গত কয়েক দিনের সহিংসতার ঘটনায় ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির’ বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন একদল লেখক-শিক্ষক, সাংবাদিক-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। সোমবার তাদের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মুজিব শতবর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীরে দিনে মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা ও বাংলাদেশবিরোধী হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়েছে, তা কেবল ১৯৭১ সালের পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের ঘৃণ্য ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।”
সেখানে বলা হয়, “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হয়ে অথবা ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে সারা বিশ্বের রাষ্ট্র নায়করা যখন বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসরণীয় নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন স্বাধীনতা ও মুত্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র আমাদের অর্জিত গৌরবকে ধূলিস্যাৎ করার নীল নকশা বাস্তবায়নে তৎপর।
“হেফাজত ও অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ২৬ মার্চ ২০২১ হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি অফিস, স্থাপনা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে এবং রাস্তাঘাট ও রেললাইনের ক্ষতিসাধন করে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এমন কি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি ধ্বংস করার ধৃষ্টতা দেখায়।”
বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একাত্তরের বন্ধুদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতীকী সফরকে কেন্দ্র করে যেভাবে দেশের সম্পদ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধের পথ থেকে দেশকে আবার পাকিস্তানি পথে নেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র মেলে ধরেছে।
“হেফাজতি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে আপস করে যে তাদের উগ্র ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড উসকে দেওয়া হয়েছে, সেটা আজ পরিষ্কার।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদ করে আসছিল হেফাজতে ইসলাম ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। সেই আন্দোলনে শুক্রবার স্বাধীনতা দিবসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘাত ও প্রাণহানি ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত তিন দিন হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়। এই ‘ধর্মীয় উন্মাদনা ও উচ্ছৃঙ্খলতা’ বন্ধ না করলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে বলে ইতোমধ্যে হুঁশিয়ার করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে তারা ‘কঠিন কর্মসূচি’ দেবেন।
লেখক-শিক্ষক, সাংবাদিক-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নামে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “মূলত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজত এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটায়। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই যে- ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বন্ধু ও সহায়তাকারী দেশ। ভারত সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সার্বিক সহযোগিতা, এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা দিয়ে মানবতার যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা কৃতজ্ঞতার সাথে আমরা স্মরণ করি।
“বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সাথে আমাদের অভিন্ন নদী ও সীমান্ত হত্যা ইস্যু রয়েছে। যা যথাযথ দ্বিপাক্ষিক ফোরামে আলোচনার দাবি রাখে এবং ভারতের সাথে আলোচনা চলছে। আলোচনার মাধ্যমে অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান আমরাও চাই। কিন্তু আমন্ত্রিত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশে অবস্থানকালে দুই দেশের অমীমাংসিত ই্স্যুগুলোকে সামনে নিয়ে এসে সাম্প্রদায়িক এই অপশক্তি পাকিস্তানি কায়দায় ধংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে অতিথি অপমানের যে রুচিহীনতার প্রকাশ ঘটিয়েছে, তা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হেয় করেছে।”
বিবৃবিতে বলা হয়, “আমরা এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চাই। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের ঘোষিত যুদ্ধের মোকাবেলায় সরকারের সর্বশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানাই।”