অ্যান্টিবায়োটিক একটা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, কিন্তু এর ব্যবহার যথাযথ হওয়া উচিত। না হলে এগুলো ক্রমে অকার্যকর হয়ে যাবে এবং ব্যাকটেরিয়াল রেজিস্ট্যান্স বেড়ে যাবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোয় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের ২০-৫০ শতাংশ হয় অপ্রয়োজনীয় অথবা অসংগত। যুক্তরাষ্ট্রের Center for Disease Control and Prevention (CDC)-এর হিসাবে জানা যায় যে বছরে দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত হয় এবং এর কারণে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে বছরে কত মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং কতজন মৃত্যুবরণ করে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত নেই।
অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ প্রগ্রামের কাঠামো এবং কার্যক্রম হচ্ছে : ১. এতে প্রয়োজন হবে একজন প্রগ্রাম লিডার, যিনি অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ ট্রেনিংপ্রাপ্ত একজন সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ২. একজন ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট। ৩. প্রতিদিন পরীক্ষা করে দেখা রোগীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে কি না? না হলে রোগ নির্ণয় সঠিক হয়েছে কি না খতিয়ে দেখার জন্য রোগীর চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা। ৪. প্রতিদিন কালচার রিভিউ করে সেনসিটিভিটি পরীক্ষা করে দেখা। ৫. প্রতিদিন রোগীর চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে দেখা অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না। যেমন—ডায়রিয়া, র্যাশ, ইস্ট ইনফেকশন ইত্যাদি।
অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ প্রগ্রামের সাহায্যকারী দল : ১. ল্যাবরেটরি কর্মী, যাঁরা সঠিকভাবে কালচার এবং সেনসিটিভিটি পরীক্ষা করবেন। ২. নার্স : অ্যান্টিবায়োটিক শুরুর আগেই কালচার সংগ্রহ করবেন। ৩. চিকিৎসক এবং বিভাগীয় প্রধানদের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন এই প্রগ্রামের সফলতার জন্য। ৪. প্রযুক্তিবিদ্যা : অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরি ও উপস্থাপন।
অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ প্রগ্রামের প্রধান কর্মকাণ্ড : ১. অ্যান্টিবায়োটিক শুরুর ৪৮ ঘণ্টা পর রোগীর অবস্থা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, ডোজ এবং মাধ্যম পরীক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে আরো নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যায় কি না। ২. অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ কিডনির অবস্থা অনুযায়ী সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। ৩. রোগীর অবস্থার উন্নতি হলে রক্তের শিরায় দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তন করে মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। ৪. ড্রাগ ইন্টার-অ্যাকশন পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো হচ্ছে—রোগী খুব অসুস্থ না হলে প্রথমেই বড় অ্যান্টিবায়োটিক শুরু না করে সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া এবং অল্প সময়ের জন্য ভাইরাসজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা, যেকোনো ক্যাথেটার ব্যবহারে সতর্ক হওয়া। কারণ ক্যাথেটার ইনফেকশনের কারণ হতে পারে এবং জরুরি নয় এমন সার্জারিতে বেশিদিন অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়া। এগুলো মেনে চললে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের সম্ভাবনা কম থাকে।
লেখক: মঈনউদ্দিন মুনশী – ক্লিনিক্যাল সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ নর্থ-ইস্ট ওহাইও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র; মেডিক্যাল ডিরেক্টর, সংক্রামক ব্যাধি বিভাগ, সুমা হেলথ সিস্টেম, বারবারটন, ওহাইও, যুক্তরাষ্ট্র; ফেলো, আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ানস; ফেলো, ইনফেকশাস ডিজিজ সোসাইটি অব আমেরিকা।