গ্রামের নাম চরঝাপটা। মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৭ কি.মি. দুরে। চরকেওয়ার ইউনিয়নের এ গ্রামটিতে রয়েছে ৬২ নং চর ঝাপটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর পাশেই রয়েছে মসজিদ, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, কবরস্থান ও আলীরটেক বাজারের মতো একটি বড় বাজার। আলীরটেক বাজার ও গ্রামের মধ্যে ব্যবধান শুধু একটি খাল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী। এছাড়াও আলীরটেক বাজারে চরঝাপটা থেকে যাতায়াতও করে প্রায় আড়াই হাজার লোক। চরঝাপটায় কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ চাকুরি জীবীদের বসবাস। আলীরটেক বাজার থেকে দেখা যায় এ গ্রামটি দাড়িয়ে আছে মেঘনার পাড়ে যেন জেলা শহরের একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম রূপে। মেঘনা নদীর তীরের চরঝাপটা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খাল। যেখানে সকাল সন্ধ্যায় জোয়ার ভাটার জলে ভরে যায় দুপাড়। তবে এ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগটা চরমে পৌছায় যখন বর্ষাকল এসে হাজির হয়। উন্নয়নের ছোয়ায় চর ঝাপটা গ্রামের উত্তর পার্শ্বে একটি নতুন রাস্তা ও খালের উপর পাঁকা ব্রিজের কাজ শুরু হওয়ার পথে হলেও সবচেয়ে বেশি লোকাবহুল আলির টেকবাজার সংলগ্ন চরঝাপটা গ্রামের লোকজন পরেছে যেন যোগাযোগের চরম বিপাকে। খালের উপর দক্ষিণচরমশুরা সংলগ্ন জায়গায় পাকা ব্রিজ থাকা সত্বেও এ গ্রামের লোকজনকে প্রায় ২০মিনিট সময় ব্যয় করে উল্টো পথে হেঁটে যেতে হবে লোকালয়ে।
বর্ষাকালে আলীরটেক বাজার বরাবর নিজস্ব অর্থায়নে একটি বাঁশের সাকো তৈরী করে এলাকাবাসী। যে সাঁকোতে পার হতে গিয়ে ইতোপূর্বে প্রাণ হারিয়ে রমজান (৮) ও হজি খাতুন। এছাড়াও এক পা হারিয়েছে মোহাম্মদ আলী। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ধুকে ধুকে জীবন পাড় করছে ইমন হোসেন (২৬), কাঞ্চন মালা (৭০)সহ অনেকেই। তবে স্কুলে পড়ুয়া শিশুদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় দিন কাটায় অভিভাবকরা। কারণ, প্রায় ৪০ফুট উচু বাঁশের সাঁকোতে পার হতে গিয়ে সন্তানরা খালের পানিতে ডুবে মেঘনার জলে ভেসে যায় কি না?
স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, সারা বছরই এ খালে জোয়ার ভাটার কারণে পানি থাকে। আমাদের নিজেদের অর্থেই প্রতিবছর বাঁশের সাঁকো তৈরী করি এবং এপার থেকে ওপারে চলাচল করি। আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।
এলাকাবাসী জানায়, কোন জনপ্রতিনিধিরাই আমাদের এ বাঁশের তৈরী সাকোতে আর্থিকভাবে কোন সহযোগিতা করে না। জনপ্রতিনিধিরা যদি এখানে অন্ততপক্ষে একটি কাঠের পুল তৈরী করে দেন তাহলে আমাদের একটি স্থায়ী যাতায়াতের ব্যবস্থা হবে এবং সহজে লোকালয়ের সাথে আমরা যোগাযোগ করতে পারবো। তাই আমাদের একটাই দাবি এখানে যেন একটি পাঁকা ব্রিজ বা স্থায়ী একটি কাঠের পুল তৈরী করে দিয়ে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করে দেয়।
এ বিষয়ে চরকেওয়ার ইউনিয়নের জীবন চেয়ারম্যান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আলীরটেক বাজার থেকে চরঝাপটা গ্রাম পর্যন্ত একটি কাঠের স্থায়ী পুল তৈরী করে দেওয়া হবে। কবে নাগান করে দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সময়ের মধ্যেই করে দিব। এখানে পাঁকা ব্রিজের সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, জায়গাটিতে ঢাকা থেকে প্রতিনিধিরা এসে একটি জরিপ করেছে। নদীর কাছাকাছি হওয়ায় এখানে পাঁকা ব্রিজ হবে না। তাই পাঁকা ব্রিজটি দক্ষিণ চরমশুরা এলাকা ঘেষে হচ্ছে।