1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মিশ্র ফলের বাগান করে কোটিপতি

ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩

পড়াশোনায় মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে না পেরে ভাগ্যের অন্বেষণে কুয়েত গিয়েছিলেন যুবক মফিজুর রহমান মাফি। সেখান থেকে কিছু টাকা উপার্জন করে কয়েক বছর পর দেশে এসে নিজে কিছু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিভিন্ন ব্যবসা করতে গিয়ে বেশ লোকসানের মুখে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে শুরু করেন মিশ্র ফলের বাগান। এই বাগান থেকে বর্তমানে বছরে কোটি টাকা আয় করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাফি। তার দেখাদেখি বাগান করে দুই শতাধিক বেকার যুবক হয়েছেন স্বাবলম্বী।

মাফি ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস আলী সরদারের ছেলে। চার বছর আগে ২০১৯ সালে নিজেদের নয় বিঘা জমিতে কাশ্মিরি কুল চাষের মাধ্যমে ফলের বাগান শুরু করেন তিনি। প্রথম বছরে তিনি ওই কুল থেকে আয় করেন বিপুল অংকের টাকা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

বর্তমানে ১০৩ বিঘা জমিতে মাফি গড়ে তুলেছেন দেশি-বিদেশি জাতের মিশ্র ফলের বাগান। পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের চারা বিক্রিও করছেন তিনি। নিজে হয়েছেন স্বাবলম্বী, পাশাপাশি তার বাগানে অর্ধশতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন।

মফিজুর রহমান মাফি জানান, ফরিদপুরে বাণিজ্যিকভাবে মিশ্র ফলের চাষাবাদ তিনিই প্রথম শুরু করেন। এরপর তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন জেলায়। এই ফল বাগান থেকে বছরে কোটি টাকা আয় করছেন তিনি। তার বাগানে এখন প্রায় ২০ হাজার বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি ফলের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে আম, কুল, পেয়ারা, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন, লেবু, পেঁপেসহ আরও অন্যান্য ফলের গাছ রয়েছে।

তিনি জানান, তার এই মিশ্র ফলের বাগানে রয়েছে বিদেশি প্রজাতির সুমিষ্ট আম কিউযাই, কিং অব চাকাপাত, মিয়াজ্যাকি, চ্যাংমাই, রেড আইভরি, ব্রুনাই কিং। এসব জাতের প্রতিটি আমই পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং বেশ দামি। এ ছাড়া দেশি প্রজাতির বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানাসহ বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ রয়েছে। দিন পনেরো পরেই আম বিক্রি করতে পারবেন তিনি। তবে এ বছর বৃষ্টি ও ঝড়ে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। প্রায় তিন লাখ টাকার আম নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও গাছে যে আম আছে তা প্রায় ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে। তিন মাস আগে গাছ থেকে কাশ্মিরি কুল ও পেঁপে সংগ্রহ শেষ হয়েছে। ড্রাগন ফল পরিপক্ব হতে আরও পনেরো দিন লাগবে। বর্তমানে আম ও পেয়ারা বিক্রির সময় এসেছে। এখন সবজির আবাদও শুরু করেছেন। তবে বাগান করতে বেকারদের জন্য সহজ শর্তে সরকারি ঋণের দাবি করেছেন মাফি।

রাজবাড়ী জেলার পাংশা থেকে বাগান দেখতে আসা যুবক শাহিন মিয়া বলেন, ‘মাফি ভাইয়ের কথা অনেক শুনেছি। তিনি মিশ্র ফলের বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমি পড়ালেখা করি, পাশাপাশি একটি মিশ্র ফলের বাগান করবো। তাই মাফি ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে এসেছি। আমার মতো অনেকেই এখানে আসেন।’

ফরিদপুরের মধুখালী সদরের বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, ‘মাফি ভাইয়ের কাছ থেকে কাশ্মিরি কুল ও আমের চারা এনে আমি একটি বাগান করেছি। এখনও ফল ধরা শুরু হয়নি। আশা করি ফলন ভালো হবে। অনেকেই মাফি ভাইয়ের কাছ থেকে ফলের চারা নিয়ে বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’

জেলার ভাঙ্গা থেকে আসা গৃহবধূ রাশেদা বেগম বলেন, ‘বাড়ির পাশে একটি খালি জায়গা পড়ে রয়েছে। ভাবলাম, সেখানে কিছু ফলের গাছ লাগাই। সে কারণে মাফি ভাইয়ের বাগানে এসেছি। বিভিন্ন ধরনের ফলের চারা নিয়ে যাচ্ছি।’

ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে মাফি ফলের বাগান শুরু করেন। প্রথমে কাশ্মিরি কুল চাষের মাধ্যমে ফলের বাগান শুরু করেন তিনি। বর্তমানে ৩৪ একর জমিতে মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে মাফির। কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত তাকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাফি নিজে স্বাবলম্বী হয়ে বিপুল অংকের টাকা রোজগার করছেন, পাশাপাশি দুই শতাধিক বেকার যুবক তার দেখাদেখি বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’

এই কৃষিবিদ বেকার যুবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ মাফির মতো মিশ্র ফলের বাগান করে স্বাবলম্বী হতে চাইলে অবশ্যই কৃষি অফিসে এসে পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে করবেন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ