1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বস্তিতে যারা থাকেন তারাও মানুষ

মঞ্জুরে খোদা টরিক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩

বগুড়ার একটি স্কুলের মেয়েরা পালাকরে তারা নিজেরাই তাদের স্কুলের ক্লাসরুম পরিষ্কার করে। সেই স্কুলে এক অতিরিক্ত জেলা জজের মেয়েও পড়ে। এবার এলো তার পরিষ্কারের পালা। তার সহপাঠিরা যখন তাকে স্কুল পরিষ্কারের কথা বললো, সে তখন প্রচণ্ড গর্ব নিয়ে বললো, আমি জেলা জজের মেয়ে আমি কেন স্কুল পরিষ্কার করবো! সে তার দায়িত্ব পালন না করে উল্টো তার ক্ষমতাবান মাকে এটা নিয়ে অভিযোগ করে এবং সে তার স্কুলের সহপাঠিদের বস্তির মেয়ে লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়।
স্কুলের মেয়েরা এতে ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ জেলা জজের পক্ষ নিয়ে মেয়েদের শাসালো। অবিভাবকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তাদের দিয়ে জর্জের পায়ে ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করেছে। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এই হচ্ছে আমাদের শিক্ষার দায়িত্ব-কর্তব্য ও নৈতিকতার অবস্থা। তাদের মধ্যে কোন ন্যায়-অন্যায় বোধ নেই। কী শিখাচ্ছেন শিক্ষকরা? এখানে কোনো শিক্ষক নেই, সবাই প্রশাসক!

আচ্ছা, বস্তিতে যারা থাকে, তারা কি মানুষ নয়? তারা কি খারাপ? কাজ কি শুধু বস্তির জন্য? আর যে মেয়ে মনে করে সে জেলা জজের মেয়ে সে কেন পরিষ্কার করবে? এটা নিম্নমানের বস্তির কাজ, তাহলে ভাবুন এই মেয়ে যখন বিসিএস ক্যাডার হবে, তখন সে কী করবে? এটা সবাই জানেন যে জাপান বিশ্বের একটি প্রধান উন্নত দেশ। সেখানকার স্কুলের ছেলে-মেয়েরাই তাদের স্কুল পরিষ্কার করে। শুধু স্কুলে ক্লাসরুম নয়, তারা পালাকরে টয়লেট/বাথরুম্ও, কিচেন, লাঞ্চরুম, প্লেগ্রাইড এবং স্কুলের আশপাশও তারা পরিষ্কার করে। এটাই নিয়ম, এটাই তাদের শিক্ষা। সেখানে কে কার ছেলে-মেয়ে, সেটা কোনো বিষয়ই নয়।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার স্কুলের এক কাজে রংপুরের ডিসির নিকট গেলেন। ডিসি সেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে স্যার বলতে বাধ্য করে এবং শিক্ষকের সাথে দুর্ব্যবহার করে। এতে শিক্ষক অপমানিত হয়ে বাইরে এসে প্লাকার্ড নিয়ে তার প্রতিবাদ করে। এরপর তার শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা প্রতিবাদ করলে ডিসি এসে দুঃখপ্রকাশ করেন। কেন একজন ডিসি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীকে স্যার বলতে হবে? তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী জনগণের অর্থ তারা চলেন। সুতরাং তারাই জনগণকে স্যার সম্বোধন করবেন, এটা জনগণেরই প্রাপ্য, তাদের নয়। আমাদের দেশে কি এমন কোনো লিখিত নিয়ম/বিধিমালা/নির্দেশিকা আছে? নেই। তাহলে তারা কেন সেটা করতে নাগরিকদের বাধ্য করেন? আর স্যার বিষয়টাইবা কী? জনগণের সঙ্গে প্রজতন্ত্রের কর্মচারী/কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে একটি পরিষ্কার নীতিমালা থাকা দরকার। তা নেই কেন? প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা এতো বিদেশে যান এগুলো কিছু শেখেন না?

জাপানে তিন পেশার মানুষকে স্যার হিসেবে সম্মান করা হয় [১] শিক্ষক। [২] রাজনীতিবীদ এবং [৩] ডাক্তার, অন্য কেউ নয়। অন্যান্য দেশে শিক্ষক ও বিচারক ছাড়া কাউকে স্যার বলে সম্মোধন করা হয় না। বিদেশে পুলিশকে পুলিশ অফিসার্স বা অফিসার্স বলে সম্মোধন করা হয়। অথবা পদ-পদপি, মিস্টার, মিসেস বা মিস বলে সম্মোধন করা হয়। অফিসে বসদের নাম ধরেই সম্মোধন করা হয়, তা সে যতবড় বস-মালিকই হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকে, অথবা প্রফেসর বলে। যারা সম্মানের সংকটে ভোগেন তার আলাদা সামাজিক-সাংস্কৃতিক-নৃতাত্ত্বিক দর্শন, কারণ-সমীকরণ আছে। সে আলাপ আরেকদিন হবে। তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নিজেদের কর্মচারী ভাবেন না, তারা নিজেদের প্রভু ও মালিক ভাবেন। এটাকে প্রজাতন্ত্র বলে না, বলে সামন্ততন্ত্র।

লেখক : মঞ্জুরে খোদা টরিক – গবেষক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ