1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে প্রথম আবেদন; যেনো গ্রিক পুরাণের পুনরাবৃত্তি

এম নজরুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

পৌরাণিক অনেক গল্প আছে, যেগুলোর সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এমনই এক গল্পের প্রধান চরিত্র ইলেকট্রা। গ্রিক ট্র্যাজেডিগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় এই পৌরাণিক চরিত্রটি। সফোক্লিসের ইলেকট্রা এবং ইউরিপিদেসের ইলেকট্রা, দুটি গ্রিক ট্র্যাজেডির প্রধান চরিত্র হিসেবে আমরা তাঁকে পাই।

ইস্কিলুস, আলফিয়েরি ভলতাইরে, হফম্যানস্থাল, ইউজিন ও’নিল প্রমুখের নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইলেকট্রা। গ্রিক পুরাণে ইলেকট্রা ছিলেন রাজা আগামেননের কন্যা। রাজা আগামেনন ছিলেন ট্রয় যুদ্ধে গ্রিকদের প্রধান সেনাপতি। অগিস্থাস আগামেননকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন।
কবি শামসুর রাহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর কন্যার মধ্যে আগামেনন ও ইলেকট্রা এই দুটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর কবিতায়। লিখেছেন, ‘আড়ালে বিলাপ করি একা একা, ক্ষুধার্ত পিতা/তোমার জন্য প্রকাশ্যে শোক কারাটাও অপরাধ। /এমন কি হায়, আমার সকল স্বপ্নেও তুমি/নিষিদ্ধ আজ; তোমার দুহিতা একি গুরুভার বয়!’

গ্রিক পুরাণের এই গল্পটিই কি একটু ভিন্নরূপে ফিরে এসেছিল বাংলাদেশে?

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জাতি ছিল স্তম্ভিত, দিকনির্দেশনাহীন। দলের অনেকেই ঘাতকদের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে ব্যস্ত। কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন, ‘শ্রাবণের মেঘ আকাশে আকাশে জটলা পাকায়/মেঘময়তায় ঘন ঘন আজ একি বিদ্যুৎ জ্বলে। /মিত্র কোথাও আশেপাশে নেই, শান্তি উধাও :/নির্দয় স্মৃতি মিতালি পাতায় শত করোটির সাথে। ’

তখন একনায়কতন্ত্রের বুটে পিষ্ট গণতন্ত্র। বাকস্বাধীনতা ছিল না দেশে। দেশের বাইরেও কেউ এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারেননি। বাঙালিদের কাছে জাতির জনকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এমন এক অবিশ্বাস্য ও নারকীয় ঘটনা ছিল যে শোকে মুহ্যমান জাতি একেবারে দিশাহারা হয়ে পড়ে। এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করার মতো শক্তি সেই মুহূর্তে ছিল না। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে তখন কবরের নীরবতা। অথচ এই বাড়িতে একদিন কত মানুষের সমাগম হতো রোজ। যেমন কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন, ‘পিতৃভবনে শুনেছি অনেক চারণের গাথা,/লায়ারের তারে হৃদয় বেজেছে সুদূর মদির সুরে। /একদা এখানে কত বিদূষক প্রসাদ কুড়িয়ে/হয়েছে ধন্য, প্রধান কক্ষ ফুলে ফুলে গেছে ছেয়ে। ’

ইলেকট্রাও তাঁর ভাই ওরেস্তেসের সঙ্গে যৌথভাবে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, তেমনি জাতির পিতার দুই কন্যা বিশ্বমানবতার কাছে পিতৃহত্যার বিচার চেয়েছিলেন। বিচার চেয়েছিলেন ইতিহাসের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বিশ্বমানবতার কাছে প্রথম আবেদন রাখা হয় ১৯৭৯ সালের ১০ মে। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠা কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বিশ্বমানবতার কাছে এই আরজি পেশ করেছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।

১০ মে ১৯৭৯। সেদিন স্টকহোমে অনুষ্ঠিত হয় সর্ব-ইউরোপীয় বাকশালের এক সম্মেলন। ওই সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তখন ভারত থেকে সুদূর সুইডেনে গিয়ে সম্মেলনে যোগ দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। সর্ব-ইউরোপীয় নেতারা শেখ হাসিনার প্রতিনিধিত্ব করতে শেখ রেহানাকে অনুরোধ করেন। দিল্লি থেকে ফোনে শেখ হাসিনাও বোনকে বলেন সম্মেলনে যেতে। শেখ রেহানা সম্মেলনে অংশ নেন। সুইডেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুর রাজ্জাকের আন্তরিক চেষ্টায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, স্পেনে সাবেক রাষ্ট্রদূত শেলী জামান ও সেলিমুজ্জামান।

সম্মেলনের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁর পাঠানো বাণী পাঠ করেন শেখ রেহানা। বড় বোন শেখ হাসিনার পক্ষে বক্তব্যও দেন তিনি। এটাই ছিল কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে শেখ রেহানার প্রথম বক্তব্য প্রদান। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তিনিই সর্বপ্রথম পঁচাত্তরের কলঙ্কজনক ও অমানবিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তোলেন। পঁচাত্তরের পৈশাচিক বর্ণনা দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শেখ রেহানার আবেগঘন বক্তব্য সে অনুষ্ঠানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।

তখন দেশে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ প্রায় নিষিদ্ধ। যেমনটি শামসুর রাহমান তাঁর কবিতায় লিখেছেন, ‘আড়ালে বিলাপ করি একা একা, ক্ষুধার্ত পিতা/তোমার জন্য প্রকাশ্যে শোক করাটাও অপরাধ। /এমন কি হায়, আমার সকল স্বপ্নেও তুমি/নিষিদ্ধ আজ; তোমার দুহিতা একি গুরুভার বয়!’

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসীন করেন শেখ হাসিনা। তখন ‘ইনডেমনিটি’ অধ্যাদেশ বাতিল করার জন্য তাঁর সরকার আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত অধ্যাদেশটি সংবিধানের পরিপন্থী বলে রায় দেন। তারপর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি’ অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়।

অতঃপর ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচার অনুষ্ঠান না করে দেশের প্রচলিত আইনে স্বাভাবিক পন্থায় বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালের ১২ মার্চ বিচারকাজ শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারক কাজী গোলাম রসুল মামলার রায় ঘোষণা করেন। ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হয়ে শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ওই আপিলের তথা মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি পাঁচ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। এ ইতিহাস সবারই জানা।

আজ সেই দিন, যেদিন ফিরে এসেছিল গ্রিক পুরাণের গল্প। গ্রিক পুরাণের গল্পের প্রধান দুই চরিত্র বোন ও ভাই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফিরে আসা গল্পের চরিত্র দুই বোন। ১৯৭৯ সালের এই দিনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে দুই বোন আবেদন জানিয়েছিলেন বিশ্ববিবেক ও বিশ্বমানবতার কাছে। আজ দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এই কলঙ্কমোচনের প্রথম সোপান রচিত হয়েছিল আজকের এই দিনে সুদূর সুইডেনে। আর এই সোপান রচনায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।

সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। কার্যকর হয়েছে দণ্ড। এর পরও কি ভুলে থাকা যায় শোক? কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় তাই উঠে আসে, “যতদিন আমি এই পৃথিবীতে প্রত্যহ ভোরে/মেলবো দু’চোখ দেখবো নিয়ত রৌদ্র-ছায়ার খেলা,/যতদিন পাবো বাতাসের চুমো দেখবো তরুণ/হরিণের লাফ, ততদিন আমি লালন করবো শোক। ”

লেখক : এম নজরুল ইসলাম, সর্ব-ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং অস্ট্রিয়াপ্রবাসী লেখক, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক। nazrul@gmx.at


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ