1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মানবতার আশ্রয়কেন্দ্রে অপরাধের অভয়ারণ্য

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

১১ মে, ২০২২ গণমাধ্যম সূত্রমতে, ‘বাংলাদেশের ভেতরে স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ও হাজার কোটি টাকার অস্ত্র আনছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’ শিরোনামে সংবাদ পরিবেশনের জন্য একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার কার্যালয় বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। অস্ত্র চালানের হোতা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের পক্ষ থেকে এই হুমকি দেয়া হয়। প্রতিবেদনে আরও প্রকাশিত যে, উখিয়ার ২২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত নবী বাহিনীর কাছে অর্ধশতাধিক ভারি ও অত্যাধুনিক অস্ত্র এসেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। ১৪ আর্মড পুলিশের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হকের বক্তব্য অনুসারে, নবী হোসেন ও মাস্টার মুন্না দুজনই বড় মাপের সন্ত্রাসী ও মোস্ট ওয়ান্টেড। এই ধরনের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নানামুখী তৎপরতায় শুধু কক্সবাজার-বাংলাদেশ নয়; পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমগ্র নাগরিকের হৃদয়ে অদৃশ্য-অজানা রহস্যাবৃত আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে প্রবল জনশ্রুতি প্রচলিত। দীর্ঘকাল চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যর্থতা এদের অধিকতর জঘন্য অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত করছে কিনা তার বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ অত্যাবশ্যক।

বিশ্ববাসীসহ দেশের জনগণ সম্যক অবগত আছেন, বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উদার মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গণহত্যা থেকে রোহিঙ্গাদের প্রাণরক্ষায় এদেশে সকল সুযোগ-সুবিধাসহ নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় এটি সুস্পষ্ট; কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ থানা এলাকায় আশ্রিত ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সময়ের আবর্তনে কদর্য অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি নগণ্য ঘটনা থেকে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। সন্ত্রাসী কর্মকা–হত্যা-ডাকাতি-অপহরণ-মুক্তিপণ আদায়-আধিপত্য বিস্তার-চাঁদাবাজি-পূর্ব শত্রুতার জের-মাদক-অস্ত্র ও মানবপাচারসহ বহুমাত্রিক অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। ইয়াবা চালান-মজুদ ও লেনদেনের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে এসব ক্যাম্প। গড়ে উঠেছে ছোট ছোট সন্ত্রাসী বাহিনী ও অস্ত্র তৈরির কারখানা। এসব সন্ত্রাসী বাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় নির্বিঘ্নে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি বিরোধে জড়িয়েছে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গেও।

জেলা পুলিশের ভাষ্যমতে, রোহিঙ্গারা খুন, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ, ইয়াবা-মানবপাচার, নির্যাতন, ফসলি জমি দখলসহ ১৭ ধরনের অপরাধে জড়িত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস-বিস) মহাপরিচালক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ‘বিশ্বব্যাপীই শরণার্থীরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তারা মানব-মাদকপাচারসহ নানা অপরাধ করে থাকে। আবার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যরা এদের আর্থিক প্রলোভন বা মোটিভেট করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে পরিণত করে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেটা ভিন্ন সেটা হলো এরা ইয়াবা কারবারেও জড়িত। কারণ এদের উৎস দেশ (মিয়ানমার) এবং ক্যাম্পগুলো মাদক চোরাচালান রুটের খুব কাছাকাছি। তাই তাদের অপরাধ পুরোপুরি দমন করা সম্ভব না হলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

টেকনাফ-উখিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের মতে, ছাগল-মুরগি ও মোবাইল ফোন চুরি থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই রোহিঙ্গারা করছে না। তারা ফসলি জমি, ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি নষ্ট করছে। ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এনজিওরা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাসেবী নামে তুলনামূলক কম বেতন/চুক্তিভিত্তিক শ্রমে খাটাচ্ছে। গত দুই বছরে হঠাৎ করে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় কিছুসংখ্যক মানুষ লাভবান হলেও বিপাকে স্থানীয় বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বেসরকারী সংস্থার গবেষণা অনুসারে, রোহিঙ্গাদের কারণে ৪৩ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে কক্সবাজারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আইনশৃঙ্খলাসহ স্থানীয় অর্থনীতিতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও অভিযানেও রোহিঙ্গাদের নানাবিধ অরাজকতা প্রতিহত করা অনেকটা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিশাল আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নানামুখী অপকর্ম কক্সবাজারসহ পুরো অঞ্চলকে দুর্বিষহ ও বিপর্যস্ত করে চলেছে। তাদের এমন হীন-সহিংস কর্মকা- প্রশাসনের পাশাপাশি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদেরও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাকে হত্যা করা হয়। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার রেশ না কাটতেই ২২ অক্টোবর উখিয়ার একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতার ঘটনায় সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। ক্যাম্প-১৮এইচ-৫২ ব্লকে অবস্থিত দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসায় চালানো এ হামলায় নিহত সবাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোরে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরেও এক রোহিঙ্গা নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও দুই রোহিঙ্গা। দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে ডাকাতি-অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িত ‘সালমান শাহ’র ডাকাত গ্রুপের প্রধান শহিদুল ইসলাম ওরফে সালমান শাহসহ ৩ জনকে গত ৫ মে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা আটক করেছে। এছাড়া ২৮ এপ্রিল রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১৯নং বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ৫ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারিতেও টেকনাফে একটি বিদেশী ও একটি দেশী অস্ত্রসহ ৩ রোহিঙ্গা আটক হওয়ার খবর পরিবেশিত হয়।

ইয়াবা কারবারের পাশাপাশি সম্প্রতি আশ্রিত রোহিঙ্গার অনেকে জড়াচ্ছেন সর্বনাশা মাদক আইস ব্যবসায়। কক্সবাজারের স্থানীয় কিছু ব্যক্তির যোগসাজশে তারা বিভিন্ন উপায়ে দেশে আইসের চালান আনছে। গোয়ান্দা সূত্র মতে, নাফনদী ও টেকনাফের সমুদ্রসীমানার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে আসছে আইস। এদেশে থাকা রোহিঙ্গা মাদক কারবারিরা মিয়ানমারের কারবারিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক কক্সবাজার শহরের কলাতলী বিচ পর্যন্ত কাজ করায় এক্ষেত্রে দুইপক্ষই মিয়ানমারের সিম ব্যবহার করে। ফলে দেশে আসা মাদকের চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে ধরা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ১৬ অক্টোবর, ২০২১ ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে আইসের সবচেয়ে বড় পাঁচ কেজির চালান ধরা পড়ে। এ সময় দুইজন মাদক কারবারি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। গোয়েন্দাদের মতে, এই চক্রে প্রায় ছয়জন প্রধান হোতা রয়েছে। গত ৮ মে নাফনদী সীমান্ত হয়ে মাদকের চালান নিয়ে সাঁতার কেটে আসার সময় বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ১ কোজি ৬০ গ্রাম আইস ও ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক রোহিঙ্গাকে আটক করে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রমতে, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে টার্গেট করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারী চক্র। যাদের মূল টার্গেট হলো অবিবাহিত রোহিঙ্গা নারী। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নানা নির্যাতনের শিকারে পরিণত হওয়া এসব রোহিঙ্গা নারীর অধিকাংশকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় এক লাখের ওপরে রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যাদের মধ্যে রোহিঙ্গা নারীর সংখ্যা অতি নগণ্য। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিদের বর্ণনামতে, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত পুরুষ রোহিঙ্গারা স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করতে না পারায় সেখানে রোহিঙ্গা নারীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই সুযোগটি ব্যবহার করে দালাল চক্রের সদস্যরা ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে নারীদের প্রলোভন দেখাচ্ছে। যেহেতু এখানে সবাই খুব কষ্টে থাকে, তাই একটু ভাল থাকার আশায় রোহিঙ্গা নারীরা সহজেই দালালদের ফাঁদে পড়ে মালয়েশিয়ায় যেতে রাজি হয়ে যায়।

ইউএনএইচসিআর প্রকাশিত অন্য প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়েছে যা ২০১৩-২০১৫ সালে সমুদ্র পাড়ি দেয়া মানুষের তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ বেশি। ২০১৫ সালে সমুদ্রযাত্রীদের বেশিরভাগ পুরুষ হলেও ২০১৮ সালের সমুদ্রযাত্রীদের শতকরা ৫৯ ভাগই ছিল নারী ও শিশু। জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬৩৩ রোহিঙ্গা ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে এবং কাজ করে জানতে পারে, এদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩৪৮ রোহিঙ্গাই পাচার সংক্রান্ত ঘটনার ভুক্তভোগী। ২৯ এপিল, ২০২২ প্রকাশিত গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, মার্চের ২২ তারিখ সাগরপথে পাচারকালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে ১৪৯ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে ৭৮ নারী, ৪৮ পুরুষ ও ২৩টি শিশু রয়েছে। একই মাসের ২৪ তারিখ টেকনাফের শামলাপুর উপকূল থেকে আরও ৫৭ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করা হয়। গত বছরের মে মাসে উদ্ধার হয়েছিল ৩০৬ জন এবং সম্প্রতি ভারতে পাচারকালে উদ্ধার হয় ৭ রোহিঙ্গা।

অনিয়ন্ত্রিত অপরাধ, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও নিরাপত্তার অভাবে সব সময়ই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিনযাপন করছে। বেশিরভাগ রোহিঙ্গার অভিমত হচ্ছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সশস্ত্র দলগুলোর তৈরি করা ত্রাসের রাজত্বের কারণে সম্প্রতি ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তার পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। উখিয়ার ৭নং ক্যাম্পের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে এখানে এসেছি। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, আমাদের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এখানেও আমরা সারাক্ষণ ভয়ে আছি। সূর্য ডোবার আগেই আমি আমার দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরে যাই। সন্ধ্যা নেমে আসার পর অপরাধী দলগুলো টহলে বের হয় এবং ক্যাম্প একটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।’ বাসিন্দাদের মধ্যে ভরসার এতটাই অভাব যে, তারা পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর সঙ্গেও খুব একটা কথা বলে না। বাসিন্দারা আরও জানায়, ক্যাম্পের সব জায়গায় অপরাধীরা আছে এবং তারা রোহিঙ্গাদের চলাফেরার ওপর নজর রাখে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই। দিনেরবেলায় সবকিছু শান্ত মনে হলেও সূর্যাস্তের পর পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যায়।

রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ সঙ্কটে রূপান্তরিত। ক্যাম্পের ভেতরে একটি পক্ষ অপরপক্ষকে কাফের বা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে সন্দেহ করে। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অনেকে আছে যারা মিয়ানমার বাহিনীর কাছে তথ্য পাচার করে। তৎপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর কথা না শুনলে পরিণতি হয় খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই সশস্ত্র গোষ্ঠী ক্যাম্পের ভেতর তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, ‘ক্যাম্পের ভেতরে একটি কথা প্রচলিত আছে, ক্যাম্প দিনেরবেলায় বাংলাদেশের আর রাতেরবেলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এই সশস্ত্র গোষ্ঠী চায় না যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখে তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে চায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়ার পর সে গোষ্ঠী অনেক রোহিঙ্গাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে যাতে তারা ফিরে যেতে রাজি না হয়।’ সম্প্রতি সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে রোহিঙ্গারা পর্যটকদের উৎপাত করার অভিযোগে ৪৭৬ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। আটকদের বেশিরভাগই হচ্ছে শিশু। রোহিঙ্গাদের এই অবাধ চলাফেরা পর্যটননগরী খ্যাত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প বিকাশে নবতর অন্তরায় রূপে আবির্ভূত হয়েছে। সামগ্রিক দৃশ্যপট নিবিড় পর্যালোচনায় আশু-স্বল্প-দীর্ঘমেয়াদী প্রায়োগিক পরিকল্পনা ও কূটনৈতিক বিচক্ষণতায় সার্থকতা-সফলতা অর্জনে ব্যত্যয় ঘটলে দেশ অপরিমেয় দুর্ভেদ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে নিঃসন্দেহে তা বলা যায়।

লেখক : ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী – শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ