1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ক্যাম্প ছেড়ে চট্টগ্রামে বসতি গেড়েছে অগণিত রোহিঙ্গা

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৬ মে, ২০২২

কক্সবাজার সৈকতসহ শহর থেকে বুধবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার সাঁড়াশি অভিযানে ৪৪৩ রোহিঙ্গা আটকের পরও ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছাড়ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও কেবল বালুখালী শিবির থেকে বেরিয়ে পড়ার সময় আটক হয়েছেন আরো ২০৩ জন রোহিঙ্গা। এ নিয়ে গত ২ দিনে আটক হয়েছেন ৬৪৬ জন রোহিঙ্গা। শিবির থেকে গণহারে রোহিঙ্গাদের বেরিয়ে পড়ার ঘটনা এখন উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা সামাল দিতে নিয়োজিত মাত্র ২ হাজার এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান) সদস্য হিমশিম খাচ্ছেন।

উখিয়ার কুতুপালং এলাকার রোহিঙ্গা শিবিরের দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএন-১৪ ব্যটালিয়ানের অধিনায়ক (এসপি) নাইমুল হক বলেন, আমার এলাকার ক্যাম্পগুলোতে কাঁটাতারের যে ঘেরাও দেওয়া হয়েছিল তার অনেকাংশ রোহিঙ্গারা ভেঙে ফেলেছে। ক্যাম্পের পেছনের এসব ভাঙা অংশ দিয়েই রোহিঙ্গারা বেরিয়ে যায়। তিনি জানান, কাঁটাতারের ভাঙা অংশ পুনরায় মেরামত করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদেরও বলা হয়েছে।
অপরদিকে, বালুখালী শিবিরের ৪ লাখ রোহিঙ্গার দেখভালের দায়িত্বে থাকা এপিবিএন-৮ ব্যাটালিয়ানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, আমার এলাকার ক্যাম্পের ১২টি স্থানে কাঁটাতার সম্পূর্ণ ভাঙা রয়েছে। এসব এলাকা দিয়েই রোহিঙ্গারা বের হয়ে যায়। তিনি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবারও ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে যাবার সময় ২০৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছেন এপিবিএন সদস্যরা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, ইতিমধ্যে পটিয়া, লোহাগড়া, চন্দনাইশ, চকরিয়া, লামা-আলীকদম ও সাতকানিয়া থেকে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম এলাকায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা গ্রাম-গঞ্জে বসতি স্থাপন করেছেন। বুধবার কক্সবাজারে পুলিশের হাতে আটক হওয়া ৪৪৩ জন রোহিঙ্গার মধ্যে বেশিরভাগই ক্যাম্পের বাইরে বসবাসরত বলে মনে করছেন। যদিওবা মাসে যথাসময়ে এসে এসব রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে রেশন নিয়ে আবার গ্রামে গড়া বসতিতে চলে যান বলে জানান তিনি। কক্সবাজার শহরেও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে বসতি করে ক্যাম্পে যথারীতি যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বসতি গড়ার বিষয়টি এ মুহূর্তে দৃশ্যমান মনে না হলেও অদূর ভবিষ্যতে তা হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বেও জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এসব বিষয়গুলো যথারীতি সংশ্লিষ্ট মহলেও জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এমনিতেই প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু এবারের ঈদ উপলক্ষে গত ৩ দিন ধরে রোহিঙ্গারা আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না। ক্যাম্প আর স্থানীয় গ্রামবাসীর এলাকায় অবাধ বিচরণ তাদের। গত ৩ দিন ধরে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াতের জন্য কোনো যানবাহনই পাচ্ছেন না। প্রায় সব যানবাহনেরই যাত্রী রোহিঙ্গা। প্রচুর সংখ্যক যানবাহনে মাইক আর সাউন্ড বক্স লাগিয়ে রোহিঙ্গা কিশোর-তরুণের দল নেচে-গেয়ে ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটও এখন রোহিঙ্গাদের দখলে। স্থানীয় এলাকার লোকজন একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন। রাতের বেলায় ক্যাম্প থেকে সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা এসে প্রতিশোধ নিতে পারে- এ আতঙ্কে স্থানীয়রা চুপচাপ থাকতে বাধ্য হন। এনজিও আর স্থানীয় প্রশাসন মিলেও সবাই রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যস্ত।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, আমি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে যা দেখছি তা কোনদিন কল্পনাও করিনি। রোহিঙ্গা আর আমার এলাকাবাসীর সাথে তুলনা করলে মনে হয় রোহিঙ্গারাই স্থানীয় আর আমরা অসহায় কিছু মানুষ। তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফের মানুষ এখন রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা প্রশাসনের হাতে এক প্রকার জিন্মি হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজারের সৈকতে পর্যন্ত শত শত রোহিঙ্গা গিয়ে পর্যটকের সাথে মিশে যাবার ঘটনাটিকে কোনভাবেই সহজভাবে মেনে নেওয়া যায় না। সৈকতের মতো এমন একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রোহিঙ্গাদের যত্রতত্র মেলামেশার সুযোগ ‘বড় অঘটন’ও ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান এ বিষয়ে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সরকার উখিয়া ও টেকনাফে নির্ধারিত স্থানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আর্ন্তজাতিক সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের খাওয়া-দাওয়াসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ সুপার জানান, ক্যাম্প ছেড়ে শত শত রোহিঙ্গা কক্সবাজারের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি ঘটছে। তিনি আরো জানান, আটক রোহিঙ্গাদের আপাতত কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তিতে তাদের ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, ঈদ পরবর্তী দেশের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটছে কক্সবাজারে। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধান করা পুলিশের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে সৈকতে পর্যটক বেশে রোহিঙ্গারা একাকার হয়ে নানা অপরাধজনক কাজে জড়িত হয়ে পড়েছেন। অনেক পর্যটকও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে যে, তারা (পর্যটক) রোহিঙ্গাদের হুমকি পাচ্ছেন। ঈদ উপলক্ষে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে বিনা অনুমতিতে বেরিয়ে কক্সবাজার জেলাসহ দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার খবরে পুলিশ প্রশাসন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তদুপরি সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় যতসব অপরাধজনক ঘটনা ঘটেছে এসবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক সম্পৃত্ততা শনাক্ত হয়েছে। এমনকি বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা আটকও হয়েছেন। এসব কারণে অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস জানিয়েছেন, সমুদ্র সৈকতে রোহিঙ্গাদের সাজগোজ আর কাপড়-চোপড় দেখে কে রোহিঙ্গা আর কে পর্যটক তা পরখ করতেও কষ্ট হচ্ছিল। কেবল ভাষাগত দিক দিয়েই রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে আটক করতে হয়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যে শুদ্ধ বাংলাও রপ্ত করে ফেলেছেন।

তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৪১ জন নারী এবং ৬৭ জন শিশু রয়েছে। এদিকে, কক্সবাজার জেলা পুলিশ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশি পোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের আটক করছে। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় যতসব অপরাধজনক ঘটনা ঘটেছে এসবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক সম্পৃত্ততা শনাক্ত হয়েছে। এমনকি বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা আটকও হয়েছেন। আটক হওয়া সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, বুধবার পুলিশের সাথে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদুল ইসলামসহ সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির ২০ জন বিচকর্মীও অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন। বিচকর্মীরা জানান, জেলা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের যৌথ অভিযানে কেবল সৈকত থেকেই আটক করা হয়েছে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা। এসব আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দামি কাপড়-চোপড় পরা করা কয়েক ডজন রোহিঙ্গা যুবতীও ছিলেন। সৈকতে কর্মরত বিচকর্মীরা আরো জানিয়েছেন, সৈকতে রোহিঙ্গা ধরার অভিযানে গিয়ে রীতিমতো পুলিশও চমকে উঠেছে। রোহিঙ্গা যুবক-যুবতীদের মূল্যবান পোশাক দেখে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল তারা আদৌ রোহিঙ্গা কিনা।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, কক্সবাজার সৈকতে আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ক্যাম্প থেকে আসা বিপুল সংখ্যক মাদরাসায় পড়ুয়া আলখেল্লা পরিহিত রোহিঙ্গাও ছিলেন। এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা সন্দেহও দেখা দিয়েছে। তিনি আরো জানান, মাত্র কয়েক ঘণ্টার অভিযানে যদি এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আটক হয়ে থাকে, তাহলে পুরো কক্সবাজার জেলা শহরে কত হাজার আর কত লাখ রোহিঙ্গায় ভরে গেছে তা ভাবনার সময় এসেছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ