1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি নিয়ে কিছু কথা

ড. মো. নাছিম আখতার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। এ দেশের সফলতার প্রশংসা করে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এমডি ভ্যান ট্রটসেনবার্গ বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অবিশ্বাস্য’। দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতু বাঙালির সক্ষমতার প্রতীক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকা মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলের মতো প্রকল্পগুলো শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা ও প্রজ্ঞার প্রতিফলন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এক বছরের কম সময় বাকি রয়েছে। এমন সময় দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তি পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক খবর সচেতন মানুষকে অনুসন্ধিত্সু করে তুলছে—বাস্তবিক অর্থেই কি এ দেশে গণতন্ত্রের অবস্থা শোচনীয়? মানবাধিকার ও শান্তির ক্রমোন্নতির সূচকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কি থমকে গেছে? বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা এখন সময়ের দাবি মাত্র।

কভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ঠিক এই সময়ে সংবিধানে বর্ণিত নিয়মে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাঁরা গণতন্ত্র গেল গেল বলে চিৎকার করছেন তাঁদের উদ্দেশে তথ্যটি তুলে ধরলাম—ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বিচারে ২০২২ সালে বিশ্বে গণতন্ত্রের দশায় খুব বেশি পরিবর্তন না এলেও বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়েছে দুই ধাপ। পাঁচটি মানদণ্ডে একটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে ইআইইউ সম্প্রতি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ২০২২ সালে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে ৭৩ নম্বরে। ২০২১ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৭টি দেশের মধ্যে ৭৫তম।

মানব পরিবারের সব সদস্যের জন্য সর্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার, যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ মাত্রই এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। সম্প্রতি আমেরিকাপ্রবাসী আমার এক ছাত্র তার অসহায়ত্বের কথা আমাকে জানাল। নিউ ইয়র্ক সিটিতে সে দুটি বাড়ি কিনেছে। একটিতে নিজে থাকে আর অন্যটি ভাড়া দেয়। তার ভাড়াটিয়া একজন আফ্রো-আমেরিকান। সে ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ করছিল না। এর মধ্যে খুব সম্প্রতি এফবিআইয়ের লোক ভাড়াটিয়াকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। তখনই আমার ছাত্র জানতে পারল যে এই ভাড়াটিয়া একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। এখানে শেষ হলেই চুকে যেত। কিন্তু ভাড়াটিয়া গ্রেপ্তারের পর তার কিছু সাঙ্গোপাঙ্গ অবৈধভাবে ওই ফ্ল্যাটে জোর করে বসবাস শুরু করে। তাদের নামাতে আমার ছাত্র পুলিশ কল করলে পুলিশ এসে নামাতে গেলে ওই বাড়ির দারোয়ান সাক্ষ্য দেয় যে ভাড়াটিয়ারা বৈধভাবেই আছে। এতে পুলিশ আর তাদের বের করে দেয়নি। পরে আমার ছাত্র দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আপনি মিথ্যা বললেন কেন?’ উত্তরে দারোয়ান বলেছিলেন, ‘ওরা খারাপ মানুষ, ওদের কথা না শুনলে ওরা আমাকে ছেলে-সন্তানসহ গুলি করে মেরে ফেলবে।’ এই হলো বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত, শক্তিধর ও স্বাধীনতা সংরক্ষণের দেশ আমেরিকার প্রকৃত অভ্যন্তরীণ অবস্থা।

অপরাধ সংঘটনকে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনমনের অংশ হিসেবে দেখা সমীচীন নয়। সমাজ থেকে অপরাধ দূর করতে রাষ্ট্রের ভূমিকা রয়েছে। তবে এটি শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়। এতে নাগরিক সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে। ব্যক্তি যখন অন্যের অধিকার হরণ করে, সেটি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয় আর রাষ্ট্র যখন নাগরিকের অধিকার হরণ করে, সেটি মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা একটি নির্মম বাস্তবতা। বাংলাদেশকে এ ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করতে হবে। তবে একে রাষ্ট্র কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘বিভীষিকাময়’ হিসেবে চিত্রিত করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক।

মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। আর নারীর ক্ষমতায়নে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। গত বছরে নারী অধিকারের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটেছে। ঔপনিবেশিক শাসনামলে প্রণীত সাক্ষ্য আইন ১৯৭২-তে অন্তর্ভুক্ত নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি বিধান সংশোধন করা হয়েছে। এখন বিচারকের অনুমতি গ্রহণ ছাড়া ধর্ষণ মামলায় অভিযোগকারিণীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। বর্তমান সরকার মানবাধিকার উন্নয়নকল্পে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের উল্লেখ রয়েছে। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল নথি, ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা, বিচার ব্যবস্থায় বাংলায় রায় লেখার উদ্যোগ, ‘দলিল যার জামি তার’ আইনের প্রবর্তন, সুযোগসন্ধানী ব্যক্তির দ্বারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগকে যারপরনাই সীমিত করবে। বিশ্বশান্তির সূচক (জিপিআই) নির্ণীত হয় আটটি নিয়ামকের ওপর ভিত্তি করে যথাক্রমে—সরকার, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, অন্যের অধিকারের স্বীকৃতি দান, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক, তথ্যের অবাধ প্রবাহ, দক্ষ মানবসম্পদ, দুর্নীতি রোধ এবং সম্পদের সুষম বণ্টন। ১৬৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের জিপিআই সূচক ২০১৯, ২০২০ ও ২০২২ সালের জিপিআই সারণি নির্দেশ করে বিশ্বশান্তির সূচকে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতি ঘটছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৩। এ বছর ১৯১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ১২৯তম অবস্থানে।

১১ মার্চ ২০২৩ আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে। আমি জানতাম না কোথায় আমি থাকব, কিভাবে চলব, কোনো চিন্তা করিনি। শুধু একটা চিন্তা করেছি এ দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এ দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে হবে—দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি দিতে হবে মানুষকে। গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে হবে, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।’ শেখ হাসিনা ইতিবাচক মনন ও মানসিকতায় পরিপূর্ণ একজন বিশ্বনেত্রী। তাঁর শাসনামলে জীবনমান যাচাইয়ের ইতিবাচক সূচকের ক্রমোন্নয়ন সাধিত হবে—এটাই স্বাভাবিক।

লেখক: ড. মো. নাছিম আখতার – উপাচার্য, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ