1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ড. ইউনূস ও বাংলাদেশবিরোধী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র

অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩

কয়েক দিন আগে আমি পত্রিকায় লিখেছিলাম আবারও ওয়ান ইলেভেনের মতো বিরাজনীতিকরণের চোখরাঙানি দৃশ্যমান। কারণ, বিরাজনীতিকরণের কুশীলবরা দেশে-বিদেশের ‘কাশিম বাজার কুঠি’তে বেশ সক্রিয়। বিশ্বের নানা প্রান্তের ৪০ জন ব্যক্তির বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া খোলা চিঠি কুশীলবদের ষড়যন্ত্রকে খোলাসা করে দিয়েছে।

বাংলাদেশের কোনও কোনও পত্রিকা শিরোনাম করেছে, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন ৪০ জন বিশ্বনেতা। উদ্বেগাকুল বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পূর্ণ পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন হিসেবেও প্রকাশিত হয়েছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা চিঠিতে কী লিখেছেন? তারা লিখেছেন, ‘আপনার দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকেই আমরা আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের একজন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মহান অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আপনাকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখছি।’

আরও লিখেছেন, ‘ড. ইউনূসের ভালো থাকা, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানবিক উন্নয়নে তিনি যে অবদান রেখে চলছেন, তা অব্যাহত রাখতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে।’ পত্রদাতারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আরও লিখেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন অনবদ্য পরিশুদ্ধ মানুষ এবং তার কার্যক্রমগুলো আপনার সরকারের অন্যায় আক্রমণের শিকার হচ্ছে এবং বারবার হয়রানি ও তদন্তের মধ্যে পড়ছে– এমনটা দেখতে পাওয়া বেদনাদায়ক।’

মোদ্দা কথায় চিঠির সারমর্ম হলো, সরকার শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূসকে অশান্তিতে ফেলে দিয়েছেন। ফলে তার কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। এবার দেখা যাক, সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কী এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে বিশ্বের ৪০ ব্যক্তি গভীর উদ্বেগে আকুল হয়েছেন। ড. ইউনূসের অবদানকে অস্বীকার করে সরকার কি কোনও ফরমান জারি করেছে কিংবা সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কোনও প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে? উত্তর, অবশ্যই না।

সরকার কি তাকে গ্রেফতার করেছে কিংবা জেলে পুরে রেখেছে? এর উত্তরও নেতিবাচক। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শান্তিতে নোবেলজয়ী জার্মান নাগরিক Carl von Ossietzky ও চীনা নাগরিক Liu Xiaobo কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আর মিয়ানমারের নোবেলজয়ী অং সান সু কি দীর্ঘ দিন কারারুদ্ধ রয়েছেন। বেলারুশের নোবেলজয়ী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি আদালতের রায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। প্রশ্ন হলো, কী হয়েছে ড. ইউনূসের সাথে?

পৃথিবীর সব দেশে একটি সার্বজনীন নিয়ম হলো সরকারি-বেসরকারি পেশা থেকে সবাইকে এক সময় অবসর গ্রহণ করতে হয়। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অবসরের বয়স হলো ৬০ বছর। ড. ইউনূস অবসর আইনের বিধান লঙ্ঘন করে ৭০ বছর বয়সেও পদ দখল করে ছিলেন। ২০১১ সালে ৭০ বছর বয়সে ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করে ‘ইমেরিটাস উপদেষ্টা’ হিসাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইনি লড়াইয়ে হেরে যান তিনি। এটাকে কি সরকারের অন্যায় আক্রমণ বলা যাবে? ড. মুহাম্মদ ইউনূস দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক ব্যবসায়সহ নানা কাজের জন্য দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনসহ নানা বিতর্কিত কাজেও জড়িয়েছেন।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংকে পদ পুনরুদ্ধার করার জন্য ড. ইউনূস বিদেশি শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে লবিং করেন। বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের আইনপ্রণেতা, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী চেরি ব্লেয়ারকে লবিং করে তার পক্ষে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য সরকারকে চাপ দেন। ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিক রাষ্ট্র ও সংস্থার শরণাপন্ন হওয়া একজন নোবেল বিজয়ীর জন্য মোটেও সমীচীন নয়। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিলে বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করার বিষয়ে তার বিতর্কিত ভূমিকার কথা হামেশাই আলোচিত হয়।

দেশের সর্ববৃহৎ মেগা প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে কানাডার আদালতে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ হয়ে যায়। জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট ব্রুস জোয়েলিকসকে তার শেষ কার্যদিবসে অর্থায়ন বাতিল করার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ড. ইউনূস বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে যখন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছিলো, সেই সময় ওই সরকারের আশীর্বাদ নিয়ে সুযোগসন্ধানী ড. ইউনূস একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার কার্যক্রম শুরু করেন। ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূস দেশের রাজনীতির ‘সংস্কার’ এর নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য দেশবাসীর সমর্থন চেয়েছিলেন। জনগণ তার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় তিনি নিবৃত্ত হন।

ড. ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক এখানেই থেমে থাকেনি। সম্প্রতি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একটি চমকপ্রদ অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি তার বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকম ইউনিয়ন শ্রমিক ও কর্মচারীদের দায়ের করা ১১০টি মামলা বিরাট অংকের অর্থের বিনিময়ে অনৈতিক ও অবৈধ পন্থায় নিষ্পত্তি করেছেন। গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অপব্যবহার; আইনজীবীদের ফি এবং শ্রমিকদের বেতন থেকে অন্যান্য চার্জ হিসাবে ৬ শতাংশ অবৈধভাবে কর্তন এবং কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল থেকে ৪৫.৫২ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন দায়ের করা হয়। গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানটির ১৭৬ জন কর্মচারীকে বকেয়া লভ্যাংশ হিসেবে ৪৩৭ কোটি টাকা প্রদান করবে এবং বিনিময়ে শ্রমিকরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করে নেবে এই শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা কোম্পানি অবসায়ন মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন শ্রমিক ইউনিয়নের আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী এবং গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান।

তবে সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনটি চেকের মাধ্যমে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে সেই অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা দেওয়া হয় দুই আইনজীবীকে। তিন কোটি টাকা করে দেওয়া হয় তিন শ্রমিক নেতা মো. কামরুজামান, ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও মাইনুল ইসলামকে। গ্রামীণ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের আইনজীবী শ্রমিকদের লভ্যাংশ থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও বাংলাদেশের ব্যাংকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুই আইনজীবী এবং তিন শ্রমিক নেতার অ্যাকাউন্টে ২৪ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।

সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ, এর আগে আদালত ও সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে বিবদমান মামলাসমূহের রায় নিজেদের পক্ষে আনার জন্য ২০২১ সালেও প্রায় ১৪ কোটি টাকা দিয়ে ‘ঢাকা লজিস্টিকস সার্ভিসেস অ্যান্ড সল্যুশন’ নামক লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছিল ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম। তখন সফল হতে না পারলেও এবার আইনজীবী ও শ্রমিক নেতাদের ২৪ কোটি টাকা দিয়ে শ্রমিকদের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে সক্ষম হয় গ্রামীণ টেলিকম।

বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ছাড়াও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি, দাতা তহবিলের অর্থ অবৈধ স্থানান্তর, শ্রম আইন লংঘন, অর্থপাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাঁর বিরুদ্ধে ১.৫১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি কর ফাঁকির অভিযোগ উত্থাপন করেছে। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গ্রামীণ টেলিকম (জিটি) এবং এর পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা পাচারের মামলায় তদন্ত শুরু করেছে। ড. ইউনূস বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তহবিল বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় অবৈধভাবে স্থানান্তর করেছেন বলেও ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালে টম হেইনম্যানের “Caught in Micro Debt” শিরোনামের একটি ড্যানিশ ডকুমেন্টারিতে ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে নরওয়েজিয়ান এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (NORAD)এর গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য প্রদান করা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

২০২১ সালে শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য ড. ইউনূস এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ কর্তৃক শ্রম আইনের ধারা ৪, ৭, ৮, ১১৭ এবং ২৩৪ এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শ্রম আইনের যে বিধানগুলো লঙ্ঘনের জন্য মামলা হয়েছে তা হলো– শ্রমিক/কর্মচারীদের নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বহি প্রদান করা হয়নি; শ্রমিকের কাজের সময়ের নোটিশ পরিদর্শকের নিকট হতে অনুমোদিত নয়; কোম্পানিটি বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক রিটার্ন দাখিল করেনি; কর্মীদের বৎসরান্তে অর্জিত ছুটির অর্ধেক নগদায়ন করা হয় না; কোম্পানির নিয়োগবিধি মহাপরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদিত নয়; ক্ষতিপূরণমূলক সাপ্তাহিক ছুটি ও উৎসব ছুটি প্রদান-সংক্রান্ত কোনও রেকর্ড/রেজিস্টার সংরক্ষণ করা হয় না; কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠনসহ লভ্যাংশ বণ্টন করা হয় না; সেফটি কমিটি গঠন করা হয়নি; কর্মীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করালেও কোনও ঠিকাদারি লাইসেন্স গ্রহণ করেননি; এবং কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করেনি।

যে ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিলেন তারা কি এতগুলো আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ও বৈধ কারণে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বিষয়ে ওয়াকিবহাল, নাকি এসব তথ্য গোপন করা হয়েছে? ড. ইউনূসের বিষয়ে খোলা চিঠি যারা দিয়েছেন তাদের ইচ্ছায় আর অনিচ্ছায় হোক চিঠিতে অসৎ উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে। একজন সরকার প্রধানকে অভিযুক্ত করে চিঠি লিখতে হলে তা বিজ্ঞাপন আকারে পত্রিকায় প্রকাশ না করে আগে তাকেই চিঠি পাঠাতে পারতেন। জবাব না পেলে, কিংবা জবাব সন্তোষজনক না হলে তখন পত্রিকায় প্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে, এবং তথ্য-প্রমাণ যাচাই না করে ইচ্ছাকৃত একজন সরকার প্রধানকে হেয় করা হয়েছে যা শিষ্টাচার বহির্ভূত ও একটি রাষ্ট্রে অবৈধ হস্তক্ষেপের শামিল।

তদুপরি, বাংলাদেশের বিচার বিভাগেরও ড. ইউনূসের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিষয়ে তদন্ত ও মামলা বিচারাধীন থাকায় উদ্বেগাকুল হয়েছেন ৪০ জন বিশ্বনেতা। ২০২২ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শীর্ষ মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কিকে কয়েকদিন আগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে বেলারুশের একটি আদালত। সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অর্থায়ন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। মিনস্কের আদালত থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় বিয়ালিয়াৎস্কির হাতে হাতকড়া পরানো রয়েছে। বিয়ালিয়াৎস্কির বিষয়ে এই নেতারা বেলারুশের সরকার প্রধানকে এমন কোনও পত্র লিখেননি।

শান্তিতে আরেক নোবেলজয়ী নেতা ইয়াসির আরাফাতের দেশে গত কয়েকদিনে ৫০ জন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে যাদের বেশিরভাগই শিশু ও তরুণ। কিন্তু এই ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ইসরায়েলকে পত্র দেওয়া দূরে থাক, কোনও বিবৃতিও দেননি। তার মানে, এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্বেগও পক্ষপাতমূলক।

বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকারের বিরুদ্ধে এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধ করা হয়েছিলো। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ড. ইউনূস তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত ও বিচার বন্ধে ‘নাজায়েজ’ সুবিধা আদায় করার লক্ষে নির্বাচনের আগে সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চান। তাই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে অপপ্রচারের নতুন এই কৌশল বেছে নিয়েছেন। তিনি সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখিয়েছেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দিয়ে। পত্র লিখিয়েই থেমে থাকেননি, মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের ব্যবস্থাও করেছেন।

ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে যারা রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তারা আর যাই হোক বাংলাদেশের পক্ষে নয়। সাধু সাবধান!

লেখক : অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন – আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ