1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর: তারেক কি খালেদা জিয়াকে মাইনাস করছেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণার পর দেশে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান না হওয়ায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চরম হতাশা বিরাজ করছে।
সাম্প্রতিক রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর স্পষ্ট হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। “তারেক রহমান খালেদার মুক্তি চায় না” – এমন গুঞ্জন উঠেছে কেন্দ্র থেকে তুণমূল পর্যন্ত।

কারাভোগের নেপথ্যে তারেক?

একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার সাজা ঘোষণায় তারেক রহমানের নির্দেশে দুজন আইনজীবী ও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখেছেন। একজন সিনিয়র আইনজীবীর মতে, খালেদা জিয়ার কৌশলীরা চাইলে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে মামলার রায় ঘোষণা আরও প্রলম্বিত করতে পারতো। রাজনৈতিক সুবিধা আদায়, নেতাকর্মীদের মাঝে সহানুভূতি সৃষ্টি এবং কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে বিএনপি থেকে সরিয়ে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার কারাভোগ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছেন।
বিএনপিতে এখন মূলত তিনটি ভাগ দৃশ্যমান। নেতাকর্মীদের কেউ খালেদা জিয়ার অনুগত নেতাদের সাথে, কেউ তারেকের অনুগতদের সাথে, আবার কেউ সিনিয়র নেতাদের অনুসরণের কারণে বিভক্তি চরমে উঠেছে। এই ক্রান্তিকালে দলের অনেকে সরকারের সাথে যোগাযোগ করছে বলে জানা গেছে, যা দলের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত সাধারণ নির্বাচনে না যাওয়ায় অন্তদ্বন্দ্ব ও দলীয় কোন্দল সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও খালেদার অনুপুস্থিতিতে তারেকের কর্তৃত্বসুলভ আচরণ বিএনপি নেতাদের নাকাল করছে। সামনের কঠিন চ্যালেঞ্জ তারা কিভাবে মোকাবিলা করে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে খালেদা জিয়ার ভুল সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তে অটল না থাকা, তারেক রহমানের অদক্ষতা, অদূরদর্শিতা ও একগুয়েমি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের পলায়ন মানসিকতা এবং সর্বোপরি জামাত নির্ভর হয়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার কারণে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন বিএনপি একদিকে যেমন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়েছে, তেমনি জনগণের মাঝে কোনো আবেদনও সৃষ্টি করতে পারছে না। এসব কারণে বিএনপি’র ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে।

বিএনপিতে কারা সরকারের এজেন্ট?

বেগম জিয়া কারাগারে যাবার মাত্র একঘণ্টার মধ্যে বিএনপিতে মত বিরোধ প্রকাশ্য আকার নিয়েছে। বিএনপির নেতারা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন এবং বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কেউ তারেক জিয়াকে দলীয় প্রধান মানছেন আবার সিনিয়র নেতারা এ ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন।
দলীয় বিভ্রান্তির ছাপ স্পষ্ট বিএনপিতে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া রায় পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা থাকলেও মধ্য রাত নাগাদ রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপির সিলপ্যাডের প্রেরিত ঘোষণায় নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকতে বলা হয়। বিএনপির একটি অংশের ধারণা রুহুল কবীর রিজভীর সাথে সরকারের কোনো সমঝোতা হয়েছে, তাই বিক্ষোভ সৃষ্টির সুযোগ বন্ধ করে খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ করতে চাচ্ছেন।
অনেকের মতে, ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মওদুদ আহমেদসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে তারেক রহমানের বৈরিতা সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এছাড়া আদালতের দৃষ্টিতে পলাতক তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় সিনিয়র নেতাদের সন্দেহ ও অবিশ্বাস করা হয় কিনা এ প্রশ্নও উঠেছে।
দলীয় কমান্ডে বিভক্তি এখন ছড়িয়ে পড়ছে বিএনপির অঙ্গ ও শাখা সংগঠনগুলোতে। ঢাকা কেন্দ্রিক সাদেক হোসেন খোকার অনুগত বড় একটি অংশ কোনঠাসা ও নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে সরকারের এজেন্ট হয়ে কাজ করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিতর্কের পালে নতুন হাওয়া দিয়েছেন। সরকারি দলের সাথে সখ্যতা গড়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছেন এ নেতা। চতুর্মুখী বিতর্কের পালে আবদ্ধ এখন বিএনপি। বারংবারের ভুল সিদ্ধান্ত দলটিকে এখন দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছে।

কারাদণ্ডের সম্ভাবনা সত্ত্বেও  খালেদা জিয়া কি কোনো নির্দেশ দিয়ে যাননি?

বিএনপির তৃণমূল অনেক প্রশ্নের জবাব পাচ্ছে না বলে দ্বিধাগ্রস্ত। দলীয় প্রধানের কারাদণ্ড ঘোষণার পর মির্জা ফখরুল কর্মীদের এক অর্থে ঘরে থাকার নির্দেশই দিয়েছেন। মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ থাকায় শাস্তি মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। এ কারণে খালেদা জিয়া এক সপ্তাহে চারটি বৈঠক করেছেন নেতাদের সাথে। এখন প্রশ্ন উঠেছে তিনি কি কোনো দলীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে যাননি?
খালেদার প্রতি সহানুভূতিশীল নেতাকর্মীদের কাছে তারেকের চেয়ারপারসন বিদ্বেষী কার্যকলাপে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যে আন্দালিভ রহমান পার্থ খালেদার কারাদণ্ডের সাথে বিএনপি-আ’লীগ উভয় দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন। তাই সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে যে, তারেক তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে খালেদা জিয়াকে ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করছেন!
একদিকে জনবিচ্ছিন্নতা, অন্যদিকে দিক নির্দেশনার অভাব, সিদ্ধান্তহীনতা এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস বিএনপিকে পর্যুদস্ত করে রেখেছে। মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় থেকে লাভের ফসল আসবে কিনা এ হিসেব কষছেন অনেকে। ভবিষ্যতে দলের কর্মপরিকল্পনা কি হয় তা দেখার বিষয়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা তারেক রহমানের ক্ষমতালোভী, হিংস্র ও অমানবিক অভিব্যক্তি অচিরেই বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে স্পষ্ট হবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ