1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ঘর পোড়া আগুনে আলু খাওয়ার স্বপ্ন বিএনপির

মতিউর মাহফুজ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৬ মে, ২০২২

‘ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়া’ – বাংলায় বহুল প্রচলিত একটি কথা। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতাদের উল্লাস দেখে প্রবাদটি বার বার মনে পড়ছে। অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা সরকারের পতন দেখে বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা আনন্দে নৃত্য শুরু করে দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম তো বরাবরের মত হুঙ্কার দিয়ে বলেই দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়ে খারাপ হবে। সেখানে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সব। আর এরা (আওয়ামী লীগ) ঝাঁপিয়ে পড়বে বঙ্গোপসাগরে। আওয়ামী লীগ সরকার ও বাংলাদেশের ঘর না পুড়লেও বিএনপি আলু খাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে।

২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির পার্টি অফিস গুলোতে মিষ্টি বিতরণ হয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের সাথে যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারের ভালো সম্পর্ক ছিল সেহেতু বিজেপি এসে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাদের কোলে তুলে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে! খালেদা জিয়া তো নিজেই মিথ্যা অপপ্রচার রটালো তাকে নাকি বিজেপির তৎকালীন সভাপতি অমিত শাহ ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছে। ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল।

অমিত শাহের অফিস থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। যদিও একটি দেশের ক্ষমতায় কারা থাকবেন, সেটা নির্ধারণ করেন সে দেশের জনগণ। স্বৈরতন্ত্রের কোলে জন্মে নেয়া বিএনপি সেটা বারবার ভুলে যান। আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে বিজেপি সরকারের সুমধুর সম্পর্কে দ্রুতই বিএনপির রণে ভঙ্গ হয়। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পরও বিএনপির মধ্যে চাপা উল্লাস দেখা গেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র‍্যাবের কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিল, তখন তো বিএনপি নেতারা বলতে শুরু করলো আওয়ামী লীগ সরকারে পতন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আবার বর্তমানে শ্রীলঙ্কার গণবিক্ষোভ দেখে উল্লাস নৃত্য শুরু করে দিয়েছে তারা।

রিজার্ভ, রেমিট্যান্স কিংবা রপ্তানি; বাংলাদেশের ধারেকাছেও নেই শ্রীলংকা। বৈদেশিক ঋণেও বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ব্যবধান আকাশ-পাতাল। তবুও দেউলিয়া শ্রীলংকার সাথে বাংলাদেশকে তুলনা করে প্রচারণা চলছে। আর যাকে একেবারেই অমূলক বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

রপ্তানি আয়ে রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আয় বেড়েছে ৩৩.৪১ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রাংশ ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এছাড়া রেমিট্যান্সে তেজীভাব ও খাদ্য উৎপাদনের চিত্রও উর্ধ্বমুখী। সব মিলে শক্তি বাড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি।

ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে দাতা সংস্থাগুলোও। বিশ্বব্যাংক বলছেন, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৪ শতাংশ। পরের বছরে উন্নীত হবে ৬.৭ শতাংশে। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পূর্বাভাস আরও ইতিবাচক। সংস্থাটি বলছে, অর্থবছর শেষে ৬.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখতে পাবে বাংলাদেশ। আগামী অর্থবছরে হবে ৭.১ শতাংশ।

এমন বাস্তবতা সত্ত্বেও বাংলাদশের অর্থনীতি নিয়ে চলছে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা। সম্প্রতি দেউলিয়া হওয়া শ্রীলংকার সাথে তুলনা করতে চাচ্ছে সরকারবিরোধী মহল। আর যাকে একেবারেই অমূলক বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে তহবিল সেটা ৪৪ থেকে ৪৫ বিলিয়নে ওঠানামা করছে। সুতরাং আমরা খুবই একটা স্বস্তি এবং শক্ত অবস্থানে আছি।”

সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেন, “আমাদের ম্যাক্রো ইকোনমির যে স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক যে অর্জন গত ১৩ বছর থেকে দেখতে পাচ্ছি সেটির সাথে শ্রীলঙ্কার সমসাময়িক রাজনৈতিকতার সংকট, অস্থিরতা, অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় এর তো ধারেকাছেও নেই।”

শ্রীলংকা ডুবছে অপরিকল্পিত বিদেশি ঋণ, পর্যটনে ধ্বস, আর উচ্চাভিলাষী কৃষিনীতির কারণে। এসবের কোনটিই নেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ১২ শতাংশ বিদেশি ঋণ। যেখানে শ্রীলংকার ৪২ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৬ শতাংশ, আর নেপালের ২৩ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভ প্রায় কাছাকাছি। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সও ভালো। তাই ঋণ পরিশোধে ঝুঁকি নেই।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “বৈদেশিক ঋণ যেটা প্রতিবছর আমরা পরিশোধ করি সেটা সাধারণত তুলনা করা হয় রপ্তানি আয়ের সঙ্গে। তার সর্বশেষ হচ্ছে সাড়ে ৪ শতাংশ মাত্র এবং গত কয়েকবছরে সাড়ে পাঁচ-সাড়ে চার এই পর্যায়ে ছিল। সুতরাং এখানে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।”

ড. আতিউর রহমান বলেন, “শ্রীলংকা থেকে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় যেটা শিক্ষনীয় বলে আমি মনে করি সেটা হল আয় বুঝে ব্যয় করার একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।”

চলমান মেগা প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়নে জোর দেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। তারা বলছেন, প্রকল্পগুলো শেষ হলে অর্থনীতি আরও বেগবান হবে।

বাংলাদেশের প্রতিটি মেগাপ্রকল্প দেশের অর্থনীতি ও জনগণের সার্বিক উন্নতির কথা বিবেচনা করেই নেয়া হয়েছে। পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী ট্যানেল, মেট্রোরেল, ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল ও মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দরে এলএমজি টার্মিনাল, ঢাকা বিমানবন্দর থার্ড টার্মিনাল নির্মাণসহ মেগাপ্রকল্প গুলো চালুর পর বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারাই বদলে যাবে। আগামী মাসেই পদ্মাসেতু চালু হয়ে যাচ্ছে। শুধু এই সেতু চালুর কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে।

ঘর পুড়লে যারা আলু খাওয়ার ধান্ধায় আছেন, তাদের স্বপ্ন অতীতের মত স্বপ্নই থেকে যাবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদদের চোখে রোল মডেল। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ