1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

‘মানবিক বিয়ে’, অমানবিক ও অনৈসলামিক প্রতিক্রিয়া

মো. জাকির হোসেন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১

ধরে নিচ্ছি রিসোর্টের নারীসঙ্গী মামুনুল হকের বিবাহিত স্ত্রী। কাজেই বিবাহিত স্ত্রীর বিষয়ে মামুনুলের চরিত্রে কালিমালেপন ও তাকে হয়রানি করার কারণে তার সমর্থকরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া দেখাতে হেফাজত কর্মীরা যে অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়েছেন, তা সম্পূর্ণভাবে ইসলাম পরিপন্থি।
করোনাকে অতিক্রম করে গত কদিন ধরে টক অব দ্যা কান্ট্রি হেফাজত নেতা মামুনুল হক ও তার রিসোর্টের নারীসঙ্গী। নারীসঙ্গী মামুনুলের বিবাহিত স্ত্রী কি না, পক্ষে-বিপক্ষে নানাজন নানা মত দিচ্ছেন। ভিডিও, ফোনালাপ, রিসোর্টের রসিদ এসব পর্যালোচনা করে একজন আমার কাছে তার মত বিশ্লেষণ করেছেন এভাবে ‘বন্ধু শহিদুলের স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মামুনুল হক। এ নিয়ে শহিদুল-জান্নাতের পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়। চূড়ান্ত পরিণতি হয় বিবাহবিচ্ছেদে। বিচ্ছেদের পর মামুনুল হক তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন। মাঝেমধ্যে তাকে ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে এদিক-সেদিক নিয়ে যান অবকাশযাপনে। জান্নাত আশায় আছেন একদিন তাদের বিয়ে হবে। এরই মাঝে আচমকা রয়্যাল রিসোর্ট-কাণ্ড ঘটে গেল!’
ঘটনা যা-ই হোক আমি কোনো অনুমান করতে রাজি নই। মহান রব পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “হে বিশ্বাসীগণ! অধিক অনুমান করা থেকে বিরত থাকো। কেননা, কিছু কিছু অনুমান পাপতুল্য। …।” (সুরা হুজুরাত: ১২) তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই মামুনুল হক তার সঙ্গীর নাম আমিনা তৈয়্যেবা বলে নিজে অসত্য বলেছেন। হোটেলের ডকুমেন্টেও তিনি সঙ্গীর নাম আমিনা তৈয়্যেবা উল্লেখ করেছেন। তার মানে নারী সঙ্গীটিকে স্ত্রী দাবি করলেও কোনো এক অজানা কারণে তার প্রকৃত নাম, পরিচয় দিতে তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। স্ত্রীকে হেফাজতবিহীন ফেলে রেখে তিনি হেফাজত কর্মীদের হেফাজতে চলে গিয়েছেন। এটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়। রাষ্ট্রের আইনে দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি বাধ্যতামূলক।
দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে ধোঁয়াশা-লুকোচুরি বলে দিচ্ছে তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেননি। মামুনুল হকরা বিদ্যমান শাসনকে তাগুতের শাসন (আল্লাহর দ্বীন হতে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট তথা মানবরচিত আইন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করে সে অনুযায়ী পরিচালিত শাসনব্যবস্থা) মনে করেন। তাই রাষ্ট্রের আইনকে ‘থোড়াই কেয়ার’ করেন। হেফাজতের একাধিক নেতা দাবি করেছেন যে, মামুনুল হক ইসলামের বিধানমতে, চারটি বিয়ে করতে পারেন। এ কথা অনস্বীকার্য কুরআনে বর্ণিত শর্ত মেনে মামুনুল হক একাধিক বিয়ে করতেই পারেন। আল্লাহ বলেন, “আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, এতিম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার; আর যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি।” (সুরা নিসা: ৩)
 
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাসুল (সাঃ)-এর যুগে জনৈক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে একটি এতিম মেয়ে ছিল। সে ব্যক্তির একটি বাগান ছিল, যার মধ্যে ওই এতিম বালিকাটিরও অংশ ছিল। সে ব্যক্তি ওই মেয়েটিকে বিয়ে করে নিল এবং নিজের পক্ষ থেকে দেনমাহর আদায় তো করলই না, বরং বাগানে মেয়েটির যে অংশ ছিল তা-ও সে আত্মসাৎ করে নিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই উপরোক্ত আয়াত নাজিল হয়। (বুখারি, ৪৫৭৩) একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বিষয়ে তফসিরকারকগণ বলেছেন, একজন মহিলাকেই বিবাহ করা যথেষ্ট হতে পারে। কেননা, একাধিক স্ত্রী রাখলে সুবিচারের যত্ন নেয়া বড়ই কষ্টকর হয়। যার প্রতি আন্তরিক টান থাকবে, তার প্রতিই বেশি খেয়াল থাকবে। এভাবে সে স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার বজায় রাখতে অক্ষম হবে এবং আল্লাহর কাছে অপরাধী গণ্য হবে।
কুরআন এই বাস্তব সত্যকে অন্যত্র অতি সুন্দররূপে এভাবে বর্ণনা করেছে, “তোমরা যতই সাগ্রহে চেষ্টা কর না কেন, স্ত্রীদের মাঝে ন্যায়পরায়ণতা কখনই বজায় রাখতে পারবে না। তবে তোমরা কোনো একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না এবং অপরকে ঝোলানো অবস্থায় ছেড়ে দিও না।” (সুরা নিসা: ১২৯) এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, একাধিক বিবাহ করে স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা বজায় না রাখা বড়ই অনুচিত ও বিপজ্জনক ব্যাপার।
রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী রয়েছে, সে যদি এদের মধ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ করতে না পারে, তবে কিয়ামতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠবে যে, তার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে।’ (আবু দাউদ, ২১৩৩; তিরমিযি, ১১৪১; ইবনে মাজাহ, ১৯৬৯, ইবনে হিব্বান, ৪১৯৪; আহমাদ, ২/৪৭১; হাকেম ২/১৮৬)
দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে মামুনুল হকের লুকোচুরি বলে দিচ্ছে তিনি তার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ইসলামের বিধানমতে বিয়ে লুকানোর সুযোগ নেই। রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নাত হচ্ছে তিনি তাঁর স্ত্রীগণের কাছে কোনো বিয়ে লুকাননি। কিন্তু মামুনুল হক তা করেছেন। এরপরও আমি ধরে নিচ্ছি রিসোর্টের নারীসঙ্গী মামুনুল হকের বিবাহিত স্ত্রী। কাজেই বিবাহিত স্ত্রীর বিষয়ে মামুনুলের চরিত্রে কালিমালেপন ও তাকে হয়রানি করার কারণে তার সমর্থকরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া দেখাতে হেফাজত কর্মীরা যে অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়েছেন তা সম্পূর্ণভাবে ইসলাম পরিপন্থি।
রয়্যাল রিসোর্ট ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে। রিসোর্টের মালিক বলেছেন, তার ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হেফজত কর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে থানাসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর করেছে, আগুনে বাড়ি-গাড়ি পুড়িয়েছে। মামুনুলের অনুসারীরা রিসোর্টে মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। ঘুমন্ত হাবিবুরকে টেনেহিঁচড়ে তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষমা চাইতে বলে মামুনুলের কাছে। হাবিবুর ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করলে হেফাজতিরা মারধর করে তার দাঁত ভেঙে ফেলে। হাবিবুরকে বাঁচাতে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে তাদের কাছ থেকে ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এই যে কারও চরিত্রে কালিমালেপনের অজুহাতে তাণ্ডব, নৈরাজ্য, নৃশংসতা ও অরাজকতা সৃষ্টি এটা কি কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে? ষষ্ঠ হিজরিতে রাসুল (সাঃ) বনু মুস্তালিক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে রাত্রিযাপনের জন্য অবস্থান করেন। রাতের শেষভাগে আয়েশা (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে একটু দূরে যান। কিন্তু পথে তিনি তার গলার হারটি হারিয়ে ফেলেন। তিনি তার হার খুঁজতে থাকেন। এদিকে কাফেলা রওনা হয়ে যায়। তিনি উটের পিঠে পর্দাঘেরা হাওদার (হাতি বা উটের পিঠে আরোহীদের বসবার আসনবিশেষ) ভিতরেই আছেন মনে করে কেউ তাঁর খোঁজ করেনি, কারণ তাঁর শারীরিক গড়ন ছিল হালকা। হার খুঁজে পেয়ে তিনি এসে দেখেন যে, কাফেলা চলে গেছে। তখন তিনি ছোটাছুটি না করে সেখানেই বসে পড়েন, এ আশায় যে কাফেলার রেখে যাওয়া মালামালের সন্ধানে নিয়োজিত কোনো লোক আসবেন। অবশেষে এ কাজে নিয়োজিত সাফওয়ান (রাঃ) সকাল বেলায় আয়েশা (রাঃ)কে দেখতে পেলেন এবং নিজের উটে তাঁকে আরোহণ করিয়ে নিজে পায়ে হেঁটে উটের রশি টেনে সসম্মানে তাঁকে নিয়ে কাফেলার সঙ্গে মিলিত হন।
 
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কজনকে সঙ্গে নিয়ে আয়েশা (রাঃ)-এর ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ রটাতে থাকে। এই ঘটনাটি ‘ইফক’-এর ঘটনা হিসেবে প্রসিদ্ধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি নাজিল হয়, “নিশ্চয় যারা এ অপবাদ রচনা করেছে, তারা তো তোমাদেরই একটি দল; এটাকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এটাতো তোমাদের জন্য কল্যাণকর; তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের পাপকাজের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তার জন্য আছে মহাশাস্তি।” (সুরা নুর: ১১) প্রশ্ন হলো, রাসুল (সাঃ)-এর স্ত্রী সম্পর্কে অপবাদ দেয়ার কারণে সাহাবাগণ প্রতিবাদে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছিলেন কি? কারো বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়েছিলেন?
আপনারা আমাদের কুরআন-হাদিস থেকে শিখিয়েছেন, ইসলামে হক তথা অধিকার দুই প্রকার– আল্লাহর হক ও বান্দার হক। আল্লাহর হক লঙ্ঘিত হলে আল্লাহ ক্ষমা করতেও পারেন, কিন্তু বান্দার হক লঙ্ঘন হলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না, যদি না বান্দা ক্ষমা করে। দেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রত্যক্ষ–পরোক্ষ করের অর্থে যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, তা ধ্বংস করে যে কোটি কোটি বান্দার হক নষ্ট করেছেন তার জবাব কী দেবেন?
আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা লোকদেরকে ন্যায়ের পথ অবলম্বন করতে বল; কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও। অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন করতে থাক। তোমরা কি বিচার-বুদ্ধিকে কোনো কাজেই লাগাও না?” (সুরা বাকারা: ৪৪)
অন্য আয়াতে মুমিনদের উপদেশ প্রদান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা কেন এমন কথা বল, যা তোমরা নিজেরাই মেনে চল না? তোমরা যা কর না, তোমাদের তা বলা আল্লাহর কাছে অতিশয় অসন্তোষজনক।” (সুরা সফ: আয়াত ২-৩)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামিরা তার কাছে একত্র হয়ে তাকে বলবে, ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদের) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’
সে বলবে, অবশ্যই। আমি (তোমাদের) সৎ কাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’ (বুখারি ৩২৬৭, ৭০৯৮; মুসলিম ২৯৮৯; আহমদ ২১২৭৭, ২১২৮৭, ২১২৯৩, ২১৩১২)
 
অবিশ্বাসীরা রাসুল (সাঃ)কে অপবাদ দিয়ে বলেছে তিনি ধর্মদ্রোহী, পাগল, জাদুকর, কবি, গণক, নিন্দিত ব্যক্তি। তারা তাঁকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে, নামাজরত অবস্থায় তাঁর মাথায় উটের পচা-গলিত নাড়িভুঁড়ি ও আবর্জনা নিক্ষেপ করেছে, তাঁর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে, তাঁকে পাথর দিয়ে আঘাত করেছে। এর বিরুদ্ধে রাসুল (সাঃ) কি কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করেছেন? চাচা আবু তালিব ও স্ত্রী খাদিজার (রাঃ) মৃত্যুর পর কুরাইশরা রাসুলের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল। মক্কার মাটিতে তিনি আর টিকতেই পারছিলেন না। তাই তিনি মক্কার ৭০ মাইল দূরে তায়েফবাসীর কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ ১০ দিন পর্যন্ত তিনি ঘুরে ঘুরে ইসলামের আহ্বান জানাতে থাকেন। কিন্তু তারা তাঁর কথায় কোনোই কর্ণপাত করল না; বরং তারা রাসুল (সাঃ)-এর সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিল। অবশেষে তারা সন্ত্রাসী দুষ্ট যুবকদের লেলিয়ে দিল। যুবকরা রাসুল (সাঃ)কে পাথরের আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে তুলল। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর জীবন-আশঙ্কা দেখা দিল। মহানুভব রাসুল (সাঃ) তায়েফবাসীদের এহেন আচরণ সত্ত্বেও তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য ক্ষমা ও করুণা প্রার্থনা করেন।
অশ্লীল ভাষায় রাসুল (সাঃ)-কে যারা গালাগাল করত, বিষাক্ত বর্শা হাতে তাঁকে হত্যা করতে ওত পেতে থাকত, তাঁর দেহ মুবারক থেকে রক্ত ঝরাত, নামাজে নাড়িভুঁড়ি চাপা দিত, মাতৃভূমি ত্যাগ করতে যারা বাধ্য করেছিল, মুসলমানদের ঘরবাড়ি থেকে যারা বিতাড়ন করেছে, লুটপাট করেছে, মুসলমানদের সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে, রাসুল (সাঃ)-এর চাচা হামজা (রাঃ)-এর কলিজা যে চিবিয়ে খেয়েছে, উহুদের যুদ্ধে শহিদ সাহাবাগণের মৃতদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে যারা খণ্ড-বিখণ্ড-বিকৃত করেছে, মক্কা বিজয়ের পর হাতের কাছে পেয়েও তিনি তাদের থেকে কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। বরং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে সবাইকে উদারতা ও ক্ষমার চাদরে ঢেকে দিয়ে বলেছিলেন, আজ তোমাদের ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই, তোমরা মুক্ত। মহান আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। যে অন্যকে ক্ষমা করে তাকেও ভালোবাসেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সুরা আল ইমরান: ১৩৪) ইসলামের এ ভালোবাসা, ক্ষমা, সম্প্রীতি, সহনশীলতার পরিবর্তে যারা জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং নৈরাজ্য-অরাজকতায় যুক্ত তারা কোন ইসলাম অনুসরণ করছেন? আল্লাহ তা’য়ালার ঘোষণা হচ্ছে, “যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়, সে যেন জেনে রাখে, অবশ্যই এটা হচ্ছে সাহসিকতার কাজসমূহের মধ্যে অন্যতম।” (সুরা আশ শুরা: ৪৩)
 
কারো লেখা-বক্তব্য পছন্দ না হলেই ইসলাম হেফাজতের নামে ভার্চুয়ালি অশ্লীল গালাগাল করছেন। এটা কোন ইসলাম? আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মুমিন কটুভাষী হতে পারে না, লা’নতকারী হতে পারে না এবং অশ্লীল ও অশালীন কথা বলতে পারে না। (আল আদাবুল মুফরাদ, ৩১২; জামে তিরমিযি, ১৯৭৭) অশ্লীল ও অশালীন কথা ঈমান ও মু’মিনের বৈশিষ্ট্যির পরিপন্থি। মুমিনের কর্তব্য, এগুলো থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা। (মা’আরিফুল হাদিস, খ. ১, হিস্যা. ১, পৃ. ১০২)
হারেছা বিন ওহাব (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি লোক জান্নাতে যাবে না।’ (আবু দাউদ, ৪১৬৮) তর্ক বা ঝগড়ায় অশ্লীল বাক্য উচ্চারণকে ইসলাম খাঁটি মুনাফিকের আলামত হিসেবে গণ্য করে। আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) বলেন: ‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে খাঁটি মুনাফিক।।’ এর একটি হলো ‘বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেওয়া।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)।
হেফাজতে ইসলামের কিছু কর্মী যেভাবে যখন-তখন আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে যে অমানবিক, অনৈসলামিক, সন্ত্রাসী, হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক কাজ করছে এ থেকে বিরত না হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত হওয়ার শঙ্কায় পড়তে পারে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, হে আয়েশা! আল্লাহ কোমল ব্যবহারকারী, তিনি কোমলতা ভালোবাসেন, আর কোমলতার ফলে আল্লাহ তায়ালা এমন কিছু দান করেন, যা চরম পন্থা অবলম্বনকারীকে দান করেন না।’ (মুসলিম, ২৫৯৩)
 
লেখক: মো. জাকির হোসেন, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ