গ্রামে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাজ করছে লালমনিরহাটের নারীরা। অনলাইনে তথ্যপ্রযুক্তির কাজের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন তারা। তাইতো ফ্রিল্যান্সিং গ্রাম হিসেবে পরিচিত এখন লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুড়ি গ্রাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুড়াকুটি গ্রামের মেয়ে আকলিমা খাতুন আঁখি। ১০ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বাল্য বিয়ের শিকার হন তিনি। এর পর লেখাপড়া ছেড়ে স্বামীকে নিয়ে যান জীবিকার তাগিদে ঢাকায়। সেখানে ৩ বছর থাকার পর বাড়িতে এসে ছোট ভাইয়ের সহযোগিতায় ফ্রিল্যান্সিং কাজে নিজেকে যুক্ত করেন। এরপর থেকে জীবিকার তাগিদে অন্য কোথাও যেতে হয়নি তাকে। শুরু করেছেন আবার পড়ালেখা। আর সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।
শুধু আকলিমা নয়, ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে এখন গ্রামের মাকসুদা, তাহমিনা, শারমিনের মতো অনেক নারী প্রতি মাসে আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। নিজেদের পড়া লেখার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন। আর তাদের দেখা দেখি আশপাশের নারীরাও এখন ফ্রিল্যান্সিং কাজে নিজেদের নিয়জিত করতে আগ্রহী হয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ফ্রিল্যান্সার আকলিমা খাতুন আখি জানান, ২০১৬ সালে তার ভাইয়ের কাছে দেখে তার আগ্রহ বাড়ে। পরে থেকে তার ভাইয়ের সহযোগিতায় নিজেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এক সময় তিনি ভালোভাবে সময় দিয়ে মাসে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেছেন। তবে বর্তমানে সংসারে সময় দেয়ার কারণে কাজে বেশি সময় দিতে পারছেন না। তার পরেও মাসে এখন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন।
ফ্রিল্যান্সার শারমিন আক্তার বলেন এ কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ দেই। এমনকি পরিবারকেও সব সময় সহযোগিতা করছি। গত ৩ বছরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয়ে একটি ছোট বাড়ি নির্মাণ করেছি।
এ ব্যাপারে সেল এক্স ডিজিটালের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, বেশিরভাগ সময়ে দেখা যেত অধিকাংশ মেয়ের অল্প বয়সেই বিয়ে দিতেন তাদের বাবা-মা। কেননা পড়াশোনার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন ছিলো; সে খরচ অনেকের জন্য সমস্যা হতো। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ের কারণে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে এলাকার নারীদের জন্য। তারা এ কাজ করে নিজেরাই তাদের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন। অনেক নারী আবার সংসার চালানোর পাশাপাশি এ কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।