1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপি কেন পালন করে না মুজিবনগর দিবস?

হামজা রহমান অন্তর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। কিছু কথা রেখে যেতে চাই প্রিয় প্রজন্মের কাছে। গৌরবান্বিত এবং ঐতিহাসিকভাবে অবিচ্ছেদ্য, মহাগুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি শুধু আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলোকে পালন করতে দেখে মনে হয়, কতো বড় দুর্ভাগা জাতি আমরা! যে সরকারের হাত ধরে নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল, সেই সরকারকে শ্রদ্ধা জানানোর দায় তো শুধু আওয়ামী লীগের একার নয়।

জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সার্বজনীনভাবে এই গৌরবের অংশীদার হওয়ার কথা ছিল এদেশে ভোটের রাজনীতি করা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের। ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে জনগণের ব্যালটের রায়ে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়েও আওয়ামী লীগ যথাসময় সরকার গঠন করতে পারেনি গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরা সামরিকতন্ত্রের বুলেটের হুংকারে। কিন্তু এক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার তর্জনি নির্দেশে মুক্তিকামী জনগণ মহাকাব্য রচনা করেছিল তখন। পলাশীর আম্রকাননে সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের কূটচালে অসহায় ছত্রভঙ্গ নবাবের সেনাবাহিনী যেদিন বাংলার স্বাধীনতা হারিয়েছিল ইংরেজদের কাছে। কে সেদিন ভেবেছিল, মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার এমনি এক আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনে এক বৈপ্লবিক ইতিহাস রচিত হবে একদিন!

বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি বা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক করে, তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) করে এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে ১৫ সদস্যের মন্ত্রীসভা সেদিন শপথ নিয়েছিল যুদ্ধ বিজয়ের। শপথ নিয়েছিল পরাধীন একটি জাতিকে স্বাধীন মানচিত্র অর্জনের। শপথ নিয়েছিল বহুকালের নির্যাতন বঞ্চনা আর শোষণের ইতিহাসকে পরাজিত করে স্বাধীনতার নতুন সূর্যের। ভারত সরকারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের সফলতা দেখিয়ে মুজিবনগর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র, ভাতা, রসদ দেবার ব্যবস্থা করেছিল।

প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিল সে মুজিবনগর সরকার। পাকবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের কথা বহির্বিশ্বে প্রচার করে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য বিশ্বনেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেরিয়েছিল। ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধের সাংবিধানিক এবং আইনগত স্বীকৃতি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তা অনুমোদন দেয়া হয় ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গঠিত সরকারে, যেটি পাঠ করা হয় ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
মূলত ২৬ মার্চ থেকেই আমাদের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয় এভাবে, যে জন্য ২৬ মার্চের পরে পাকবাহিনী শুধু হানাদারবাহিনীই ছিল না, তারা ছিল ‘আইনের দৃষ্টিতে’ জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছায় আক্রমণকারী ‘দখলদার বাহিনী’। ৯ মাসে একটা বাচ্চার জন্ম হয় না, একটা দেশের জন্ম হয়েছিল এই মুজিবনগর সরকারের ঔরসে। অথচ এখনো দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের এই যুগান্তকারী ইতিহাসটি চর্চা এবং উদযাপন হয়না এই দুখিনী দেশের মুমূর্ষু অপরাজনৈতিক প্রতিহিংসায়।

স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পদযাত্রা শুরু হয় যে সরকারের হাত ধরে, সেই সরকারকে অস্বীকার করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া আদৌ সম্ভব?
পঁচাত্তর পরবর্তী অন্ধকারাচ্ছন্ন বিকৃত ইতিহাস চর্চার ধারাবাহিতায় মুজিবনগর সরকারের একজন বেতনভুক ‘মেজর’কে স্বাধীনতার স্থপতি বানানোর নির্লজ্জ অপচেষ্টা চালানো হয় এখনো। সেই রাজনৈতিক দলটি আজও পালন করে না ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, উদযাপন করে না ১৭ এপ্রিলের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী সরকারের ঐতিহাসিক মাইলফলক; যেখান থেকে আমরা হাঁটতে শিখেছি ‘স্বাধীনতা’ নামক চার অক্ষরের চির উন্নত গৌরবময় শব্দটির ছায়াতলে।

১৭ এপ্রিলের ইতিহাস গণতন্ত্রের ইতিহাস। ১৭ এপ্রিলের ইতিহাস শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ইতিহাস। ১৭ এপ্রিল অমর হোক। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক : হামজা রহমান (অন্তর) – কলামিস্ট ও ছাত্রনেতা। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ