১৪ ফেব্রুয়ারির ইতিহাস গনবিরোধী শিক্ষানীতি ও স্বৈরাচার এরশাদ প্রতিরোধের ইতিহাস । শহীদ ছাত্রনেতা জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালী সাহাদের রাজপথে তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার ইতিহাস।
সাল ১৯৮২। তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ড.মজিদ খান একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। সেখানে প্রথম শ্রেণী থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি করা হয় মেধা অথবা ৫৫% ব্যয়ভার বহনের সক্ষমতা। চরম সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক এই শিক্ষানীতি ছাত্র সংগঠনগুলো মেনে নেয় নাই। একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয় আন্দোলন।
তিনিটি দাবী নিয়ে তারা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
১) মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল
২) সব ছাত্র ও রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিদান
৩) সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মিলিত হন এবং বাংলাদেশ সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও গুলি বর্ষণ করে। যার ফলে জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীসহ শত শত শিক্ষার্থী নিহত, আহত ও গ্রেফতারের শিকার হন। লাশ গুম হয় অনেকের।
আন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে শিক্ষানীতিটি স্থগিত করা হয়। তখন থেকে দিনটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
অনেক শহীদের রক্ত ও আন্দোলন পেরিয়ে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথচলা শুরু হয়। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন।
এরশাদের উপদেষ্টা হিসেবে খ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান স্বৈরাচার প্রতিরোধের এই দিনটি ভুলিয়ে দেওয়ার প্রয়াসে ১৯৯৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার ৩২ পাতার বিশেষ ভালোবাসা সংখ্যায় পরকীয়ার আখ্যান ‘দিনের পর দিন’ কলামে ‘মিলা ও মইনের’ টেলিফোনে কথোপকথন ছাপিয়ে বাংলাদেশে প্রবর্তন করেন ‘ভালোবাসা দিবস’। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার অফিসের সামনে একটি সড়কের নামকরণও করেন ‘লাভ লেন’।
এই ছিলো সংক্ষেপে বাংলাদেশের স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস ভুলিয়ে ভালোবাসা দিবস পালনের ইতিবৃত্ত।
১৪ ফেব্রুয়ারির বিপ্লবী চেতনা আমাদের হৃদয়ে বন্ধ দরজায় বারবার কড়া নাড়ুক। লও সালাম।