1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দেশ কোন্ পথে চলেছে? : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১

পুলিশ বেষ্টনীতে পরীমনি (বামে) ও বরিশাল সদর উপজেলা ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ।
একুশে আগস্ট শনিবার, আওয়ামী লীগের সভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী পালনের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া (ভার্চুয়াল) বক্তৃতা শুনছিলাম। প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসিদ্ধভঙ্গিতে বলছিলেন, কীভাবে পুলিশ এ হামলার ছক সাজিয়েছিল এবং হামলা ব্যর্থ হওয়াতে কীভাবে আলামত ও অন্য প্রমাণ দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এমনকি যে গ্রেনেডটি ফাটেনি এবং অক্ষত অবস্থায় মাঠে পড়েছিল, তা-ও দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।

জাতির পিতার কন্যা, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলটির নেত্রীর ব্যাপারেই যেখানে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ কাজটি করতে পারে, তাহলে দেশের একজন সাধারণ নারীর ব্যাপারে তারা কী করতে পারে? কথাটা খুবই দুঃখের সঙ্গে ভাবছিলাম, কারণ ওইদিন ছিল তরুণী চিত্রনায়িকা পরীমনির আদালতে হাজিরা দেওয়ার দিন। অনেকে আদালতে তার ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন। দেখলাম পরীমনি হতাশা ও ক্রোধের সঙ্গে বলছে, ‘আমার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করছে না কেন, আমি এখানে পাগল হয়ে যাব।’

বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে। কে তাকে জামিন দেবে? পুলিশ অথবা র‌্যাব তার বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়েছে ভালোভাবে। কাউকে বিশ্বাস করানোই যাবে না যে, পরীমনি যতটা অপরাধ করেছে, তার চেয়ে অনেক বড় অপরাধী হিসাবে পুলিশ তাকে সমাজের সামনে তুলে ধরেছে। রাষ্ট্রশক্তি তার বিরুদ্ধে এতটাই প্রতিহিংসাপরায়ণ যে, তাকে বাঁচাতে হলে পরীমনির পক্ষে ততটাই শক্তিশালী সামাজিক শক্তি দরকার। সেই সামাজিক শক্তি আজ বাংলাদেশে কোথায়?

শেখ হাসিনা একজন সাধারণ নারী নন। তিনি জাতির পিতার কন্যা। তারপরও রাষ্ট্রশক্তি বিএনপির দখলে থাকার সময় তারা পুলিশের সাহায্যে তার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা সাজিয়েছিল। এক-এগারোর পর শেখ হাসিনা গৃহবন্দি থাকার সময় প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে যান চিকিৎসার জন্য। তার দেশে ফেরার সময় পুলিশ তার নামে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে পলাতক আসামি ঘোষণা করে তার মাথার ওপরে হুলিয়া জারি করেছিল। শেখ হাসিনার পক্ষে ছিল সারা দেশের জনমত। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছিল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক শক্তি। এ মিলিত শক্তির কাছে রাষ্ট্রের শক্তি, পুলিশের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল। পরীমনির পেছনে তার শক্তি বলতে তার কিছু শুভাকাক্সক্ষীর সমর্থন, গোটা জনমতও তার পক্ষে নয়। যেহেতু সে একজন অভিনেত্রী, কোনো রাজনৈতিক নেত্রী নয়, ফলে একশ্রেণির মিডিয়া খুব সহজে তার চরিত্র হননের কাজটি সম্পন্ন করে রেখেছে। নারীত্বের অবমাননা এবং মানবতাবোধ কোনোটাই তাদের মনে কাজ করেনি।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্রশক্তি যত প্রবল হোক, নাগরিক ও মানবিক অধিকার তাতে এত শক্ত থাকে যে, রাষ্ট্রশক্তির প্রতাপ থেকে সেই অধিকার একজন নাগরিককে রক্ষা করে। যে দেশে এ নাগরিক অধিকার দুর্বল অথবা একেবারেই নেই, সে দেশটি মোটেই গণতান্ত্রিক দেশ নয়, বরং সেটি ফ্যাসিস্ট স্টেটে পরিণত হওয়ার আগের পুলিশ স্টেট।

প্রথম মহাযুদ্ধের পর দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশ জার্মানি কীভাবে প্রথমে পুলিশ স্টেট, তারপর পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট স্টেটে পরিণত হয়, তা নিয়ে এক জার্মান সাংবাদিকের ইংরেজিতে তরজমা করা বই সম্প্রতি পাঠ করার সুযোগ হয়েছে। প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানির রাজা ফাইজারের পরাজয় হয় এবং তিনি দেশ ছেড়ে হল্যান্ডে পালিয়ে যান। যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানিতে যে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তা ছিল খুব দুর্বল। জয়ী ব্রিটেন পরাজিত জার্মানির ওপর যুদ্ধের যে বিরাট দেনা চাপিয়ে দেয়, তা শোধ করা জার্মানির পক্ষে ছিল অসম্ভব। জার্মানিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং বহু লোক মারা যায়। বেকার যুবসমাজ ক্রমেই হিটলারের নাৎসি পার্টির যুব দলের দিকে ঝুঁকতে থাকে। প্রশাসনে আমলাতন্ত্র প্রবল শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

এক মার্কিন সাংবাদিক, তিনি যখন জার্মানিতে ছিলেন, লিখেছেন জার্মানির দুটি বাম দল কমিউনিস্ট পার্টি ও সোশ্যালিস্ট পার্টি তখন যদি ঐক্যবদ্ধ থাকত, তাহলে হিটলারের নাৎসি দলের পক্ষে নির্বাচনে জেতা বা দেশ থেকে গণতন্ত্র উচ্ছেদ করা কোনোটাই সম্ভব হতো না। কিন্তু সোশ্যালিস্ট ও কমিউনিস্ট দল প্রচণ্ড তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে ব্যস্ত ছিল, আর কমিউনিস্টরা ব্রিটেন ও আমেরিকা মিলে নবপ্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত রাষ্ট্র ধ্বংস করার চেষ্টা করছে এ হুজুগ তুলে চেঁচামেচি চালাচ্ছিল। জনগণের দুঃখ-দুর্দশার দিকে নজর দেয়নি, এ সুযোগে হিটলারের নাৎসি দল জার্মানির যুবচিত্ত দখল করে নেয়। সেইসঙ্গে নাৎসিদের ছিল ইহুদিবিরোধী সাম্প্রদায়িক প্রচারণা।

এ সময় জার্মানির বার্লিন শহরে ঘটে এক ঘটনা। কলেজের ছাত্রী এক সুন্দরী ইহুদি তরুণীর দিকে হিটলারের ব্রাউন শার্ট যুবদলের নেতার চোখ পড়ে। তিনি মেয়েটির কাছে শয্যাসঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দেন। ইহুদিকন্যা তা ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে। তাকে অপহরণ না করে ব্রাউন শার্টের যুবনেতা পিতার আশ্রয় নেন। পিতা ছিলেন পুলিশ কমিশনার, তিনি মধ্যরাতে পুলিশ পাঠিয়ে তরুণীকে গ্রেফতার করেন। মেয়েটার বিরুদ্ধে অভিযোগ তৈরি করান-এ ইহুদিকন্যা তার রূপের জাল বিস্তার করে জার্মান তরুণদের বিপথগামী করছে এবং নাৎসি পার্টির বিরুদ্ধে প্রচারকার্যে লিপ্ত। বিচার হওয়ার আগেই এ শিক্ষিতা ইহুদিকন্যা জেলখানায় নির্যাতিত হন। একজন প্রবল ক্ষমতাশালী পুলিশ কমিশনারের দাপটের কাছে জার্মানির দুর্বল গণতন্ত্র মাথা হেঁট করেছিল। এর কিছুদিন পরই জার্মানির দুর্বল গণতান্ত্রিক শাসক হিন্ডেনবার্গ তার সিভিল ও মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির চাপে হিটলারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

ভারতের প্রয়াত বুদ্ধিজীবী এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী হুমায়ুন কবির ‘স্বাক্ষর’ নামে তার সম্পাদিত এক বইয়ে মার্কিন সাংবাদিক লুইফিসারের জার্মানিসংক্রান্ত এক প্রবন্ধের অনুবাদ সংকলিত করেছেন। তাতে লুইফিসার দেখিয়েছেন, গণতন্ত্র যদি কিছুটা কর্তৃত্ববাদী হয়, তা-ও ভালো। কিন্তু গণতন্ত্র যদি দুর্বল হয়, তাহলে গণবিরোধী আমলাতন্ত্র অতি সহজে দেশটিকে পুলিশ স্টেটে পরিণত করতে পারে। পুলিশ স্টেট থেকে ফ্যাসিস্ট স্টেটে পরিণত হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।

পাকিস্তান গোড়া থেকেই একটি পুলিশ স্টেট। জিন্না কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতাকে বিশ্বাস করতেন না। তাই পাকিস্তানের প্রথম মন্ত্রিসভায় টাটা কোম্পানির আমলা গোলাম মোহাম্মদ, ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, স্যার জাফরুল্লা, রাজা গজনফর প্রমুখ আমলা ও ব্রিটিশভক্ত রাজপুরুষদের এনে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীকে হত্যা করে এবং অন্য রাজনীতিকদের ক্ষমতা থেকে হটিয়ে প্রথমে সিভিল ব্যুরোক্রেসি, তারপর মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি ক্ষমতা দখল করে নেয়। ভারতে প্রথমে নেহেরু, তারপর তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধীর কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্রের দীর্ঘকালের শাসনে গণতন্ত্রও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। বর্তমান মোদি শাসনে ধর্মান্ধতার ফলে গণতন্ত্রের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। মোদির পর বিজেপি অথবা কংগ্রেস যদি ভারতকে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব উপহার দিতে না পারে, তাহলে ভারতের শুধু গণতন্ত্র নয়, সংহতিও বিপন্ন হবে।

আফগানিস্তানে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সারা উপমহাদেশের জন্য তা খুবই বিপজ্জনক হবে। আমাদের রাজনৈতিক জীবনে জিহাদিস্টরা প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও সামাজিক জীবনে করেছে। হাজার হাজার মাদ্রাসা ও মসজিদকে কেন্দ্র করে তারা সমাজজীবনে শক্ত খুঁটি গেড়েছেন। অনেকে বলেন, আমাদের বর্তমান প্রশাসনে জামায়াতিদের অবস্থান শক্ত, তারা সমাজজীবনে আধুনিকতার প্রসার চান না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও একই অবস্থা। নারীদের প্রতি এ প্রশাসনের এক বৃহৎ অংশের দৃষ্টিভঙ্গি উদার নয়। তাই সমাজে নারী নিগ্রহ বাড়ছে। নব্যধনীরা নারী নির্যাতন চালিয়ে সহজেই রক্ষা পাচ্ছে। প্রশাসন তাদের প্রোটেকশন দেয়। একশ্রেণির মিডিয়া নিগৃহীত নারীর পক্ষে দাঁড়ানোর বদলে তার চরিত্র হননে লিপ্ত হয়। এটা দেখা গেছে, সাম্প্রতিক এক কলেজছাত্রীর মৃত্যুতেও। তার মৃত্যু আত্মহত্যা, না হত্যা সেটা না খতিয়ে মৃত তরুণীর লাখ টাকা ভাড়ার বাড়িতে থাকার সামর্থ্য খোঁজার নামে তার চরিত্র হননে লিপ্ত হয়েছিল একশ্রেণির মিডিয়া।

হাসিনা সরকারের সাফল্য অনেক। কিন্তু করোনা সমস্যার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির ব্যক্তি ও রাজনীতিককে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টারত দেখা যাচ্ছে। বরিশালে প্রশাসনিক অস্থিরতা এ অপচেষ্টারই প্রমাণ। গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ নয়, নব্যধনী ও আমলাতন্ত্রের মিতালি এক ধরনের অসহিষ্ণু সমাজ ও দাম্ভিকতাপূর্ণ আমলারাজ সৃষ্টির দিকে দেশটিকে ঠেলে দিচ্ছে মনে হয়। আমি শুধু সরকারকে সতর্ক করতে পারি। আমার কলমের জোর আর কতটুকু?


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত

দু’মাসের মধ্যে শুরু হচ্ছে মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন

মেট্রোরেল: চালু হলো কাজীপাড়া ও মিরপুর-১১ স্টেশন

বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের ঈদ উপহার দিলেন শেখ হাসিনা

পাথর উত্তোলন বাড়ায় ফের চালু হচ্ছে মধ্যপাড়া-ভবানীপুর রেললাইন

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত হতে পারে ওষুধ শিল্প

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে গান শোনার সুবিধা এবার বাংলাদেশে

হেফাজতের কর্মসূচি ঠিক করে বিএনপি, টাকা আসে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে

বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তি ও জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে

সাম্প্রতিক সময়ে তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা 

বিদেশের মাটিতে ‘হ্যাটট্রিক’ সিরিজ জয়ের রেকর্ড টাইগারদের