1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সেদিন কেন পিলখানায় সেনাবাহিনীকে তাৎক্ষণিক অভিযানে পাঠানো হয়নি?

হামজা রহমান অন্তর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্ন, সেদিন কেন পিলখানায় সেনাবাহিনীকে তাৎক্ষণিক অভিযানে পাঠানো হয়নি? আসলে তা সম্ভব হয়নি।
বিডিআর বিদ্রোহের দিন পিলখানার ভেতরের অবস্থা বোঝা না যাওয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। এই জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের বৈঠকে সমঝোতার পক্ষে মত দেন তিন বাহিনীর প্রধানেরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সমঝোতা না হলে কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন করা হবে। ঐ সময়ের সেনাপ্রধান মইন ইউ আহম্মেদের ধারণা ছিলো, সেনাবাহিনীর প্রথম দলটি পৌঁছানোর আগেই অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের আগেই বিদ্রোহীরা বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় সিআইডিকে ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দীতে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানেরাও এ কথা বলেছেন।
সকাল ১১ঃ৪০ এর দিকে সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ব্রিগেড কমান্ডার আনোয়ারের নেতৃত্বে দুই ব্যাটারি এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ইউনিট নিউমার্কেট, সাইন্স ল্যাব, সাতমসজিদ রোডে মোতায়েন করা হয়। এই বাহিনী অস্ত্রসস্ত্র সুধুমাত্র বিমান হামলা প্রতিরোধ করা ছাড়া অন্যকোন কাজে ব্যাবহার করা যায় না। এই বিমান বিধ্বংসী কামানের গোলার ফিউজ বিশেষভাবে তৈরি। এই কামানের গোলা সর্বোচ্চ উঁচুতে উঠে নিচে পড়ার পুর্বমুহুর্তে আকাশেই বিষ্ফোরিত হয়, কামানের নলও বেশী নিচু করা যায় না। তাই এই কামান দিয়ে কোনো অবস্থাতেই ভূমিতে আক্রমনের উপায় নাই। শুধু শব্দ ভীতি সৃষ্টি করা সম্ভব। তাতেও পরবর্তীতে আরেকটি ঝামেলাপূর্ণ বিপদের সৃষ্টি হতো, অবিস্ফোরিত গোলাগুলো খুঁজে অপসারণ করার। সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে বিমান বিধ্বংসী ইউনিট এসে মেডিনোভার মোড়ের কাছের প্রধান সড়কটির নিয়ন্ত্রণ নিতে দেখা যায়। এই আকাশ যোদ্ধারা ঐ পরিস্থিতিতে স্থল যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত ছিলো। গানারদের মোতায়েন করা হয় লাইন অব ফায়ারের ভেতর, প্রধান সড়কের মাঝে। নাই কোন কংক্রিটের আড়াল, নাই কোনো বালুর বস্তার প্রতিবন্ধক, নাই কোনো টেম্পোরারি বাংকার। কিন্তু আর্মির দেখা পেয়েই ৪নং গেটে ট্রাস্ট ব্যাংকের পাশ থেকে বিডিআর সদস্যরা বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করা শুরু করে। কানফাটানো মেশনগানের ভয়াবহ শব্দে ছোটাছুটি শুরু করে সাধারণ মানুষ। কামানের কাছে দণ্ডায়মান তিন-চারজন সেনা গুলিবিদ্ধ হয়ে কবুতরের মতো লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তাদের ১৫নং কেয়ারি প্লাজার কাছে পিছিয়ে নেয়া হয়। গুলিবিদ্ধ সৈনিকদের সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হলে একজন মারা যায়। মৃত্যুর ঘটনাটি কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়, হয়তো সেনা মনবল হারানোর ভয়ে বা যুদ্ধ কৌশলও হতে পারে।
এই অপর্যাপ্ত উপকরণ নিয়ে কেন “ঝটিকা অভিযান” চালানো হয়নি, এ নিয়ে এখনো কান্নাকাটি করা যেসব মতলববাজ কর্মকর্তা বলে তাৎক্ষণিক সেনা অভিযান চালাতে সরকার বাঁধা দিয়েছে, এদেরকে ধরে আইনের আওতায় এনে ব্যাকরাউন্ড সামনে আনা দরকার। তাৎক্ষনিক কেন, প্রথম দিন আক্রমণ দূরে থাক, তৎকালীন সেনাবাহিনীর আক্রমণ সামাল দেওয়ার ক্ষমতাও ছিলোনা। কারণ এরকম পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী আগে কখনো পড়েনি। তাহলে কেন তাদের হাজির করা হয়েছিল? আমার ধারনা একটাই, এই এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড ঢাকার সবচেয়ে কাছে বিমান হামলা থেকে বিমানবন্দর রক্ষায় মোতায়েনকৃত এবং এরা ২৪ ঘন্টাই পালাক্রমে প্রস্তুত অবস্থায় থাকে। শুধুমাত্র এই বাহিনীটিকেই ২ ঘন্টার ভেতর মোতায়েন করা সম্ভব ছিল। তাই কিছু না করার চেয়ে কিছু একটা মোতায়েন করা দরকার ছিলো। বিকেলের দিকে সাভার থেকে ১৫-২০টি এপিসি ও ট্যাংক হাজির করা হলেও অবাক করা বিষয় এর কোনো এপিসি বা ট্যাংকে কোনো অস্ত্র, গোলাবারুদ ছিলোনা, ট্যাংকের গোলাবারুদ রাজেন্দ্রপুরের একটি ভিন্ন অস্ত্রাগারে রক্ষিত ছিলো। সেগুলো এনে ট্যাংক ও কামান প্রস্তুত করতে করতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত লেগে গিয়েছিলো। প্রত্যক্ষদর্শী মতে, সন্ধ্যা পর্যন্ত এপিসি ও ট্যাংকে মেশিনগান ও যন্ত্রপাতি লাগাতে দেখা গিয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তার কাছেও সেনা কর্মকর্তারা কথাগুলো স্বীকার করেছিলেন।
২য় দিন তাদের ট্যাংক ও কমান্ডো বাহিনীসহ পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিলো। কিন্তু তাদের ডাইরেক্ট কমান্ডো অপারেশন চালানোর কোন পরিকল্পনা চোখে পড়েনি। সিনেমা হল সংলগ্ন ১নং গেট এবং হাজারিবাগের ৫নং গেটে সেনা অভিযান চালানো ও জিম্মি মুক্তির সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান ছিল, ৫নং গেট থেকে ১০০ গজ দূরে সেই দরবার হল, গেট থেকেই দেখা যায়! যেখানে ৫০ জন আর্মি অফিসার তখনো জিম্মি! এই গেট এলাকাটি আমার মতে সবচেয়ে কৌশলগত সামরিক পজিশন। লেদার টেকনোলজি কলেজ থেকে ঘনবসতি বিল্ডিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে পজিশন নিয়ে দ্রুত অগ্রাভিযানের সবচেয়ে কার্যকর স্থান, কিন্তু সেখানে কোনো সেনা উপস্থিতি দেখা যায়নি। ৫নং গেট থেকে মাত্র একশো গজ দূরে বিদ্রোহের মুলকেন্দ্র দরবার হল, অতচ সেই পয়েন্টে একটি সেনাকেও দেখা যায়নি। করণ উচ্চমহল তখনো ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেনি তাদের কি করনীয়। অনেক বড় বড় দেশেও যুদ্ধের ময়দানে সেনা কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তাই এটা আমার মতে “জাস্ট এ ব্যাড ডে”। তাই তাৎক্ষনিক সেনা আক্রমণ না করা হলেও অভিযানের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে প্রয়োজনীয় কৌশলগত অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর যমুনা কার্যালয়ে তিন বাহিনী প্রধানের কমান্ডে সকল ইউনিট প্রধানের উপস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছিলো। প্রথম দিন সন্ধ্যার পর একদফা অস্ত্র জমা দেয়ার পর কিছু চরমপন্থী গ্রুপ দ্বিতীয় দিনেও অস্ত্র সমর্পণ করতে টালবাহানা করে। এরপর সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সিলেট থেকে সি১৩০ বিমানে মার্কিন ট্রেনিংপ্রাপ্ত প্যারাকমান্ডো আনা হলেও তাদেরও সম্মুখ হামলার ঝুঁকি নিতে বলা হয়নি তখনো। তাদের কোনো তৎপরতাও চোখে পড়েনি।
ভেতরে প্রায় ৯০ জন জিম্মি আর্মি অফিসার, তিন শতাধিক বেসামরিক জিম্মি জীবিত থাকার পরও প্রস্তুতি নেওয়া হয় ধ্বংসাত্মক ভারি কামানে আর্টিলারি হামলার! এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্টাইলে ভারি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আর্টিলারি ব্রিগেড আবাহনীর মাঠ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে একযোগে কামানের গোলাবর্ষন করে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ ভাঙার প্রাণঘাতী পরিকল্পনা নেওয়া হয়। গোলাবর্ষনের মাধ্যমে নির্মূল করার পর এপিসি প্রবেশ করার পরিকল্পনা হয়। স্থানীয় প্রশাসনকে পিলখানার আসেপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকার লোকজন সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়া হয়। এতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে ২০-৩০ লক্ষ ইভাকুয়েশন, এরপর যুদ্ধক্ষেত্রের মত কামান হামলা, আটক ৯০ অফিসার ও ৩০০ জীবিত জিম্মির নিরাপত্তার কি পরিণতি হবে? কোনো ব্যাবস্থা বা কৌশল চোখে দেখা যায় নি, কি ভয়াবহ রক্তপাত হতো সেটা মোটেই বিবেচনার বিষয় না। আসেপাশের বেসামরিক জানমালের ক্ষতির কথা নাহয় বাদই দিলাম। তার দরকার হয় নি। নচেৎ হাজার হাজার বেসামরিক এলাকাবাসী হতাহত হতো। প্রধানমন্ত্রীর কড়া হুশিয়ারি দেয়া ভাষণের পরপরই বিদ্রোহীরা দ্রুত অস্ত্রসমর্পণ শুরু করে। বিদ্রোহ সামাল দিতে কতৃপক্ষের কি কোনো গাফিলতি ছিল? না। কিছু ত্রুটি ও বিশৃঙ্খলা থাকলেও এযাবৎ প্রাপ্ত সবগুলো রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বিদ্রোহ সামাল দেয়ার প্রক্রিয়ায় কোনো বড় গাফিলতি চোখে পড়েনি। জিম্মিদের ছাড়িয়ে আনা, কোন রক্তপাত ছাড়াই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে অস্ত্র সমর্পণ। ৯০ জন অফিসার জ্যান্ত উদ্ধার! তিন শতাধিক মহিলা-শিশুসহ বেসামরিক জিম্মি জ্যান্ত উদ্ধার! কোনো শক্তিপ্রয়োগ ব্যাতিরেকেই মাত্র ২৯ ঘন্টার ভেতর বিদ্রোহের সমাপ্তি। লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে সবাই প্রায় একই সময় আনুমানিক ৯-৩০ মিঃ থেকে ১০টার মধ্যে নিহত হয়েছিলেন। শুধু মিসেস শাকিলসহ কিছু অফিসার ও কিছু নন আর্মি পারসন কয়েক ঘন্টা পর নিহত হয়।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জেনারেল শাকিলের ফোন পেয়ে সেনাপ্রধান মইন ইউ আহাম্মেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে ঘটনাটি জানিয়ে ফোন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক তিন বাহিনী প্রধান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে তার দফতরে তলব করেন। সেনাপ্রধানকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে বলেন। সেনাপ্রধান বলেন, ট্রুপস রেডি করতে কমপক্ষে দুই ঘন্টা লাগবে, উনি গাড়িতে আসতে আসতে ঘটনার আপডেট জানাতে থাকেন। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পুলিশের আইজি নুর মোহাম্মদও হাজির হন। দফায় দফায় বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত বাহিনী প্রধানদের কাছে অভিযানের পরামর্শ চান। তারা সবাই ভেতরের অবস্থা না বুঝে এখনি রেইড চালানো ঠিক হবেনা বলে অভিমত ব্যাক্ত করেন। র্যাবের একটি দলকে পাঠানো হয়েছিল ৩ ও ৫নং গেটে, বন্দীদের বর্তমান অবস্থা, বিদ্রোহীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য, কিন্তু বৃষ্টির মত গুলিবর্ষনে র্যাবের দলটি পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ইতোমধ্যে কিছু টেলিভিশন সংবাদকর্মী বিদ্রোহীদের সাথে কথা বলতে সক্ষম হয়, তাদের বক্তব্য ছিলো অস্পষ্ট, বোঝাই যাচ্ছিল অন্য প্রান্তের কোনো অবস্থা তাদের জানা নাই। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী অত্র এলাকার দায়িত্ব সাংসদ ফজলে নুর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমকে দেন, বিদ্রোহীদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন এবং ভেতরের অবস্থা জানার জন্য। তারা বিকেল ৩টার দিকে রাইফেলস স্কোয়ারের কাছে ৪নং গেটে হেটে গেটের দিকে যেতে থাকেন। কিন্তু বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষনের মুখে কয়েক দফা তাদের যাত্রা বাতিল করতে হয়। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মেগাফোনে বারবার বিদ্রোহীদের গুলিবর্ষন বন্ধ করে কথা শুনতে বলেন। উপস্থিত সামরিক কর্মকর্তারা এভাবে ভেতরে প্রবেশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন, এতো ঝুঁকি না নিয়ে চিঠি দিয়ে একজন টোকাইকে পাঠানোর জন্য মতামত দেন। ইতোমধ্যে বিদ্রোহীদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ সম্ভব হয়, তারা গুলিবর্ষন বন্ধ করতে সম্মত হয়। দুই ঘন্টা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার পর নানক একাই একটি সাদা পতাকা নিয়ে গেইটের ভেতর ঢুকতে রাজি হন। বিদ্রোহীদের একাধিক গ্রুপ ছিল, একটি গ্রুপ যেকোনো নেগোসিয়েশনের ঘোর বিরোধী ছিলো। তারাই লাশ লুকিয়েছিলো। এই গ্রুপটি নিশ্চিতভাবেই জানতো নেগোসিয়েশনে সাধারন ক্ষমা করা হলেও কোনো অবস্থাতেই হত্যাকারীরা মাফ পাবে না। লাশ লুকানোর জন্য তাদের একটি রাত দরকার ছিল। তারাই গুলি করছিলো বারবার।
এরপর বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের আহবান জানানো হয়, বিনিময়ে সাধারণ ক্ষমা। বিদ্রোহীরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সাধারণ ক্ষমার ব্যাপারটার নিশ্চয়তা চান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সিদ্ধান্ত হয়, এক্ষুনি বেসামরিক মহিলা-শিশুসহ জিম্মিদের ছেড়ে দিতে হবে। অস্ত্র সমর্পণ আজ রাতের মধ্যেই সারতে হবে। আটক সেনা কর্মকর্তাদের অক্ষত অবস্থায় মুক্তি দিতে হবে। সন্ধ্যার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন নিজেই অস্ত্র সমর্পণ ও জিম্মি উদ্ধার পর্যবেক্ষণ করতে পিলখানার ভেতরে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বুলেটপ্রুফ মার্সিডিস জিপটি একজন এসএসএফ ড্রাইভারসহ সাহারা খাতুনকে দেয়া হয়। পুলিশ আইজি নুর মোহাম্মদ সাহারার সাথে সহযাত্রী হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারন নুর মোহাম্মদের জামাতা ভেতরে নিখোঁজ। রাত্রি তিনটার সময় সাহারা খাতুনকে একজন নারী ক্যাপ্টেনসহ জিম্মি ৬০-৭০ জনের একটি দল নিয়ে বের হতে দেখা যায়।
সেই রাতে বেশ কিছু সৈনিক অস্ত্রসমর্পণ করলেও শহিদুলের নেতৃত্বে একটি উগ্রবাদী গ্রুপ সাধারণ ক্ষমা প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহ চালিয়ে যেতে থাকে। এই শহিদুলসহ আট-দশ জনই আসল খুনি। খুন করে দরবার হলের দরজা বন্ধ করে রেখেছিলো। তারা ভালভাবেই জানতো লাশ পাওয়ার পর সাধারণ ক্ষমা কোন অবস্থাতেই প্রযোজ্য হবে না, আর বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে সাধারণ সৈনিকদের আক্রমণের শিকার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। পরে সব লাশ গভীর সুয়ারেজ ম্যানহোলে ফেলে দিয়ে সাধারন বিদ্রোহীদের কাছে হত্যা গোপন করার প্ল্যান ছিলো। কিন্তু পানির চাপে কয়েকটি লাশ কামরাঙ্গিরচর খাল দিয়ে ভেসে গেলে তা ভেস্তে যায়। পরে রাতে বাকি লাশ মাটিচাঁপা দেওয়া হয়। পিলখানার পশ্চিম দিকটা খুনিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সাধারণ বিদ্রোহীদের কিছুই বুঝতে দেয়নি। সকালে সকল বেসামরিক জিম্মিকে বের করে আনা সম্ভব হয়। এরপর ৯০ জন জীবিত সেনা কর্মকর্তাকে বের করে আনা হয়। ইতোমধ্যে অস্ত্রসমর্পণ শেষ করে সকল স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ানের হাতে আসার পর বিদ্রোহের সমাপ্তি হয়। আর কোনো সহিংসতা ও রক্তপাত ছাড়াই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। জেনারেল শাকিলসহ ৬১ জন কর্মকর্তা তখনো নিখোঁজ। পরদিন ২৭ তারিখ শুক্রবার সেনাবাহিনীর দলটি আর্মড ভেহিক্যালসহ ভারি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে পিলখানার ভেতরে প্রবেশ করে এবং হতভাগ্য নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
সেনাপ্রধানের জবানবন্দীঃ-
জবানবন্দীতে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহম্মেদ বলেছেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটা ৫৫ মিনিটে বিডিআরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাকিল আহমেদের সঙ্গে তাঁর মর্টার নিয়ে কথা হয়। সকাল নয়টা ২৫ মিনিটে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিস কর্নেল) তাঁকে জানান, বিডিআর দরবার হলে গন্ডগোল হচ্ছে। কিন্তু বিডিআরের গোয়েন্দা বা অন্য কোনো বিভাগ তাঁকে কিছু জানায়নি। সকাল নয়টা ৩৫ মিনিটে তিনি ৪৬ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডকে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতির সংকেত ‘ওয়ার্নিং অর্ডার’ দেন। নয়টা ৪৭ মিনিটে ডিজি বিডিআরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ডিজি বিডিআর তাঁকে বলেন, “দরবার হলে বিডিআর সদস্যরা গন্ডগোল করছে। সব বিডিআর সদস্য হল থেকে বের হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি কন্ট্রোল করার জন্য। আমি দরবার হলে আছি।” ডিজি বিডিআরকে বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ১০টার কিছু পরে আবারও ডিজির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পায়নি সেনাসদর। ৯টা ৫১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানান, ৪৬ ব্রিগেডকে সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, “কতক্ষণ সময় লাগবে তাদের পৌঁছাতে?” সেনাপ্রধান বলেন, দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাহলে মুভ করান।” ফোনে কথা শেষ করেই তিনি ৪৬ ব্রিগেডকে অভিযানের নির্দেশ দেন। সকাল ১০টার দিকে তৎকালীন সেনাপ্রধান সারা দেশের সেনা স্থাপনাগুলোকে বিডিআরের ব্যাটালিয়ন এলাকাগুলোতে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিমের নেতৃত্বে ৬৮৫ জনের ৪৬ ব্রিগেড পিলখানার দিকে রওনা দেয়। তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল, তারা পিলখানার চারদিকে অবস্থান করবে। কিন্তু পিলখানার ভেতরে বিডিআর সদস্যরা মর্টার, রিকোয়েললেস রাইফেলের মতো ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেওয়ায় সেখানে সাঁজোয়া যান আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার-এপিসি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এপিসির গান কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে (সিওডি) এবং গোলাবারুদ রাজেন্দ্রপুরে থাকায় একটু দেরি হচ্ছিলো।
বেলা ১১টায় ৪৬ ব্রিগেড বহরের সম্মুখভাগ পিলখানার প্রধান ফটকে পৌঁছালে বিডিআর সদস্যরা ভেতর থেকে গুলি করেন। এতে বাইরে অবস্থানরত দুই সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হন। একজন পরে মারা যান। সাড়ে ১১টার দিকে পিলখানার ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার মেজর ইমরানের নেতৃত্বে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ব্রিগেড কমান্ডার আনোয়ারের নেতৃত্বে দুটি ব্যাটারি এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড পাঠানো হয়। সিলেটে অবস্থানরত প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের প্যারা কমান্ডোদেরও প্রস্তুত হতে বলা হয়। জবানবন্দিতে তৎকালীন সেনাপ্রধান আরও বলেন, “এর মধ্যেই সাড়ে ১১টার প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন (এএফডি) থেকে আমাকে জানানো হয় গোলাগুলি না করার জন্য। বলা হয়, প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংসদ মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে বিদ্রোহ দমনের জন্য আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।”
দুপুর ১২টার দিকে এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেডের দল দুটি নিউমার্কেট এলাকায় পৌঁছায়। তারা হেলিকপ্টার নিয়ে চক্কর দেওয়ার সময় বিদ্রোহী জওয়ানরা নিচ থেকে গুলি ছুড়লে তা হেলিকপ্টারে লাগে এবং কিছুটা ক্ষতি হয়। ১২টার দিকে ফরমেশন কমান্ডারদের সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেনাপ্রধানকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন যমুনায় যাওয়ার নির্দেশের কথা জানান। সেই অনুযায়ী বেলা ১টা ৫০ মিনিটে যমুনায় যান সেনাপ্রধান। এরপরই বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানেরাও যমুনায় আসেন। প্রধানমন্ত্রী তিন বাহিনীর প্রধানদের কাছ থেকে বিস্তারিত শোনেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এ সময় দুজন সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর প্রধানমন্ত্রীকে জানান সেনাপ্রধান। সেনাপ্রধান কয়েকটি বিষয় বিদ্রোহীদের বলার জন্য অনুরোধ করেন। এগুলো হলো, সব অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে, সব জিম্মি সেনা কর্মকর্তাকে মুক্তি দিতে হবে, তারা কোনো সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে কিনা, জানাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিত থাকতে বলেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা শুরুতেই তিন বাহিনীর প্রধানদের সামনে আলোচনা করতে আপত্তি জানান। জবানবন্দিতে সেনাপ্রধান আরও বলেন, বেলা দুইটার দিকে নবাবগঞ্জ সুয়ারেজ লাইনে দুই কর্মকর্তার লাশ পাওয়া যায়। বেলা ৩টা ৪৮ মিনিটে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ১২-১৪ জন যমুনায় আসেন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন অল্পবয়স্ক। তাদের আচরণ ছিলো রূঢ় এবং উত্তেজিতভাবে কথা বলছিলেন। প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্য হিসেবে তাদের যে সম্মান দেখানোর কথা ছিল, তারা তা দেখান নি। প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কথা বলে ১৫ মিনিট সময় দিয়ে বের হয়ে আসেন। জবানবন্দিতে মইন ইউ আহাম্মেদ আরও বলেন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে দিয়ে তিনি ডিএডি তৌহিদকে ডেকে আনেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, “আমাকে চেনেন?” তৌহিদ বলেন, “আপনি সেনাপ্রধান।” জেনারেল মইন তখন জানতে চান, বিডিআরের ডিজি ও অন্য কর্মকর্তারা কোথায় এবং কী অবস্থায় আছেন? জবাবে তৌহিদ জানান, “সকাল নয়টা থেকে আমাকে (তৌহিদ) অফিসে তালা দিয়ে রাখে। এখন বের করে নিয়ে আসে। আমি কিছু জানি না।” তৌহিদকে অন্যদের কাছ থেকে জেনে আসতে বলেন তিনি। এরপর তৌহিদ বৈঠক কক্ষে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। জেনারেল মইন জবানবন্দিতে এ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “পরে আমি জানতে পারি, সে আমার সাথে মিথ্যা কথা বলেছে।” জেনারেল মইন আবারও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে দিয়ে তৌহিদকে ডেকে আনেন। তখন তৌহিদ বলেন, “বাকিরা সবাই জানে কিন্তু তারা কিছু বলছে না।”
সন্ধ্যা ছয়টা ৩৭ মিনিটে যমুনা থেকে বের হয়ে যান বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা। রাত সাড়ে ১০টায় সেনাপ্রধান জানতে পারেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের আত্মসমর্পণের জন্য পিলখানার ভেতরে যাবেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিন কর্মকর্তার পরিবার ও পাঁচ ডিএডির পরিবারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। জবানবন্দীর প্রায় শেষ অংশে মইন ইউ আহাম্মেদ বলেন, “আমার ধারণা, আমার ট্রুপস পৌঁছার আগেই অর্থাৎ সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের মধ্যেই বিডিআররা বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। ২৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে বিডিআর সদস্যরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে অল্প কিছু গোলাবারুদ জমা দিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্রোহ চালিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ এবং সাভার থেকে ট্যাংক আসার খবর পেয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। রাতের আঁঁধারে বিডিআর সদস্যরা ৫ নম্বর ফটক দিয়ে ও পাশের অন্যান্য এলাকা দিয়ে পালিয়ে যান।” ২৭ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ঢুকে তিনি “এক অবর্ণনীয়, বিভৎস হত্যাযজ্ঞ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন প্রকারের নির্যাতনের চিহ্ন” দেখতে পান।
নৌবাহিনীর প্রধানের জবানবন্দীঃ-
নৌবাহিনীর প্রধান জহির উদ্দিন আহমেদ জবানবন্দীতে বলেন, সকাল ১০টায় পরিচালক ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তিনি বিডিআরে গন্ডগোলের খবর পান। বেলা একটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন যমুনায় যেতে বলা হয়। তিনি তখনই সেখানে যান। ঘণ্টা খানেক পর প্রধানমন্ত্রী নিচে এসে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, “তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের মতামত জানতে চান। তিনি আমাদের বলেন, দুটি পথ খোলা আছে, সমঝোতা না হয় সামরিক অভিযান। কিন্তু ভেতরের অবস্থা বোঝা না যাওয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। পরে আমরা সমঝোতা করা ঠিক হবে বলে মত দিই। কিন্তু একই সঙ্গে সমঝোতা না হলে সামরিক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে কঠোর হস্তে বিদ্রোহ দমনের মতামত দিই। পরে প্রধানমন্ত্রী বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে তিনি বলেন, বিডিআর সদস্যরা সমঝোতার জন্য আসবে।” কিছুক্ষণ পর ১২-১৪ জন বিডিআর সদস্য আসেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উচ্চস্বরে এবং উত্তেজিত অবস্থায় কথা বলছিলেন। এ সময় বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা তাদের দাবিদাওয়ার মধ্যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে দিতে এবং সংসদে পাস করে দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে তাদের কাছে বিডিআরের কর্মকর্তাদের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, সবাই ভালো আছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের অস্ত্র সমর্পণ করার এবং কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারদের তক্ষুনি ছেড়ে দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বলেন, এখনই পিলখানায় ফোন করে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দাও। এরপর তিনি তিন বাহিনীর প্রধানদের দেখিয়ে বলেন, তোমরা আত্মসমর্পণ না করলে তারা কঠিন অ্যাকশনে যাবেন। আলোচনার সময় বিদ্রোহীরা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
বিমানবাহিনী প্রধানের জবানবন্দীঃ-
বিমানবাহিনীর প্রধান শাহ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান জবানবন্দীতে বলেন, “সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক তাকে ফোন করে বলেন, বিডিআরে কিছু সমস্যা হয়েছে। তারিক জানতে চান, হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে কিনা! সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুটি হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করে। পাইলটরা গাছের ফাঁকে অসংখ্য বিডিআর সদস্যকে দেখা যাচ্ছে বলে খবর দেন। বেলা সাড়ে ১১টা-১২টার দিকে সরকার থেকে নির্দেশনা আসে, পিলখানার ভেতরে বিডিআর সদস্যদের আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে লিফলেট ছড়ানোর জন্য। সোয়া ১২টার দিকে আরেকটি হেলিকপ্টার লিফলেট ছড়াতে যায়। এ সময় বিডিআর সদস্যরা গুলি করলে হেলিকপ্টারের জ্বালানি ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” বিমানবাহিনীর প্রধান আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ আমরা মিটিংয়ে বসি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলেন। আমি তাকে আশ্বস্ত করি, ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই বিমানবাহিনী কাজ করতে প্রস্তুত আছে। এ সময় মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ আরও কয়েকজন নেতাকে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করার জন্য চাপ দিতে প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা দিতে থাকেন।”
আশাকরি এই আলোচনায় অনেক প্রশ্নের অবসান, অনেক দীর্ঘশ্বাসের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। বীর শহীদদের জানাই অতল শ্রদ্ধা।
লেখক- হামজা রহমান অন্তর
– কলামিস্ট, ছাত্রনেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাবেক বিএনসিসি ক্যাডেট 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ