1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পাটশিল্প ও স্মার্ট বাংলাদেশ 

ড. মো. আল-মামুন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩

পাট চাষ ও পাটশিল্পের সঙ্গে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জড়িত। পাটশিল্প হলো এখনো বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ভারী শিল্প, যা ব্রিটিশ শাসন আমলে এবং পাকিস্তানি আমলের একক বৃহত্তম শিল্প। বর্তমান বিশ্বের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের বৈদেশিক রপ্তানি আয়ের বৃহদংশই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা মোট বিশ্ববাজারের প্রায় ৬৫ শতাংশ। আমাদের দেশেই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নতমানের পাট উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৩ শতাংশ পাট থেকে আসে এবং দেশের জিডিপিতে এর অবদান প্রায় শতকরা তিন ভাগ। প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা কৃষক পেয়ে থাকেন পাটের আঁশ ও পাটখড়ি বিক্রি করে। এ দেশের প্রায় ৪০ লাখ কৃষক পাটের উৎপাদনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য বাংলাদেশের রপ্তানিক্ষেত্রে রাজস্ব আয়ের একটি বড় উৎস পরিণত হচ্ছে।

পাট দেশের কর্মসংস্থানে বিরাট সহায়ক ভূমিকা পালন করছে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিস্তৃতভাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সাত লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। পাট অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বছরে দেশে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বেসরকারি পাটকলগুলোর জন্য বছরে ৬০ লাখ বেল কাঁচা পাট প্রয়োজন। আর গৃহস্থালিতে ব্যবহারের জন্য দরকার পাঁচ লাখ বেল। পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে কাঁচা পাট রপ্তানি থেকে এসেছে ২১ কোটি ৬১ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে শুধু পাটজাত ব্যাগের চাহিদা ১০ কোটি থেকে ৭০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে এবং অন্যান্য পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭১৭ কোটি টাকার।

পাট খাতের উন্নয়নের জন্য পাট ও পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের ‘প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ বা বর্ষপণ্য এবং পাটকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে গণ্য করার সানুগ্রহ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাট এখন থেকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হবে। কৃষি বিপণন আইন অনুসারে কৃষিপণ্য হিসেবে এখন থেকে পাটের সর্বনিম্ন মূল্য ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়ন করবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। পাশাপাশি পাটপণ্যের মূল্য সংযোজন ও প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রমে সহায়তা, অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ এবং শিল্প ও ব্যবসার উন্নয়ন, প্রসার, বিপণন কার্যপদ্ধতি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সুবিধা পাবে। এরই মধ্যে পাট চাষিদের কৃষিঋণ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনাসহ পাটকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য গৃহীত হয়েছে সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপ। পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও প্রসার, গবেষণা ও পাট চাষে উদ্বুদ্ধকরণে পাট আইন ২০১৫, পাটনীতি ২০১৫, বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান আইন ২০১৫ ও বস্ত্রনীতি ২০১৫ প্রণয়নের উদ্যোগ অন্যতম। পাট চাষিদের সহায়তা করার জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে পাটের বীজ উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় সার, চিনি, ধান, চালসহ ১৭টি পণ্য বিক্রয়, বিতরণ ও সরবরাহে বাধ্যতামূলক পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০’ প্রণীত হয়েছে।

বাংলাদেশের পাট এখন পশ্চিমা বিশ্বের গাড়ি নির্মাণ, পেপার অ্যান্ড পাম্প, ইনস্যুলেশন শিল্পে, জিওটেক্সটাইল হেলথকেয়ার, ফুটওয়্যার, উড়োজাহাজ, কম্পিউটারের বডি তৈরি, ইলেকট্রনিকস, মেরিন ও স্পোর্টস শিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাট ও পাটজাত বর্জ্যের সেলুলোজ থেকে পরিবেশবান্ধব বিশেষ সোনালি ব্যাগ, পাটের তৈরি জিন্স (ডেনিম), পাট ও তুলার মিশ্রণে তৈরি বিশেষ সুতা (ভেসিকল), পাট কাটিংস ও নিম্নমানের পাটের সঙ্গে নির্দিষ্ট অনুপাতে নারকেলের ছোবড়ার সংমিশ্রণে প্রস্তুত জুট জিওটেক্সটাইল, পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত ছাপাখানার বিশেষ কালি (চারকোল) এবং পাটপাতা থেকে উৎপাদিত ভেষজ পানীয় দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। পাট দিয়ে তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বাহারি ব্যাগ, খেলনা, শোপিস, ওয়ালম্যাট, আলপনা, দৃশ্যাবলি, নকশিকাঁথা, পাপোশ, জুতা, স্যান্ডেল, শিকা, দড়ি, সুতলি, দরজা-জানালার পর্দার কাপড়, গয়না ও গয়নার বক্সসহ ২৩৫ রকমের আকর্ষণীয় ও মূল্যবান পণ্য দেশে-বিদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে।

জলবায়ু আন্দোলনের অংশ হিসেবে পানি, মাটি ও বায়ুদূষণকারী পলিব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র জনমত তৈরি হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়কারী কৃত্রিম তন্তুর জনপ্রিয়তা বা ব্যবহার ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তা ছাড়া জাতিসংঘ কর্তৃক ২০০৯ সালকে ‘আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক তন্তু বর্ষ’ হিসেবে ঘোষিত ও পালিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার আরো উৎসাহিত হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার ফলে পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর শিল্প-রাসায়নিক দ্রব্যসামগ্রীর পরিবর্তে অর্গানিক বা পচনশীল ও নবায়নযোগ্য দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে। সাম্প্রতিক ইতালি, ব্রাজিল, ভুটান, চীন, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, সোমালিয়া, তাইওয়ান, তানজানিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সিনথেটিক ব্যাগসহ পরিবেশ বিনাশী অন্যান্য উপাদান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ঝুঁকে পড়ছে প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের দিকে। এ ক্ষেত্রে পাটই হয়ে উঠেছে বিকল্প অবলম্বন। বিশ্বে বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ বিলিয়ন পাটের ব্যাগ ও ৩২ মিলিয়ন ফুড গ্রেড পাটের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। এর ১০ শতাংশ বাজার দখল করতে পারলে বছরে আয় করা সম্ভব ৫০ হাজার কোটি টাকা। তা ছাড়া বিলাসবহুল মোটরগাড়ি নির্মাণ করে এমন পাঁচটি বড় কম্পানি ঘোষণা দিয়েছে, তারা তাদের গাড়ির অভ্যন্তরীণ কাঠামোর একটি বড় অংশ তৈরি করবে পাটজাত পণ্য দিয়ে। বিশ্বের এই চাহিদা মেটাতে, পাটকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে আমাদের কাজ করতে হবে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাট চাষের উন্নয়ন ও পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহারের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এর আধুনিকায়নের কোনো বিকল্প নেই। পণ্য বৈচিত্র্যকরণে সরকারি পাটকলগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং উৎপাদন স্থিতিশীল রাখার জন্য পাটের ন্যূনতম বাজারমূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি ও মাটি পাট উৎপাদনের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে। শিল্প ও প্রক্রিয়াজাতকারীদের সুবিধা দিতে হলে পাটকে কৃষিপণ্যের পাশাপাশি কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের তৈরি পণ্যের বিকল্প হিসেবে আমরা পাট ব্যবহার করলে একদিকে পরিবেশ, অন্যদিকে পাটকলগুলো রক্ষা পাবে। দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট খাতের ওপর নির্ভরশীল। এ খাতে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে হবে এবং ছোট কারখানাগুলোকে সমবায়ের মাধ্যমে বড় আকারের উৎপাদনে কাজে লাগাতে হবে।

দুনিয়াব্যাপী পাটের ব্যাগের চাহিদা বৃদ্ধি ও আমাদের দেশের উন্নতমানের পাট—এ দুই হাতিয়ার কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশেরও সফলতা আসতে পারে। যে দেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কার করতে পারেন, যে দেশ বহির্বিশ্বে সোনালি আঁশের দেশ হিসেবে পরিচিত, সেই দেশের পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা কঠিন নয়। মানসম্মত পাট উৎপাদন ও পণ্য বহুমুখীকরণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বদেশি পাটপণ্যের কার্যকর ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া এবং পাটপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

লেখক : ড. মো. আল-মামুন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রজনন বিভাগ – বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত

“ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জনে সক্ষম হয়েছি”

সেপ্টেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে

বিদেশগামী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০০ গাড়ি পেল জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো

আজ ‘মরমী কবি’ হাসন রাজার ৯৯তম মৃত্যুবার্ষিকী

খুলনায় বেড়েছে কাঁকড়া-কুচিয়ার উৎপাদন ও রফতানি

আ.লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক, জাহাঙ্গীরকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি

বেকারদের জন্য সুখবর আসছে

আমাদের মেয়েদের যোগ্যতার কোনো কমতি নেই : সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

পোশাক খাত: সংকটে আশা জাগাচ্ছে অপ্রচলিত রফতানি বাজার

জাপানের দুই যুদ্ধজাহাজ শুভেচ্ছা সফরে চট্টগ্রাম বন্দরে