1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অক্সফোর্ড-এস্ট্রোজেনেকা ভ্যাক্সিনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো স্বাভাবিক? কোনগুলো নয়?

শামীম আহমেদ জিতু : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

যেকোন ভ্যাক্সিনের মতো করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ভ্যাক্সিন নিলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকা স্বাভাবিক, এতে অবাক বা বিচলিত হবার কিছু নেই। চিন্তা করে দেখুন, এমন একটা ভাইরাস যার আক্রমণে পৃথিবীতে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ মারা গেছে মাত্র একবছরে; সেটি প্রতিরোধে আপনি যে ভ্যাক্সিন নিচ্ছেন, যা আপনাকে মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে, তার খানিকটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি খুব অস্বাভাবিক? আসুন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা যাক।
 
১) ব্যথা, ফুলে যাওয়া, অথবা ভ্যাক্সিন নেবার জায়গায় লালচে হওয়া বা চুলকানি ভ্যাক্সিনের খুবই সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ভ্যাক্সিন নেবার ১২ ঘন্টার মধ্যেই সাধারণত এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখা যায়। তবে সবার ক্ষেত্রে একই সময়ে হবে এমনটা হয়। করোনার ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বেশীরভাগ মানুষই এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো অনুভব করেছেন। কেউ কম কেউ বেশী। দেয়ার পর থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত এইসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি এমনকি সপ্তাহখানেকও থাকতে পারে। চিন্তার কিছু নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত এগুলোর মাত্রা অত্যাধিক নয়।
 
২)  মৃদু জ্বর ভ্যাক্সিনের আরেকটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এটি কারও ক্ষেত্রে হয় কারও ক্ষেত্রে হয় না। ভ্যাক্সিন দেবার পর জ্বর হবার একাধিক কারণ আছে। একটা খুব স্বাভাবিক কারণ হচ্ছে শরীর চায় ভ্যাক্সিন দেবার পর শরীরের তাপমাত্রা একটু বাড়িয়ে দিতে যাতে সাধারণ রোগজীবাণু এই সময়ে শরীরে খুব বেশী কার্যকরী হতে না পারে। অর্থাৎ আপনার শরীর চায় এই সময়টাতে ওই নির্দিষ্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে, এই সময় যাতে অন্য কোন জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে না হয়। ফলশ্রুতিতে তাপমাত্রা একটু বেড়ে যায়। আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে ভ্যাক্সিন কীভাবে কাজ করে তার কর্মপন্থা। ভ্যাক্সিন আপনার শরীরে এমন উপাদান প্রবেশ করায় যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জেগে উঠতে সহায়তা করে। কিন্তু ভ্যাক্সিন ওই উপাদান অতটুকুই প্রবেশ করায় যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জেগে উঠতে সাহায্য করবে কিন্তু আপনাকে আক্রান্ত করতে পারবে না। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকরী হয়, এবং প্রতিরোধ তৈরী করা শুরু করে, যার ফলশ্রুতিতে মৃদু জ্বর দেখা দিতে পারে। এর মানে কিন্তু ভ্যাক্সিন আপনার শরীরে কাজ করছে, সুতরাং চিন্তিত হবার কিছু নেই।
 
৩) গা শিরশির করা, ঠান্ডা অনুভূত হওয়া, গা ম্যাজম্যাজ করা অনুভূতিও কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। অল্প জ্বরের সময়ে আমাদের অনেকেরই গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন দেবার পর আপনার এমন কিছু অস্বস্তি হতে পারে। গা শিরশির করতে পারে, ঠান্ডা লাগতে পারে, গা ম্যাজম্যাজ করতে পারে। এগুলোর যেকোনটিই থাকতে পারে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত। জেনে রাখুন এগুলো স্বাভাবিক, চিন্তার কিছু নেই।
 
৪) দূর্বল লাগা ভ্যাক্সিনের কার্যকরীতার একটা লক্ষণ। মনে রাখবেন ভ্যাক্সিন আপনার শরীরকে বোঝাতে চায় যে আপনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যাতে সে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কার্যকরী করে। তারপর ভ্যাক্সিনের অন্যান্য উপাদান সেই প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে আপনার শরীরকে এমনভাবে প্রস্তুত করে যাতে ভবিষ্যতে আপনি করোনায় আক্রান্ত হলে সে আপনাকে প্রতিরক্ষা দিতে পারে। এই পুরো ব্যাপারটি আমি যে দুই-তিন লাইনে বললাম তার চাইতে অনেক জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। ফলশ্রুতিতে আপনার শরীর আপনার অজান্তেই ভেতরে ভেতরে ভ্যাক্সিন নেবার পর অনেক কাজ করতে থাকে। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আপনার শরীরের উপর দিয়ে অনেক চাপ যায়, ফলশ্রুতিতে খানিকটা দূর্বল লাগাটাই স্বাভাবিক।
 
৫) মাথাব্যথা হলে ভয় পাবেন না। করোনা প্রতিরোধক ভ্যাক্সিন নেবার পর যে মাথাব্যথা হয় এটাকে বলে সিস্টেমেটিক সাইড ইফেক্ট। ভ্যাক্সিন যেখানে কাজ করে তার থেকে দূরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যে মৃদু প্রতিক্রিয়া হয় সেগুলোই সিস্টেমেটিক সাইড ইফেক্ট, মাথাব্যথা যার মধ্যে অন্যতম। মনে রাখবেন, ভ্যাক্সিনের মধ্যে হাজারো উপাদান থাকতে পারে যা নানাভাবে আপনার শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রস্তুত করে। এর অনেকগুলো হচ্ছে কেমিক্যাল রি-একসান অর্থাৎ ভ্যাক্সিন আপনার শরীরের স্বাভাবিক নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে কিছু সময়ের জন্য প্রভাবিত করে, মাথাব্যথা তারই একটি সাময়িক লক্ষণ। দুদিনের মধ্যেই মাথাব্যথা এমনিতেই চলে যাবার কথা।
 
৬) মাংসপেশী ও গিটে (হাড়ের জোড়ায়) ব্যথা হলেও অবাক হবেন না। এছাড়াও ঘাড়ে ব্যথা, হাত নাড়তে ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা এগুলো সবই হতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত হলে কোন চিন্তার কারণই নেই। উপরে ভ্যাক্সিন কীভাবে কাজ করে বলেছি, সেই কারণে এমন ব্যথা হতে পারে যে কারও ক্ষেত্রে।
 
অক্সফোর্ড-এস্ট্রোজেনেকা ভ্যাক্সিন নেবার পর আপনি যদি উপরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো অনুভব করেন, তবে আপনাকে অভিনন্দন, আপনার শরীরে ভ্যাক্সিন কাজ করছে, আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষম কোষগুলো কাজে নেমে পড়েছে আক্রান্ত হবার আগেই, তাই আপনি এগুলো অনুভব করছেন। ভ্যাক্সিন নেবার পর যদি উপরোক্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো আপনি অনুভব না করেন, তবে আপনাকেও অভিনন্দন, আপনার শরীরেও ভ্যাক্সিন কাজ করছে। কিন্তু আপনার শরীর সম্ভবত যথাযথ মাত্রায় প্রস্তুত হচ্ছে, তাই এখনই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।
যাদের বয়স কম, এবং শারীরিকভাবে বেশী সক্ষম, তাদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হবার কথা। যাদের বয়স বেশী, বা বয়স কম হলেও শরীর তুলনামূলকভাবে দূর্বল, তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশী দেখা যেতে পারে। কোন ক্ষেত্রেই চিন্তার কিছু নেই।
 
কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুরুত্ব দিয়ে নেবেন?
আপনার শরীরের যদি হঠাত করে অত্যাধিক চুলকানি দেখা যায়, সারা শরীর ফুলে যায়, র‍্যাশ দেখা যায়, নিঃশ্বাস নিতে সাংঘাতিক সমস্যা দেখা যায়, তবে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। প্রতি ১ লক্ষের মধ্যে ১ জনের এমন হতে পারে। মনে রাখবেন গতবছর ঘুমের মধ্যে বিছানা থেকে মাটিতে পড়ে গিয়ে পৃথিবীতে ৪৫০ জন মানুষ মারা গিয়েছে। সুতরাং ১০ লক্ষে একজন মানুষের এমন হলে সেটা দূর্ভাগ্য, আর কিছু না। এখানে ভ্যাক্সিনের কোন দোষ নেই।
 
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার এই সময়ে কী করতে পারেন?
১) বেশী অস্বস্তি, ব্যথা, জ্বর হলে ২টা প্যারাসিটামল খেয়ে নেন বেশী করে পানির সাথে।
২) ভ্যাক্সিন নেবার পর ১-২ দিন ছুটিতে থাকতে পারেন যদি আপনার কর্মক্ষেত্র সেটা অনুমোদন করে। বিশ্রাম দ্রুত আপনাকে চাঙ্গা করে দিবে।
৩) ভ্যাক্সিন নেবার জায়গায় ব্যথা করলে বরফ দিতে পারেন। বা কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে সেটা দিয়েও চেপে রাখতে পারেন।
৪) প্রচুর পানি পান করুন।
৫) আপনার চিকিৎসকের ফোন নাম্বার জেনে রাখুন।
 
মনে রাখবেন এস্ট্রোজেনেকা ভ্যাক্সিন দেবার পর প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত ২ জনের মধ্যে এইসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বয়স, জীবনযাপনের ধরণ, শারীরিক সুস্থতা, ওজন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে কে কেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন আপনি যতই অসুস্থ হন না কেন, এলার্জি ছাড়া আপনার ভ্যাক্সিন নেয়া জরুরী। আর খুবই সীমিত ক্ষেত্রে কারও কারও ক্ষেত্রে হয়ত ডাক্তার ভ্যাক্সিন নিতে মানা করতে পারেন। এস্ট্রোজেনেকা ভ্যাক্সিন প্রথম ডোজ নেবার পরই সাধারণত বেশীরভাগ মানুষ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেছেন। দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে এটি কম বা না হবার কথা। এস্ট্রোজেনেকার ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, বমি বা ডায়ারিয়াও হতে পারে। উদ্বিগ্ন হবেন না।
 
আরও কিছু জিনিস জেনে রাখা দরকার
) ভ্যাক্সিন ডোজ শেষ করার পর অন্তত ৩ সপ্তাহ লাগতে পারে এটি কার্যকরী হতে। অর্থাৎ ভ্যাক্সিন দেবার ৩ বা ৫ দিন পরও আপনার করোনা হতে পারে। তাই ভ্যাক্সিন ডোজ শেষ করা জরুরী এবং ভ্যাক্সিন নেবার পরও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার অভ্যাস জারি রাখা ভাল।
২) ভ্যাক্সিন দেবার পরও আপনার করোনা হতে পারে। সকল ভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই বলেছে যে করোনার ভ্যাক্সিন নিলেও আপনার আবার করোনা হতে পারে। ভ্যাক্সিনগুলোর মূল কাজ আপনি যাতে করোনা আক্রান্ত হলে মারা না যান সেটি নিশ্চিত করা, কিন্তু করোনা একেবারে হবেই না, এটি নিশ্চিত করে বলার মতো দীর্ঘসময়ের গবেষণা করা সম্ভব হয়নি।
৩) করোনার ভ্যাক্সিন নিলে তা আপনাকে কতদিনের প্রতিরক্ষা দেবে? বিজ্ঞানীরা তা জানে না, কারণ এটা জানার জন্য যে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা করা দরকার তা করার সময় কেউ পায়নি। সুতরাং যদি ভ্যাক্সিন নেবার পরও আবার আপনার করোনা হয়, অবাক বা হতাশ হবেন না। কিন্তু জেনে রাখবেন এই ভ্যাক্সিন সম্ভবত আপনাকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে।
৪) আপনার যদি ইতিমধ্যে করোনা হয়ে গিয়েও থাকে, তবু আপনাকে ভ্যাক্সিন নিতে হবে। কারণ বিজ্ঞানীরা জানেন না যে এন্টিবডি আসলে আপনাকে কতদিনের প্রতিরক্ষা দেয়। সুতরাং ভ্যাক্সিন না নিলে ঝুঁকি থেকে যায়, নিয়ে নিলে কোন ক্ষতি নেই।
 
আমি উপরে যে আলোচনা করেছি আশা করছি তা আপনাদের ভ্যাক্সিন নিতে উদ্বুদ্ধ করবে। আমরা সৌভাগ্যবান যে বাংলাদেশে এত সহজে ও দ্রুত বিনা পয়সায় করোনার ভ্যাক্সিন পাওয়া যাচ্ছে। আমি উপরে যা আলোচনা করেছি কোনটিই আমার নিজের অনুমানপ্রসূত নয়। ইউনিভার্সিটি অফ টরোন্টো, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেন্সান, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেসান, জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি এবং আমার জ্বনস্বাস্থ্যের জ্ঞান ও গবেষণা থেকে লেখা। কিন্তু মনে রাখবেন একটি রোগ ও ভ্যাক্সিন নিয়ে গ্রহণযোগ্য কিছু বলার জন্য ন্যূনতম ৫-১০ বছর সময় লাগে। কিন্তু করোনা বিশ্বকে সেই সুযোগ দেয়নি। আমরা চেষ্টা করছি সম্ভাব্য সবচেয়ে সেরা তথ্যটি আপনাকে দিতে, কিন্তু এর ব্যতিক্রম হবে না, সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।
 
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
 
লেখকঃ শামীম আহমেদ জিতু, সোশাল এন্ড বিহেভিয়ারাল হেলথ এনালিস্ট, ইউনিভার্সিটি অফ টরোন্টো।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, টরোন্টো, কানাডা। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ