1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আল জাজিরার : এক সন্ত্রাসী মিডিয়ার আদ্যোপান্ত

ইবার্তা সম্পাদনা পর্ষদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

কাতারের রয়াল ফ্যামিলি, হামাদ আল থানি চায় মিডল ইস্টে সবচেয়ে বড় কাল্ট লিডার হইতে। এইজন্য সে অনেক জায়গায় ইনভেস্ট করে, Positive branding এর জন্য। যেমনঃ ফুটবল, মিডিয়া। ২০২২ বিশ্বকাপ কাতারে হওয়া কিংবা বার্সেলোনার জার্সিতে কাতার ফাউন্ডেশনের লোগো, এইগুলা তো সবাই জানে। মিডিয়ার গল্পটা বলি নিচে, শুনুন তাহলে।
১৯৯৫ এ বিবিসি তাদের আরব চ্যানেল ক্লোজ করে, কারণ সৌদি সরকার বিবিসির editorial process এ interfere করতে চাচ্ছিল। ১৫০ সাংবাদিক, যারা আরব বিশ্বকে বোঝে আবার western media culture এ trained, রাতারাতি বেকার হয়ে যায়। হামাদ আল থানি তখন মাত্র প্রিন্স হয়েছেন, তিনি আমিরি ডিক্রি জারি করে আল জাজিরা নামে নিউজ নেটওয়ার্ক শুরু করতে ১৩৭ মিলিয়ন ডলার সাহায্য করেন এবং ঐ ১৫০ সাংবাদিক নিয়ে যাত্রা শুরু করে আল জাজিরা।
আরব বিশ্বে এর আগে যা মিডিয়াই ছিল, সবাই ছিল state-controled press, খুবই boring. Al Jazeera এই জায়গায় ব্যতিক্রম আনে, তারা কাতার রয়াল ফ্যামিলি বাদ দিয়ে বাকি দেশগুলোর সরকার এবং রাজতন্ত্রকে সরাসরি আক্রমণ করতে থাকে। ৯/১১ হামলার পরে, বিন লাদেন দায় স্বীকারের ভিডিও প্রকাশ করেন আল জাজিরার মাধ্যমে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যখন আমেরিকা ইরাক এবং আফগানিস্তান এ হামলা করে, তখন আল জাজিরা এক জায়গায় অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে যায়। মিডল ইস্ট, সেন্ট্রাল এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা – এইসব জায়গায় western media, I mean, CNN-BBC এদের এত correspondent/local office ছিল না। আল জাজিরা arab-speaking world কে serve করতে এসব জায়গায় আগে থেকেই prepared ছিল। ফলে দেখা যায়, এমন অনেক ইনফো, ফুটেজ আছে এইসব জায়গায়, যেখানে আল জাজিরার ফুটেজ ছাড়া অন্য কারো হাতে কিছু নেই। ফলে সারাদুনিয়া আল জাজিরার দেয়া ফুটেজ দেখতে শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল জাজিরা ২০০৪ সালে ইংরেজিতে সম্প্রচার শুরু করে, এসময় হামাদ আল থানি কাতার সরকারের পক্ষ থেকে আবার ৩০ মিলিয়ন ডলার লোন দেন আল জাজিরাকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি যখন সরকারের টাকা নিবেন, তখন আপনি আসলে কতটা স্বাধীনভাবে চলতে পারবেন? উত্তর হচ্ছে, পারবেন না। আল-জাজিরাও পারে নাই, আল-জাজিরা আসলে তাই বলে যা কাতারের রাজ-পরিবার এবং সরকারের পররাষ্ট্রনীতি তাকে দিয়ে বলাতে চায়। তাহলে বুঝতে হবে কাতার সরকারের পলিসি কী, আর আল জাজিরাকে দিয়ে সে কী বলাতে চায়। সুতরাং এবার আইডিওলজির জায়গাটা একটু ক্লিয়ার হওয়া যাক।
২০১৭ তে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মিসর, সংযুক্ত আরব অমিরাত ও বাহরাইনসহ এখন পর্যন্ত আটটি দেশ কাতারের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, মুসলিম ব্রাদারহুড এবং হামাসের প্রতি সমর্থন। কারা এই মুসলিম ব্রাদারহুড যাদের কারণে কাতার এত বড় রিস্ক নিল।
হাসান আল বান্না ও সৈয়দ কুতুব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুসলিম ব্রাদারহুড ইসলামকে বিকৃত করে প্রদত্ত মতবাদ ‘হুকুম দখলই ইসলাম’ এ বিশ্বাসী। এ সংগঠনের মতাদর্শের উদ্দেশ্য ইসলামী হুকুমত কায়েম নয়, বরং তাদের সমর্থিক দলের হুকুমত কায়েম। এসব দলের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধন ও সমঝোতা আছে যে, প্রয়োজনে সকলে এক মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ হবে। মুসলিম ব্রাদারহুডের মতবাদে বিশ্বাসীরা অন্যান্য দেশে ভিন্ন নামে কার্যক্রম চালায়, যেমন- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী, জমিয়াতুল মুসলেমীন, লস্করে তৈয়বা এবং তুরস্কে একে পার্টি ইত্যাদি। এছাড়া ফিলিস্তিনের হামাস, তিউনিসিয়ার ইন্নাহদা পার্টি, কুয়েতের ইসলামি কন্সটিটিউশনাল মুভমেন্ট তাদের সমর্থন করে। জর্ডানে ইসলামি অ্যাকশন ফ্রন্টের প্রতিনিধিত্ব করে মুসলিম ব্রাদারহুড। বাহরাইনের রাজনৈতিক দল মিনবার ব্রাদারহুড সমর্থন করে।
আরব বসন্ত যখন শুরু হয়, তাতে সবচেয়ে ভোকাল মিডিয়া ছিল আল জাজিরা। টার্গেট পরিষ্কার, মিডল ইস্টের বাকি সরকারগুলো দুর্বল হলে, পুরা গালফ এরিয়াতে কাতারের প্রভাব বাড়বে। এ লক্ষ্যে কাজ করতে গিয়ে মিশরের হোসনি মোবারককে উৎখাতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করে কাতার সরকার ও আল জাজিরা। মোবারকের সরে যাওয়ার পরে তৈরি হওয়া শুন্যস্থান পূরণে তাদের প্রমোট করে মুসলিম ব্রাদারহুডকে। ফলে মুসলিম ব্রাদারহুড সেখানে ক্ষমতায় চলে আসে। ধর্মকে পুজি করে, উগ্রতা ধ্যান ধারনা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা হবে তা মিশরের তরুন সমাজ তা কোন দিন ও মেনে নেয় নাই। ফলে একসময় পতন ঘটে মুসলিম ব্রাদারহুডের। এভাবে দেশে দেশে অস্থিরতা তৈরি করে সেখানে নিজেদের আইডিওলজির দলকে ক্ষমতায় আনার মিশন হাতে নেয় কাতার সরকার। পেট্রোডলারের টাকায় চলা এ মিশনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছিল আল জাজিরা।
২০১১ সালে আরব বসন্ত নামে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের রাজপথে সংগঠিত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আল জাজিরা। এ সময় উদ্দেশ্য প্রণোদিত, উস্কানিমূলক ও মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে পদত্যাগ করেন ২২ সাংবাদিক। সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে আল জাজিরার ভূমিকা সম্পর্কে সকলেই অবগত। ২০১৩ সালে ইরাক সরকার শিয়া সুন্নিদের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টিতে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে আল জাজিরা নিষিদ্ধ করে। আত্মঘাতী হামলা করা বৈধ, জঙ্গিবাদ জান্নাতের পথ, খ্রিস্টান হত্যায় উস্কানি, ইয়াজেদি নারীদের ধর্ষণ করা জায়েজ এবং এক কপটিক পোপের হত্যায় উল্লাসসহ আল জাজিরায় অনেক বিতর্কিত বিষয় প্রচারিত হয়েছে। সম্প্রতি কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে প্রদর্শন ও উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচারের অভিযোগে আল জাজিরার সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বাতিল করেছে ভারত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে আল জাজিরার এত আগ্রহ কেন? ফেরত যেতে হবে মুসলিম ব্রাদারহুড এ। বাংলাদেশের জামায়াত-শিবির হচ্ছে এই মুসলিম ব্রাদারহুড এর সমমনা দল। ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদি ও তাঁর দলের তাকফিরি মতাদর্শ ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠায় ‘সহিংসতার ব্যবহারকে উৎসাহিত করে’। আর ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের আদর্শিক গুরু সাইয়িদ কুতুব তাঁর কাছ থেকেই গ্রহণ করেন এ মতাদর্শ। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তুরস্কের একে পার্টির সাথে সম্পর্কের কথা বারবার এসেছে জামায়াত নেতাদের কথায়। ফলে কাতার সরকারও বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই অসাম্প্রদায়িক সরকারকে দেখতে চায় না। যার প্রমাণ তার দিয়েছে বারবার-
২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় সাধারণ একটি কবরস্তানের ভিডিও দেখিয়ে ও বাক প্রতিবন্ধী এক শ্রমিকের সূত্র ব্যবহার করে হাজার হাজার লাশ দাফনের দাবি করা হয়, পরবর্তীতে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে একের পর এক উস্কানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল আল জাজিরায়। তবে এমন ঘটনা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটলে হয়তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যেত। সৌদি আরব, বাহরাইন, আরব আমীরাত, সিরিয়া, মিশর, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক দেশ আল জাজিরা নিয়ে উৎকন্ঠিত।
আল জাজিরার এ মিশনে অন্যতম বড় কন্ট্রিবিউটর হচ্ছে, ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান। ড. কামাল হলেন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় জোট বিএনপি-জামায়াতের প্রধান সমন্বয়ক। এই কারণেই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে দীর্ঘ সময় লেখালেখি করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বার্গম্যান। নিজের লেখা এক ব্লগে বার্গম্যান এটাও দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আসলে ত্রিশ লাখ মানুষ মারা যায়নি। তার দাবি, এই মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র তিন লাখ!
ডেভিড বার্গম্যান বিএনপি জামাতের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এবং সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করেছে। এমনকি বিচারাধীন বিষয়ে উস্কানি ছড়ানোর দায়ে একপর্যায়ে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ইতিহাস বিকৃতির দায়ে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে অভিযুক্ত করে। আর আছে টাকার খেলা। একজন অভিযুক্ত যে পরবর্তীতে দণ্ডিত হয়েছে, সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ম্যানেজ করতেই ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। জামাত এর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বন্ধ করার এ খেলাই এক করেছে ডেভিড বারগম্যান, আল জাজিরা আর জামাত কে।
সব মিলিয়ে, আল জাজিরার লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কিত করা, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থামিয়ে জঙ্গিবাদী একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সেই ফাঁদে পা দেয়া না দেয়া, এখন আপনার বিচার।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ