1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পণ্য বহুমুখীকরণে রপ্তানি হবে শামুক-ঝিনুক

বাণিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

প্রকৃতির কোন কিছুই ফেলনা নয়। নদী কিংবা সাগরে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে উচ্ছিষ্ট হিসেবে যে শামুক ছুড়ে ফেলেন পানিতে, সেটিই বিদেশে রপ্তানি করে আসবে বৈদেশিক মুদ্রা-ডলার। মুক্তার উৎস হিসেবে ঝিনুকের কদর থাকলেও শামুক কখনো বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে দেশে বিবেচিত হয়নি। রপ্তানি তালিকায় এবার যুক্ত হতে যাচ্ছে শামুক-ঝিনুক। পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগ হিসেবে কয়েক বছর ধরে শামুক রপ্তানির চেষ্টা করছেন হাতেগোনা কয়েকজন উদ্যোক্তা।

কিন্তু এ সংক্রান্ত সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও গাইড লাইন না থাকার কারণে শামুক-ঝিনুক রপ্তানি হতে পারছে না। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার সঙ্গে শামুক-ঝিনুকের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। এ কারণে নীতিমালায় বিশেষ শর্ত জুড়ে দিয়ে শামুক-ঝিনুক রপ্তানির অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে সরকার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণে জোর দেয়া হয়েছে। এলক্ষ্যে পোশাক, মাছ ও চামড়ার মতো বহুল প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। কিন্তু নতুন কোনো পণ্য রপ্তানির বিষয়টি খুব সহজ নয় বলে অভিযোগ রয়েছে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের। এক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের অনভিজ্ঞতা বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

মাছ কিংবা হাঁসের খাবার হিসেবে দেশে কিছু শামুক ব্যবহার হলেও এর ৯০ ভাগেরই কোনো ব্যবহার হয় না। অথচ শামুক একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের খাদ্য হিসেবে শামুকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মুক্তার উৎস হিসেবে দেশের কয়েকটি জেলায় ঝিনুক এখন বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে চাষ করা হয়। ঝিনুক চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, অর্থনীতিতে ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

এছাড়া চুন তৈরিতে ঝিনুকের ব্যবহার হয়ে থাকে। সেই তুলনায় প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া শামুকের সঠিক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে শামুক আমদানি করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টন শামুক রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশী আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সেভ অ্যান্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনাল।

সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রতিকেজি শামুক ২ মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে বিদেশে। অর্থাৎ বর্তমান বাজার মূল্যে এক কেজি শামুক রপ্তানি করে ২২০ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া পাবে। দেশের সুন্দরবন, কক্সবাজার এবং কুয়াকাটার সাগর থেকে বছরে ১০ লাখ টন শামুক আহরণ করতে পারবেন জেলেরা। রপ্তানির অনুমতি দেয়া হলে এসব শামুক বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। গত ২৩ নভেম্বর সেভ অ্যান্ড সেভটি ইন্টারন্যাশনাল পক্ষ থেকে শামুক রপ্তানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন দেয়া হয়েছে।

ওই আবেদনে বলা হয়েছে, দেশের রপ্তানিতে বিভিন্ন পণ্য এবং পণ্যের বাজার বৃদ্ধি ও বাজার বহুমুখীকরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে বেসরকারি খাত। বর্তমান মৌসুমে বাংলাদেশে শামুক উৎপাদন হওয়ায় এবং স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা থাকার পরও তা ব্যবহার না করায় প্রতিবছর শত শত কোটি মার্কিন ডলার লোকসান হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত প্রতিবছর শামুক রপ্তানি করে কোটি কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। শামুক রপ্তানি করতে পারলে বাংলাদেশের কিছুটা হলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বিপুলসংখক বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং ইউরোপে আমদানিকারকদের কাছ থেকে চাহিদাপত্র সংগ্রহ করছেন ব্যবসায়ীরা। শামুক রপ্তানি করার মাধ্যমে দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন উদ্যোক্তারা। মস্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শামুক রপ্তানির ছাড়পত্র দেয়ার আবেদনটির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেও দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণের তাগিদ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮ এ বলা হয়েছে রপ্তানি বৃদ্ধি এবং রপ্তানি পণ্যের নতুন বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য শামুক রপ্তানি করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে। এ প্রসঙ্গে সেভ অ্যান্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. মেহেদী হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, কয়েক বছর আগে শামুক রপ্তানির অনুমতি চেয়ে ছাড়পত্র প্রদানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়।

কিন্তু সেই সময় অনুমতি দেয়া হয়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে শামুক রপ্তানির সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ভারত গত ৩২ বছর যাবত বিশ্বের কয়েকটি দেশে শামুক রপ্তানি করছে। মিয়ানমারও এ খাতে ভালো করছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা অনুমতিই পাচ্ছি না। তিনি জানান, প্রাকৃতিকভাবে দেশে বিপুল পরিমাণ শামুক আহরণ করা সম্ভব। এ কারণে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করেই শামুক আহরণ করে তা রপ্তানি হতে পারে।

সুন্দরবন এলাকায় বিপুল পরিমাণ শামুক রয়েছে। একই অবস্থা কক্সবাজার এবং কুয়াকাটার সাগরে। এছাড়া সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনার চিংড়ি ঘেরগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শামুক হয়। ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশ কোনো ঝুঁকির মুখে পড়বে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে দ্রুত শামুক রপ্তানির সুযোগ দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে রপ্তানিমালায় বিশেষ শর্তজুড়ে প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে আসা হউক। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে ১০ হাজার টন রপ্তানির অর্ডার পেয়েছি। প্রতিকেজি শামুকের রপ্তানি মূল্য হবে প্রায় দুই ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই আমরা রপ্তানি শুরু করব।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শামুক রপ্তানিতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহের বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে কিনা সেই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা বেশি জরুরি। শামুক বায়ো-ফিল্টার হিসেবে কাজ করে, ফলে পানির গুণাগুণ ভালো থাকে। অতিমাত্রায় আহরণের ফলে পরিবেশগত অসামঞ্জস্যতা তৈরির আশঙ্কায় প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে শামুক ও ঝিনুক সংরক্ষণ, পোনা উৎপাদন ও চাষের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প রয়েছে।

যে কোনো রপ্তানির যে কোনো সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চায় মন্ত্রণালয়। মাছের পাশাপাশি এখন কাঁকড়া ও কুইচ্যা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। যেহেতু কখনো বাংলাদেশ থেকে শামুক রপ্তানি হয়নি, তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের মতামত নেয়া হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে শামুক-ঝিনুক রপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ