1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কলকাতায় পাকিস্তান দূতাবাসে বাঙালি কর্মকর্তাদের পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ

ইবার্তা সম্পাদনা পর্ষদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১। কলকাতার যুগান্তর পত্রিকার শীর্ষ শিরোনাম : প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রকাশ্য অভ্যুদয়। বিশ্বের কোন শাক্তি বাঙালির জয়যাত্রায় বাধা দিতে পারবে না : বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দৃঢ় প্রত্যয়।
“জাতি হিসেবে বাঙালি জেগে উঠেছে। পৃথিবীর কোন শক্তি নেই বাঙালির এই জয়যাত্রায় বাধা দিতে পারে ।”—স্বাধীন বাংলা সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এখানে দশ হাজার মানুষের এক প্রকাশ্য জমায়েতে এ কথা ঘোষণা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সদস্য সৈনিক দেশতন্ত্র নাগরিক আর বিভিন্ন দেশের শতাধিক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রান্তরে প্রান্তরে, হাটে-বাজারে, শহরে-বন্দরে, বাঙালি লড়ছে। অকাতরে আমরা রক্ত দিচ্ছি পরাজিত হওয়ার জন্য নয়। এ যুদ্ধ আমাদের স্বাধীনতার, আমাদের অস্তিত্বের যুদ্ধ—এ যুদ্ধে আমরা জিতবই …শতাধিক সাংবাদিক এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি শেষ হলে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, গোটা বাংলাদেশই তাদের দখলে একমাত্র মিলিটারি ছাউনিগুলোতে সাম্রাজ্যবাদী পাঞ্জাবি হানাদার বাহিনী এখনও রয়ে গেছে ।”
মুজিবনগর সরকার গঠনের খবরটি ভারতের অন্যতম প্রধান পত্রিকা THE HINDU প্রচার করে এভাবে : MUJEEBNAGAR (Bangladesh). April 17: Bangladesh to-day became a reality as acting President, Syed Nazrul Islam, proclaimed it a Sovereign Democratic Republic at a public function in a Mango Grove in this town, renamed in honour of Sheikh Mujibur Rehman. The Sheikh himself was not present as a National Assembly member, prof. Yusuf Ali, read out the Proclamation in Bengali that said: “We ratify the Declaration of Independence by Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman (on March 26). There were members of the world Press at the historic function and thousands of people of Bangladesh had gathered in strength to witness the function in the mango grove spread over 132 acres. The ceremony started with the acting President taking the salute and inspecting a guard of honour presented by a small detachment of the Mukti Fauj.
মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের পরদিন, অর্থাৎ ১৮ এপ্রিলে ঘটে আরেক বড় ঘটনা। সেদিন সকালবেলা কলকাতার পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশনের প্রধান এম হোসেন আলীসহ মিশনের ৭০ জন বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারী বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করেন। সার্কাস এভিনিউর যে বাড়িতে এতদিন পাকিস্তানের পতাকা উড়েছে, সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়। কলকাতায় আশ্রয় নেয়া দেশত্যাগীরা দলে দলে এসে ভিড় করে সার্কাস এভিনিউর দূতাবাসে। আসে সহস্র উদ্বেলিত ভারতীয় নাগরিক, যারা মনেপ্রাণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন জুগিয়েছেন।
এক সাক্ষাৎকারে জনাব হোসেন আলী বলেন “It is impossible to continue to represent the Pakistani Government which is engaged by all evidences in a deliberate and systematic genocide of Bengalees in Bangladesh. পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগকারী এই বাঙালি কূটনীতিক একটি বিবৃতিও প্রচার করেন, যাতে তিনি ব্যাখ্যা করেন— কীভাবে পাকিস্তানের সরকার had flouted the clear verdict of a democratic election in Bangladesh and engaged itself in a planned attempt to subdue and crush the entire Bengali nation.”
এই সিদ্ধান্তের পর ২২ এপ্রিল এক প্রতিবাদপত্রে পাকিস্তান সরকার কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশন থেকে অবিলম্বে অবৈধ দখলদারদের বের করে দেয়ার দাবি জানায়। পাকিস্তান জানায়, যদি তা করা না হয় তাহলে পরিস্থিতির দায়িত্ব ভারতকেই নিতে হবে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ.কে. রায় দিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সাজ্জাদ হায়দারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনের দখল নিয়ে যা ঘটেছে তা পাকিস্তানের নিজস্ব ব্যাপার, ভারত এতে কিছু করতে পারে না। পাকিস্তান এরপর মাহাদী মাসুদ নামের একজনকে ডেপুটি হাইকমিশনার নিয়োগ করে। কিন্তু ক্রমাগত বিক্ষোভের ফলে তার পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না।
এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে নতুন দিল্লিতে কর্মরত আরও দু’জন বাঙালি কুটনীতিক-দ্বিতীয় সচিব কে এম শাহাবউদ্দিন ও সহকারী প্রেস এ্যাটাচি আমজাদুল হক-বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ভারত সরকার তা মঞ্জুর করে। এক বিবৃতিতে এই কূটনীতিকগণ বলেন, “Islamabad was engaged in a wanton and demented massacre of the innocent and unarmed people of Bangladesh. World opinion has begun to realize the magnitude of this outrage. They had severed their connexion with the fascist military dictatorship in Islamabad as our conscience no longer permits us to act against our deepest convictions.”
বাংলাদেশের পক্ষে কলকাতা ও নতুন দিল্লির বাঙালি কূটনীতিকদের পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগের ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ৩০ আগস্ট দিল্লিতে সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন খোলা হয়। অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে মিশনের প্রধান কে এম শাহাবুদ্দিন বলেন, ভারত আমাদের নতুন রাষ্ট্রের প্রতি সহানুভূতি ও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে । আজকের এই অনুষ্ঠান ঐতিহাসিক। কেন না বাংলাদেশের পতাকা দিল্লিতে পূর্ণ গৌরব নিয়ে উড়ছে এবং এই পতাকা বিশ্বের কাছে আক্রমণকারীর পরাজয় ও নিপীড়িতদের চূড়ান্ত বিজয় ঘোষণা করবে। আনন্দ নিকেতনে একটি ভাড়া করা বাড়িতে এই প্রথম কুটনৈতিক মিশন খোলা হয়।
এরপর থেকেই বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকগণ পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকেন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর সামস কিবরিয়া, ইকোনমিক কাউন্সিলর আবুল মাল আবদুল মুহিত, নিউ ইয়র্কের ভাইস কনসাল এএইচ মাহমুদ আলী, লন্ডন দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব মহিউদ্দিন আহমদসহ কয়েকজন পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন। এরপর জেনেভায় নিযুক্ত দ্বিতীয় সচিব ওয়ালিউর রহমানসহ বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাঙালি কূটনীতিকগণ পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন।
সূত্রঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত, তথ্য ও দলিল (পশ্চিমবঙ্গ)
গ্রন্থনা ও সম্পাদনাঃ হারুন হাবিব


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ