1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বরিশালে নারী বাইকারদের বসন্ত 

ইবার্তা সম্পাদনা পর্ষদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

মাথায় হেলমেট। শক্ত মুঠোয় ধরা বাইকের হাতল। পেছনে যাত্রী। ছুটে চলছেন বরিশাল নগরীর এ মাথা থেকে ও মাথা। এমন অসংখ্য নারী বাইকার রীতিমতো রাজত্ব করছেন বরিশাল নগরীতে। কয়েক দশক আগেও যেখানে হাতে গোনা কয়েকজন নারী বাইকার ছিল, সেখানে এখন অসংখ্য নারী বাইকার ছুটে বেড়াচ্ছেন নগরীজুড়ে।

কেউ সন্তানকে স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজ করেন। কেউ হয়তো কর্মস্থলে ছুটছেন। আবার ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও ব্যবহার করছেন এ বাহন।
স্থানীয়দের থেকে জানা গেল, ৯০ দশকে বরিশালের রাস্তায় প্রথম হাতে গোনা কয়েকজন নারীকে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা যেত। এর দীর্ঘ সময় পর ২০১০-১১ সালের দিকে হাতে গোনা কয়েকজন নারী বাইক চালাতেন যারা ছিলেন মূলত বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি।

আধুনিক সময় গতিময় সময়। আর সময়ের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটে চলছেন এসব নারী বাইকাররা। নিজেদের নারী নয়, মানুষ হিসেবেই ভাবেন।
বাইকার তানজিলা মিম বলেন, ‘সমাজ বদলেছে। বদলেছে সভ্যতা। আধুনিক সমাজের সঙ্গে পিছিয়ে পড়া মানে চাপা পড়ে যাওয়া। সময়ের আগে চলতে হবে এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি। আর তাই ব্যক্তিগত বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন  মোটরসাইকেল।

বরিশাল শহরে মোটরসাইকেল চালাতে যেয়ে কোন সমস্যায় পড়েন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেক বখাটে ছেলে টিজ করে। ‘আপা মোটরসাইকেলের চাকা ঘুরছে’, এমন মন্তব্য করে। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতাম। রাস্তায় বাস ড্রাইভার কিংবা পুরুষ বাইকার কারও উদ্দেশ্য খারাপ মনে হলে, হয় তাদের সাইড দেই নয়তো আগে চালিয়ে যাই। এখন নতুন নতুন অনেক নারী বাইকার আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় অনেকটা নিরাপদ বোধ করি।’
আরেক বাইকার মরিয়ম আক্তার সুইটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বন্ধুদের বাইক দিয়ে চালানো শেখেন। পরবর্তীতে নিজের পকেট মানি জমিয়ে পরিবারের সাহায্য ছাড়াই একটি বাইক কেনেন। শুরুতে বাইক চালনা বিষয়ে পরিবারের সমর্থনও পাননি। এমনকি তার বাবাও বলতেন, ‘মেয়ে মানুষ, দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কোথায় না কোথায় পড়ে থাকবে।’ আর এখন সেই বাবা যখন বলেন,  ‘মা চল আমাকে একটু নামিয়ে দিয়ে আয়’, সেটি শুনে অন্যরকম তৃপ্তি কাজ করে তার মনে।

নারী বাইকারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বরিশালে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ড্রাইভিং স্কুল। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান, স্বপ্ন ড্রাইভিং স্কুল। এর পরিচালক ও ট্রেনার লিজা আক্তার হেনা শ্রাবণ। তিনি বলেন, ‘পুরুষদের জন্য মোটরসাইকেল চালানো যত সহজ, নারীদের ক্ষেত্রে তত সহজ নয়। এর মূলে রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক বাধা। তাই প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে স্বপ্ন ড্রাইভিং স্কুল নামে প্রথম আমরাই শুধু মেয়েদের জন্য একটি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলের যাত্রা করি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের জন্য নারী প্রশিক্ষক নিয়ে এখন আরও কিছু প্রশিক্ষণ স্কুল গড়ে উঠেছে। নারী প্রশিক্ষক দিয়ে নারীদের মোটরসাইকেল চালানো শেখানোয় স্কুলগুলোর অবস্থানও বেশ ভালো। তাই এখন বরিশালে নারী বাইকারদের সংখ্যা বাড়ছে।’
 
রাবেয়া আক্তার আঁখি, সানজানা, সুমনা, রাশনা রহমান দিপু, মুন্নীসহ একাধিক নারী বাইকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নারীদের মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। অনেকেই একে ভালোভাবে নেন না। দেখা যায় অন্যান্য পরিবহনের চালকরাও নানারকম হয়রানি করেন। তারা বলেন, সড়কে শুধু ট্রাফিক পুলিশের ওপরই আস্থা রেখে চলতে হচ্ছে তাদের। নগরে নারীদের মোটরসাইকেল চালনায় কিছু কিছু জায়গা ও ক্ষেত্রে ইভটিজিংয়ের শিকার যেমন হতে হয়, তেমনই থ্রি-হইলার ও বেপরোয়া চালকদের কারণে আতঙ্কেও থাকতে হয়।
তাদের দাবি, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে নারী বাইকারদের জন্য বিআরটিএতে আলাদা ব্যবস্থা করা হলে ভালো হয়। আবার ড্রাইভিং স্কুলগুলোর লাইসেন্স ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিলে আরও অসংখ্য নারী মোটরিসাইকেল চালাতে উৎসাহী হবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ