1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অফিস বন্ধ রেখে জামায়াতের কার্যক্রম বাসাবাড়ি-মসজিদে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৩ মে, ২০২২

রাজধানীর বড় মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, তিনি নেতাদের মুখ দেখেননি গত সাত বছরেও।

২০১৫ সালে নিয়োগ পাওয়া আবদুল কুদ্দুস অবশ্য কথা বলতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। ফলে নেতারা না এলে তিনি বেতন কীভাবে পান, কার সঙ্গে যোগাযোগ করে চাকরি পেয়েছেন, সেসব তথ্য জানা হলো না।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা দলটি স্বাধীনতার পর ছিল নিষিদ্ধ। তখন অন্য দলে ভিড়ে গিয়ে বা গোপন রাজনীতিতে জড়ানো জামায়াত ও তার সে সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীদের তৎপরতাও এখন অনেকটাই স্বাধীনতা উত্তর রাজনীতির মতোই।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানবতাবিরোধী অপরাধে যখন থেকে জামায়াত নেতারা গ্রেপ্তার হতে থাকেন, তখন থেকে তাদের কার্যালয়ে ঝুলে যায় তালা। বছরের পর বছর ধরে সে তালা খুলছে না। অনেকটা গোপনে চলে তাদের তৎপরতা।

আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো, ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আদেশ দেয়ার পর জামায়াতের প্রতিক্রিয়া ছিল ধ্বংসাত্মক। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি-বেসরকারি সম্পদে বেপরোয়া হামলা চালানো দলটি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির শরিক হিসেবে সরকার পতন আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ঘরে ফেরার পর একেবারে কার্যালয়বিমুখ হয়ে গেছে।

তবে ইদানীং হঠাৎ করেই অস্তিত্বের জানান দিতে শুরু করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। চলতি মাসে ঢাকায় বেশ কয়েকটি ঝটিকা মিছিল করেছেন জামায়াতের মহানগরের নেতারা। গত ফেব্রুয়ারিতেও রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর চত্বরে একটি মিছিল হয়।

মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, ফটকের বাইরে নীল রঙের একটি নামফলক। বন্ধ ফটকের বাইরের পাশের চিত্রেই বোঝা যায়, যত্নআত্তি খুব একটা হচ্ছে না সেখানে। ফটকে শতচ্ছিন্ন পোস্টারগুলো জানান দিচ্ছে, সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। বাইরে থেকে ভেতরের চিত্র যতটুকু দেখা যায়, তাতে দোতলা থেকে প্রতিটি তলার বারান্দার বাইরের অংশে শ্যাওলা পড়ে আছে।

ভবনের তৃতীয় তলায় এক পাশ দিয়ে একটি সাইনবোর্ড আছে, তাতে লেখা ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, কেন্দ্রীয় দপ্তর’।

ভবনে কেউ নেই বলে জানালেন কার্যালয়ের নিচতলায় থাকা নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল কুদ্দুস। তিনি জানালেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে অফিসে কেউ আসে না বলে জেনেছেন, যদিও তার নিয়োগ আরও চার বছর পর।

কুদ্দুস বলেন, ‘আমি সাত বছর ধরে এই ভবনে চাকরি করছি। ২০১৫ সাল থেকে আমি এখানে আছি। কী কারণে এটা বন্ধ আমি কিছু জানি না। আমি জানবই বা কী করে?’

বৈঠক, কথাবার্তা কীভাবে

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বাড়াতে রাজি হননি। বলেন, ‘আপনার যদি কোনো তথ্য জানার থাকে আপনি কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকের সঙ্গে যোগোযোগ করতে পারেন।’

এমনকি তার নামটিও ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়ে রাখলেন তিনি।

পরে দলের মহানগর উত্তর শাখার এক নেতা বলেন, ‘দলীয় কার্যালয় ছাড়াই কাজ চলছে আমাদের। জামায়াত একটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। অফিস ছাড়াই আমরা দলের টপ টু বটম যোগাযোগ করে আসছি। তবে এ জন্য অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবেও কার্যক্রম চালাতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।’

ঝটিকা মিছিলগুলো কীভাবে করা সম্ভব হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান যুগে তো যোগাযোগ রাখা কঠিন না। তথ্য পাওয়ার মধ্য দিয়ে সেগুলো হয়ে যাচ্ছে।

‘সুনির্দিষ্ট কোনো স্থানে বর্তমানে জামায়াতের মিটিং হয় না। যখন যেখানে সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই দলের মিটিং করা হচ্ছে। নেতাদের বাসায়-মসজিদে মিটিংগুলো হয়।’

কার্যালয় বন্ধ থাকাতে তেমন কোনো সমস্যা হিসেবে দেখছেন না জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ। তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজগুলো এখন বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতেই হয়।

‘এ ছাড়া সাংগঠনিক কাজগুলো এখন প্রযুক্তির কল্যাণে সহজ হয়ে গেছে। মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ আছে, এর মাধ্যমে…। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য তো অফিস লাগে না।’

এই জামায়াত নেতা জানান, ‘যখনই আমাদের বৈঠক করা দরকার হয় তখন বৈঠক হচ্ছে। সেখানে বড় জমায়েতের সুযোগ এখন নেই, বৈঠকগুলো ছোট পরিসরেই করা হচ্ছে।

কোথায় বৈঠক করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈঠকগুলো বাংলাদেশের ভেতরেই মাটির ওপরেই হয়। বিভিন্ন জয়গায় বসে মিটিংগুলো হয়। মিটিং করার জন্য আমাদের এর চেয়ে বেশি কোনো জায়গার দরকার পড়ে না।’

স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ থাকলেও জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় রাজনীতিতে ফেরার অনুমতি পাওয়া জামায়াত এখন দলীয় কার্যক্রম চালাতে পারলেও নির্বাচন কমিশনে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।

২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২–এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয়া হয়। তবে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে করা ৬৩০ নম্বর রিট পিটিশনের রায়ে আদালত নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। এরপর নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করে।

নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে ভোটে লড়ার যোগ্যতাও নেই জামায়াতের। অন্যদিকে তাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের খড়্গ ঝুলছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক রায়ে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দেয়ার পর নেতাদের মতো দলটিরও বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়।

সেটি আট বছর আগের কথা। কিন্তু এর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বিভিন্ন সময়ে বলেছিলেন, অপরাধী সংগঠনের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের সংশোধনীর খসড়া শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উঠবে। শেষ পর্যন্ত সেটা আর মন্ত্রিসভায় ওঠেনি। ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সংগঠনের বিচারকাজও শুরু করা যায়নি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগীর। দলটির নেতা-কর্মীরা সে সময় গঠন করে রাজাকার বাহিনী। তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ গঠন করে খুনে বাহিনী আলবদর। এই বাহিনীর বিরুদ্ধেই আছে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ। এসব ঘটনায়ই স্বাধীনতা-উত্তর জামায়াত হয় নিষিদ্ধ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ