বঙ্গবন্ধুর সহচর, মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী ছাত্রনেতা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকী মারা গেছেন। বুধবার (২৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী জানান, তার বাবা নুরে আলম সিদ্দিকী বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাদ যোহর তার নিজ জন্মভূমি ঝিনাইদহে সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সাভারে এ মুক্তিযোদ্ধার নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের কাছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার শেষে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
তাহজীব আলম দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকীর বিদায় নেওয়াতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর।
তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, ভক্ত, দলীয় নেতা-কর্মী রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে ও তার লেখা জীবনী বই থেকে জানা যায়, বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী নুরে আলম সিদ্দিকী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুজিব বাহিনীর নেতা ছিলেন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের চার খলিফার একজন হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হয়।
১৯৭০-১৯৭২ মেয়াদে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপিও ছিলেন তিনি।
নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নূরে আলম সিদ্দিকীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন, নূরে আলম সিদ্দিকী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন এবং ‘৭০-এর নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতির এই সাহসী সন্তানের অবদান পরবর্তী প্রজন্ম চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, জেলা বিএনপির সভাপতি এম,এ মজিদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপুসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই জানান, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে শুধু ঝিনাইদহ না দেশের জন্য ক্ষতি হয়েছে। তার মতো মেধাবী ও একাধিক গুনের মানুষ আজীবন মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মরহুম নূরে আলম সিদ্দিকীর ভাই বাসের সিদ্দিকী জানান, তার ভাইয়ের লেখা ও জীবনী বই পড়লে এ প্রজন্ম তাকে নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারবে ও অনুপ্রেরণা পাবে। বঙ্গবন্ধুর সাথে তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৪০ সালের ২৬ মে ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
