1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জয় হে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

অধ্যাপক ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩

আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন। জাতির পিতার জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা নিবেদন করি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ ও নিরন্তর সংগ্রাম এদেশের মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছে। আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড, পেয়েছি লাল-সবুজের সার্বভৌম এক পতাকা। তাই তার জন্মের শতবর্ষ পেরিয়ে গেলেও আজও তিনি বাঙালিহৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে বিরাজ করছেন। বিরাজ করছেন অসহায়ের সহায়রূপে, বিরাজ করছেন রবীন্দ্রকল্পনার সোনার বাংলাকে বাস্তবিক সোনার বাংলা বিনির্মাণের এক আদর্শ পুরুষ হিসেবে। বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ জননেতা হিসেবে কালান্তরের প্রজন্মকে জাতির পিতা শেখ মুজিব এক অবিনাশী প্রেরণায় উদ্দীপিত করে চলেছেন যুেেগর পর যুগ ধরে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় শতবর্ষ পূর্বে পরাধীন ভারতবর্ষের মুক্তি কামনায় তার কবিতার মাধ্যমে আবাহন করেছিলেন নায়কোচিত কল্পিত কোনো এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। তিনি সমকালীন সকল রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বগুণ দেখে অনুভব করেছিলেন পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে হলে ভারতবর্ষের প্রয়োজন আরও অধিক প্রজ্ঞাবান, দৃঢ়চিত্ত, দিকনির্দশক কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। তাই অন্তর্গত প্রেরণার তাগিদ থেকেই তিনি রচনা করেছিলেন একটি কবিতা- কবিতার নাম ‘ওই মহানব আসে’। সহস্রবর্ষের ভারতবাসীর আত্মগ্লানি মুছে দেওয়ার জন্য একজন রাজনৈতিক মহামানবের আবির্ভাব ঘটবে এবং তা যে ভারতবর্ষের জন্য একান্ত প্রয়োজন সে কথা গভীরভাবে ভেবেছিলেন বলেই তৎকালে রবীন্দ্রনাথের অন্তর্জগত কল্লোলিত হয়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রকাব্যে তাই ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠেছিল ‘ওই মহানব আসে’র প্রারম্ভিক সুরলহরি। তখন তিনি তার অনুভূতিকে বিস্তৃত করেছিলেন এভাবে-
ওই মহামানব আসে।
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে।
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ,
নরলোকে বাজে জয়ডংক
এলো মহাজনমের লগ্ন।
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত
ধূলিতলে হয়ে গেল ভগ্ন।
উদয় শিখরে জাগে মাভৈঃ মাভৈঃ
নবজীবনের আশ্বাসে।
‘জয় জয় জয়রে মানব অভ্যুদয়
মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে।’
রবীন্দ্রনাথ যখন সম্ভাব্য মহামানবের আগমন-অভ্যুদয়ের এই আশীর্বচন রচনা করেন তখন শেখ মুজিব ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে উঠেননি। তখন তার বয়স মাত্র একুশ। কিন্তু সেই বয়সেই তখন তার পরিচয় ঘটে গেছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সাথে। মানুষের জন্য তাদের কল্যাণচিন্তা বঙ্গবন্ধুর চিত্তকে অনুপ্রাণিত করেছে।

ভারতবর্ষ এবং বিশেষত বাংলার বুকের ওপর প্রবহমান ব্রিটিশ অপশাসনের সেইসব অসংলগ্ন, অমানবিক, অন্যায় শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দৃঢ় মনোবল নিয়েই শেখ মুজিবুর রহমানও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। ভারতবর্ষ জুড়ে প্রায় দু’শো বছরের ব্রিটিশ অপশাসনের নানা হঠকারিতার সঙ্গেও শেখ মুজিব নিজেকে তিক্ত অভিজ্ঞতায় পরিচিত করিয়েছেন বাঙালির প্রতি গভীর মমতায়। তাই বাংলার মাঠ, ঘাট প্রান্তর, লোকালয় যেখানেই মানবতার অপমান আর লাঞ্ছনা- যেখানেই বাঙালির অপমান আর লাঞ্ছনা সেখানেই শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের প্রতিবাদী চরিত্র। শৈশব থেকেই সর্বদা তিনি দাঁড়িয়েছেন দুঃখী মানুষের পাশে, নিজেকে নিযুক্ত করেছেন আর্ত-মানবের সেবায়। অসংকোচে মিশেছেন এই দুঃখিনী বাংলার হতদরিদ্র মানুষের সঙ্গে। আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি করেছেন শ্রেণি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে। উপলব্ধি করেছেন সেইসব মানুষের বেদনার্ত হৃদয়ের গোপন কান্নার সুর। ভাগ করে নিয়েছেন তাদের আনন্দ-বেদনার অংশ। উপভোগ করেছেন বাঙালির শাশ্বত রঙ্গ-তামাশাও। তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন বাঙালির হাজার বছরের সংস্কার-সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও কালচার। তাই বঙ্গবন্ধুর হৃদয় হয়ে উঠতে পেরেছে বিশাল বিস্তৃত দিগন্তের অনুরূপ- সমুদ্রের গভীরতার সমতুল। মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ গঠনের প্রাক্কালে তাই আমরা দেখতে পাই বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। বিস্তৃত হৃদয়ের গভীর অনুভূতি দিয়েই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ভারতবর্ষের মুক্তির অনিবার্যতা, উপলব্ধি করেছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির অনিবার্যতা। অনুভব করেছিলেন অপমানে হতমান বাঙালিকে মুক্ত করতে না পারলে ইতিহাসের পাতায় জাতি হিসেবে বাঙালির করুণ পরিণতির এক ব্যর্থ বয়ানই রচিত হবে যুগের পর যুগ! বাঙালির শেষ পরিণাম ব্যর্থতার মধ্যে প্লাবিত হতে দেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। এক তেজোদীপ্ত জাতি হিসেবে বাঙালিকে তিনি বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে তিনি যে ব্রত গ্রহণ করেছিলেন বয়স আর অভিজ্ঞতার আলোয় তা পরিণত হয়েছে প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আমরা দেখেছি বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস এক ভিন্ন রেখায় প্রবহমান। বাঙালি জাতির ও রাষ্ট্রের ইতিহাস যেন তারই নির্দেশে অনিকেত অভিমুখ থেকে যথাযথ উচ্চতায় আলোক-উজ্জ্বল অহংকার নিয়ে ঠাঁই করে নিতে সক্ষম হয় ন্যায় ও সত্যের চূড়ান্ত গন্তব্যে।

বাংলাদেশ ও বাঙালিকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের অনেক স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের মাধ্যমে পূর্ণ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কত গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, গান আর প্রবন্ধ সাহিত্যে ‘বাংলা দেশ’ প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে তা স্বতন্ত্র গবেষণার বিষয়। শুধু তাই নয় সামগ্রিক সাহিত্যকর্মে ‘বাঙালি’ শব্দটিকেও নানামাত্রিক ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সৃষ্টিশীলতায় বিশ্বের বুকে ‘বাঙালি’ তার নবতর অস্তিত্ব ঘোষণার মাধ্যমে আত্মপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে। আর মোটাদাগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটিকে তো বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ আর বাঙালি জাতির জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। তাই আমরা বলি- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই রবীন্দ্র-কল্পনার সেই ‘মহামানব’।

বঙ্গবন্ধুরই আগমনী-ধ্বনিতে মানব-অভ্যুদয়ের কলরোল মহাকাশব্যাপ্ত করে জয় জয় রবে মন্দ্রিত হয়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রনাথের কল্প-জগতের ‘আমার সোনার বাংলা’কে প্রকৃত এক সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর যে রাজনৈতিক অভিযান তাও যেন রবীন্দ্রনাথেরই স্বপ্নপূরণের ইংগিতবহ। বাঙালির শাশ্বত স্বপ্ন ও আবেগ ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। বাঙালির এই আবেগকে রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করেছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি স্থির বিশ্বাসে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে বলেছিলেন ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জিত না হলে রবীন্দ্রকল্পনার ‘সোনার বাংলা’র শতচ্ছিন্ন ধূলিমলিন অবয়বের পরিবর্তন সম্ভব নয়। সোনার বাংলার বাস্তব রূপ দেখতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ভৌগোলিক মুক্তি। রবীন্দ্রচেতনার স্ফূরণ বঙ্গবন্ধুর বহু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হয়েছে। কবি ও দার্শনিক রবীন্দ্রমননের সঙ্গে অনেক বিষয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মননের মেল-বন্ধন খুঁজে পাই। বাঙালির কীর্তিমান পুরুষদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু দার্শনিক অভিপ্রায়ের দিক দিয়ে ছিলেন অত্যন্ত ঘনিষ্ট একথা নির্দ্ধিধায় বলা যায়।

বাঙালির অমর ইতিহাসের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাসের জনক ও বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের স্থপতি বলে এদেশের মানুষকে তিনি পরাধীনতার যাবতীয় শৃঙ্খল থেকে মুক্তির প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়েছিলেন। তিনি নিজেই কেবল উজ্জীবিত ছিলেন এমন নয়Ñ তৃণমূল থেকে মানুষকে জাগ্রত করে তাদেরকেও মুক্তির মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পশ্চাতে এসে তাই দাঁড়িয়েছিল সমগ্র বাংলাদেশ, সাতকোটি বাঙালি। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান তিলে তিলে নিজেকে গঠন করেছিলেন। নিজেকে তিনি গঠন করেছিলেন এই ভূখণ্ডের নবতর এক ইতিহাসের জন্মদাতারূপে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে তিনি অর্জন করে নিয়েছিলেন স্বীয় অবস্থান। বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা পেয়ে বাংলাদেশ ধন্য, ধন্য হয়েছে বিশ্ব মানবের সভ্যতার ইতিহাস ও ভূগোল। তাই আজ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গর্ব ও অহংকারে মাতোয়ারা বাংলাদেশের ন্যায় সমগ্র বিশ্ব। বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শতবর্ষ উদযাপন আমাদেরকে তার উত্তরসূরী হিসেবে গর্বিত করে তোলে। অমিত অহংকারে আমাদের বক্ষ স্ফীত হয়ে ওঠে এই ভেবে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, আর শেখ মুজিবের এই বাংলায় আমরা জন্মগ্রহণ করেছি বলে। বঙ্গবন্ধুর মতো মহমানবের জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না। সৃষ্টি হতো না এই ভূগোল বাংলার ইতিহাসের নবতর আখ্যান। এই দেশকে, এই দেশের হতদরিদ্র, দিনহীন সাধারণ মানুষকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কী গভীর মমতায় ভালোবাসতেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিভিন্ন বক্তৃতা-ভাষণে। তিনি বিশ্বাসও করতেন দেশবাসীকে। সাধারণ মানুষ আপনজনকে যেমন বিশ্বাস করে বঙ্গবন্ধু সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে তারচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতেন। তাই তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা-তথ্যকে তিনি দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

কিন্তু বাঙালিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অহংকৃত বিশ্বাসকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল ঘাতকেরা। তারা নির্মমতার আরেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে। বিশ্বাস-ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে সেদিন সপরিবারে হত্যা করেছিল। এদেশীয় ক্ষমতালোভীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পঙ্কিলতার মধ্যে নিজেদের ডুবিয়ে দিয়ে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তারা দখল করেছিল বটে, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা তারা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল- বইয়ের পাতা, ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি, সিনেমার ফিতা সকল জায়গা থেকে। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলবার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে। আমরা বিস্মিত হই! কতটা প্রতিহিংসা-পরায়ণ হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে উত্তর-প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে নিশ্চিহ্ন করার এমন অপপ্রয়াস কেউ নিতে পারে! বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলবার সকল প্রকার কৌশল আর অপকৌশল তারা প্রয়োগ করেছিল। সাময়িকভাবে কিছুটা সফল হলেও ‘আখেরে’ তারাই বরং নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তারাই পরিণত হয়েছে ‘গণশত্রু’ হিসেবে- জাতীয় শত্রু হিসেবে। হত্যাকারীদের প্রকৃত পরিচয়ও জাতির কাছে ক্রমে স্পষ্ট হয়েছে। স্পষ্ট হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিবলয়ের সঙ্গে ক্ষমতালোভীদের আঁতাতের বিষয়টিও। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। হত্যাকারীদেরও ক্ষমা করেনি।

সাময়িকভাবে ‘ইনডেমনিটি’ আইন কিছুদিনের জন্য হত্যাকারীদের রক্ষা করেছে বটে; কিন্তু নির্মম ইতিহাসের পাতা থেকে তারাই আজ নির্বাসিত; অপনায়ক হিসেবে পরিচিত, ঘৃণিত। জাতির কলংকিত সন্তান হিসেবে তাদের স্থান হয়েছে আস্তাকুঁড়ে। আর বিপরীত দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, যে বঙ্গবন্ধুকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নানা রকমের কলাকৌশলের আশ্রয় সেই বঙ্গবন্ধুই আজ ইতিহাস ও ভূগোলের পাতায় পাতায় দীপ্যমান! মধ্যাহ্নসূর্যের প্রখর দীপ্তিতে ভাস্বর ঐ অনন্ত আকাশ থেকে বিস্তৃত দিগন্ত পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতোপূর্বেকার যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গ্রাহ্য ও বরণীয়। এদেশে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুজিব-অনুরক্ত বাঙালির সংখ্যা। ক্রমে এই সত্যই প্রকট হয়ে উঠছে যে, দলমত নির্বিশেষে অচিরেই সকলে বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রশ্নহীন আত্মসমর্পনে নিজেকে নিবেদন করবে। বাংলাদেশ যদি কারো আত্মপরিচয়ের তীর্থস্থান হয় তবে তার মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকারের কোনো পথই খোলা নেই। বঙ্গবন্ধুর প্রখর দীপ্তির আলো থেকে কেউ নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। জন্মের শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের এভাবেই আচ্ছন্ন করে রাখেন। আজ তার ১০৩তম জন্মদিনে কোনো ক্রমেই আমরা সেই আচ্ছন্ন উপলব্ধির বাইরে যেতে পারি না একচুল পর্যন্ত। সতত শ্রদ্ধায় তাই আমাদের অনর্গল উচ্চারণ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

লেখক : ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম – অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ