1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় বেহাল অবস্থা বিআরটিসির

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১৮

সরকারি সংস্থা বিআরটিসি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। নতুন বাস সংযোজন হলে কিছুদিনের জন্য যাত্রী পরিবহন সেবায় গতি পেলে পরবর্তিতে আবার অনিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়। এভাবে চলতে চলতে বর্তমানে সংস্থাটির বাসের সংখ্যা অর্ধেকে নেমেছে। বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি রুটের বাস সার্ভিস, ডিপোতে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কোটি কোটি টাকার গাড়ি, আছে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। এতে যাত্রী সেবায় কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না বিআরটিসি।
পরিবহনের ক্ষেত্রে মান ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং তুলনামূলকভাবে উন্নত ও মানসম্মত পরিবহন সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে দ্রুত, দক্ষ, আরামপ্রদ, আধুনিক ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যই এ সংস্থার মূল উদ্দেশ্যে। সাধারণত ভাড়ায় নিয়ে বাসগুলো পরিচালনা করছেন বিআরটিসির চালক–কন্ট্রাক্টররা। এজন্য সরকার থেকে বেতন–ভাতা পাচ্ছেন, আবার সরকারি বাস পরিচালনা করেও আয় করছেন তারা।
সাধারণ যাত্রীদের চাহিদা মেটানো ও বেসরকারি বাস মালিকদের ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতেই মূলত সরকার বিআরটিসিকে গড়ে তুলেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই যাত্রীদের কাঙিক্ষত সেবা দিতে পারছে না। সরকার বিআরটিসির যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেয়ার পরও ডিপো ম্যানেজার ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ছে।
বিআরটিসির বাসগুলোর বেশিরভাগেরই সার্ভিসের রুগ্ন অবস্থা। অথচ মেইনটেইন্যান্স বাবদ সরকারের কাছ থেকে একটি অর্থ পেয়ে থাকে বিআরটিসি। তাই যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থাটির ওপর নজরদারি বাড়ানো উচিত।
চট্টগ্রামে বিআরটিসি কোচ চলাচলের জন্য ১৭টি রুট নির্ধারণ আছে। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কোম্পানীগঞ্জ, কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা, নিউমার্কেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, নিউমার্কেট থেকে সীতাকুণ্ড, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউমার্কেট, নিউমার্কেট থেকে কাটগড়, নিউমার্কেট থেকে ভান্ডার শরীফ, নতুন ব্রিজ থেকে আনোয়ারা, নতুন ব্রিজ থেকে লোহাগাড়া, কর্ণফুলী ৩য় সেতু থেকে পটিয়া, কর্ণফুলী ৩য় সেতু থেকে দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার সার্ভিস। এছাড়া মহিলা সার্ভিস নামেও যাত্রী পরিবহন করছে বিআরটিসি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরনো গাড়ি দিয়েই চলছে বিআরটিসি’র যাত্রী সেবা কার্যক্রম। বিআরটিসি চট্টগ্রাম বাস ডিপোতে ৭২টি বাস সংযোজন ছিল। ১৭টি রুটে এসব বাস চলাচল করত। বর্তমানে ৪৫টি বাস থাকার কথা বলা হলেও মূলত ৪০টির মতো বাস সচল আছে বলে জানা গেছে। ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম অঞ্চলে কমিয়ে আনা হয়েছে সরকারি বাসের সংখ্যা। এর মধ্যে তিনটি বাস বান্দরবানের তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায়। আর যান্ত্রিক ত্রশুটিসহ নানা কারণে অচল হয়ে রয়েছে অন্তত ৩০টির মতো বাস।
বাস সংকটে নির্ধারিত রুটগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী সেবা পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলে জানায় বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। কিছু রুট ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড রুটটি বন্ধ করে দেয় বিআরটিসি। সাধারণত যাত্রী না পাওয়ায় এ রুটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় বিআরটিসির পক্ষ থেকে। এছাড়া নগরীতে চলাচলকারী বিআরটিসির দোতলা বাসেও যাত্রী সাধারণের তেমন ভিড় দেখা যায় না। অনেকদিনের পুরনো হওয়ায় যাত্রী সেবা কার্যক্রম মানসম্মত না থাকায় এ সার্ভিসের ওপর সাধারণ যাত্রীদের আগ্রহ কম। তবে প্রতিষ্ঠানটির সেবা কার্যক্রমে আরেকটি বাধা হচ্ছে বেসরকারি পরিবহন মালিকদের বিভিন্ন বাধা।
বেসরকারি বাস মালিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাধা এসেছে নতুন রুটে বিআরটিসি সেবা চালু করতে।
বছরখানেক আগে চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান রুটে বিআরটিসি’র এসি বাস সার্ভিস নামানো হলেও এর প্রতিবাদ করেন বেসরকারি বাস মালিকেরা। পরে স্থানীয় এমপির মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধান করা হয়।
সম্প্রতি বিআরটিসি’র বাস ডিপো কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর বালুচরা এলাকায় বিআরটিএ কার্যালয় সংলগ্ন অবস্থিত জরাজীর্ণ পুরনো ভবনের ভেতর বিআরটিসি চট্টগ্রামের বাস ডিপো। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে খোলা জায়গায় সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে বিআরটিসি’র বিভিন্ন মডেলের কোচ, ডাবল ডেকার, এসি কোচসহ বিভিন্ন ধরণের অন্তত অর্ধশতের মতো বাস। যেগুলোর বেশিরভাগই অকেজো বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সেখানে লালচে রঙের বাসগুলো ধুলোবালিতে ধসুর বর্ণ ধারণ করেছে। কোচগুলোর কোন কোনটির ইঞ্জিন, চাকাসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশগুলো খুলে ফেলে রাখা অবস্থায় দেখা গেছে। তবে সেখানে সেসব সামগ্রীর চিহ্ন দেখা যায়নি। এছাড়া বেশিরভাগ কোচেরই জানালা ও অবকাঠামোগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি স্ক্র্যাপ বাসের দরপত্র কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেসব বাসের গায়ে সাদা কাগজে ঝুলানো হয়েছে প্রস্তুতকৃত সাল। ওয়ার্কসপের ভেতর কয়েকটি গাড়ির মেরামত কাজ চলতে দেখা যায়। এদিকে বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, সরকারদলীয় কিছু নেতা–কর্মী বিআরটিসি সেবা পরিচালনা, ব্যক্তি খাতে গাড়ি ভাড়া দেওয়া, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং যন্ত্রপাতি কেনার নামে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
চট্টগ্রামে প্রতিদিন চলাচলের জন্য গাড়ি সিডিউল রাখা বাবদ কয়েক পর্যায়ে টাকা দিতে হয় কন্ট্রাক্টরদের। একটি গাড়ির বিপরীতে বিআরটিসির সংশ্লিষ্টদের দিতে হয় গড়ে এক হাজার টাকা। এগুলো বাদে আরও কিছু টাকা আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে দিতে হয় কার্যালয়ে।
বর্তমানে সংস্থাটির অধীনে এসি, নন এসি, দোতাল বাস মিলে ৪৫টি গাড়ি বিদ্যমান আছে। চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কোম্পানীগঞ্জ, পটিয়াসহ বিভিন্ন রুটে এসব বাস চলছে। এরমধ্যে ১২ থেকে ১৩টি বাস বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, মহিলাদের সার্ভিসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে।
সংস্থাটির নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনায় যোগ্য লোকের অভাব রয়েছে। আগের তুলনায় বিআরটিসির যাত্রী সেবার মান কমেছে। বর্তমানে ৪০টি গাড়ি সচল আছে। সেবার মান বাড়াতে হলে নতুন গাড়ি প্রয়োজন।
বিআরটিসি সাধারণত গাড়ি চালিয়ে আয় করে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা পরিশোধ করে থাকে। বেসরকারি বাসগুলো যেখানে নিত্য নতুন আধুনিক গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে থাকে। সেখানে বিআরটিসি কয়েকটি রুটে পুরনো গাড়ি দিয়েই চলছে। এতে করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না বিআরটিসি। সেবার মান বাড়াতে হলে বিআরটিসিতে নতুন নতুন গাড়ি সংযোজন ও ও ব্যবস্থাপনায় যোগ্য লোক প্রয়োজন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ