1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দুঃসময়ে মালেক-হানিফের অবদানের কথা স্মরণ করলেন শেখ হাসিনা 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ডাক্তার এস এ মালেক এবং মেয়র মোহাম্মদ হানিফের অবদানের কথা স্মরণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ১৯৮১ সালের সম্মেলনে আমার অবর্তমানে আমাকে দলের সভাপতি ঘোষণা করা হয়। এর পেছনে ড. মালেক, আমাদের মোহাম্মদ হানিফের সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে। আমি মনে করি, তারাই আমাকে সভাপতি করতে জনমত সৃষ্টি করেছিলেন। দলের সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এস এ মালেক স্মরণে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব অডিটোরিয়ামে এই সভা হয়। এর আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।

ডাক্তার এস এ মালেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। আর মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাদের প্রতি (ডা. মালেক ও মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) আমি মাঝে মাঝে রাগ করতাম, কারণ তারা আমাকে বার বার সভাপতি হওয়ার জন্য বলতেন। হানিফ ভাই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডনে গিয়েছিলেন। আমাকে সবসময় বলতেন আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু আমি তা অস্বীকার করতাম। তারপরও আমাকে সেই দায়িত্ব নিতে হয়েছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পর এই দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ডা. মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যে কয়জন অবদান রেখে গেছেন তার মধ্যে ডা. এস এ মালেক একজন। বৈরি পরিবেশের মধ্যেও তিনি জাতির পিতার আদর্শকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও নেতাকর্মীদের শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের জানানোর বিষয়টি তিনি অনেক দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার লেখনীর হাত ভালো ছিল। সেই লেখনীর মাধ্যমে জাতির পিতার আদর্শকে তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাও লিখে গেছেন তিনি। আমি মনে করি সেগুলো আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ হিসেবে থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচার, মানুষের মাঝে জনমত সৃষ্টি, লেখালেখি এবং সংগঠন করার ক্ষেত্রে তার (ডা. মালেক) অনেক অবদান রয়েছে। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করলেও তিনি কখনো আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন তা ভাবেননি। কিন্তু, ১৯৮১ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে দল আমার অনুপস্থিতিতে সভাপতি করায় আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিতে হয়েছিল।

তিনি বলেন, ড. মালেক ও মোহাম্মদ হানিফ তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কারণ তারা জনমত তৈরি করেছেন এবং দলীয় ফোরামে নিয়ে গেছেন।

এমনকি তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে বার বার জোর দেওয়ার জন্য ডা. মালেককে তিরস্কার করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ডা. মালেককে রাজনীতি সচেতন হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে ড. মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডা. মালেক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। তার যুদ্ধক্ষেত্র কুষ্টিয়ায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এয়ার রেইড চলার সময়ও তিনি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডা. মালেক ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রাজবাড়ী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাক নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে অনেক সংসদ সদস্যকে আলোচনার জন্য ডেকেছিল। ডা. মালেক সেখানে যাননি এবং তিনি অনেককে সেখানে যোগদান থেকে বিরত রাখেন। পাশাপাশি দেশের মধ্যে খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ফলে এক সময় ভারতে তাকে আশ্রয় নিতে হয়।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকায় তাকে ছোটবেলা থেকেই মালেক ভাই হিসেবে ডেকে এসেছেন বলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা উল্লেখ করেন।

ডা. মালেক রাজনৈতিক নেতা হলেও কোনো ধরনের অহমিকা তার মধ্যে ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এই উপদেষ্টা খুব সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন এবং যা অর্থ পেতেন তাই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতেন। একজন এমবিবিএস চিকিৎসক হয়েও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন বলে তার রোগ নির্ণয় এবং নিরাময় অত্যন্ত কার্যকর ছিল।

এক সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেও তার হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন বলে জানান।

’৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে ডা. মালেকের ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নিজ হাতে ঝাড়ু নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা পরিষ্কার ও ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর মাধ্যমে জীবাণু মুক্ত করতে নেমে পড়েন। মানুষ যাতে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে না পড়ে সেজন্য ব্যবস্থা নেন।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন প্রসঙ্গে বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদ করতে এবং তার আদর্শ জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্যই এর সৃষ্টি। কেননা সে সময় শেখ মুজিব নামটাও নিষিদ্ধ ছিল। আর মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েই জিয়াকে সেনাপ্রধান করার তিন মাসের মধ্যে জিয়া ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলে এই বঙ্গবন্ধু পরিষদই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে প্রচার করার প্রয়াস নেয়।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ সৃষ্টির পেছনে ড. মতিন চৌধুরীর বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এর দায়িত্বে থাকা বেগম সুফিয়া কামাল, বিচারপতি কে এম সোবহানসহ অন্যদের অবদানকেও স্মরণ প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই এদেশকে গড়ে তুলছি। করোনা অতিমারি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা প্রতিকূলতার মাঝে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখাই আমাদের প্রচেষ্টা। এজন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশ একদিন উন্নত দেশ হিসেবেই গড়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, মালেক ভাই যদি বেঁচে থাকতেন হয়তো আরও বেশি দেখে যেতে পারতেন। তবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এ পর্যন্ত তিনি জেনে গেছেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী এস এ মালেকের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের কথা উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

আলোচনা সভায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অজিত কুমার সরকার ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ- আলোয় আঁকা সাহসী মানুষের প্রতিকৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেক এবং ডা. এস এ মালেকের ছেলে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ