কথা’ যে বইটি আমার বাড়িতে আজো সংরক্ষণে আছে। আমার বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমাদের জন্য সে বইটা ঢাকা থেকে উপহার হিসেবে কিনে এনেছিলেন। সেটাই ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিবর্তনবাদ সম্পর্কে আমার-আমাদের জানার প্রাথমিক ধারণা। অতপর দেবী প্রসাদ চট্টপাধ্যায়ে ‘যে গল্পের শেষ নেই’ সে পথ ধরে চালর্স ডারইউনের ‘অন দি অরিজিন অব স্পেসিস’ বইগুলো পড়েছি। এ সব বইয়ে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব-ধারার বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর বিজ্ঞান কী, কাকে বলে সেটা জানতে চেষ্টা করেছি। তবে তা অভ্রান্ত নয় অবশ্যই। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানের উন্নতর ব্যাখ্যা-গবেষণা না হাজির অবধি সেটাই স্বীকৃত হিসেবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে বজায় থাকে। ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্বের বিষয়টাও তাই।
তখনই জেনেছিলাম এই জ্ঞানের কথা বইটা ধারবাহিকভাবে বিভিন্ন খন্ডে প্রকাশিত হবে। বইয়ের পিছনে সে কথা নোট আকারে লেখা ছিল। কিন্তু জ্ঞানের কথা পরবর্তী খন্ড আর বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়নি। সে সময় যেটা প্রকাশিত হয়েছিল পরবর্তী সময়ে সেটাও বাতিল করা হয়েছে।

এ কাজ তখন নয় তার আগে থেকেই বাংলাদেশে একটি ধর্মান্ধ সমাজ নির্মাণের পাকা বন্দবস্ত তৈরি হয়েছিল। এখন তা বিভিন্ন স্তরে সেই নকশায় বাস্তবায়ন চলছে। সরাসরি সে কাজটা করে দিলে কেমন হয়? না সেটা করা হবে না বরং একটু কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়- শ্যাম, কূল রাখতে। সে জন্য এমনভাবে এসব বিতর্ক সামনে আনা হবে- তাতে তথাকথিত জনমত ও অনুভূতির কথা বলে গোপন এজেন্ডা চামে বাধাহীন বাস্তবায়ন করে যাবে।

কিন্তু বিবর্তনবাদ সম্পর্কে বাংলাদেশের মূর্খ-অর্ধশিক্ষিত কাঠমোল্লাদের মধ্যে এমনকি ধর্মান্ধ তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে এ ধারণা প্রবল যে হুট করে আজকের সভ্য (?) মানুষগুলো কোনো একসময় বানর থেকে মানুষ হয়ে গেছে। এই কথিত শিক্ষিত মানুষদের নিয়ে হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘এরা না বুঝেছে ভালো করে ধর্ম, না বুঝেছে ভালো করে ধর্ম।’ এদের নিয়ে আর কী বলবো? রসায়নের শিক্ষক ও সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদও তাঁর কোনো আলাপে বলেছিলেন, ‘ঘষাঘষি করে বিশ্বের জন্ম/সৃষ্টি হয়েছে, এটা হতে পারে না, আমি বিশ্বাস করি না।’ তিনি তা বিশ্বাস নাই করতে পারেন। তার মতো অনেকেই সে কথা তত্ত্ব-শিক্ষা-বিজ্ঞান বিশ্বাস নাই করতে পারেন, তার মানে এই শিক্ষা-অধ্যায় বিজ্ঞানের বই থেকে উঠিয়ে দিতে হবে? বাতিল করতে হবে? তা কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিশির ভট্রাচার্য্যর মতটা এখানে তুলে ধরছি, ‘পৃথিবীর অন্য সব দেশে বিজ্ঞান বইয়ে যা পড়ানো হচ্ছে, বাংলাদেশের বিজ্ঞান বইয়েও তাই পড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশের স্কুলে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান-খ্রিস্টান চারটি ধর্মও পড়ানো হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত। সব পড়েটড়ে ‘আশরাফুল মকলুকাত’ শিক্ষার্থীরাই সিদ্ধান্ত নিক, কোনটা যুক্তিযুক্ত, ধর্মের সৃষ্টিবাদ, নাকি বিজ্ঞানের বিবর্তনবাদ। বিজ্ঞান পড়াতে গেলে বিবর্তনবাদ পড়াতেই হবে। আপনি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করেন না, সেটা আপনার ব্যাপার। ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মে আপনি বিশ্বাস করেন না, কিন্তু তাই বলে আপনি এটা বলতে পারেন না যে অন্য ধর্মগুলো স্কুলে পড়ানো যাবে না। সাচ্চা মুমীন ডক্টর শহীদুল্লাহ মা মনসায় বিশ্বাস করতেন না, কিন্তু তাই বলে ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য পড়তে তাঁর কোনো সমস্যা হয়নি।

কোনো কিছু পড়তে হলে, সেটা বিশ্বাস করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিশ্বাস না করেও অন্যের বিশ্বাস সম্পর্কে জানা যায়। শিক্ষার্থীরা ধর্মও পড়ছে, বিবর্তনবাদও পড়ছে। আমাদের সময়ে, পাকিস্তান আমলে, বাংলা সাহিত্য বইয়ে ধর্মনির্বিশেষে সব পাকিস্তানিকেই হজরত মুহম্মদের (স.) জীবনী পড়ানো হতো। কী সমস্যা হয়েছে, তাতে? এক মহাপুরুষের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে তো আমাকে বাধ্য করা হয়নি। সরকার, সমাজ ও অভিভাবকদের দায়িত্ব সব ধরনের জ্ঞান শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা। শিক্ষার্থীরা কতটুকু নেবে বা না নেবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’

বিবর্তনবাদের তত্ত্ব আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে বিশ্বের সর্বত্রই পঠিত হয়, কট্টর ও রক্ষণশীল ইসলামী দেশ-সমাজ ছাড়া। আর আমাদের দেশ-সমাজ কোনো ইসলামি বিপ্লব ও রক্তপাতহীনভাবে সে কাজটা অতি যত্নের সাথে করে যাচ্ছে। ধিক্কার আর প্রতিবাদে কী করতে পারি?

হুমায়ুন আজাদের ভাষায় বলি, শুধু হাহাকার জাগে : আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?এই কি আমাদের স্বপ্নের বাঙলাদেশ, সোনার বাঙলা?/এই মানবাধিকারহীন বন্দীশিবির? এই কুষ্ঠাগার? এই ভাগাড়? এই নরক? এই ডাকাতপল্লী? এই দূষিত ডোবা? এই দুর্বৃত্তকবলিত চর? এই পঙ্গু হাসপাতাল? এই নর্দমা চেয়েছিলাম আমরা?

লেখক : মঞ্জুরে খোদা টরিক – লেখক ও গবেষক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ