1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

একজন শেখ হাসিনা নন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিল বাংলাদেশ

আবদুল মান্নান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৬ মে, ২০২২

১৭ মেকে বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকন্যার পিতার মৃত্যুর পর ছয় বছরের নির্বাসিত জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে দেশে ফেরার দিন হিসেবে দেখে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোও দিনটিকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে।

তবে নির্মোহভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করলে এই দিনটি একজন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হিসেবে না দেখে দেখা উচিত ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাঙালির-বাংলাদেশের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে। যেদিন শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে ঢাকা ফিরেছিলেন, সেদিন দেশে নির্বাসিত গণতন্ত্র ফিরবে তার একটা ক্ষীণ আশা দেশের জনগণ দেখতে পেয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে এবং ৩ নভেম্বর জেলে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পর খন্দকার মোশতাকের হাত ঘুরে যখন প্রথমবারের মতো দেশের শাসনভার জেনারেল জিয়ার হাতে চলে গেল, তখন পাকিস্তান আমলের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ ধরে নিয়েছিল, জিয়া তাঁর সাবেক প্রভু আইয়ুব খানের মতো সামরিক শাসন দিয়ে দেশ পরিচালনা করবেন। তাঁর সঙ্গে জুটেছিল বঙ্গবন্ধু শাসনের সব বিরুদ্ধাচারী ডান-বাম আর পাকিস্তানের খিদমতগার কর্তাভজা সামরিক-বেসামরিক আমলা। জিয়া যে আরেকজন আইয়ুব খান হওয়ার চেষ্টা করবেন তা আরো পরিষ্কার হয়ে ওঠে যখন তিনি আইয়ুব খানের মতো ‘হ্যাঁ-না’ নামক এক তামাশার রেফারেন্ডাম দিয়ে নিজের আসন পাকাপোক্ত করেন। তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি রাষ্ট্র ও সংবিধানের সব রীতিনীতি লঙ্ঘন করে সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। জিয়া তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর রাত্রিকালীন কারফিউ দিয়ে দেশ শাসন করেছেন।
১৯৭১ সালে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীন করার জন্য পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি যুদ্ধে গিয়েছিল। সেই যুদ্ধে দেশের জনগণ অংশগ্রহণ করে।

ব্যতিক্রম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি গণহত্যা সমর্থনকারী কয়েকটি দল ও ব্যক্তি, আর এই কাজে যারা ধর্মকে ব্যবহার করেছিল। এসব দলের মধ্যে যেমন ছিল জামায়াতের মতো ধর্মাশ্রিত রাজনৈতিক দল, ঠিক একইভাবে ছিল অতি বাম ও চীনপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল এসব দলের নেতারা, জাসদ, আওয়ামী লীগের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি ধ্যানধারণা পোষণকারী কিছু নেতা, আর বেশ কিছু সুবিধাভোগী সামরিক ও বেসামরিক আমলা। আর তাঁদের সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করেছিল একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী চক্র।

১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমণ্ডির বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন শেখ হাসিনা সপরিবারে বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায় অবস্থান করছিলেন। সঙ্গে তাঁর স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া, ছোট বোন শেখ রেহানা, জয় আর পুতুলও ছিলেন। ড. ওয়াজেদ মিয়া একটি গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা স্বামীর সঙ্গে যোগ দেন জুলাই মাসে। সঙ্গী হিসেবে নিয়ে যান ছোট বোন রেহানাকে। তাঁরা সবাই কয়েক দিন ছুটি কাটাতে বেলজিয়াম গিয়ে রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায় উঠেছিলেন। ১৯৭৩ সালে সানাউল হককে যখন বেলজিয়ামে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করা হয়, তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এর বিরোধিতা করেছিলেন। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর আনুগত্য নিয়ে তাঁদের সন্দেহ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কিছু নেতার জোরালো সুপারিশের কারণে তাঁকেই রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেলজিয়াম পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন বাংলাদেশে ভোর পৌনে ৫টা আর জার্মানি ও বেলজিয়ামে রাত ১২টা বেজে ৪৫ মিনিট (তখন ১৫ আগস্ট শুরু হয়ে গেছে)। পশ্চিম জার্মানিতে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার) এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শোনেন রাত ৩টা ৩০ মিনিটে। তাঁকে এই সংবাদটি দেন সে দেশের ৬৫ বছর বয়স্ক সাংবাদিক জিসেলা বন (Gisela Bonn)। কিছু সময়ের মধ্যেই হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী অন্যান্য মাধ্যম থেকেও সংবাদ পেতে শুরু করেন। ভোর ৬টায় তাঁকে সানাউল হক বেলজিয়াম থেকে ফোন করেন। এরপর তিনি শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে তাঁর বাসা ছেড়ে যেতে বলেন। একই সঙ্গে তিনি হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন তাঁদের আশ্রয় না দেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বলেন, সানাউল হক যেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের একটি গাড়ি দিয়ে জার্মানি-বেলজিয়াম সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেন; কারণ তাঁর কাছে যে বাড়তি গাড়িটি আছে সেটা নিয়ে জার্মানিতে সফরে আসা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন রাষ্ট্রদূত রেজাউল করিমকে আনতে ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে যাবেন। সানাউল হক শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এই সুবিধা দিতে প্রথমে অস্বীকার করেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অনুরোধের পর সানাউল হক রাজি হন এবং শেখ হাসিনাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের পশ্চিম জার্মানির রাজধানী বনের নিকটবর্তী অচেনা শহর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। শেখ হাসিনা ও অন্যরা দুপুর ১টা নাগাদ সীমান্তে পৌঁছেন। হুমায়ুন রশীদের বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে ১৫ আগস্টের বিকেল সাড়ে ৪টা। এরই মধ্যে ড. কামাল হোসেন ও রেজাউল করিমও জার্মানি পৌঁছে গেছেন। তাঁরাও শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে হুমায়ুন রশীদের বাড়িতে থাকবেন বলে ঠিক হয়েছে। ততক্ষণে শেখ হাসিনা তাঁর পারিবারিক ট্র্যাজেডির কথা জেনে গেছেন। এটি স্বাভাবিক ছিল যে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঢাকার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চাইবেন, কিন্তু ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। এরই মধ্যে সংবাদ রটে গেছে যে শেখ হাসিনা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। শেষে শেখ রেহানা এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এবং বলেন, কেউ তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁদের আটকে রাখেনি। এই সংবাদ জার্মানির গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ১৬ তারিখ ভোরে ড. কামাল হোসেন ও রেজাউল করিম লন্ডন চলে যান।

জার্মানিতে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ওয়াই কে পুরির সহায়তায় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ করে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ করলে ইন্দিরা গান্ধী এককথায় রাজি হয়ে যান। আগস্টের ২১ তারিখ শেখ হাসিনা সপরিবারে দিল্লির উদ্দেশে জার্মানি ত্যাগ করেন। দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের মাতৃস্নেহে গ্রহণ করেন। তিনি ড. ওয়াজেদ মিয়ার জন্য একটি গবেষণা বৃত্তিরও ব্যবস্থা করে দেন। দিল্লির যে এলাকায় শেখ হাসিনা থাকতেন, সেই এলাকার একজন বাসিন্দার সঙ্গে একবার আলাপচারিতায় জানা গেল, দিল্লিতে শেখ হাসিনা আর তাঁর পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। অনেকেই প্রথম দিকে জানতে পারেনি বঙ্গবন্ধুকন্যা সপরিবারে তাদের এলাকায় বাস করেন। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগ অনেকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে, আর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী কর্মী থাকার পরও নেতৃত্বের শূন্যতার কারণে দলে অনেকটা বিপর্যয় নেমে আসে। জিয়া সেনানিবাসে তাঁর রাজনৈতিক দল বিএনপি (প্রথমে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট, পরে জাগদল এবং সব শেষে বিএনপি) গঠিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি। যখন ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতি দেওয়া হয়, তখন ছত্রভঙ্গ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জোহরা তাজউদ্দীন (শহীদ তাজউদ্দীনের স্ত্রী)। চেষ্টা করেন ছত্রভঙ্গ আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে। কিন্তু তাঁর একার পক্ষে কাজটি দুরূহ ছিল। দলে অন্তঃকোন্দল অনেকটা লাগামহীন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ১৯৮১ সালের ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে এটি স্বীকার করা হয় যে আওয়ামী লীগকে সঠিক অর্থে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে বঙ্গবন্ধুর রক্তের একজন উত্তরাধিকার প্রয়োজন হবে। ড. কামাল হোসেন, যিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সব কাজের একজন বড় সমালোচক, তিনিই দলের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন, যা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা দিল্লি গিয়ে শেখ হাসিনাকে সংবাদটি দেন। শেখ হাসিনা ১৭ তারিখে এক ঝোড়ো বিকেলে দেশে ফেরেন। বঙ্গবন্ধুর জীবিত কন্যাকে একনজর দেখার জন্য সেদিন পুরো ঢাকা শহর তেজগাঁও বিমানবন্দরে ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার জন্য সেই দিনটি ছিল সম্ভবত জীবনের এক বেদনাবিধুর দিন, কারণ তিনি যখন ছয় বছর আগে দেশ ছাড়েন তখন তাঁর সব ছিল, আর দেশে যখন ফিরেছেন তাঁর মা-বাবা, ভাইসহ নিকটাত্মীয় কেউ আর বেঁচে নেই। আর যাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাঁর নিকটজনরা জীবন দিয়েছেন, তারা তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। দেশে ফিরে শেখ হাসিনা স্বাভাবিকভাবেই চাইলেন বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করে তাঁর মা-বাবা, ভাই ও তাঁদের পরিবারের স্মৃতি স্পর্শ করতে, তাঁদের জন্য দোয়া করতে। কিন্তু জেনারেল জিয়া তাঁকে সেই সুযোগটাও দিতে রাজি হননি। আজ যাঁরা জিয়া বন্দনা করতে করতে মুখে ফেনা তোলেন, তাঁরা কখনো এসব কথা মনে রাখেন না।

এটা অনস্বীকার্য যে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের এক কঠিন সময়ে দেশে ফিরে দলের হাল না ধরলে বাংলাদেশ হয়ে যেতে পারত আরেকটি সুদান বা ইথিওপিয়া। দীর্ঘ সময়ের জন্য দেশ শাসন করত উগান্ডার ইদি আমিন বা ফিলিপাইনের মার্কোসের মতো কেউ একজন। বিপন্ন হয়ে পড়ত আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী, স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল। আজকে যে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে, তা চিন্তা করা অসম্ভব হতো। ১৯৮১ সালে জিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর আরেক সেনাশাসক এরশাদ ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে চিরতরে সেনা বা স্বৈরশাসনের অধীনে ঠেলে দেওয়ার পাকা বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন। এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলের সঙ্গে জিয়ার ছয় বছরের শাসনামলের অনেক মিল আছে। জিয়ার মতো এরশাদও সেনানিবাসে বসে তাঁর জাতীয় পার্টি গঠন করেছিলেন। তিনিও সেই পার্টিতে সুযোগসন্ধানী আর ডান-বামের মিলন ঘটিয়েছিলেন। জিয়া ও এরশাদ দুজনেরই লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগকে শুধু ক্ষমতার বাইরে রাখাই নয়, ধ্বংস করে দেওয়া। এটা ঠিক, এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলনটির সূত্রপাত করেছিল বিএনপি, কারণ দীর্ঘদিন তাদের পক্ষে ক্ষমতার বাইরে থাকাটা ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু বুঝতে হবে, আন্দোলন করার অভিজ্ঞতা বিএনপির কখনো ছিল না, এখনো নেই। সেই দেশভাগের পর দেশে যত বড় বড় আন্দোলন হয়েছে তা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। যে মুহূর্তে আওয়ামী লীগ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় নামল তখনই সেই আন্দোলন বেগবান হয় এবং ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদের পতন হয়।

১৯৯৬-২০০১, ২০০৯-২০১৪ আর ২০১৪-বর্তমান সময় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিন মেয়াদ দেশ শাসন করছে। ১৯৮১ সালের মে মাসের ১৭ তারিখ সেই ঝোড়ো সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার দেশে ফেরার তাৎপর্য এখন কাউকে দেখিয়ে দিতে হয় না। তিনি দেশকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও নিজের জীবন বিপন্ন করে গণতন্ত্র ও শাসনের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছেন। এই তিন মেয়াদে শেখ হাসিনা আর তাঁর সরকারের অর্জন জিয়া-এরশাদের অর্জনকে যে ছাড়িয়ে গেছে তা এখন বিশ্ববাসী স্বীকার করে। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের প্রথম ধাপে পা দিয়েছে। যে বিশ্বব্যাংক একসময় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে নানা ফন্দিফিকির করেছে, সেই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসে উন্নয়নপ্রত্যাশী দেশগুলোর সামনে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরেন। উন্নত দেশের জি-৭ ক্লাব শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শুনতে চায় তাঁর উন্নয়নের জাদুর স্পর্শের কথা। একসময় খাদ্যঘাটতির দেশকে শেখ হাসিনা খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেছেন।

আজকের এই দিনে নির্মোহভাবে চিন্তা করলে বলতে হয়, শেখ হাসিনা যেতে পারবেন আরো অনেক দূর, যদি তিনি কঠোরভাবে কয়েকটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। এগুলোর মধ্যে আছে কয়েকটি ক্ষেত্রে লাগামহীন দুর্নীতি, অন্তর্দলীয় কোন্দল আর অপ্রয়োজনীয় আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা। শেখ হাসিনা সব সময় তাঁর মাথার ওপর বা কাছে তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি রাখেন। এটা দেখে মনে হয়, তিনি পিতার ছায়া থেকে দূরে থাকতে চান না। শেখ হাসিনার স্বদেশ ফেরার দিনে প্রার্থনা করি, তিনিও যেন ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশে তাঁর পিতার মতো অনেক পদচিহ্ন রেখে যেতে পারেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

লেখক : আবদুল মান্নান – বিশ্লেষক ও গবেষক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ