1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রী নিয়ে প্রোপাগান্ডার থ্রিলার: বার্গম্যান-স্যামি-জাজিরার সম্পর্ক কী?

ইবার্তা সম্পাদনা পর্ষদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

সম্প্রতি কাতারের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত প্রচারণা মাধ্যম আল জাজিরায় বাংলাদেশ নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রচারিত হয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে এই ভিডিওচিত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার বিশেষ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাচ্ছে- পুরো দৃশ্যপটে প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি কারো কোনো সম্পৃক্ততাই নাই। এমনকি কোনো লেনদেন বা হিসেবের সঙ্গে সেনাবাহিনীরও কারো কোনো যোগসূত্র নাই।
 
বিশ্বের কোনো ধরনের সাংবাদিকতা বা সংবাদ উপস্থাপনের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। এখানে কথা বলার ধরণ, গলার টোন, ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স এবং অ্যানিমেশনের ব্যবহার; সবকিছু মিলিয়ে দুর্দান্ত একটা থ্রিলার তৈরি করা হয়েছে। এই নাটকটি মূলত সাজিয়েছে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় জোট বিএনপি-জামায়াতের সমন্বয়ক ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান।
 
এদিকে এই ধরনের কাজ আল জাজিরার জন্যও প্রথম নয়। এর আগেও বাংলাদেশ সরকার নিয়ে জঘন্য নেতিবাচক প্রচারণা ছড়িয়েছিল তারা। মূলত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার কারণে আরব বিশ্বের পাঁচটি দেশে আল জাজিরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত আল জাজিরাকে ‘ফরেন এজেন্ট’ বলে অভিহিত করেছে। তবে এবার বাংলাদেশের সরকারকে নিয়ে অপপ্রচারে মেতে উঠতে হাত হাত মিলিয়েছে আল জাজিরা ও ‘পেইড এজেন্ট’ ডেভিড বার্গম্যান।
 
সে এখন আল জাজিরার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক হিসেবে এই নাটকীয় ভিডিওচিত্রটি নির্মাণ করেছে। এখানে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যক্তিকেও কথা বলতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে একজন নিজেকে পরিচয় দিয়েছে স্যামি নামে। মূলত তার কথাকে কেন্দ্র করেই, গল্পকে টুইস্ট করে করে, থ্রিলার এগিয়ে নিয়ে গেছে বার্গম্যান। তবে ইতোমধ্যে এই স্যামির আসল পরিচয় জানা গেছে।
 
কে এই স্যামি?
 
কাতার সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় মুখপাত্র আল জাজিরার তথাকথিত অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের কাছে বিভিন্ন ঘটনার নাটকীয় বর্ণনা দিয়েছে যে, তার প্রকৃত নাম জুলকারনাইন সায়ের। তার বাবা প্রয়াত লে. কর্নেল (এএমসি) আব্দুল বাসিত। ছেলের মাদকাসক্ত, উচ্ছৃঙ্খল ও অসংযমী জীবনযাপনের কারণে হতাশ হয়ে মৃত্যুর আগে তাকে ত্যাজ্য করেন কর্নেল বাসিত। এই স্যামি বা জুলকারনাইন সায়ের পরবর্তীতে হাঙ্গেরিতে চলে যায়। তবে তার দেশে কেমন ছিল সে, কেমন ছিল তার জীবন কেনই বা সে দেশ ছেড়েছে; এসব তথ্য ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
 
মূলত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে টার্গেট করে আল জাজিরা ও বার্গম্যানকে এই থ্রিলারটি সাজাতে সাহায্য করার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ পেয়েছে জুলকারনাইন সায়ের। তার দরকার ছিল টাকা, সে তা পেয়েছে। এবং ডেভিড বার্গম্যানের তথাকথিত অনুসন্ধানী দলকে সে তাই বলেছে সাক্ষাৎকারে, যা তারা বলতে বলেছে।
 
এই জুলকারনাইন সায়েরের ক্যারিয়ারজুড়েই রয়েছে উচ্ছৃঙ্খলতা এবং বিভিন্ন অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ। কৈশোর থেকেই সে মাদকাসক্ত। ক্রমেই হয়ে উঠেছিল পেশাদার অপরাধী। তারুণ্যের শুরুতেই সে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেট হিসেবেও যোগ দিয়েছিল কিন্তু অফিসার হিসেবে কমিশন্ড লাভ করতে ব্যর্থ হয়। ট্রেনিংয়ের মাঝপথেই মাদকাসক্তি এবং নৈতিক স্খলনের জন্য তাকে বিএমএ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় মাদক বিক্রির দায়ে একবার রাবের হাতে আটকও হয়েছিল সে। পরবর্তীতে আরও বড় প্রতারণার চক্র গড়ে তোলে। ক্রমেই বিভিন্ন অপকর্মে জড়ানোর পর বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে সে মানসিক রোগী হিসেবে চিকিৎসাও নিয়েছে কিছুদিন।
 
এতো অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার পরও তার চতুরতার কারণে অনেকেই এসব জানতো না। বিভিন্নভাবে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের মেয়েকেও বিয়ে করে সে। অবশ্য তার শ্বশুর এখন অবসরে চলে গেছেন। বিয়ের পর শ্বশুরের কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ যৌতুক নিয়ে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ব্যবসা শুরু করেছিল জুলকারনাইন সায়ের ওরফে স্যাম। কিন্তু নিজের পুরনো চারিত্রিক দোষ আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। যার ফলে ফের ব্যবসায় ধস নামে তার। ব্যবসার অর্থের বিষয় নিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে বিবাদ হয় তার। কোনোভাবে একটা ভালো অঙ্কের টাকা ম্যানেজ করার চেষ্টা করছিল সে। আর বার্গম্যান তো বিএনপি-জামায়াতের মিলিয়ন ডলার নিয়ে রেডি, সে খুঁজছিল এমন একজন ব্যক্তিকে। আর আল জাজিরা তো বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচারে আজ নতুন নয়।
 
বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচারে নতুন নয় আল জাজিরা বার্গম্যান
 
সম্প্রতি একটি মহলের মধ্যে আলোচনা সৃষ্টিকারী এই ভিডিওচিত্রটি সঞ্চালনা করতে দেখা গেছে বার্গম্যানকে। ড. কামালের জামাতা ও ব্যারিস্টার সারা হোসেনের স্বামী হিসেবে সে একসময় দীর্ঘ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করেছে। সেসময় বিডিনিউজ ও নিউএজ পত্রিকায় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নৈতিক স্খলনের দায়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম থেকে চাকরিচ্যুত হয় সে। এছাড়াও নিজের ব্লগে লিখে এদেশের ইতিহাস বিকৃতি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা অপচেষ্টা করে এই তথাকথিত সাংবাদিক ও বিএনপি-জামায়াতের পেইড এজেন্ট ডেভিড বার্গম্যান। পরবর্তীতে বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়ে নিজের কয়েকটি ব্লগ ও অনলাইন সাইটে বাংলাদেশবিরোধী লেখালেখি করতে থাকে সে। কালক্রমে তার সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন অপরাধে বাংলাদেশ দণ্ডিত হয়ে বিদেশে পলাতক বেশ কয়েকজন। মোটা অর্থের বিনিয়ম প্রোপাগান্ডা ছড়ানোটাই তাদের পেশা। এই টাকা দিয়েই বিদেশে আরামদায়ক জীবনযাপন করছে তারা।
 
এর আগেও বাংলাদেশ নিয়ে কয়েকবার ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়েছিল এই চক্রটি। পেইড এজেন্ট বা যুদ্ধাপরাধীদের দালাল হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বিতর্কিত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়েছে বার্গম্যান। তবে মিথ্যার জাল দিয়ে শেষ পর্যন্ত সত্যকে ঢেকে ফেলতে পারেনি তারা, বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আবারও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে নেতিবাচক পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছে বার্গম্যান ও তার সঙ্গীরা। মূলত, বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার নিয়ে এসব কাজ করে থাকে তারা।
 
এটি প্রাসঙ্গিক যে, শুধু একজন যুদ্ধাপরাধীর কাছ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার নিয়ে তার পক্ষে একাধিক প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি এবং আন্তর্জাতিক লবিস্ট ম্যানেজ করেছিল বার্গম্যান। তবে লাভ হয়নি। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সেই ব্যক্তিকে দণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো বার্গম্যানের জন্য নতুন নয়, সে এই কাজটি দীর্ঘদিন থেকেই করে আসছে। এমনকি অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের সরকার বদলের জন্য দণ্ডিত বিএনপি নেতা তারেক রহমান, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, নিজের শ্বশুর ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে একটি ত্রয়ী-চক্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও মিডলম্যান হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে বার্গম্যান।
 
এদিকে বাংলাদেশ নিয়ে এর আগেও একাধিকবার প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে সাময়িকভাবে আলোচনা সৃষ্টি করেছিল কাতারের প্রচারমাধ্যম আল জাজিরা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের প্রোপাগান্ডা স্পষ্ট হয়ে গেছে মানুষের মধ্যে। হুট করে তারা যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, তা ব্যর্থ হয়েছে এর আগে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ