আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। এর ফলে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। এবার অন্তত ২২ কোটি টাকার লিচু বাজারজাত হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ৩৯০ হেক্টর জমি, কসবা উপজেলার ৩৫ হেক্টর ও আখাউড়া উপজেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে পাটনাই, বোম্বে এবং চায়না-২ ও চায়না-৩ জাতের লিচুর আবাদ হয়েছে। এছাড়া জেলার বাকি উপজেলাগুলোতে আরও ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে গ্রীষ্মকালীন এই ফল। দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আবাদকৃত লিচু।
এবারের মৌসুমে লিচুর ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬৫০ টন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারগুলোতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পাটনাই বা দেশি জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে। আর পুরোপুরি পাকার পর চলতি মাসের শেষ দিকে বাজারে মিলবে বোম্বে এবং চায়না-২ ও চায়না-৩ জাতের লিচু।
বর্তমানে পাইকারদের কাছে ১ হাজার পাটনাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকায়। আর বোম্বে এবং চায়না-২ ও চায়না-৩ জাতের লিচু বিক্রি হবে ২৫০০-৩৫০০ টাকায়। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এখানকার লিচুর চাহিদাও বেশি।
বাণিজ্যিকভাবে আবাদকৃত লিচু বাগানগুলোর অধিকাংশই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন বাগান মালিকরা। মূলত গাছে মুকুল আসার পরপরই ব্যবসায়ীরা বাগানগুলো কিনে নেন। এরপর বাগান পরিচর্যা এবং দেখাশোনা করার জন্য লোক নিয়োগ করেন তারা।
লিচু চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার আবাহওয়া অনুকূলে ছিল- সেজন্য ফলন ভালো হয়েছে। তবে মাঝে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে লিচুর কিছুটা ক্ষতি হলেও তা ব্যবসার মাধ্যমে পুষিয়ে নেওয়া যাবে। পাইকাররা বাগান থেকেই এখন লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া অনেক দর্শনার্থী পরিবার নিয়ে লিচু বাগান ঘুরতে এসেও লিচু কিনছেন।
বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়া গ্রামে লিচু বাগানে ঘুরতে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশিষ সাহা জানান, তিনি তার দুই সন্তানকে নিয়ে লিচু বাগানে এসেছেন ঘুরতে। গাছে-গাছে ঝুলতে থাকা পাকা লিচু দেখে খুব আনন্দিত হয়েছে তার দুই ছেলে-মেয়ে। বাগানের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি বাড়ির জন্য কয়েকশ লিচু কিনেছেন। বাগান থেকে টাটকা লিচু কিনতে পেরে তিনিও খুশি বলে জানান।
সেজামুড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ফল বিক্রেতা আব্দুল জলিল জানান, এবারের মৌসুমের জন্য বাড়ির পাশের একটি লিচু বাগান তিনি ১ লাখ টাকায় কিনেছেন। বাগানের পরিচর্যা এবং বাগান দেখাশোনা করার জন্য রাখা শ্রমিকের বেতনসহ খরচ হবে আরও ৭০ হাজার টাকা। এবার তার বাগানে বোম্বে এবং পাটনাই জাতের লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। ৩ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
সেজামুড়া এলাকার লিচু চাষী জসিম মিয়া জানান, তার বাগানে ৩১টি গাছ আছে। প্রত্যেকটি গাছের পরিচর্যায় ৩-৪ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। গাছগুলোতে আনুমানিক দেড় লাখ লিচু ধরেছে। পাটনাই এবং বোম্বে দুই জাতের লিচুই আছে বাগানে। ইতোমধ্যে পাটনাই লিচু বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। বাজারে লিচুর দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য এবার খরচ তুলে ভালো টাকা মুনাফা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
লিচুর ফলন ভালো করার জন্য মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা চাষীদের পোকা-মাড়ক দমন এবং সার ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সুশান্ত সাহা বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ভালো ফলনের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের সবধরনের সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এবার ২৬৫০ টনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে- সেটি ছাড়িয়ে যাবে। সব মিলিয়ে জেলা থেকে ২২ কোটি টাকা মূল্যের লিচু বাজারজাত হবে বলে আশা করছি।’