1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গণ পদত্যাগে টালমাটাল সিলেট বিএনপি

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১

কমিটি গঠন নিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাদের ধারাবাহিক পদত্যাগে টালমাটাল হয়ে উঠেছে সিলেট বিএনপি। শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে ডজনখানেক নেতার পদত্যাগ ‘ক্ষুদ্র অংশের অসন্তোষ’ বললেও দলের ভেতরে চলছে তোলপাড়। এখন পর্যন্ত অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামানসহ তার অনুসারী ‘জামান গ্রুপের’ নেতারা পদত্যাগ করলেও অন্য বলয়ের ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ্যে আসছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জামানবিরোধী নেতারাও কমিটি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এসবের নেপথ্যে ঘুরেফিরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের নাম আসছে।

সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল, যুবদলের পর তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলেও ‘ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের’ কোণঠাসা করে নিজের পছন্দের ‘পকেট কমিটি’ করেছেন বলে অভিযোগ। যুবদলের কমিটি গঠনের পর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ সিলেট বিএনপির কেন্দ্রীয় চার নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আশ্বাসে তারা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এভাবে বার বার অঙ্গ সংগঠনের কমিটি নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ সিলেট বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাকে আরও নড়বড়ে করছে বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের নেতারা।

এক সময় সিলেট বিএনপির একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত এম সাইফুর রহমান। ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে বিগত জোট সরকারের সময় সাইফুরবিরোধী বলয় গড়ে উঠেছিল। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর মূলত স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন খন্দকার মুক্তাদির। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর-নগর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাইফুরের স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খন্দকার মুক্তাদিরের বাবা খন্দকার আবদুল মালিক এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সিলেট বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে পরাজিত হওয়ার আগে থেকেই দলীয় রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেন মুক্তাদির। ২০১৮ সালের ১৩ জুন জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বিএনপি নেতা মুক্তাদিরের পছন্দের ছাত্রনেতাদের ঠাঁই দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলে ৩২১ সদস্যের জেলা ও ২৬৬ সদস্যের মহানগর কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পরও অভিযোগের রেশ থেকে যায়। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর যুবদলের পৃথক আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর তা বিস্ম্ফোরণোন্মুখ হয়ে উঠেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির তিন নেতা বলেন, স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর থেকে খন্দকার মুক্তাদির প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময়ও লন্ডন কানেকশনে নিজের পছন্দের নেতাদের রাখার চেষ্টা করেন। বর্তমানে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তিনি নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। এমন অভিযোগের বিষয়ে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে চাইছি না।

যুবদলের কমিটি ঘোষণার পর বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও মহানগরের সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক এবং সহস্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান পদত্যাগের হুমকি দেন। বিএনপি মহাসচিবের হস্তক্ষেপে সে যাত্রায় তারা পদত্যাগ থেকে সরে এলেও যুবদলের কমিটি নিয়ে অসন্তোষের সমাধান হয়নি। সর্বশেষ ১৭ আগস্ট সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের দুটি কমিটি অনুমোদনের পর তার মতামতকে মূল্যায়ন না করায় বিএনপি ছাড়েন অ্যাডভোকেট জামান।

অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহস্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নিজের জেলায় শক্তিশালী কমিটি করতে চেয়েছিলাম। তিন বছর ধরে কমিটি দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলাম। এ জন্য আমাদের মতামতও নেওয়া হয়। কিন্তু সেই মতামতকে উপেক্ষা করে ওহির মাধ্যমে কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রদল-যুবদলের কমিটিতেও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, দলের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে, সংসার পর্যন্ত হারিয়েছে- তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা লেজুড়বৃত্তি করেছে, তাদের কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে।

অ্যাডভোকেট জামানের পর শনিবার নবগঠিত সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ১১ নেতা পদত্যাগ করেন। তারা হলেন- জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ বক্স, সদস্য মওদুদুল হক, শহীদুল ইসলাম কাদির, আলতাফ হোসেন বিলাল, আমিনুল হক বেলাল, শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী লাহিন, টিটন মল্লিক ও মহানগরের সদস্য কাউন্সিলর আবদুর রকিব তুহিন, রুজেল আহমদ চৌধুরী, আবদুল হান্নান ও আক্তার আহমদ। সর্বশেষ মহানগর তাঁতী দলের সভাপতি ফয়েজ আহমদ দৌলত, সাধারণ সম্পাদক হাজি শওকত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল গফ্‌ফার ‘স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে’ পদত্যাগ করেন। তাদের সবাই স্থানীয় রাজনীতিতে ‘জামান গ্রুপের’ অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এই পদত্যাগকে অবশ্য খুব গুরুত্ব দিতে চাইছেন না জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল। তিনি বলেন, জেলা ও মহানগর মিলে ১২২ জন নেতার মধ্যে ১০-১১ জনের পদত্যাগের কথা শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলছেন, তারা পদত্যাগ করেননি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির মতো বড় দলে যোগ্য নেতার অভাব নেই। দীর্ঘ এক যুগ পর কমিটি গঠন করলে তাই অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা বাদ পড়তে পারেন। এভাবে প্রকাশ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না দিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করা যায়।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমরান আহমদ চৌধুরী মনে করেন, অ্যাডভোকেট জামানের পদত্যাগ ‘অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ’। অতীতে রাজনৈতিক কারণে জামানের সঙ্গে পালিয়ে থাকা ও জেলজীবনের কথা স্মরণ করে ফেসবুকে এমরান চৌধুরী লেখেন, অনেক সময় মতের ভিন্নতাও হয়েছে। কিন্তু তোমার (জামান) রাজনৈতিক ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল বরাবরই। সব ক্ষোভ ভুলে জামানের দলে ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই দলের শত শত নেতাকর্মীর প্রত্যাশা সব মান-অভিমান ভুলে তুমি আবারও মুক্তির মিছিলে আসবে।

সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পদত্যাগ নিয়ে অনেকের মতো ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন মহানগর বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউল করিম নাচন। সাবেক এই ছাত্রনেতা পদত্যাগের সমালোচনা করে বলেছেন, অ্যাডভোকেট জামান অতীতে পকেট কমিটিকে হালাল হিসেবে স্বীকৃতিদান করেছিলেন। তবে জামানকে ফিরিয়ে আনার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি লেখেন, আমার মতো হাজার হাজার নেতাকর্মী সৃষ্টির কারিগর জামান ভাইয়ের সিলেটে বুক ফুলিয়ে চলতে হলে দলের খুব প্রয়োজন হয় না, জামান নামটাই যথেষ্ট। বরং দল চিপায় পড়লে জামান ভাইয়ের মতো নেতাদের প্রয়োজন হয়।

সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ফেসবুক ওয়ালজুড়ে এখন অ্যাডভোকেট জামানসহ অন্যদের পদত্যাগের ইস্যু আলোচিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে জামানের পদত্যাগে দলের সমালোচনা যেমন আছে; তেমনি অনেকে জামানের সমালোচনাও করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, জামানের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। তার পদত্যাগে সিলেট বিএনপিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, পদত্যাগের আগে জামান কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন। এভাবে পদত্যাগ করা উচিত হয়নি।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ