1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নাহিদের হত্যাকারী ইমনের বাবা জামায়াত সমর্থক, ভাই বিএনপির নেতা

নিজেস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২

রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত নাহিদ মিয়া পরে হাসপাতালে মারা যান। এলিফ্যান্ট রোডের একটি কম্পিউটার বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান ছিলেন নাহিদ।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, নাহিদকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা কালো হেলমেট ও ধূসর টি-শার্ট পরা তরুণের নাম ইমন বাশার।

ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের ১০১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

ইমনের গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে। এলাকায় তার পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তার বাবা ছিলেন জামায়াতের সক্রিয় সমর্থক। আর বড় ভাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ইমনের প্রতিবেশী, স্বজন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর আগে ইমন ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এলাকায় কখনই তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

ইমনের বাবা শামসুর রহমান সরদার চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) ছিলেন। বছর তিনেক আগে তিনি ক্যানসারে মারা যান।

শামসুর রহমান ছিলেন খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জামায়েত নেতা শাহ্ মো. রুহুল কুদ্দুসের অনুসারী। তার সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জামায়াতের রাজনীতি করতেন। ইমনের ভাই ইমরান বাশার এক সময়ে ছিলেন বিএনপির সক্রিয় নেতা।

ইমনের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। দেখা যায় পাশাপাশি দুটি গোলপাতার ঘর রয়েছে, তবে দুটি ঘরই তালাবদ্ধ।

প্রতিবেশী নাজমা বেগম বলেন, ‘ইমনের বাবা শামসুর রহমান সরদারের স্ত্রী দুজন। প্রথম স্ত্রীর নাম অপেরা বেগম ও দ্বিতীয় জনের নাম বিউটি বেগম। তারা পাশাপাশি দুটি ঘরে বসবাস করেন।

‘দ্বিতীয় স্ত্রী বিউটি বেগমের দুই ছেলের বড় জন হলেন ইমরান বাশার, আর ছোট ছেলের নাম ইমন বাশার। প্রথম স্ত্রীর ছেলে সেলিম বাশার বিদ্যুৎ বাগেরহাটের মোংলায় একটি এনজিওতে চাকরি করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওখানেই বসবাস করেন।’

নাজমা বেগম বলেন, ‘দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় ছেলে ইমরান বাশার বাড়ীতে থেকে মৎস্য ঘের করেন, আর ইমন বাশার ঢাকা কলেজে লেখাপড়া করেন।’

ইমন তিন বছর আগে ঢাকায় লেখাপড়া করতে যান জানিয়ে নাজমা বলেন, ‘এর আগে তিনি বাড়ির পাশের গজালিয়া কালুয়া আলিম মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন।’ইমনের বড় ভাইও ওই মাদ্রাসায় পড়েছেন। শামসুর রহমানের প্রথম স্ত্রীর সন্তানও পড়েছেন একই মাদ্রাসায়।

গজালিয়া কালুয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইমন প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত আমাদের মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছে। ছেলেটি ছোটবেলায় খুব ভদ্র ছিল। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

‘মাঝে মাঝে এলাকায় ছোটখাটো মারামারি, ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ত। তার ভাই ইমরান বাশারও এই মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করেছেন। সেও এলাকায় কমবেশি ঝগড়া ফ্যাসাদ করে বেড়ায়।’

ওই গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আব্দুল্যাহ আল মামুন সরদার বলেন, ‘ইমনের বাবা আমার আপন চাচা। এই ওয়ার্ডে আগে আমার বাবা মেম্বার ছিলেন। পরে ২০০০ সালের দিকে ইমনের বাবা মেম্বার নির্বাচিত হন।

‘ইমনের বাবা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে সেটা দীর্ঘদিন আগের বলে তার সে সময় কোনো দলীয় পদ ছিল কিনা আমার মনে নেই। তবে সক্রিয় ভাবে জামায়াত করতেন।’

আব্দুল্যাহ আল মামুন জানান ইমনের বাবা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বেশ জনপ্রিয়তা পান। তখন তার বেশ সম্পদও ছিল।

‘তবে মেম্বার থাকাকালীন তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হন। পরে আর নির্বাচনে অংশ নেননি। চিকিৎসার জন্য ধীরে ধীরে সব সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন সেই সম্পদ নিয়ে তার ছেলে ও ক্রেতাদের মধ্যে মামলা চলছে।’

ইমনদের বাড়িতে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্টইমনদের পরিবারের এখন তেমন কোনো সম্পদ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একেবারে দরিদ্র অবস্থায় তাদের দিন কাটছে।’ইমনের বাবা জামায়াতের রাজনীতি করলেও তার বড় ভাই ইমরান বিএনপির সঙ্গে যুক্ত।

চাঁদখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ আসাদুজ্জামান ময়না বলেন, ‘ইমনের বড় ভাই ইমরান বাশার এক সময়ে চাঁদখালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। পরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। বর্তমানে তিনি দলে তেমন সক্রিয় নেই, তবে বিএনপির সঙ্গে আছেন।’

জমি সংক্রান্ত এক মামলায় সপ্তাহ দেড়েক আগে ইমরান বাশারকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

ইমনদের প্রতিবেশী মো. জিবারুল ইসলাম বলেন, ‘ইমনের বাবা ক্যানসারে ভোগার সময় আলম তলা গ্রামের মোহাম্মদ আলী গাইনের কাছে কিছু জমি বিক্রি করেছিলেন। ওই জমি এখন দখল করে রেখেছেন ইমরান বাশার। সে ওই জমিতে মৎস্য ঘের করে। এই নিয়ে প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল। সেই মামলায় হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।’

পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ইমনের বড় ভাই ইমরান বাশার বর্তমানে কারাগারে আছেন। তবে এটা থানার কোনো মামলা নয়। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের নিয়ে আদালতের মামলায় তিনি গত ৯/১০ আগে কারাগারে যান।’

ইমনের মা প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে এলাকায় নেই। তিনি ঢাকায় আছেন বলে জানা গেছে। তবে ঢাকার ঠিকানা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ইমনদের বাড়ির প্রতিবেশী নাজমা বেগম বলেন, ‘ইমনের বড় ভাই ইমরান বাশারকে আদালত কারাগারে পাঠানোর পর তার মা বিউটি বেগম ঢাকায় নিজের বোনের বাসায় চলে গেছেন।

তিনি বলেন, ‘ইমন আলিম পাশ করার পর ওর মা তার বোনের সঙ্গে আলোচনা করে, তাকে লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় পাঠায়ছিলেন। আমরা জানতাম ইমন খুব মেধাবী। এখন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টিভিতে দেখছি সে কাকে যেন কুপিয়ে হত্যা করেছে। এই নিয়ে পুরো গ্রামে আলোচনা চলছে।’

ইমনের প্রসঙ্গে পাইকগাছা থানার ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানি গজালিয়া গ্রামের ইমন নামের একটি ছেলের বিরুদ্ধে ঢাকায় হত্যা মামলা হয়েছে। তবে অফিসিয়ালি ঢাকার পুলিশের পক্ষ থেকে ইমনের ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি। পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে তার ব্যাপারে কোনো তথ্য চাইলে আমরা তদন্ত করে পাঠাবো।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত