1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

হতাশা ও ঈর্ষা থেকেই আল জাজিরায় একপেশে প্রচারণায় বার্গম্যান-খলিল

সুভাষ হিকমত : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

‘ক্ষমতার পটপরিবর্তনের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার তীব্র ইচ্ছা, দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় না থাকার হতাশা এবং বর্তমান সরকারের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আল-জাজিরার মাধ্যমে ডেভিড বার্গম্যান ও নেত্র নিউজের তাসনিম খলিল একপেশে তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে ক্ষমতার রদবদল।’- ওয়ান বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আল জাজিরার টার্গেট কেন বাংলাদেশ?’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান উপস্থিত বক্তারা এমন মন্তব্য করেন। এ সময় এটিকে ডকুমেন্টারি না বলে ‘ফিকশনাল ফিল্ম’ হিসেবে অ্যাখ্যা করে বক্তারা জানান, এখানে তথ্যের ঘাটতির পাশাপাশি প্রতিবেদনের শিরোনামটিও বিশ্ব জনপ্রিয় অন্য একটি প্রতিবেদন থেকে চুরি করে নেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি নিয়ে নির্মিত ‘অল দ্য প্রেসিডেন্টস ম্যান’ শিরোনামটি নকল করা হয়েছে আল জাজিরার প্রতিবেদনে।
আল জাজিরার এমন একটি প্রতিবেদন তৈরি কেনো করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ‘এটা সাংবাদিকতার দিক থেকে কোন ইনভেস্টিগেটিভ প্রতিবেদন নয়। মাত্র চার পাঁচজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি রাষ্ট্রকে যদি লেবেল করা হয়, এর থেকে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না। এখানে মাফিয়া স্টেটের কোন প্রশ্নই আসে না। যেখানে বিশ্বে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মানবিক কাজের কারণে প্রশংসিত হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেখানে এ ধরণের অভিযোগ তোলাটা আসলেই হাস্যকর। এ ধরণের কার্যক্রম আমাদের বয়স্কদের মধ্যে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ যারা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে সেভাবে জানেনা, তাদেরকে এটি প্রভাবিত করতে পারে।’
 
আল জাজিরা কেন বাংলাদেশের পেছনে লেগেছে এই প্রশ্ন তুলে তার তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রথমত প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের মানবতা বিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার জন্য বিচার করেছেন। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার বিচার করা হয়েছে এবং তৃতীয়ত বিগত ১২ বছরে বাংলাদেশকে যে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করা হয়েছে তাতে এই রাষ্ট্র নিয়ে এখন বিতর্ক সৃষ্টি না করলে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ হয়ত আজীবন এ দেশের ক্ষমতায় থেকে যাবে। এই তিন কারণেই বাংলাদেশকে নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা। .. এখানে মুসলিম ব্রাদারহুডের মুখপাত্রের মতই কাজ করছে আল জাজিরা। আর সে কারণেই বিশ্বের প্রসিদ্ধ মিডিয়া থেকে না এসে এমন বিভ্রান্তিকর একটি তথ্য আল জাজিরা থেকে এসেছে।’
 
আলোচনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পান্ডে বলেন, ‘আল জাজিরার এই প্রতিবেদনের দুইটি অংশ রয়েছে। যার একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল ভাবে তথ্যকে উপস্থাপন। অপরটি হলো সাংবাদিকতার কতটুকু নৈতিকতা মেনে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। আল জাজিরা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কাজ কেনো করেছে জানতে চাইলে প্রথমেই বলতে হবে ১৯৯৬ সালের পর থেকে আল জাজিরা মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন সময় এমন রং মাখিয়ে সংবাদ উপস্থাপন করে এসেছে এবং এখনো তাদের এই কার্যক্রম চালু রয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও তারা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে রং ছড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আসছে বিগত ৮-৯ বছর ধরে। মিশরকে উদাহরণ হিসেবে যদি ধরেন তবে বলতে হবে, তারা সব সময় এমন ক্ষমতাসীনদের উৎখাতের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য বিকৃত করে সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। ২০১৩ সালে তারা হেফাজতের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার কবরের ভুল তথ্যচিত্র দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে কতজন মারা গেছে। সেই সঙ্গে এক প্রতিবন্ধীর সাক্ষাৎকার নিয়েও প্রচার করেছে যে বাংলাদেশে হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রমের সময়ও তারা চেষ্টা করেছে বিষয়টিকে বিতর্কিত হিসেবে প্রমাণ করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতার নৈতিকতার স্থান থেকে দেখলে, যারা আল জাজিরার এই প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দিয়েছে, তাদের প্রেক্ষাপট কী? সাক্ষাৎকার দাতাদের একজন ডেভিড বার্গম্যান। যিনি নিজের পরিচয় দিয়েছেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে। কিন্তু তিনি যে বাংলাদেশের বিরোধী জোটের প্রধান ড. কামাল হোসেনের মেয়ে জামাই, সেই তথ্য তিনি গোপন করেছেন। একই ভাবে বাকিদেরও পলিটিকাল এলায়েন্সের তথ্য গোপন করা হয়েছে। এমন তিনজন ব্যক্তির ওপর ভিত্তি করে আল জাজিরা যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা যে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের ইচ্ছা থেকে করা, তা যে কেউ বুঝতে পারবে। আমি মনে করি বাংলাদেশের উচিত আল জাজিরার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়া।’
 
আল জাজিরার এটিকে সম্প্রচার কেন্দ্র না বলে অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেয়ার কেন্দ্র বলে সম্বোধন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘একটি রাজ পরিবারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ থেকে ১৯৯৬ সালে আল জাজিরার জন্ম। যার জন্মই হয়েছে পক্ষ অবলম্বনের জন্য। চাকরীচ্যুত হতাশ কিছু সাংবাদিককে নিয়ে আল জাজিরা যাত্রা শুরু করেছিলো। আল জাজিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যতগুলো প্রচারণা চালিয়েছে তার অধিকাংশই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। যেমন ২০১৩ সালে হেফাজতের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন।’
তবে তাদের এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের সেনা প্রধান দেশের বাহিরে যুক্তরাষ্ট্রে সফরে রয়েছেন এবং মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, ঠিক সে সময় এই প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্দেশ্য একটি। আর তা হলো বাংলাদেশেও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি। আর বারবার এখানে প্রধানমন্ত্রীর নাম জুড়ে দেয়া হচ্ছে তার অর্জনগুলো ম্লান করার জন্যই। যেটা কোনভাবেই সফল হবে না বলে আমি মনে করি।’
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ওয়ান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. রশীদুল হাসান বলেন, আল জাজিরা টিভি নেটওয়ার্কের ব্যুরো অব চীফ তার নাম সম্ভবত মুহাম্মদ ফাহমি। তিনি ২০১৭ সালের জুন মাসে সরাসরি বলেছেন, আল জাজিরা সন্ত্রাসবাদকে সহায়তা করে আসছে। এ কথা জানিয়ে তিনি আল জাজিরার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আল জাজিরা নিষিদ্ধ। মিশর থেকে শুরু করে বেশ কিছু দেশে তাদের ৬ জন সাংবাদিক ভুল তথ্য প্রকাশের জন্য আটক হয়েছে এবং শাস্তি পেয়েছে। আল জাজিরার এই হীন ষড়যন্ত্র থেকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত সবাই মিলে মোকাবেলা করতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন অধ্যাপক রশীদুল হাসান ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ