1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মাদ্রাসা দখলদার মামুনুলের দেড় কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি : ফেসবুকে বিতর্কের ঝড়

ইবার্তা সম্পাদনা পর্ষদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৫ মার্চ, ২০২১

টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো হাঁকিয়ে আসছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক। ২০১৬ মডেলের বিলাসবহুল গাড়িটির বাজারমূল্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা বাজারমূল্য।
কার হাব বিডি নামক একটি গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামুনুল হককে গাড়িটিসহ ছবি তুলে ফেসবুক পেজে দিয়েছেন- আমিরুল ইসলাম তামিম।
মামুনুল হকের প্রাডো বিলাসিতার সেই ছবিটিই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়া মামুনুল হক। ফেসবুকে এ নিয়ে সমালোচনা করেছেন অনেকে।
 
উদাহরণ দিয়ে ফয়জুর মোর্শেদ লিখেছেন-

মাহফিলের ১ সপ্তাহ আগে ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেরা গাড়ি থামিয়ে, বাজারে বাজারে, গ্রামে গ্রামে গিয়ে, টাকা ওঠালো। আয়োজক কমিটি, বড় বড় দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, সুদখোরদের থেকে ডোনেশন নিলেন। অতঃপর মাহফিলের দিন…
তিনি হেলিকপ্টারে উড়িয়া আসিলেন, হেলিকপ্টার থামিলো, দেখিলাম হুজুর হেলিকপ্টার হইতে অবতরণ করিলেন, অতঃপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে উন্নতমানের নাস্তা গলাধঃকরণ করিয়া হুজুর স্টেজে উঠিলেন।
তারপর চোখের পানি ছেড়ে দিয়া কান্দিয়া কান্দিয়া, নবীজি (সাঃ) কীভাবে খেজুরের পাটিতে শুইতেন, কীভাবে পায়ে হেঁটে হেঁটে শতশত মাইল ভ্রমণ করিয়া ইসলামের দাওয়াত দিতেন, কীভাবে প্রায়শই অনাহারে অর্ধাহারে থাকিতেন, বয়ান করিলেন।
অতঃপর বয়ান শেষে গলা পর্যন্ত উদরপূর্তি করিয়া তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলিয়া ১ লাখ টাকার ২টা বান্ডিল পকেটে পুরিয়া, আবার হেলিকপ্টারযোগে প্রস্থান করিলেন।
আর আমরা মাশাআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলিতে বলিতে বাড়ির পথে রওয়ানা হইলাম! অতঃপর সকাল ১২টায় ঘুম থেকে উঠিয়া দোজাহানের অশেষ নেকি হাসিল করিলাম।

 
দামি গাড়ি, আয়েশি জীবন, মাদ্রাসা দখলদার মামুনুল হকের অর্থের উৎস কী?
মামুনুল হক, স্ব-ঘোষিত স্বাধীনতাবিরোধী আজিজুল হক এর কনিষ্ঠ পুত্র, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশের মহাসচিব এবং যুব মজলিশের সভাপতি; একইসাথে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। ভাস্কর্য ইস্যুতে সারাদেশে বেশ আলোচিত এই উ’গ্রপন্থী মাওলানা। বাংলাদেশে ভাস্কর্যবিরোধী ইস্যুকে যারা উ’স্কে দিয়েছেন তাদের মধ্যে মামুনুল হক অন্যতম।
শুরু থেকেই ভাস্কর্যবিরোধী অবস্থান নিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি। তবে ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় তিনি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন ফেসবুক ও ইউটিউব। ফেসবুক লাইভে এসে ভাস্কর্যবিরোধী এবং সংবিধানবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এতে ফেসবুকে তিনি বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন, ভাস্কর্য বিতর্কের জন্য। যদিও এর আগে ২০১৩’র ৫ মে শাপলা চত্বরের তা’ণ্ডবের কারণে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।
তার ফেসবুক লাইভ এবং জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য ‘প্রয়োজন ছাড়া’ ছবি তোলা, ফেসবুকে ছবি শেয়ার করা, ভিডিও শেয়ার করা নিয়ে তিনি সামলোচিত হয়েছেন। যেখানে ইসলামে প্রয়োজন ছাড়া ছবি তোলার বিষয়ে নিষেধ রয়েছে। যিনি ভাস্কর্য নিয়ে সমালোচনা করছেন কিন্তু সেই সমালোচনা করতে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন ফেসবুক বা ইউটিউবের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যেখানে ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।
 
ঢাকার সাত মসজিদ রোডে অবস্থিত জামি’আ রহমানিয়া আরাবিয়া কওমী মাদ্রাসা একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, এই মাদ্রাসা বর্তমানে দখল করে আছে যারা, তার মূল ক্রীড়নক মাওলানা মামুনুল হক গং। দীর্ঘদিন ধরেই মাদ্রাসার মোতওয়াল্লীসহ মালিকগণের মামলা ও দাবির প্রেক্ষিতে ওয়াকফ্; প্রশাসন দখলদারকে স্থান ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ জারি করে।
কিন্তু মামুনুল হক গং উক্ত মাদ্রাসাটিতে জোর করেই দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং অন্যান্য মাদ্রাসা দখলের সুক্ষ্ম পায়ঁতারা করছে। অথচ মামুনুল হকই বর্তমান সময়ের একজন নীতিবাগিশ এবং ইসলামী মোটিভেশনাল বক্তা!
মামুনুল হক বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সাম্প্র’দায়িক, সরকারবিরোধী, উস্কানিমূলক এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান করে সাধারণ মানুষজন, বিশেষ করে তরুণ সমাজকে উ’স্কানি দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের সহনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দিন দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছেন। আলেম সমাজের চোখে ধুলো দেওয়া মামুনুল হক আলেম সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতি কখনই কামনা করেন না, বরং নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করছেন।
এক্ষেত্রে, তার পিতা পাকিস্থানপন্থী হিসেবে পরিচিত স্বাধীনতাবিরোধী আজিজুল হক এর অনুসারীদেরকেও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছেন এবং তার দলে ভিড়াচ্ছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তিনি পাশে পেয়েছেন কিছু অ’সাধু ব্যক্তি ও অনুসারীদের। একদিকে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামাজের ছবি পোস্ট করেন, অন্যদিকে, প্রশিক্ষিত ও সুসংগঠিত সাইবার ইউনিট গড়ে তোলার মাধ্যমে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে মেতে থাকেন।
 
আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর জানাজায় উপস্থিত অনুসারীর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। জানাজার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের নেতৃবৃন্দকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
এছাড়া, আহমদ শফীকে বহনকারী খাটিয়া জামায়াতের আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, রাজাকার সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদী, সাবেক শিবির নেতা ও বর্তমান এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবি, শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল আলিমসহ আনুমানিক ৩০/৪০ জন ঘিরে রাখে।
বিষয়টি নিয়ে কওমী আলেমসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জানা যায়, মাওলানা মামুনুল হক সুকৌশলে জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতের সাথে হেফাজতের একটি সেতুবন্ধন তৈরির প্রচেষ্টা চালায়। শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ে হেফাজতে ইসলামের সাথে জামায়ত-শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে হেফজতে ইসলামকে জামায়াতের ছত্রছায়ায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
মামুনুল হকের স্ত্রী একসময় শিবিরের ছাত্রী উইং ছাত্রীসংস্থার সক্রিয় সদস্য ছিল। শুধু তাই নয়, তার শ্বশুরকুলের আত্মীয় স্বজনদের সবাই প্রত্যক্ষভাবে জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, এমন তথ্য অনেক শীর্ষ গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
 
তবে এসব আলোচনা ছাপিয়ে সামনে এসেছে আরেকটি বিষয়। ইতিমধ্যে সরকারি কয়েকটি সংস্থার নিকট তথ্য এসেছে, ভাস্কর্য ইস্যুতে হেফাজতের পেছনে অন্য কোনো শক্তি কাজ করছে। তার নেপথ্যে থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ এবং আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে তারা। আর সেই আর্থিক সহায়তা নিয়ে ভাস্কর্যবিরোধীরা আরাম আয়েশি জীবনযাপন করছেন। ভোগ-বিলাসে ডুবে আছেন তারা। আর তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ মামুনুল হক নিজেই।
সাম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটা ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে মামুনুল হক প্রচুর পরিমাণ খাবার নিয়ে মোবাইলে তাকিয়ে আছে। এই ছবিটা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। মামুনুল হকের যারা ভক্ত তারা বলছেন, আমাদের নবী যেখানে একটা খেজুর খেয়ে দিন কাটিয়ে দিয়েছেন সেখানে মামুনুল হকের এতো খাবার কেন?
 
শুধু এই ছবিটিই নয়। কিছুদিন আগে একটি ইউটিউব মিডিয়া কর্তৃক আয়োজিত টকশোতে অংশগ্রহণের জন্য আগেই ১ ঘন্টার শিডিউল দেন মামুনুল হক। সেখানে আলোচক ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্লগার এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার। সেই লাইভ টকশোতে দেখা যায় মামুনুল হক নিজের প্রাইভেট গাড়িতে চড়ে কোথাও চলেছেন।
এক পর্যায়ে নিঝুম মজুমদারের যুক্তি তর্কে এঁটে উঠতে না পেরে মাত্র ২৫ মিনিটের মাথায় ১ ঘণ্টার অনুষ্ঠান থেকে সটকে পড়েন তিনি। সেখানেও তাকে অনেক দর্শক মন্তব্যে প্রশ্ন করেছেন, এত দামি গাড়িতে চলাফেরা করছেন, গাড়ি কেনার অর্থ এলো কোত্থেকে?
 
এসব দেখে অনেকেই বলছেন, ভাস্কর্য ইস্যুতে দেশের মানুষকে উস্কে দিয়ে অন্যের টাকায় আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুসারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেয়া দিয়েছে। তবে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এই ধরনের জীবন যাপনের পেছনে অর্থের উৎস কী?
বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের বিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট অংকের বাইরে উপার্জন করলে আয়কর দিতে হয়। বাংলাদেশেও লোকজন আয়কর দেন। কেউ কেউ ফাঁকি দেয়ারও চেষ্টা করেন। কিন্তু ধর্মীয় ব্যক্তিত্বগণ সব সময়ই থেকে গেছেন করের বাইরে। এ নিয়ে আলেমরা কেন চুপ, প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ